হরিনী হঠাত পেছন ফিরলো। আমি আমার জীবনে এতো সুন্দর চোখ দেখিনি।জিজ্ঞেস করলো,
: সতেরো নম্বরের উত্তর কোনটা?
:-উমম, খ ?
: আরে না, খ হবার প্রশ্নই আসে না, ক আর ঘ এর মাঝে কোনো একটা হবে।
:-ওহ আমারও সন্দেহ হচ্ছিলো
: তুমি পড়ে আসবা না?
আমি আসলেই পড়ে আসি নাই। আমি জানতামও না হরিনীর সাথে কেমিস্ট্রি তৈরী করতে এসে আমাকে কেমিস্ট্রি পরীক্ষা দিতে বসতে হবে।
এই রুমের কেউই আমার পরিচিত নয়। আমি এই কোচিং সেন্টারেও ভর্তি হই নি। হরিনীর পেছন পেছন চলে এসেছি!
**
এইচএসসি পরীক্ষার পর ভর্তি হয়েছিলাম “ওমেকা” নামের এডমিশন কোচিং সেন্টারে। পান্থপথের এক মেসে ছিলাম। সকালের শিফটে ক্লাস। সেখান থেকে রিক্সা নিয়ে প্রতিদিন ফার্মগেট আসি।
স্পষ্ট মনে আছে- সেদিন সকালে থেকেই ঝুম বৃষ্টি। রাস্তায় রিক্সা নেই। কিছুক্ষন অপেক্ষার পর এক রিক্সা পেলাম। এই রিক্সা নিয়ে অবাক করা এক ঘটনা ঘটলো। রিক্সাওয়ালাকে এক সাথে দুজন ডাকলাম।
: এই রিক্সা ফার্মগেট যাবা ?
:- এই রিক্সা যাবেন ? সাইনরাইজ কোচিং ?
প্রথমবারের মতো মেয়েটাকে দেখলাম। রাস্তার ওপাশে দাঁড়িয়ে ছিলো তাই খেয়াল করিনি আগে। মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলাম। কালো হরিনী চোখ বোধহয় একেই বলে। হরিনীর কানে হেডফোন। বুঝলাম কেন সে আমার ডাক শোনেনি। স্বর্ণকেশে একবার হাত বুলিয়ে সে আবারো রিক্সাওয়ালাকে ডাকলো- “যাবেন আপনি?”
রিক্সাওয়ালা আমার দিকে অনুমতি প্রার্থনাসূচক দৃষ্টিতে তাকালো। হাসলাম। ইঙ্গিতে বোঝালাম ওদিকে যেতে।
প্রথমে হেঁটে দৌড়ে,পরে আরেকটা রিক্সা নিয়ে মেয়েটির পিছু নিলাম। বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম সানরাইজে এখন টিউটোরিয়াল চলছে। যে কেউ যেকোনো শিফটে যেকোনো ক্লাসে ক্লাস করতে পারে। সাথে সাথে ফোন দিয়ে বন্ধুর রোল নাম্বারটা জেনে নিলাম।
সাহস করে ঢুকেই পড়লাম কোচিং সেন্টারে। উঠে পড়লাম ছয় তলায়। হরিনীর পিছু পিছু গিয়ে ঢুকলাম তারই ক্লাসে। বসলাম তারই পেছনের সিটে। পরীক্ষার মাঝেই হয় উপরের আলাপচারিতা।
আরেকটু কথা বলার অজুহাতে আমিও জিজ্ঞেস করেছিলাম, ১০ আর ১১ নম্বরের উত্তর।
সে হেসে জানিয়েছিলো ১০ নম্বরের উত্তর গ আর ১১ এর ক।
মনে মনে বিধাতাকে ধন্যবাদ দিলাম বৃষ্টিভেজা এই রোমান্টিক দিনে একই সাথে সুন্দরতম চোখ আর সুন্দরতম হাসি দেখিয়ে দেয়ার জন্য। তবে নিজ ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আসায় বিধাতা যে আমার উপর নারাজ হয়েছিলেন তা আমি তখনো টের পাইনি।
**
সেদিন বসে বসে তিনটা পরীক্ষা দিলাম। ছুটি হলে মেয়েটা ব্যস্ত ভঙ্গিতে নিচে নেমে গেলো। রাস্তার পাশে দাঁড়ালো। আমিও নামলাম। তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে পরলাম।। সাহস সঞ্চয় করছি কথা বলবো বলে। মনে মনে ঠিক করছি কিভাবে শুরু করবো। কিভাবে ঠিকানা চাইবো।
রিহার্সেল শেষ। কথা শুরু করতে যাবো ঠিক সেই মুহুর্তে কোথা থেকে যেনো একটা রিক্সায় করে পাঞ্জাবী আর জিন্স পড়া-চুলে জেল দেওয়া ছেলে এসে হাজির। হরিনী খুশিমনে গিয়ে বসলো ছেলেটার পাশে। হাতে হাত ধরে তারা হাসতে হাসতে চলে গেলো আমারই সামনে দিয়ে !ঘটনার আকস্বিকতায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। সামলে নিতে বেশ সময় লেগেছিলো সেদিন।
সানরাইজ কোচিং সেন্টারে আর কোনোদিন ফ্রি ক্লাস করতে যাই নি। ওমেকাতেও আর কোনোদিন ক্লাস মিস দিইনি। কোনো মেয়ে দেখলেই আর তার পিছন পিছন হাঁটা না দেওয়ার মহা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটাও আমি এই ঘটনা থেকেই পেয়েছি!