অনেক দিন বিরতি দিয়ে একটি গল্প লিখে হাজির হলাম, বাস্তব ও অভিজ্ঞতার আলোকে।
রুমে শুয়ে শুয়ে "গল্পটাতো শেষ হলনাহ,অনেক কথায়
বাকি,মলাট জমাট রঙিন বাধায়,শেষের কথায় ফাকি"
গানটা শুনতেছিলাম।যদিও গানটা নাটকের তবুও কেন
জানি আমার শুনতে অনেক ভাল লাগে। গানের কথার
সাথে আমার জীবনের অনেক মিল আছে। জীবনের গল্প শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে গেল আমার জীবন।কেন জানি
নিজের ভালবাসা হারিয়েও আমি নিজেকে হারিয়ে
যেতে দেয়নি।নিজেকে দমকে যেতে দেয়নি।আর এই না
হারানো আর না দমকানোর পেছনে যে মেয়েটির অবদান
রয়েছে সে হল উরমি।এই মেয়েটিই আমার জীবনে আঠার
মত লেগে আছে।পাশাপাশি ফ্লাটে থাকার সুবাদে ওর
সাথে আমার অনেক দিনের পরিচয়।প্রথমে বন্ধুত্ব ও শেষমেশ জীবনের সঙ্গী হওয়ার দরজায় চলে যায় আমাদের সম্পর্কটা।যদিও সেটা ওর জোরাজুরিতে হচ্ছে।
উরমি যখন আমাকে বলেছিল আমি তোমার বন্ধু হয়ে তোমার পাশে থাকতে চাই,
তখন আমি বলেছিলাম,
--তুমি পারবেনা উরমি।কোন না কোন একদিন মায়ার
জালে পরবেই।তখন কই যাবে তোমার বন্ধুত্ব?
উরমি তখন হেসে হেসে বলেছিল,
--না পারলে আর কি করার?আমিই তোমার লাইফ থেকে
চলে যাব।তুমি খুশি হবে না?
আমি কি বলব বুঝে উঠতে পারিনি সেদিন।কোন কথা না
ভেবেই ওকে বলেছিলাম,
--আচ্ছা তোমাকে চলে যেতে হবে না।আমরা সারাজীবন
বন্ধু হয়েই থাকব কেমন।
আমার মুখে সারাজীবন বন্ধু হয়ে থাকার কথা শুনে উরমির
মুখটা কেমন ফাকাশে হয়ে গেল।সাদা ধবধবে আর লম্বা
নাক ওয়ালা মেয়েটির চেহারা সেদিন কিইনা দেখতে
হয়েছিল তা আমার আজো মনে হলে হাসি পাই।অনেক
হাসি পাই।আমি পারিনি।সেদিনের সেই দেওয়া কথাটিই
আমি রাখতে পারিনি।মেঘের অনাকাঙ্ক্ষিত চলে
যাওয়া আমাকে ভোগাতে লাগছিল।তাই কি করব না করব
যখন ভেবে পাচ্ছিলাম নাহ তখন উরমিই আমার জীবনে
আসে আমার পাশে থাকার জন্যে।যদিও মেয়েটিকে
আমি খুব একটা কাছে ঘেষতে দিতাম নাহ।
বিকেল বেলায় একদিন রুমে শুয়ে ছিলাম আর সেই সময়
উরমির উরো আগমন।ততদিনে আমরা তুমি থেকে তুইতে
নেমে গিয়েছিলাম।তুই বলাটা নাকি উরমির অনেক
পছন্দের।তো হঠাতি উরমি ঝড়বেগে এসে আমাকে বলল,
--একটু ভালবাসতে পারিস নাহ?একটু কেয়ার করতে
পারিস নাহ?পারিস তো শুধু আমার থেকে দুরে থাকতে।
আমি তখন হেসে ফেললাম ওর কথা শুনে।আমার হাসি
দেখে উরমি আরো রেগে গেল।ওর রাগান্বিত ভাবটাকে
আর রাগাতে আমি বললাম,
--নাহ পারিনা।কেন ভালবাসবো তোকে?তুইনা আমার
ফ্রেন্ড?
উরমি তখন আমার শোয়া অবস্থায়ই আমার পাশে বসল।ওর
চেহারার মধ্যে কেমন জানি দুঃচিন্তার ছাপ দেখতে
পেলাম আমি।কেমন মন মরা মরা ভাব।সে তখন আমাকে
বলল,
--কেন পারিস নাহ?
কি করলে পারবি?
আমাকে কেন বুঝিস না তুই?
আমি ওর কথার মধ্যে সিরিয়াসের গন্ধ পেলাম।ওর
কথাতে এতটা সিরিয়াসের ভাব আমি দেখিনি আগে
কোনদিন।তাই ওকে বললাম,
--কি হইছে তোর?মাথা ঠিক আছে তো?
ঘুম হয়নি নাকি রাত্রে?
এবার উরমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।আমি বুঝলাম কিছু
একটা হয়েছে।মেয়েটা হয়ত ভয় পেয়েছে।আমাকে সে
বলল,
--সপ্নে দেখলাম তুই অন্যের হয়ে গেছিস।তাই সময়
থাকতে আমিই আগে তোর দুয়ারে হাজির হয়েছি।
আমাকে ফিরিয়ে দিস না প্লিজ।
এবার আমি উরমির কথা শুনে সত্যিই হেসে ফেললাম।
আমার হাসি দেখে উরমি হা করে তাকিয়ে ছিল।আমার
পাশে বসে আমার দুই ঠোটের মাঝে তার আঙুল দিয়ে
আমার হাসি বন্ধ করার সংকেত দিয়ে বুঝিয়ে দিল কোন
হাসি নয়।আমি হাসি থামিয়ে ওকে বললাম,
--তাহলে এই কথা?
এই সপ্ন দেখেছিস।
উরমি বসা থেকে উঠে জানালার ধারে গিয়ে দাড়ালো।
দারিয়ে বাইরের পরিবেশটা ভাল ভাবেই দেখতে লাগল।
আমি শোয়া থেকে উঠে ওর পাশে গিয়ে দাড়ালাম আর
ওর কাধে হাত দিলাম।মেয়েটি আমার হাতের স্পর্শ
পেয়ে চমকিয়ে উঠল।আমি পেছন থেকে ঘুড়িয়ে ওকে
সামনে দাড় করালাম।আর বললাম,
--আমি হারিয়ে যাচ্ছি না রে পাগলি।আমাকে নেওয়ার
মত সাধ্য কারোর নেই।
উরমি মন খারাপের একটা আভা দিয়ে আমার হাতে হাত
রেখে বলল,
--আমারো নেই বুঝি?
আমি উরমির হাতের উপর হাত দিলাম।বাহ মেয়েটির
হাতটা তো বেশ সুন্দর।এই ভাবে এত কাছে থেকে ওকে
কখনো খেয়ালি করিনি।ভাবছি মেয়েটিকে আর কস্ট
দিবনা।কি লাভ আমাকে নিয়ে এই ভাবে দুঃসপ্ন দেখার।
তার চেয়ে আজ থেকে আমাকে নিয়ে সুখের সপ্নই দেখুক।
আমি কিছু বলার আগেই উরমি আমাকে জরিয়ে ধরে বলল,
--খুব ভালবাসি রে তোকে।খুউউব খুউউউব।
আমি উরমিকে কিছু না বলে ওর চুলের গন্ধে হারিয়ে
যেতে লাগলাম।কি সুন্দর গন্ধ।আমাকে একদম মাতাল
করে দিল।মনের ভেতর থেকে একটাই কথা বেত হতে
লাগল।প্রতিদিন এই পাগলি মেয়ের চুলের গন্ধের
মাদকতাই হারাতে হলেও এই মেয়েকে আমার চাই।একদম
কাছে চাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫২