মারমা জাতিস্বত্ত্বার জীবন কথা- পর্ব পাঁচ
মারমা জাতিস্বত্ত্বার জীবন কথা- পর্ব এক
মারমা জাতিস্বত্ত্বার জীবন কথা- পর্ব দুই
মারমা জাতিস্বত্ত্বার জীবন কথা- পর্ব তিন
মারমা জাতিস্বত্ত্বার জীবন কথা- পর্ব চার
মারমা সম্প্রদায়ে কারবারী বলতে মূলত গ্রাম প্রধান তথা মারমাদের স্থানীয় চিফকে বোঝায়। ফ্রান্সিস বুকানন তার ভ্রমণ ডাইরীতে এই কারবারীকে, রুয়া-সা (Rua-sa) তথা মারমাদের স্থানীয় চীফ, যার বর্মী নাম য়্য-সা, আরাকানী নাম য়্যন্সা এবং বাংলায় বিকৃত শব্দ রোয়াজা বলে উল্লেখ করেন। কারবারী নামক এই গ্রাম প্রধানের অস্তিত্বের কথা সর্ব প্রথম উঠে আসে নতুন সৃষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার সুপারিনটেন্ডেন্ট ক্যাপ্টেন জে.এম. গ্রাহামের ১৮ই নভেম্বর, ১৮৬২ তারিখের এক পত্রে। আবার ক্যাপ্টেন টি.এইচ. লুইনের ১৮৬৭ সালের অন্য আরেকটি প্রতিবেদনেও এই কারবারী নামটি উঠে আসে। অর্থ্যাত আমরা যদি মারমা সমাজে এই কারবারী নামক প্রপঞ্চটির ইতিহাসের দিকে তাকাতে যাই তবে কারবারী নামক এই সম্প্রয়দায়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি হেডম্যানের মত করে নতুন হঠ্যাৎ তৈরি হয়ে যাওয়া কোন স্বত্ত্বা নয় বরং এর ইতিহাস অনেক সুদূর প্রসারী। সুদূর অতীতে পাড়া গুলোতে রাজারা, এই রোয়াজা তথা কারবারী নিয়োগ দিতেন। এবং সে সময় এই রোয়াজারাই ছিলেন গ্রাম প্রধান। তিনি রাজার হয়ে, প্রজাদের নিকট হতে রাজস্ব আদায় করতেন। প্রজাদের সকল ধরনের বিচার-আচার, ভাল-মন্দ, দুঃখ-দুর্দশা, শাস্তি-বিধান, আইন-কানুন, ধর্ম-আচার সংক্রান্ত সকল সিদ্ধান্ত ছিল তার হাতে। কিন্তু কালের আবর্তে রাজাদের সাথে সাথে, এই কারবারীদের ক্ষমতাও কমে যেতে শুরু করে।
১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৪৮ বিধিতে কারবারী নিয়োগ সম্পর্কে সুষ্পষ্ট কোনো বিবরণ না থাকলেও পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ৬৬(১) ধারাতে কারবারী পদের স্বীকৃতি রয়েছে। পার্বত্য জেলাসমূহের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে কোনো প্রকার দ্বন্দ্ব, বিরোধ, সামাজিক সমস্যা, নারীঘটিত কোনো সামাজিক মোকদ্দমার উদ্ভব হলে তা নিষ্পত্তির প্রাথমিক দায়িত্ব কার্বারীর উপর বর্তায়। প্রথম দিকে অর্থ্যাত ব্রিটিশ পিরিয়ডে কারবারীরা সরকার হতে কোন ধরনের ভাতা না পেলেও বর্তমানে তারা সরকার হতে ভাতা পান। যদিও কারবারী নিয়োগের নিয়ম হল, পাড়া গুলোতে রাজা অথবা হেডম্যান এই কারবারী নিয়োগ দেবেন কিন্তু সমসাময়িক সময়ে এই পদটি হয়ে উঠেছে বংশানুক্রমিক। অর্থ্যাত কারবারীর বড় ছেলেই হয়ে উঠেন কারবারী। কারবারী তার গ্রাম তথা পাড়ার দ্বন্দ্ব, বিরোধ, সামাজিক সমস্যা ইত্যাদির সমাধান করেন তার কারবারী আদালতে। এছাড়াও পাড়ার পূজা-অর্চনা, অবকাঠামোগত উন্নয়নে সিদ্ধান্ত গ্রহন, আদেশ- পরামর্শ প্রদান ও তিনি করে থাকেন। কারবারী আদালতে বিচার প্রক্রিয়া হয় মূলত শালিসী বোর্ড গঠনের মাধ্যমে। যেই বোর্ডে অন্য দুই/ তিন পাড়ার কারবারীরা উপস্থিত থাকেন, মাঝে মাঝে হেডম্যান অথবা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার (বাধ্যতামূলক নয়) উপস্থিত থাকেন এবং গ্রামের কিছু গন্যমান্য পুরুষ, মহিলা এবং যুবক, যুবতী অংশগ্রহন করেন। বাদী এবং বিবাদী উভয়ই উপস্থিত থাকেন। বাদী-বিবাদী উভয়ের কথা শোনা হয়, স্বাক্ষ্য গ্রহন করা হয়। রায় ঘোষনার ক্ষেত্রে বোর্ডের বেশির ভাগ সদস্য যে রায় দেন তাই ঘোষনা করেন কারবারী, একা একা কোন রায় দেন না। কারবারী আদালতে বিচার/শালিস/ মিমাংসা শুরুর আগে একটা সাদা কাগজে বাদী, বিবাদী/অভিযুক্তের এই মর্মে স্বাক্ষর নিয়ে নেয়া হয় যে, বিচারে যেই রায় ই ঘোষনা করা হোক না কেন তা তারা সকলেই মেনে নিতে বাধ্য থাকিবে। পরবর্তীতে আবার এই কাগজেই বিচারের ফলাফল লেখা হয়। প্রমান হিসেবে কারবারী এই কাগজটি তার নিকট সংরক্ষন করেন। বিচার-শালিসের ইস্যু যদি খুব বেশি জটিল হয় অথবা পাড়ার কেউ যদি কারবারী আদালতের সিদ্ধান্তকে মেনে না নিতে চায় তবে সে ইউনিয়ন পরিষদের স্মরনাপন্ন হতে পারে।
ছবিঃ কাপ্তাই উপজেলার ওয়াজ্ঞা ইউনিয়নের নোয়াপাড়া পাড়ার কারবারী সাজাই মারমা তার কারবারী আদালতে।
পাড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকা তথা কোন ধরনের অশান্তি, উত্তেজনা, বিবাদ-কলহের সৃষ্টি না হওয়ার জন্য কারবারী তার গ্রামের গন্যমান্য ব্যাক্তিদের সমন্বয়ে তৈরি করেন পাড়ার চমৎকার কিছু নিয়ম নীতি, আইন কানুন। এসব নিয়ম কানুনের মধ্যে একটা হল নিষেধাজ্ঞা। রাত ৮ টার পর হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোন দম্পতি কোন ধরনের ঝগড়া কলহে লিপ্ত হতে পারবে না। হলে তাদেরকে কারবারী আদালতে তৎক্ষণাৎ নিয়ে আসা হবে এবং পূর্ব নির্ধারিত শাস্তি হল ছোট্ট একটা চা চামুচ দিয়ে কূপ হতে এক চামুচ করে পানি নিয়ে এসে একটা খালি কলস ভর্তি করা, অথবা ছোট একটা কলসীতে এক কলস করে পানি কূপ হতে নিয়ে পাহাড়ের উপরে মন্দিরে রাখা বড় একটা জার ভর্তি করা। এসব নিয়ম কানুন ছাড়াও রয়েছে মদ খেয়ে মাতলামী না করার নিয়ম কানুন, পাড়ায় যুব কমিটি তৈরি করে তাদের দিয়ে পাড়ার শান্তি শৃংখলা রক্ষার কাজ পরিচালনা এবং অন্য যুবক-যুবতীদের আইন শেখানো ইত্যাদি ইত্যাদি।
(চলবে)
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন