চেঙ্গিস খানের নাম সবাই কমবেশী শুনেছেন। চেঙ্গিস খান ছিলেন মঙ্গোলিয়ান রাজনৈতিক ও সামরিক নেতা বা মহান খান, ইতিহাসেও তিনি অন্যতম বিখ্যাত সেনাধ্যক্ষ ও সেনাপতি। জন্মসূত্রে তার নাম ছিল তেমুজিন। তিনি মঙ্গোল গোষ্ঠীগুলোকে একত্রিত করে মঙ্গোল সম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন। নিকট ইতিহাসে এটিই ছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সম্রাজ্য। তিনি এক সাধারণ গোত্রপতি থেকে নিজ নেতৃত্বগুণে বিশাল সেনাবাহিনী তৈরি করেন। যদিও বিশ্বের কিছু অঞ্চলে চেঙ্গিস খান অতি নির্মম ও রক্তপিপাসু বিজেতা হিসেবে চিহ্নিত তথাপি মঙ্গোলিয়ায় তিনি বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে সম্মানিত ও সকলের ভালোবাসার পাত্র। তাকে মঙ্গোল জাতির পিতা বলা হয়ে থাকে।
এই চেঙ্গিস খানের উথানকালের উপর বানানো অসাধারন এক মুভি মঙ্গোল। এটি ২০০৭ সালে মুক্তি প্রাপ্ত একটি অর্ধ-ঐতিহাসিক মুভি। তরুণ চেঙ্গিজ খানকে কেন্দ্র করে নির্মীত এই ছবিটি পরিচালনা করেছেন রুশ মুভি পরিচালক সের্গেই বদরফ। চেঙ্গিজ খানের জীবনীর উপর ভিত্তি করে তিনটি মুভি নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। এটি ছিল সেই মুভি ত্রয়ীর প্রথম পর্ব।
এই মুভির কাহিনী মূলত মঙ্গোলিয়ান ইতিহাসের বিবরন " The Secret History of the Mongols" অবলম্বনে লেখা হয়েছে। চেঙ্গিস খানকে যদিও পশ্চিমা ও রাশিয়ানরা অতি নির্মম হিংস্র ও লোভী হিসেবে আখ্যায়িত করে কিন্তু সত্যিকার ভাবে উনি কিরকম ছিলেন তা এই মুভিটিতে তুলে ধরার এক প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা করেছেন পরিচালক। উনি হয়ত সাধু কোন লোক ছিলেন না কিন্তু উনি যা করেছেন তা এক কথায় অনবদ্য। যুদ্ধ পরিচালনা ও রণ পরিকল্পনায় তিনি ছিলেন অনন্য। একেবারে শূন্য হতে শুরু করে প্রায় অর্ধেক পৃথিবীর সম্রাটে পরিণত হয়েছিলেন।
এবং এসব কিছু হেসে খেলেই করে ফেলেননি। সবচেয়ে অবাক হবেন তার জীবনের শুরুর দিকে তাকালে যে মাত্র নয় বছর বয়সে এতিম হয়ে নিজ গোত্রের মানুষের কাছে সব সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে এমনকি নিজ জীবন বাঁচানোর তাগিদে পালিয়ে বেড়িয়ে এবং জীবনের একটা সময় বন্দি হয়ে থেকে দাসত্ত করেও এই লোক অর্ধেক পৃথিবীর এক ক্ষমতাধর অধিপতিতে পরিণত হয়েছিলেন। তার এই নয় বছর থেকে ত্রিশ বছর পর্যন্ত সময়ের মাঝেই মূলত ছোট্ট তেমুজিন মহান চেঙ্গিস খানে পরিণত হয়। আর এই সময়কালের নানান ঘটনা নিয়েই এই মুভি।
মুভির শুরুতেই দেখবেন নয় বছরের তেমুজিনকে তার বাবা বউ পছন্দ করার জন্য মারকিতস গোত্রের এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে। পথে অন্য আর এক গোত্রের এলাকায় যাত্রা বিরতি করে আর সেখানের বোরতে নামক এক মেয়েকেই তেমুজিন পছন্দ করে ফেলে। এরপর সেখান থেকে ফেরার পথে তার বাবাকে শত্রুরা বিষপ্রয়োগে হত্যা করে। আর তখন তার নিজের গোত্রের লোকজন তাদের সব কিছু লুটপাট করে নেয় এবং তেমুজিন কেও খুন করতে উদ্যত হয়। জীবন রক্ষায় শুরু হয় তেমুজিনের যাযাবর পালিয়ে বেড়ানো এক জীবন... তারপর দেখবেন হাজার দুঃখ দুর্দশার সাগর পাড়ি দিয়ে কি করে এই তেমুজিন মহান নেতায় পরিনত হয়...
মুভিটিতে তেমুজিনের সাধারন গোত্রের নেতা থেকে মহান সম্রাটে পরিণত হওয়ার কাহিনীর পাশাপাশি তার স্ত্রী ও প্রেমিকা বোরতের প্রতি অসাধারন ভালবাসা অতীবও সুন্দর ভাবে পরিচালক ফুটিয়ে তুলেছেন। তাই এটি অর্ধ-ঐতিহাসিক মুভি হয়েও আবার এক মনোমুগ্ধকর ভালবাসারও মুভি। যাদের ইতিহাসে আগ্রহ নাই তাদের এই তেমুজিন ও বোরতের প্রেম কাহিনি জানার জন্য হলেও মুভিটি দেখা উচিত। আর যেহেতু এটি একটি অর্ধ-ঐতিহাসিক মুভি তাই এর কাহিনী নিয়ে অনেক তর্কবিতর্ক থেকেই যাবে। তবে শেষে শুধু এটুকু বলব যে চেঙ্গিস খান সত্যিই ছিলেন এক মহান যোদ্ধা ও নেতা। উত্তরাধিকার সূত্রে কোন সাম্রাজ্য নিয়ে শুরু করেননি তিনি অন্যান্য সম্রাটদের মত করে... যা কিছুই তার হয়েছিল সবই নিজ যোগ্যতা বলে অর্জন করেছিলেন...
আর মুভিটির টেকনিক্যাল ব্যাপার গুলোও ছিল প্রায় খুতহীন... চমৎকার সিনেমাটোগ্রাফি সাথে সুন্দর চিত্রায়ন এবং যুদ্ধের অংশ গুলো বেশ পরিস্কার ভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন পরিচালক...
যাদের যাদের ঐতিহাসিক মুভি পছন্দ তাদের জন্য এটি অতি আবশ্যিক... আর বাকি সকল মুভি পাগলের জন্যও দেখা চরম ভাবে আবশ্যিক... কারন এটি সত্যি এক অসাধারণ মুভি...
তাই জানতে চাইলে এক মহান নেতা সম্পর্কে যে সত্যিই অম্লান, দেখে ফেলুন Mongol: The Rise of Genghis Khan....
"I had no place to hide from the thunder... so I wasn't afraid anymore.... "
http://www.imdb.com/title/tt0416044/
টরেন্ট লিঙ্কঃ
সাবটাইটেল
আর যারা মুভিটি দেখেছেন তারা কেমন লেগেছিল তা জানাতে ভুলবেন না।
ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:৪০