“২০১০ সালের অক্টোবর মাসের কথা। কিশোরী একটি মেয়ে। কলেজে গিয়েছিল ক্লাস করতে। জুয়েলস অক্সফোর্ড ইন্টার ন্যাশনাল স্কুল, সিরাজগঞ্জ। সৃজন নামে তার এক সহপাঠী তার দিকে এগিয়ে এলো। হাতে লাল গোলাপ। মেয়েটি ভেবেছিলো, তাকে হয়ত প্রপোজ করবে ছেলেটি। স্বভাবজাত নারীসুলভ চোখে তাকিয়ে ছিল সে। ছেলেটি হাসিমুখে এগিয়ে এলো। তার বন্ধুরা ভিডিও করছে ঘটনাটি। ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসল। তারপর, আকস্মাত সজোরে মেয়েটির গালে চড় বসিয়ে দিলো।“ – ভিডিওটি শেষ। মাত্র ২১ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি অনেক কিছু বলে দেয়। বলে দেয়, আমাদের সমাজের মেয়েরা কতটা অনিরাপদ। স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট, বাস বা গনপরিবহন কোথাও তাদের নিরাপত্তা নেই,কারো কাছেই নেই।
ভিডিওটা দেখার পর একজনের কমেন্ট ছিল “ভিডিওটা যখন দেখি মনে হচ্ছিল, এই চরটা যেন আমারও গালে এসে পড়লো, পড়লো আমার প্রতিবেশি মেয়েটার গালে, চেনা অচেনা সকল মেয়ের গালে, যার মাঝে আছেন সকল মা, সকল কন্যা, সকল স্ত্রী, বোন, সব সম্পর্কের নারীরাই। যেনো অভব্যতা আর অশিষ্ট সমাজের কুশিক্ষার ক্লেদের ছাপ গড়িয়ে পড়লো তাদের সকলের চিবুক বেয়ে। যেন সকল সভ্যতা, কমনীয়তা আর মাধুর্য সপাটে এক চর খেলো কোন কুৎসিততম জন্তুর হাতে। “
ছেলের বাবার হেব্বি পাওয়ার। আইনের লোক। পুলিশের ওসি। তাই, স্থানীয় ভাবেই “শালিস” বসিয়ে মীমাংসা হয়ে গেলো ঘটনাটির। তারপরেও ভিডিও ক্লিপটি রয়ে গেলো ছেলেটি এবং তার বন্ধুদের কাছে। একবছর পর মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেলো। ওসি বাবার ঘুষের টাকায় ধানমন্ডির ফ্লাট বাসায় বড় হওয়া নরপশুটিরও বিদেশ পাড়ি জমানোর সময় হল। আর, বিদেশ যাওয়ার আগে কৌশলে সেই ভিডিওটি ছড়িয়ে দেয়া হল ফেসবুকে। হাজার হাজার মানুষ হাত তালি দিলো তা দেখে। ভিডিওটির শিরনামঃ “যে মেয়েরা ভাব নেয়, তাদেরকে এভাবেই মারা উচিৎ।“
উচিৎ ?? আমরা যদি এইটাকেই উচিৎ বলে মেনে নেই, আমি নিশ্চিত আমার আদরের বোনটা যেই কলেজে পড়তে যায়, শেখানেও এই ধরনের কুলাঙ্গার জন্মাতে দেরি করবেনা।
ভালো করে চিন্তা করে দেখুনতো, উপরের ঘটনার আসল ভিক্টিম কে? মেয়েটি? সে হয়ত অপমানে কাঁদবে। হয়ত, রাস্তায় দেখলই পশুরা দাঁত কেলিয়ে হাসবে। হয়ত, তার শশুরপক্ষ তাকে ভুল বুঝবে। হয়ত, আরও অনেক কিছু! তারপর? এই সমাজটা? এই সমাজটা কি ভিক্টিম নয়? আমি, আপনি? আমরা ভিক্টিম নই? বিভিন্ন সময়ে এই ধরনের জানোয়াররা ছাড় পেয়েছে বলেই, আজ নতুন জানোয়ারের উত্থান। এই জানোয়ারকে ছাড় দিবেন? নতুন জানোয়ার উঠতে বেশি টাইম নিবেনা।
যদি কিছুটা বিবেক নাড়া দিয়ে থাকে,তবে গর্জে উঠুন। এই জানোয়ারগুলারে আইনের সম্মুখীন করুন। আসুন হাতে হাত মিলিয়ে এই সমাজটা পরিবর্তনের জন্য কাজ করি। নারীর জন্য নিরাপদ একটি সমাজ তৈরির দায়িত্ব প্রীতিটি পুরুষের, প্রতিটি নারীর। প্রতিটি মানুষের।
ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর সচেতন ব্লগার ও ফেসবুকাররা গনতদন্তের মাধ্যমে কালপ্রিটদের খুজে বের করে।
এরা হচ্ছেঃ
১। সৃজন আহমেদ ( http://www.facebook.com/01611335665szn ) ফোন নং- 01611335665 , বাবার নামঃ আবুল কালাম আজাদ, বগুড়ার ধুনট থানার অসি। ফোনঃ ০১৭১১১৫৩০৩৭, বাসাঃ রোড নং- ০৫,বাড়ী নং- ২৪,ফ্ল্যাট নং- ডি৫, ধানমন্ডি। এ-ই ভিডিওটিতে মেয়েটিকে অপমানিত করে।
২. শিপলু,( https://www.facebook.com/shibly.shipu ) এ-ই সেটা ভিডিও করেছে। ফোনঃ ০১৬৭৪৮২৭৪৬৩ , বাড়ি সিরাজগঞ্জ, এখন ঢাকায়ই থাকে। পড়ে, DIFT BMLএ। ক্যাম্পাসের ঠিকানা ঃ মিরপুর ১০ (স্টেডিয়াম এর ৫ নাম্বার গেট এর অপজিট)
৩, মাসুদ রানা, (http://www.facebook.com/kushtiar.p.masud ) এ-ই ফেসবুকে সেই ভিডিওটা ছড়িয়ে দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সে সৃজনের বন্ধু। এর প্রোফাইলে AIUBর স্টুডেন্ট লিখা আছে। এর ঠিকানা এবং পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া জায়নি।
এই বেজন্মাদের বিরুদ্ধে আইনি বেবস্থা নিন। এবং এদের সর্বচ্ছ শাস্তি নিশ্চিত করুন।
এদের বিরুদ্ধে গন মামলা করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ফেসবুকের এই ইভেন্টে যোগ দিন এবং এজাহারে সাক্ষর করে সক্রিয় ভাবে মামলায় অংশ নিন। এই জানোয়ারগুলোর শাস্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব কারো একার নয়। আপনার আমার সকলের। প্রতিটি বিভাগীয় শহর এবং প্রবাসী ব্লগারদের এজাহারে সিগনেচার করার সুযোগ রয়েছে। সাইবার ক্রাইম, আইসিটি এক্ট ২০০৬ সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের বিশেষ সহযোগিতা কামনা করছি।
Respect Women, Be a REAL man.
এই সংক্রান্ত গুরত্তপূর্ণ পোস্ট সমুহঃ
১। ভিডিওটির ব্লার ভার্সনঃ Click This Link
১। সুশান্তের ব্লগঃ http://www.amarblog.com/sushanta/posts/157199
২। সুশান্তের ফেসবুক: http://www.facebook.com/sushanta.dasgupta
৩। অরিজিনাল জামিরের ফেসবুকঃ http://www.facebook.com/TrialVersion22
৪। সুখন’এর ভিডিও ব্লগ: Click This Link
৫। উন্মোচনের নিউজ লিংকঃ Click This Link