আমাদের উপমহাদেশ বা ইউরোপ-আমেরিকা বলে কোন কথা নেই। গোটা পৃথিবীই এখন সামন্তবাদীদের দখলে। মানুষের যেমন শ্রেনী বিভাজন হয়েছে ঠিক তেমনি তাদের কাজও বিভিন্ন শ্রেনীতে বিভক্ত হয়েছে। যারা শ্রমিক শ্রেনীর তার মজুরী(ওয়েজ) পাচ্ছেন আর যারা সাহেব সুবা তারা বেতন(সেলারী) পাচ্ছেন। পশ্চিমারা অবশ্য ভদ্রভাবে বিষয়টাতে একটা শৈল্পিক মাত্রা যোগ করার চেষ্টা করেছেন। তারা বলছেন হোয়াইট কলার জব আর ব্লু কলার জব। খুভ সাভাবিক ভাবেই হোয়াইট কলাররা বেতন পাচ্ছেন। আর ব্লু কলারধারীরা মজুরী পাচ্ছেন। এখন কথা হল এই হোয়াইট আর ব্লু কে নির্ধারন করেছেন? বিষয়টা নিঃসন্দেহে অনেক গভীরের । তবে সোজা দাগে শ্রমিকরা মজুরী পান তাদের ঘন্টা প্রতি কাজের বিনিময়ে। আর যারা শ্রমিক নন তারা বেতন পান মাসিক,বাৎসরিক/পাক্ষিক ভিত্তিতে। প্রশ্ন আসতে পারে যারা শ্রম দেন তারাইত শ্রমিক? কেউ হয়তো কায়িক পরিশ্রম করেন অথবা কেউ মগজ খাটান। তারপরও এত বিভাজন কেন? বিষয়টা খোদ কার্ল মার্কসও সমাধান দিতে পারেন না। আমরা মানুষরাই কিন্তু মানুষদের শোষন করছি, অবহেলা করছি,অপমান করছি। কেন করছি এর উত্তর মানুষকেই দিতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে শ্রমিকদরে ত্রাহি দশা। এদের সামাজিক কোন মূল্য নেই, রাষ্ট্রে এরা অবহেলিত এমনকি নূন্যতম মজুরী বলে যে একটা বস্তু আছে সেখোক থেকেও তারা বঞ্চিত। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১২২ ধারায় বলা হয়েছে, “ কোন মজুরী কাল এক মাসের উধে হবে না। আবার ১২৩ ধারায় বলা হয়েছে ”কোন শ্রমিকের যে মজুরীকাল সম্পকে তাহার মজুরী প্রদেয় হয় সেই কাল শেষ হওয়ার পরবর্তী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাহার মজুরী পরিশোধ করিতে হইবে”। এইবার বুঝেন!! সেদিনও দেখলাম সাভার রানা প্লাজার সামনে ৪ মাসের বেতন নিতে শ্রমিকের লম্বা লাইন !!! আমি বাংলাদেশে শ্রমিকদরে অধিকার নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। এদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা যে কত খারাপা তা কল্পনাও করা যায় না। আমাদের এই হতদরিদ্র শ্রমিকরা সব দিক থেকেই বঞ্চিত। সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সব ক্ষেত্রেই এরা চরম বৈষম্যের শিকার। এর জন্য যে আমরা তথাকথিত শিক্ষিত মানুষরাই দায়ী তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। চলুন আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাই। শ্রমিকদরে প্রতি শ্রদ্ধা করতে শিখি। তাদের প্রাপ্য অধিকার আদায়ের জন্য সামাজিক বিপ্লব ঘটাই। কাজটা কি খুব কঠিন? শুধু প্রয়োজন আত্বসচেতনতা আর মানুষের প্রতি ভালোবাসার মনোবৃত্তি চর্চা। আপনার আদর মাখা হাতটা মানুষের জন্য বাড়িয়ে দিন।