ডিএনএ আবিষ্কারের ৬০ বছর ও বাংলাদেশ: গন্তব্যে পৌছনোর ট্রেনটিতে উঠতে হবে এখনই
ডিএনএর গঠন আবিষ্কারের পরপরই এর ব্যবহারিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক সম্ভাবনা তৈরি হয়। বলাবাহুল্য উন্নত বিশ্ব সেই বিপ্লবের পথে যাত্রায় কোনো সময়ক্ষেপণ করে নি। একের পর এক বিস্ময়কর আবিষ্কার সংঘটিত হয়েছে ডিএনএকে ঘিরে। এর পরিবর্তন, পরিমার্জনের মধ্য দিয়ে জীবনের রহস্য উদঘাটনে বিজ্ঞানের চিরন্তন অভিযাত্রায় অভিনব গতি সঞ্চার হয়েছে। তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানের নতুন নতুন শাখা। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিকশিত বিষয় নিঃসন্দেহে জিন প্রকৌশল এবং আধুনিক জীবপ্রযুক্তি যা বর্তমান বিশ্বে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড বায়োটেকনোলজি নামে অভিহিত। ডিএনএ কথাটির পূর্ণ রূপ হচ্ছে Ñ ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিয়িক এসিড। কোষে দুটো রাসায়নিক সূত্র সিড়ির রেলিং-এর মতো পেঁচিয়ে তৈরি হয় একটি ডিএনএ অণু। সকল জীবিত কোষেই থাকে ডিএনএ যা জীবের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে। ডিএনএর কার্যিক একককে বলা হয় জিন। সুতরাং জিন আসলে ডিএনএরই অংশ। ১৯৫৩ সালে ডিএনএর এই গঠন আবিষ্কারের পর থেকে জিন সম্পর্কিত ধারণার বিকাশ ঘটতে থাকে। এর ভিত্তিতে জিনকে পরিবর্তন বা পরিমার্জন করে জীবের বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আনার কাজ শুরু হয় গত শতকের সত্তরের দশকে। সে সময় থেকেই জিন প্রকৌশল এবং আধুনিক জীবপ্রযুক্তির যাত্রা শুরু। বর্তমানে কৃষি, স্বাস্থ্য, পরিবেশ সবক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবনে পৃথিবীকে এক নতুন স্বপ্নের মহাসড়কে হাজির করেছে জিন প্রকৌশল এবং জীবপ্রযুক্তি। মাত্র কয়েক দশক আগেও এটা ছিলো মানুষের কল্পনার অতীত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১-২০১০ এই দশ বছরে বেসরকারি খাতে প্রায় ৩০ লক্ষ লোক চাকুরি হারিয়েছিল, কিন্তু তখন জীবপ্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক বিস্তার ঘটায় প্রায় ১ লক্ষ লোকের নতুন কর্মসংস্থান হয়। মার্কিন অর্থনীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি বায়োইকোনমি আপডেট অনুসারে ২০১০ সালে শুধুমাত্র জিএম শস্য থেকে আসা রেভিনিউ এর পরিমাণ প্রায় ১১০ বিলিয়ন ডলার। জীবপ্রযুক্তিভিত্তিক চিকিৎসা পণ্য (৭৫ বিলিয়ন ডলার) ও শিল্পজাত পণ্য (১১৫ বিলিয়ন ডলার) থেকে আসা আয়সহ জীবপ্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য থেকে আসা মোট রাজস্বের পরিমাণ প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ। এতো গেল উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কথা। প্রতিবেশী এশীয় দেশ মালয়েশিয়ায় ২০০৫ সালের আগে কোন প্রকার জীবপ্রযুক্তি ব্যবহারের উদাহরণ ছিল না। ২০০৫ সালে তারা সরকারিভাবে ন্যাশনাল বায়োটেকনোলজি পলিসি প্রণয়নের পর ২০১২ সালে মাত্র সাত বছরের মাথায় জীবপ্রযুক্তিভিত্তিক এই খাতে প্রায় ৫৫০০০ লোকের কর্মসংস্থান হয়। আর এ খাতে আয় হয় প্রায় সাড়ে ১৩ বিলিয়ন মালয়েশিয়ান মদ্রা। এটি দেশটির মোট জিডিপির প্রায় ২.২ শতাংশ (সূত্র: মালয়েশিয়ান বায়োটেকনোলজি কর্পোরেশন) আর ঘরের পাশের দেশ ভারত জীবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করে ২০১১ সালে আয় করে ৪ বিলিয়ন ডলার (সূত্র: দৈনিক দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস). তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে যখন এ সকল খবর আমাদের দোড়গোড়ায় তখন প্রশ্ন উঠতেই পারে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়? এ প্রশ্নের উত্তরে খুব আশাব্যঞ্জক চিত্র আঁকা যাবে না। যদিও সময় একেবারেই চলে যায় নি। তবে খুব বেশিদিন অপেক্ষারও সুযোগ নেই।
নতুন প্রজাতির উন্নত উদ্ভিদ বা ফসল উদ্ভাবন করতে চাইলে প্রয়োজন ডিএনএ ও জিন নিয়ে গবেষণা, নানান রোগ নির্ণয়ে প্রয়োজন ডিএনএর বিশেষ পরিবর্তনকে চিহ্নিত করা। ক্রমবর্ধমান জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় বিকল্প সমাধান হতে পারে জিন প্রকৌশল তথা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে জীবকোষ থেকে জ্বালানির রসদ তৈরি। খাদ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি ও স্বাদ পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন এনজাইম নামের বিশেষ কোষ-নিঃসৃত পদার্থ তৈরি, বস্ত্র শিল্পে রাসায়নিক রঙ ব্যবহারের জটিলতা দূর করতে কিংবা চামড়া প্রক্রিয়াজাত কারখানায় দূষণ প্রতিরোধ করতে প্রয়োজন ক্ষুদ্র অণুজীবকে জীবপ্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহার করা। খুব সাধারণ একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে এখানে। বিদেশে রপ্তানিকৃত চিংড়ি ফেরত আসার দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা অহরহ ঘটে আমাদের দেশে। কিন্তু চিংড়ির সাধারণ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ পরীক্ষার উপযোগী ল্যাবরেটরি স্থাপন করলে মাছ রপ্তানির আগেই জানা যেত তার গুণগত মান। আমাদের দেশে জীবপ্রযুক্তি বিষয়ে পাশ করা শিক্ষার্থীদের পক্ষেই এ ধরনের টেস্ট করা সম্ভব। এমন আরো অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে বায়োটেকনোলজি ব্যবহার করা যায়।
প্যাটেন্ট তথা মেধাস্বত্বের আওতায় পৃথিবীর অধিকাংশ প্রাণী ও উদ্ভিদ বিভিন্ন দেশের অধিকারে চলে যাচ্ছে। শুধুমাত্র ডিএনএ-র সিকুয়েন্স উন্মোচন করে কিংবা ডিএনএ বারকোডিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন জীবের গঠনগত প্রকৃতি দেখিয়েই অনেক দেশ এগুলো তাদের অধিকারভুক্ত করে ফেলছে। কিন্তু আমাদের দেশে এ নিয়ে কোন চিন্তাভাবনাই নেই। পাট ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে আমরা এই উদ্যোগ দেখিনি। এ বছরের শুরুর দিকে ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক জরিপে দেখানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে এই মুহূর্তে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল জীবপ্রযুক্তি বিষয়ক চাকুরি। বিশেষত ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো কর্মক্ষেত্র বিস্তারে জীবপ্রযুক্তিকে অন্যতম প্রধান অবলম্বন হিসেবে নিয়েছে। অথচ আমাদের দেশে এ নিয়ে তেমন সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফার্মাসিস্টের পাশাপাশি মাইক্রোবায়োলজিস্ট, কেমিস্ট, অনেক ক্ষেত্রে বায়োকেমিস্ট এর পদ থাকলেও বায়টেকনোলজিস্ট এর কোন পদ নেই। এ কথা সত্য যে বাংলাদেশের প্রায় সব প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন জীবপ্রযুক্তি বিষয়ক বিভাগ আছে। সেসব বিভাগ থেকে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ শতাধিক স্নাতক বের হচ্ছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে দক্ষ জীবপ্রযুক্তিবিদ হিসেবে তাদেরকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা এবং উদ্যোগ কোনটাই নেই। না বিশ্ববিদ্যালয়ে না সরকারি নীতি নির্ধারক পর্যায়ে। এ কারণে জীবপ্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশুনা করে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই হয় পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে অথবা দেশের ভেতরে অন্য পেশায় অংশ নিতে বাধ্য হচ্ছে। বলাবাহুল্য যারা বাইরে যাচ্ছে তারা দেশের অনিশ্চিত বাস্তবতায় ফিরতে খুব একটা উৎসাহ বোধ করছে না।
আমরা মনে করি জীবপ্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা এবং ব্যবসাকে উৎসাহিত করার এটাই সময়। এ বিষয়ে সরকারি বেসরকারি উভয় ধরনের উদ্যোগ দরকার।
(লেখকবৃন্দ চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের তরুণ শিক্ষক)
আদনান মান্নান, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বর্তমানে পিএইচডি গবেষক , কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া, মেইল[email protected]
মুশতাক ইবনে আয়ুব। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বর্তমানে পিএইচডি গবেষক , অক্সফর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, মেইল[email protected]
এস এম মাহবুবুর রশিদ, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বর্তমানে পিএইচডি গবেষক, ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়, মেইল- [email protected]
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন