পোস্ট এর শুরুতেই সবার প্রতি একটি অনুরোধ … আপনি যদি সত্যিই একজন বাংলাদেশি হয়ে থাকেন … এক জন বাংলাদেশি হিসেবে মাথা উচু করে দাড়াতে গর্ব বোধ করেন তবে আসুন প্রত্যেকের ব্যক্তিগত দল বা মতাদর্শ থেকে বেরিয়ে নিরপেক্ষ ভাবে যে যার অবস্থান থেকে যেটাতে দেশের ভালো হয় … দশের ভালো হয় তা করি … …
আমি আজ আপনাদের সাথে আমার খুব একান্ত ব্যক্তিগত কিছু মতাদর্শ বা দর্শন যায় বুলুন তা শেয়ার করবো … জানি অনেকেরই তা ভালো লাগবে না … কারন আজকালের এই এগিয়ে যাওয়া সমাজে আমি এক পিছিয়ে পড়া মানুষ … এই ইট কাঠের যান্ত্রিক জীবনে আজও অন্যায় নিপীড়ন অবিচার আমাকে নাড়া দেয় … ভাবতে বাধ্য করে … ভালো না লাগলে সমোলোচনা করুন কিন্তু তা হতে হবে গঠনমুলক যা থেকে আমি আমার ভুল গুলো শুধরে নিতে পারি … যে সমলোচনায় দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায় … তবে যাই হোক কথা একটাই দেশের মঙ্গল চাই … তা যদি আমার মতাদর্শকে বিসর্জন দিয়েও হয় আমি রাজি … …
অনেক কথা বলে আপনাদের বিরক্ত করলাম বোধ হয় … যা হক মূল প্রসঙ্গে আসা যাক…
বাংলাদেশ … এক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র … ১৬ কোটি মানুষ আজ স্বাধীন … আমরা চাইলেই আজ নিজের ভাষায় কথা বলতে পারি … গাইতে পারি … বুকে হাত রেখে গর্ব করে বলতে পারি এ দেশ আমার … কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে … এ দেশটি খুব সহজেই এমনটি হয়নি … আমরা যারা জন্ম গ্রহন করেই পেয়েছি এক স্বাধীন দেশ … আমাদের বাবারা কিন্তু তা পায়নি …
আজকের এই মুক্ত স্বাধীন দেশ মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দান করেছে … আমি জানি কথাটি শোনার সাথে সাথেই আপনাদের মনে একটি কথা চলে এসেছে … “ যে না দেশ তার আবার দান “ মুক্তিযোদ্ধারা কিন্তু তাদের জীবনে কিছু পাবার আশায় যুদ্ধ করেনি … করেছিলো তাদের নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর নিপীড়ন মুক্ত স্বাধীন দেশ রেখে যাবার আশায় … গিয়েছেও তাই … তাহলে এই যে আমাদের সামনে যে হতচ্ছাড়া ময়লা আবর্জনায় ভরা দুর্নিতি পরায়ন দেশ সেটা কেন ??? প্রশ্ন জাগতেই পারে … মুক্তিযুদ্ধ করে উনারা কি করেছেন … ??? আর যদি করেই থাকেন তাহলে দেশের এই অবস্থা কেন … ???
কিন্তু ঐ যে বললাম মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের এই দেশ দান করেছেন … এখন তরুন প্রজন্মের দ্বায়িত্ব তা সুন্দর উন্নত করে গড়ে তোলা …। দেশের যদি খারাপ অবস্থা হয় তবে তার জন্য দেশের সকল তরুন সমাজ দ্বায়ী … কারন তরুনরাই পারে সবকিছু কে পরিবর্তন করতে … নতুন করে সাজাতে … আমারা পারি নি তাদের ( মুক্তিযোদ্ধাদের) সপ্নের দেশ গড়ে তুলতে … এই দ্বায়ভার দেশের তরুন সমাজ কে ( অবশ্যই আমি সহ কারন আমিও তরুনদের ই একজন )নিতেই হবে …
মাঝে মাঝে ভাবি কেন আমাদের বাবা ভাই বোন মা চাচা ‘ রা যুদ্ধ করেছিলেন … ??? একটি লাল সবুজ পতাকার মানে কি আমরা আজকের তরুনরা কি বুঝতে পারি … ??? বা কখন বোঝার চেষ্টা করি ???… হয়ত ভাবি ধুর এত সময় কোথায় ঐ সব ফালতু দেশ আর দেশপ্রেম নিয়ে ভাবার …!!! এই লাল সবুজের জন্যই কত প্রানের বলিদান কত ত্যাগ …
আমার জীবনের ছোট্ট একটা ঘটনা শেয়ার করি আপনাদের সাথে … আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা … যদি প্রশ্ন করেন বেচে আছেন কিনা … বলবো আছেন “ আমার স্মৃতিতে “ আজ থেকে প্রায় বছর ৪/৫ আগের ঘটনা … বাবা’র ব্রেন স্ট্রোক করেছে … অবস্থা খুব খারাপ … মাথায় প্রচুর রক্তক্ষরন হয়েছে … তবে এ যাত্রায় বেচে গেলেও আমাদের কাউকেই চিন্তে পারছিলেন না … তো এই অবস্থায় অনেক দিন হাস্পাতালে থাকার পর উনাকে বাসায় নিয়ে গেলাম … তখন ও উনি আমাদের সবাইকে চিন্তে পারছিলেন না এবং একদমি কথা বলতে পারতেন না … তো ঠিক এ রকম এক দিন এ বাংলাদেশ ও পাকিস্থানের মাঝে ক্রিকেট খেলা হচ্ছিলো … বাবার রুমেই টেলিভিশন ছিল … সবাই মিলে খেলা দেখছিলাম … বাবা আছেন আধশোয়া হয়ে … উনার যদিও তখন মানসিক অবস্থা অনেকটা ছোট বাচ্ছাদের মত (কারন তখন ও তার ব্রেন খুব ভালো ভাবে ফাংশন করত না এমন কি কথাও বলতে পারতেন না) হঠাত দেখি কজন বাংলাদেশি তরুন তরুনি পাকিস্থানের পতাকা নিয়ে স্টেদিয়ামে লাফালাফি করছে … এক তরুনির হাতে প্লাকার্ড “ Afridi … will u marry me “ … বেপারটা দেখেই মনটা বিষিয়ে উঠলো … হঠাত বাবার দিকে চোখ পড়তেই আমি হতবাক … বাবার দু চোখ বেয়ে আঝরে বৃষ্টি ঝরছে … তার অসহায় বাকরুদ্ধ চেহারা দেখে সেদিন বুজেছিলাম কতটা কষ্ট তিনি পেয়েছিলেন … … তার সেই অব্যক্ত চাহনি তে মনে হয় তখন একটি কথায় খেলা করছিল এর জন্য স্বাধীন করেছিলাম দেশটা কে … জীবন দিয়ে ছিনিয়ে এনেছিলাম এই লাল সবুজ পতাকা … … ??? !!! ???
আমি জানি আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগছে “পাকিস্তান ক্রিকেটকে সমর্থন করলেই কি মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা হয় “ ???
এই প্রশ্নের উত্তর যদি খুজতেই চান তবে আপনাদের কাছে আমার একটা প্রশ্ন “ ক্রিকেট কি শুধু ক্রিকেটকে রিপ্রেজেন্ট করে নাকি রিপ্রেজেন্ট করে পুরো জাতিকেই “ এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আমার এই পোষ্টটা পড়তে পারেন –
ক্রিকেট কি শুধু ক্রিকেটকেই রিপ্রেজেন্ট করে নাকি রিপ্রেজেন্ট করে পুরো জাতিকেই ...??
যা হোক পাকিস্থান সম্পর্কিত আমার মনোভাব হল –
১. আপনি চাইলে এখনকার একজন পাকিস্থানের নাগরিক বা একজন ব্যাক্তি বা একজন খেলোয়ার বা একজন শিল্পী কে ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ করতে পারেন ( যেহেতু এখন কার মানুষ / তরুন রা যারা ১৯৭১ এ যুদ্ধ করেনি)
২. আপনি চাইলে পাকিস্থানের কোন অসহায় মানুষ কে সাহায্য বা সমবেদনা জানাতে পারেন ( যেমন – কিছু দিন আগে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ )
৩. কিন্তু যেখানে জাতিগত ভাবে পাকিস্থানকে তুলে ধরা হয় বা রিপ্রেজেন্ট করা হয় ( যেমন – ক্রিকেট বা অনান্য যেকোন বিষয় বা ক্ষেত্রে ) সেখানে একজন বাংলাদেশি হয়ে … এই স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করে আপনি পাকিস্থান কে সমর্থন করতে পারবেন না … পারেন না …
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়ার সুত্রেই হলে থাকি … আজও দেখি পাকিস্থানের জয়ে আমাদের মত তরুনরায় কত উল্লাস করে … বিজয় মিছিল বের করে …
একটা বার ও আমরা ভাবি না … এই দেশটা …ঐ লাল সবুজ টাকে নিজের করে পাবার জন্য আমাদের কি করতে হয়েছে … আসুন আমরা জানতে চেষ্টা করি আমাদের দেশকে …
আমি জানি অনেকেই আমার সমলোচনা করবেন … অনেক পালটা যুক্তি ও দ্বাড়া করাবেন … শুধু অনুরোধ একটাই যদি নিজের বুকে হাত রেখে নিজেকে একজন বাংলাদেশি ভাবেন ... একবার আপনার বিবেক কে প্রশ্ন করে দেখুন … আপনার এই নিপাট সমর্থনের মাধ্যমে আপনি আসলে কি করছেন … আমাদের কাছ থেকে আমাদের পরবর্তি তরুন প্রজন্ম কি শিখবে … ???
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্থানের করা কিছু ভালো কাজ এর নমুনা দেখতে চাইলে এইখানে প্রবেশ করুন -
Genocide Bangladesh
পোস্টের এই পর্যায়ে একটি আ্পডেট দেবার প্রয়োজন অনুভব করছি ... তা হলো ভারত সম্পর্কিত আমার মনভাব ...
মুক্তিযদ্ধে ভারত আমাদের সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে তার জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ ... কিন্তু তার মানে এই নয় যে সারা জীবন তাদের পা চাটতে হবে ... ৭১ এ ভারতের ভুমিকা ও ২০১১ সালের ভুমিকা কিন্তু এক নয় ... আমরা একটু সচেতন হলেই দেখতে পাই ... ফারাক্কা বাধ, টিপাইমুখি বাধ , সম্প্রতি বিএসএফ এর নির্বিচারে বাংলাদেশি হত্যা ... একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনি কিভাবে এসব কে সমর্থন করবেন ??? তারপর আসি ভারতীয় দের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এর কথায় ... দেখুন আপনার বাসার টেলিভিশন এ এখন কি চলছে ??? হিন্দি সিরিয়াল তো ... হুম ... একটি বার কি ভেবেছেন ... এই হিন্দি সিরিয়াল দেখা ... তা দেখে মেয়েদের পোশাকের পরিবর্তন ... আমাদের সংস্কৃতিকে কথায় নিয়ে যাচ্ছে ... ??? এই যে ইভ টিজিং ... এর পছনেও যে এই সিরিয়ালের অনেক বড় ভুমিকা ... ভাবা দেখেছেন কি কখন ???
পার্শবর্তী দেশ বড় হলে তার প্রভাবটা পাশের ছোট রাষ্ট্র এর উপর পরবেই ... কিন্তু আমার প্রশ্ন হল এরকম ক্ষেত্রে ছোট দেশগুলো কে তা সাম্লাতে হবে কৌশল এর মাধ্যমে... টেকনিক এর মাধ্যমে ... আমরা নিজেরাই যদি তাদের প্রভাব বিস্তারের পথ সুগম করে দেই তবে জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাড়াবো কিভাবে ...... ???
একটি কথা স্শষ্টভাবে ও দৃঢ় কন্ঠে বলতে চাই ... এখন ২০১১ সাল ... অনেক তো হয়েছে ... এখন আমাদের সময় নিজেদের কারো আড়ালে লুকিয়ে না রেখে একটি সমুন্নত জাতি হিসেবে নিজেদের পৃথিবীর সামনে তুলে ধরা ... আসুন বর্জন করি পাকিস্থান বা ভারত প্রিতী ... আজ জাতি হিসেবে আমরা অনেক উন্নত... ক্রিকেটে তো অবশ্যই ... আমরা আজ বিশ্বের যেকোন দল কে হারিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখি ...
একজন পাকিস্থানি বা ভারোতীয় কে প্রশ্ন করে দেখুন তো ওরা নিজের দেশ ছেড়ে বাংলাদেশ কে সমর্থন করে কিনা ??? ওরা না করলে আমরা কেন করব ???
কেন আমরা নিজেকে একজন গর্বিত বাংলাদেশি ভাবতে পারবো না ...
আমি জানি আমরা পারব... আপনাদের সবাই মুখে যায় বলেন না কেন নিশ্চয় আপনার ভেতরে দেশের জন্য একটু হলেও মমতা আছে ... আমি জানি তা এক সময় প্রকাশিত হবেই...
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৩:৩৩