বর্ষা একটা মাদকতাময় ঋতু। এই ঘোরলাগা ঋতুর সম্মানে ক্যালেন্ডারে বরাদ্দ হোক দু’-চার দিনের সরকারী ছুটি। বৃষ্টির ঘোরে মাতোয়ারা হয়ে যদি ক্লাশ ছুটি দেন কোনো শিক্ষক, তার আর নিতে না হোক মেকাপ-ক্লাশ। বৃষ্টির আবেশে ক্লাশ পালাবে যে শিক্ষার্থী, স্বয়ংক্রিয়ভাবে দিয়ে দেওয়া হোক তার এটেন্ডেন্স।
বৃষ্টির দিনে মানুষ পরস্পরের দিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধ করে হাসবে। অচেনা রমনীর দিকে চেয়ে অপরিচিত পুরুষ চিরসখার ভঙ্গিতে মৃদু হেসে বলবে, ‘চুলে একটা বেলির মালা গুঁজে দিন। আরো ভালো লাগবে’। বৃষ্টির দিনে অজানা যুবকের বাইকে লিফট নেবে অচেনা তরুনী। কিন্তু তাদের কোনো সিকিউরিটি রিস্ক থাকবে না। এমনকি সেই তরুণের সাথে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও সেদিন পুলিশ তাকে মামলা দেবে না। ছেড়ে দেবে। বৃষ্টির ঘোরে।
বর্ষা! সে এক ঘোরতর ঋতু! এই ঋতুর দেশে জন্মিবামাত্রই মানুষ কবি হয়ে যায়। ট্র্যাফিক পুলিশ থেকে ছিঁচকে চোর, রসকষহীন সাংবাদিক থেকে ভোটারের সাথে কথা-না-রাখা-সাংসদ, বেশ্যার দালাল থেকে গুমরোমুখো আমলা— বৃষ্টির দিনে সকলেই কবি হয়ে যায়। এমনকি বারবণিতার ঘরে গিয়েও রতিক্রিয়া না করে বনলতা সেন কবিতার মতন মুখোমুখি বসে থাকে ঘুষখোর হোঁদল কুতকুতে খদ্দের।
ঘোর বর্ষায় এই ঋতু দেখতে পৃথিবীর পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানানো উচিত। ট্যুর কোম্পানিগুলোরো উচিত মায়াবী বর্ষাকে পরদেশীদের কাছে মোহনীয় করে তুলে ধরা। লোকেরা ফ্রান্সে আইফেল টাওয়ার দেখতে যায়। এই ভাটির দেশে পর্যটকেরা বর্ষা যাপন করবে। তারা দেখবে ভরা নদীতে ঝুম বৃষ্টির সময় ছইয়ের উপর ঝমঝমাঝম শব্দে বেজে উঠে স্বর্গীঁয় সঙ্গীত। এদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হবার আগে তাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হোক পাঁচ বর্ষা গ্রাম ও নদী বাসের অভিজ্ঞতা। বর্ষাকে যে জানবে না সে কোনোদিন চিনবে না বাংলাদেশ।
---