নাওয়ার খান (রুশান) কে নিয়ে খুব বেশি পোষ্ট এখন আর ব্লগে আসে না। ফেসবুকে রুশানের জন্য খোলা গ্রুপগুলোতেও এখন আর তেমন কেউ ঢু মারে না। রুশানের জন্য করা ক্যাম্পেইনগুলোও যে যার মতো শেষ করেছে। চিকিৎসার জন্য দরকার ছিল সর্বমোট পনেরো লক্ষ টাকা। ব্লগারদের সংগ্রহে আছে তিন লাখ টাকা। রুশানের মায়ের একাউন্টে আছে চার লাখ। সব মিলিয়ে আমাদের হাতে আছে সাত লাখের মতো টাকা। দরকার আরো আট লাখ! এটাই কি রুশান-যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টা নয়? তবে সবকিছু এমন ঝিমিয়ে গেছে কেনো? আমাদের মাঝে এমন হালছেড়ে দেয়া সৈনিকের ভাব কেন? আমরা কি তীরে এসে তরীটা ঢুবতে দেবো? হেরে যাবো?
গত অক্টোবরের শেষ দিক থেকে বিভিন্ন ব্লগের সন্মানিত ব্লগারগনদের সামনে রুশানকে উপস্থাপন ও সু-চিকিৎসার জন্য মানবিক আবেদন করা হয়।ফেসবুকেও চলতে থাকে প্রচারণা। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ডিতে আয়োজন করা হয় চিত্র প্রদর্শনীর। সব মিলিয়ে গত ডিসেম্বর মাসে রুশানের জন্য বেশ ভালো অর্থ সহায়তা পেয়েছি আমরা, আর এ বছর জানুয়ারীতে আর তেমন কোন সহায়তা পায় নি বললেই হয় তবে এখনও আশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে। চেষ্টা চলছে বাকী অর্থ সংগ্রহে একটি কনসার্ট আয়োজনের।
কেমন আছে রুশান বাবু?
রুশানের স্বাস্থ্যটা আগের মতই আছে। দ্রুত হাঁপিয়ে উঠে, বমি বমি ভাবটা সারাক্ষন লেগেই থাকে, কখনো হাত পা ঠন্ডা হয়ে আসে।রক্ত চলাচল স্বাভাবিক মত হয় না বাবুটার সারা দেহে। । আর সে নিজে গুছিয়েও বলতে পারে না কী হয়েছে তাঁর!!
চিকিৎসা পর্বটা দিল্লিতে হবে। দিল্লিতে যাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রুশানের এবং তার আম্মুর পাসপোর্টটা হয়ে গেছে বলে জানালেন তার নানী।
সবকিছু ঠিক হলে রুশানরা ঢাকা আসবে ভারতীয় ভিসার জন্যে আবেদন করতে।আর তা হাতে পেতেও কিছুটা দেরি হবে। এদিকে ডাক্তার বলেছেন যত দ্রুত সম্ভব দিল্লিতে নিতে হবে। কিন্তু আমরা যে প্রয়োজনীয় টাকাটাই যোগার করতে পারলাম না আজও। কবে পুরো টাকাটা যোগার হবে, কবে রুশানের ভিসা হবে, কবে তার চিকিতসা শুরু হবে এইসব ভাবলে আমার নিজেরই টেনশনে অস্থির লাগে, রুশানের মায়ের কথাটা চিন্তা করুন একবার।
কনসার্ট ফর রুশানঃ
রুশানের জন্য একটি কনসার্ট আয়োজন করা যায় কিনা সে বিষয়ে আমাকে প্রথম জানায় ব্যান্ডের সাথে আছেন এমন একজন ঘনিষ্ট বড় ভাই। তিনি বলেন যে তার সাথে যেহেতু অনেকের পরিচয় আছে তাই আর্টিস্ট ম্যানেজ করাটা খুবই সম্ভব। রুশান টীমের এক ব্লগারকে এ কথা জানালে তিনি বলেন এমন একটা কনসার্ট আয়োজন করা যায় কিনা সে বিষয়েই তারা ভাবছেন। দুই একদিনের মধ্যেই কনসার্টের ব্যাপারে ব্লগারদের একটা মিটিং হয়। মাঠ ম্যানেজ করা, স্পন্সর জোগার করা এবং আর্টিস্ট ম্যানেজ করার দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয় কয়েকজন ব্লগারকে। প্রথমে যে মাঠে কনসার্ট আয়োজনের চেষ্টা করা হলো তারা জানালো যে মাঠ তারা দেবে তবে এজন্য তাদের দিতে হবে পাঁচ লাখ টাকা! স্বাভাবিক ভাবেই ঐ ব্যয়বহুল মাঠে আমাদের পক্ষে কনসার্ট আয়োজন করা সম্ভব হয় নি। শেষে সম্ভাব্য ভেন্যু হিসেবে ঠিক হলো বনানী মাঠ। খুব সম্ভবত দুই একদিনের মধ্যে বনানী মাঠই কনফার্ম হয়ে যাবে। যারা মাঠ ম্যানেজের দায়িত্বে ছিলেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। আর্টিস্ট ম্যানেজের দায়িত্বে যারা আছেন তাদের কাজও খুব ভালোভাবে এগিয়ে চলছে। সব কিছু ঠিক থাকলে কনসার্টের সম্ভাব্য ডেট হতে পারে মার্চের প্রথম সপ্তাহেই। এ নিয়ে বিস্তারিত ব্লগ খুব তাড়াতাড়ি আমরা আয়োজকদের কাছ থেকে পাবো।
কয়েকজনের কদর্য চেহারাঃ
কি ভাবছেন? যারা রুশানের জন্য নিরলস কাজ করে যাওয়ার মধ্যে সিন্ডিকেট বাজি আর হিটখোর খুজেন তাদের চেহারাটা তুলে ধরবো? চিনি সবাইকেই। আজ বরং তাদের কথা থাক। অন্য একটা শ্রেনীর কদর্য চেহারাটা তুলে ধরি।
কিছুদিন আগে আমার, ব্লগার স্বপ্নবিলাসী ও মুভি লাভারজ ব্লগের ব্লগার ফিরোজের বন্ধুদের সংগ্রহ করা সাড়ে ছয় হাজারের মতো টাকা রুশানের মায়ের একাউন্টে পাঠিয়েছিলাম। ব্লগার রীতিমত লিয়ার অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আত্বীয়ের তেরো হাজার টাকাও একই একাউন্টে পাঠানো হয়। এই দুই এমাউন্টের প্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়ার জন্যে রুশানের নানীর সাথে যোগাযোগ করি। বিশেষ করে প্রবাসীদের পাঠানো টাকাটা তারা পেয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করাটা জরুরী ছিলো। আজ রুশানের নানী এ ব্যাপারে নিশ্চিত করলেন। সেই সাথে তার সাথে কথা হলো রুশানের শারীরিক অবস্থা, চিকিৎসা ও নানা বিষয়ে। জানতে পারলাম কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও।
বিভিন্ন প্রচারণায় এবং জাতীয় দৈনিকে রুশানের নানীর মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করায় প্রতিদিনই তিনি নানা ধরনের ফোন পান। অনেকেই সাহায্য করেন, অনেকেই সাহায্যের আশ্বাস দেন,অনেকেই নানা কথা বলে তাকে বিব্রতকর অবস্থায়ও ফেলেন। কিছু ঘটনা না বলে থাকতে পারছি না। কিছুদিন আগে নানী একটি ফোন পান। যিনি ফোন করেন তিনি জানান যে এক জাতীয় দৈনিক থেকে নাম্বার পেয়ে বিস্তারিত জানার জন্যে ফোন দিয়েছেন। তবে রুশানের ব্যাপারে কোনো কথা না বলে তিনি সরাসরি রুশানের মায়ের বয়স জানতে চান। নানী সরল মনে জানালে তিনি যে কথাটা বলেন তা শুনে রাগে আমার গা কাঁপছিলো। লোকটা জানায় যে রুশানের চিকিৎসার জন্য পনেরো লাখ টাকা দিতে তিনি রাজী আছেন, তবে বিনিময়ে তিনি অফারটা দেন তা কোনো মানুষের পক্ষে দেয়া সম্ভব না। রুশানের মা ও নানী সেদিন সারারাত কেঁদেছেন।
অনেকেই ফোন করে রুশানের নানীকে পর্যন্ত এসব কথা শোনাতে ছাড়েন না। সেটা তিনি একজন বয়স্ক মহিলা তা জানার পরও! আর 'টাকা নেই তাহলে ভিক্ষা করেন না কেন?' জাতীয় সরাসরি আর ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তাতো তিনি প্রতিদিনই শোনেন !!
সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করে অনেক আশা নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে রুশানের পরিবার। তাদের চোখে একটাই স্বপ্ন। রুশান আবার হাসবে। খেলবে। সারাবাড়িটা মাথায় তুলবে। আসুন আমরা রুশানের জন্য আরেকবার জেগে উঠি।