ছবিতে: মুখেশ সিং
সপ্তাহ খানেক আগেই তোলপাড় তোলে লেসলি উডওয়িন পরিচালিত প্রামাণ্যচিত্র 'ইন্ডিয়াস ডটার' বা 'ভারতের কণ্যা'। পাঠকের হয়তো মনে আছে ২০১২ সালে এক মেডিক্যাল ছাত্রী বাসে গণধর্ষণের শিকার হন। আর সেই ঘটনার ভয়াবহতার প্রতিবাদে দিল্লীতে নামে জনতার ঢল। পত্রপত্রিকায় মেয়েটির নাম গোপন রেখে তাঁকে 'নির্ভয়া' নামে অভিহিত করা হয়। মর্মান্তিকভাবে, ১১/১২ দিনের মাথায় নির্ভয়ার মৃত্যু হয়। সে থেকে 'ধর্ষণের রাজধানী' তকমাটা দিল্লীর গায়ে শক্তপোক্তভাবে সেঁটে যায়। এই নির্ভয়ার ধর্ষক মুখেশ সিং কে নিয়েই কাজ শুরু করেন লেসলি।
লেসলি'র ছবিটা কিন্তু রিলিজ হওয়ার আগেই ভারত সরকার নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছিল। তবে, বি.বি.সি. খুব দ্রুততার সাথে সেটাকে ইউটিউবে আপলোড করে দেয়। ব্যাস! আর পায় কে? (বর্তমানে অবশ্য ভিডিওটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে)
মূল পোস্ট ওয়ার্ডপ্রেসে
দেখে টেখে অবশ্য আমি নিজে খুব একটা উল্লসিত না। এমনিতেই ঘটনাটার চুলচেরা বিবরণ দেয়াটাকে বিশেষ জরুরি মনে হয় না। তাছাড়া, দেখা গেলো, লেসলি পুরো গল্পটাই সাজিয়েছেন মুখেশের কথা দিয়ে। কি অদ্ভুত ব্যাপার! ভারতের কন্যার কাহিনী বললো কিনা তার ধর্ষক! আসলে, অন্য সবার (নির্ভয়ার বাবা, মা, বন্ধু, পুলিশ) সাক্ষাতকার বিশ্ব কিন্তু দেখে ফেলেছে এতদিনে। কিন্তু লেসলি'র মুন্সিয়ানার পরিচয় হচ্ছে খোদ মুখেশের সাক্ষাতকার ম্যানেজ করায়। তিনি তা প্রচার করবেন না কেন?
আরো কিছু ভন্ডামির চিহ্ন আছে লেসলি'র কাজে। তিনি প্রশ্নগুলো এডিট করে বাদ দিয়েছেন। তাতে মনে হয় যেন একটি সাধারন আলাপ চলছে। এক পর্যায়ে মুখেশ বললো, মেয়েটির ধস্তাধস্তি করা উচিত হয়নি। আবার আরেক জায়গায় সে বলছে, সে পাঁচ বছর কোন মেয়ের সান্নিধ্য পায়নি। মনেই হতে পারে, ভারতীয় পুরুষরা বুঝি এমনই। কিন্তু কে যে কোন প্রশ্নের উত্তরে কোন কথা বললো, তা বোঝার জো নেই। নির্ভয়ার বাবা-মা'র পাশাপাশি সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে এমন পুরুষ বলতে আছে ধর্ষক মুখেশ এবং তার দুই গাড়ল উকিল। তাদের সম্মিলিত প্রয়াসে লেসলি অবলিলায় দেখিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় পুরুষরা কত আদিম, অসভ্য, বর্বর। এই কাজ গুলো যে কাকতালীয় না, সেটা নির্দেশনা দেখলেই বোঝা যায়। ব্যর্থ অভিনেত্রী লেসলি কিন্তু শ্বেতাঙ্গ হবার দরুন বাঘা ভারতীয় ডিরেক্টরদেরকে পেছনে ফেলে পেয়েছেন জেলখানায় ঢুকে কাজ করার অনুমতি। তাও তিনি প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে ফুটেজ পাচার করেন, এবং ভারতীয় সরকারের রোষানলে পরে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
দিনের শেষে, গল্পটা নির্ভয়ার কেইসটাকে হাইলাইট করেনি। করেছে মুখেশের মাতাল, অমানুষিক চরিত্রটাকে। সেটাও করা হয়েছে এক ধরনের বি.বি.সি. প্রেরিত হোয়াইট সেভিয়ারের দৃষ্টিকোন থেকে। লেসলি এমনকি নরেন্দ্র মোদিকে হালকা লেকচার দিতেও ছাড়েননি। সেটা অবশ্য তিনি করেছেন ভিনদেশের মাটিতে প্রেস কনফারেন্স করে। নিজের যশ আর খ্যাতির কথা ভাবতে গিয়ে, লেসলি উডওয়িন ভারতকে এই নির্মম গল্পের ইতি টানার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছেন।
মূল পোস্ট ওয়ার্ডপ্রেসে
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ২:৩০