*১৯৯৪ সালে তিনি চাচাতো বোন ববিতার সাথে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)-তে ঘুরতে এসে প্রয়াত অভিনেতা-প্রযোজক জসিম-এর নজরে পড়েন। জসিম যখন তাঁকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন তখন তিনি অভিনয় সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এক্ষেত্রে ববিতা তাঁকে উৎসাহিত করেন, কিন্তু তাঁর মা একজন ধর্মভীরু মানুষ, তাই মাকে রাজি করাতে একটু সময় লেগে যায়।অবশেষে রিয়াজ ববিতার হাত ধরেই চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেন।১৯৯৫ সালে বাংলার নায়ক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেন।যদিও প্রথম চলচ্চিত্রটি তাঁকে প্রশন্ত সুনাম প্রদান করেনি।১৯৯৬ সালে খ্যাতনামা চলচ্চিত্রকার দিলিপ বিশ্বাস এর অজান্তে এবং মোহাম্মদ হোসেন এর প্রিয়জন-এ অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। এই একটিমাত্র চলচ্চিত্রে (প্রিয়জন) রিয়াজ প্রয়াত অভিনেতা সালমান শাহ এর সাথে অভিনয় করেন।১৯৯৭ সালে মহাম্মদ হান্নান পরিচালিত প্রাণের চেয়ে প্রিয় চলচ্চিত্রটি অসাধারণ ব্যবসায়িক সাফল্য লাভ করে এবং রাতারাতি জনপ্রিয়তার শীর্ষে চলে আসেন।এ চলচ্চিত্রের 'পড়েনা চোখের পলক' গানটি তাকে তরুণ-তরুণীদের কাছে হার্টথ্রবে পরিনত করে।
*রিয়াজ বাংলাদেশের একমাত্র অভিনেতা যিনি তথাকথিত এফ ডি সি কেন্দ্রিক বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র এবং সাহিত্য নির্ভর আর্ট ফিল্ম দু ধরণের চলচ্চিত্রেই সমান ভাবে সফল। রিয়াজ অভিনীত উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র - প্রাণের চেয়ে প্রিয়,হৃদয়ের আয়না, ভালবাসি তোমাকে, পৃথিবী তোমার আমার, বুক ভরা ভালোবাসা ,কাজের মেয়ে, বিয়ের ফুল ,স্বপ্নের পুরুষ, এ বাঁধন যাবেনা ছিঁড়ে, সাবধান, ভয়ঙ্কর বিষু, হৃদয়ের বন্ধন, শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ, মিলন হবে কতো দিনে, প্রেমের তাজ মহল, নিঃশ্বাসে তুমি বিঃশ্বাসে তুমি, ও প্রিয়া তুমি কোথায়, সুন্দরী বধু, মাটির ফুল, ভালবাসা কারে কয়, মনের মাঝে তুমি ,জামাই শ্বশুর ,স্বপ্নের বাসর, রং নাম্বার,ছোট্ট একটু ভালবাসা , মোল্লা বাড়ীর বউ, হৃদয়ের কথা , আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা, তোমাকেই খুঁজছি, মন বসেনা পড়ার টেবিলে, এবং বাজাও বিয়ের বাজনা। বাংলা সাহিত্যে নির্মিত রিয়াজ অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র- দুই দুয়ারী, মেঘের পরে মেঘ: Clouds After Cloud, শ্যামল ছায়া: The Green Shadow,শাস্তি: Punishment, হাজার বছর ধরে: Symphony of Agony , খেলাঘর: Dollhouse ,বিদ্রোহী পদ্মা, দারুচিনি দ্বীপ ,একজন সঙ্গে ছিল, মধুমতি,হাজার বছর ধরে । এছাড়াও রিয়াজ বিকল্প ধারার কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন যেমন টক ঝাল মিষ্টি, না বোলনা: Don't Say No, বকুল ফুলের মালা, মেঘের কোলে রোদ: Sunshine In The Clouds, কি যাদু করিলা, চন্দ্রগ্রহণ: The Lunar Eclipse, এবাদত: The Worship, কুসুম কুসুম প্রেম।
*রিয়াজ কয়েকজন নায়িকার সাথে জুটি বেঁধে কাজ করে হয়েছেন দারুন সফল। এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পে রেখেছেন তাঁর অসামান্য অবদান। রিয়াজের সাথে জুটি গড়ে উল্লেখ করার মতো সফলতা পেয়েছেন কয়েকজন অভিনেত্রী। বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবনূর এর সাথে রিয়াজের প্রথম এবং সফল জুটি গড়ে ওঠে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পে এই জুটির রয়েছে অসংখ্য দর্শক নন্দিত চলচ্চিত্র। আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী পূর্ণিমার সাথেও গড়ে ওঠে রিয়াজের আরও একটি সফল জুটি। এই জুটিও বাংলাদেশ চলচিত্রপ্রেমীদের উপহার দিয়েছেন বেশ কিছু ভালো চলচ্চিত্র।
*চলচ্চিত্রে রিয়াজ সর্বাধিক সতের বার সাগর নামবিশিষ্ট চরিত্রে অভিনয় করেছেন।যে চলচ্চিত্রগুলোতে এ নামে অভিনয় করেছেন- মন মানেনা, তুমি শুধু তুমি, পৃথিবী আমারে চায়না, আমি তোমারি, বিয়ের ফুল, বুক ভরা ভালবাসা, কাজের মেয়ে, মনে রেখ আমায়, হৃদয়ে লেখা নাম, ক্ষেপা বাসু, ও প্রিয়া তুমি কোথায়, লাল দরিয়া, স্বপ্নের বাসর, ছোট্ট একটু ভালবাসা, বিয়ের লগন, কি যাদু করিলা ও চাঁদের মতো বউ।
* প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক ও গল্পকার জহির রায়হান এর কালজয়ী উপন্যাস হাজার বছর ধরে অবলম্বনে তার সহধর্মিণী কোহিনুর আক্তার সুচন্দা নির্মান করেন 'হাজার বছর ধরে: Symphony of Agony' চলচ্চিত্রটি।রিয়াজ এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পারিশ্রমিক হিসাবে নিয়েছিলেন শুধুমাত্র ১০১ টাকা যা একটি বিরল দৃষ্টান্ত।
* ২০০৫ সালে তুহিন বড়ুয়ার সাথে যৌথ ভাবে পথিক নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র এস এ হক অলিক পরিচালিত রিয়াজ-পূর্ণিমা অভিনীত 'হৃদয়ের কথা' এবং এই চলচ্চিত্র মুক্তি দেয়ার আগেই বাজারে ছাড়া হয় গানের অডিও এ্যালবাম, অসাধারন সব গান নিমিশেই জয় করে নিল বাংলার লক্ষ কোটি গান পাগল প্রান। চলচ্চিত্রটি ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর মুক্তি দেয়া হয় এবং দারুন সাফল্য এনে দেয় বক্স অফিসে। সকল শ্রেণীর দর্শকের কাছে আশানুরুপ সাড়া মেলে
এ চলচ্চিত্রের ভালোবাসবো বাসবোরে বন্ধু গানটি ইউটিউবে যে কোন বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের গানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বার (প্রায় ৭০ লক্ষ বার) দেখা হয়েছে
* রিয়াজ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতার পূরস্কারে তিনবার[দুই দুয়ারী (২০০০), দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭) এবং কি যাদু করিলা (২০০৮)] ভূষিত হন।তাছাড়া তিনি ছয়বার মেরিল-প্রথম আলো পূরস্কার লাভ করেন।
* রিয়াজ অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র 'শিরি ফরহাদ'. গাজী মাহবুব পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ২২শে মার্চ ২০১৩ সালে।
*অভিনয় জীবনের শুরুর পূর্বে রিয়াজ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন একজন বিমানচালক হিসেবে।কর্মরত থাকাকালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি জেট ফাইটার বিমানে মোট ৩০০ ঘন্টা ওড়ার গৌরব অর্জন করেন।তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অধীনে তুরস্ক গিয়ে প্রশিক্ষন গ্রহণ করেন। পরে কর্তৃপক্ষের সাথে ভুল বোঝাবুঝির কারনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হন।রিয়াজ ঢাকার বনানীতে ইয়েস কর্পোরেশন নামে একটি কোমল পানীয় উৎপাদনকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।এছাড়াও হাউজিং কোম্পানি আশিয়ান গ্রুপ এর পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
*রিয়াজ ২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর ২০০৪-এর বিনোদন বিচিত্রার ফটো সুন্দরী প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ সুন্দরী হিসেবে নির্বাচিত মডেল মুশফিকা তিনা'র সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
*রিয়াজ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি কিছু জন-সচেতনতা মূলক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি ইতিমধ্যে রাজবাড়িতে নিজ উদ্যোগে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় নির্মাণ করেছেন। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ মহামারী এইচআইভি/এইডস ও মরণ ব্যাধি যক্ষা সম্পর্কে অতটা সচেতন না, এবং যক্ষা বাংলাদেশে একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বাংলাদেশের অনেক মানুষ চলচ্চিত্র শিল্পীদের পছন্দ করেন, আর তাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় এইচআইভি/এইডস নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম এর টেলিভিশন প্রচারনায় অংশগ্রহণ করেন। এবং জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম (এনটিপি) কর্মসূচিতে অংসগ্রহণ করেছেন তিনি। এই কর্মসূচিতে রয়েছে তাঁর টেলিভিশন বিজ্ঞাপন, শহর/উপ-শহরের বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও অন্যান্য লোক-মুখোর স্থান সমূহে তাঁর প্রতিকৃতি সংবলিত বিল বোর্ড ও হাসপাতাল/নগর চিকিৎসা কেন্দ্রে বিলি করা হয় একই আকৃতির লিফলেট।৫ এপ্রিল ২০১২ থেকে স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী সংগঠন ‘মানুষ’-এর নতুন শুভেচ্ছা দূত হিসেবে রিয়াজ দায়িত্ব গ্রহণ করেন।এতে তিনি দেশে এবং বিদেশে সবাইকে এই সংগঠনের কার্যক্রমের বিষয়ে সচেতন, প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখবেন।এর আগে এই সংগঠনের শুভেচ্ছা দূত ছিলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ।নিরাপদ মাতৃত্ব 'শ্লোগান' এ ইউএনএফপিএ মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও মাতৃমৃত্যু রোধে বাস ব্রান্ডিং এ কার্যক্রমে ইউএনএফপিএ’র বাংলাদেশ প্রতিনিধিত্ব করছেন অভিনেত্রী মৌসুমী ও রিয়াজ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:১৮