আওয়ামী লীগের এবারের একচেটিয়া জন সমর্থনের পেছনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যু অন্যতম। আর তাই সরকার এই ব্যাপারে যে বসে আছে সেটি ভাববার কোনো কারণ নেই। তারা সেটি ভালো করেই জানেন। এই বিচার না হলে তারা জনগনের সাথে প্রতারণা করবে আর এই প্রতারণার জবাব দিতে দেশের মানুষ বেছে নিতে পারে তাদের ভোটাধিকারেকই। তাই সরকার বেশ সাবধানতার সাথে এই সাথে এই এজেন্ডার মোকাবেলা করবে বলে আমার বিশ্বাস। সরকারের প্রস্তুতির আর কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে দেশের গণ মাধ্যমের সম্পাদকদের সাথে কথা বলেছেন সরকারে তিনজন প্রথম সারির মন্ত্রী। ছিলেন আইন, অর্থ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রী আর দেশের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন সম্পাদক। ক্যান্টনমেন্টের গলফ ক্লাবে এই মতবিনিময় সভাটি আমার কাছে মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে একাত্তুরের ফেব্রুয়ারী মাসের ঘরোয়া আড্ডার মতো। সফলতার জন্য তর্ক বিতর্ক না থাকলেও সেখানে ছিল মত প্রদানের সুস্থ পরিবেশ। ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক সদস্যরা। ছিলেন সেক্টর কমান্ডাররা। সব মিলিয়ে নতুন করে যে একটা যুদ্ধ শুরু হয়েছে তার পূর্বাভাস পাওয়া গেল।
আমি যুদ্ধ দেখেনি। শুনিনি স্বজনহারা মানুষের আহাজারি। স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে আমার যেটুকু জানাশোনা তার বেশিরভাগই বই পড়ে আর গণমাধ্যমের কল্যানে। তবুও নারির টান বলে কথা। যাই হোক ফিরে আসি সেদিনের বৈঠকে। এফ এম রেডিও-র সাধারণ একজন প্রতিবেদক হয়েও গোল টেবিল বৈঠকে সেরা মুক্তিযোদ্ধাদের আর সম্পাদকদের পাশে বসার লোভ সংবরণ করা সম্ভব হয়নি। যদিও অন্যান্য প্রতিবেদকরা পাশে দূরে বসে আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে হয়ত মনে মনে বলছিলো "ইচড়ে পাকা একটা"। মজাটা বুঝলাম যখন একে একে পরিচয় দিতে শুরু করলেন। দিলাম নিজের পরিচয়টা। সবাই তরুন প্রজন্মের একজনকে এই টেবিলে দেখে একটু অপ্রস্তুতই ছিলেন। বিশেষ করে আমার নিজের প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক তো বটেই। সম্পাদকের সারিতে একটু আগেই বসে পড়লাম মনে হয় ! অবশ্য শুরুটা খারাপ না। যারা বাংলাদেশ গড়েছেন তাদের সাথে শুরু করাটা মন্দ নয়। নিজের ঢোল অনেক পিটিয়ে ফেললাম,এবার কাজের কথায় আসি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য বিশেষ আদালতের জন্য জায়গাও নেয়া হয়ে গেছে সরকারের। তথ্য সংগ্রহ আর আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। কারা বিচার করবেন তাদের নির্বাচন, বিদেশি পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে প্রায় সকল প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সরকার। এই অর্থ বছরে ১০ কোটি টাকার বাজেটও তার নিশ্চয়তা দেয়। সম্পাদকদের পক্ষ থেকে আসা পরামর্শগুলোর মাঝে আমার কাছে গুরুত্বপূণ মনে হয়েছে নির্দিষ্ট মূখপাত্র নির্বাচন, জনগনের সচেতনতা বাড়ানো আর তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করে তথ্য সংগ্রহ করার ব্যাপারটা। আলোচনায় সম্পাদকরা সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন এ বিষয়ে নিখূঁত প্রস্তুতির নেয়ার ব্যাপারে। তাদের মতে সরকারকে নিচ্ছিদ্র প্রস্তুতি নিতে হবে। এই লড়াই জিততে পূর্ণ প্রস্তত না হয়ে বিচার প্রক্রিয়া শুরু না করারও পরামর্শ দেন তারা।
আমিও তাদের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে চাই :
তরুণ থাকুক মাঠে,
তারা ভাঙ্গবে হাড়ি হাটে।
বিচার হতেই হবে নইলে বিচারপতিদের বিচার করতে জনগণ জেগে যেতে পারে।
আমি চাই না এমনটা হোক।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৯:৪৯