শেয়ার বাজারে স্মরণকালের ভয়াবহ দরপতনের একদিন পর গতকাল মঙ্গলবার আবার রেকর্ড পরিমাণ সূচক বেড়েছে চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে। একদিনে সূচক বাড়ার ক্ষেত্রে এটা সর্বকালের রেকর্ড বলে উল্লেখ করেছেন শেয়ার বাজার কর্তৃপক্ষ। শেয়ার বাজার থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, গতকাল চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে লেনদেনের সার্বিক সূচক একলাফে বেড়েছে ২ হাজার ৬শ ৮২ পয়েন্ট। বর্তমানে চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারের সার্বিক সূচক হয়েছে ২১ হাজার ৮শ ৯৫ পয়েন্ট। সিএসই-৩০ এর মূল্যসূচক বেড়েছে গতকাল ২ হাজার ৫শ ৪৩ পয়েন্ট। চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে গতকাল মোট লেনদেন হয়েছে ১৭১ কোটি টাকার বেশি। গতকাল মোট ১৯৪ টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। তার মধ্যে ১৮৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে। কমেছে ৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। চট্টগ্রাম শেয়ার বাজার সূত্র জানায়, সকাল ১১টা থেকে লেনদেন শুরু হওয়ার পর মাত্র ১৫ মিনিটে প্রায় সব শেয়ারের সার্কিটমূল্য (দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা) স্পর্শ করে। গতকাল বাজারে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতার সংখ্যা ছিল অনেক কম। একারণে অনেকে চেষ্টা করেও শেয়ার কিনতে পারেননি। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী মোহাম্মদ দেলোয়ার জানান, গত কয়েকদিনের ক্ষতির ধাক্কা পুষিয়ে নিতে শেয়ার বাজারকে আরো স্থিতিশীল হতে হবে। এদিকে নতুন মার্জিন লোন কার্যকর করেনি অধিকাংশ ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান। এ ব্যাপারে বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে বলেন, মার্জিন লোন কার্যকর না করায় অধিকাংশ বিনিয়োগকারী কাঙিক্ষত শেয়ার কিনতে পারেননি। এ ব্যাপারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী জহিরুল ইসলাম জানান, গতকাল শেয়ারের দাম বাড়লেও এখনো আমরা বড় ধরনের লোকসানে রয়েছি। বাজারে লেনদেন বাড়ার ব্যাপারে মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মুর্তজা আহমেদ জানান, বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, বাজারসূচক ৫০০ কিংবা ৬০০ পয়েন্ট বাড়া কমা কোনটাই স্বাভাবিক নয়। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আবদুল্লাহ মামুন জানান, বাজারে আস্থা ফিরে আসছে। আশা করছি অচিরেই শেয়ার বাজার আরো ইতিবাচকভাবে তার ছন্দে ফিরে আসবে।
এদিকে বিডিনিউজ জানায়, সর্বোচ্চ পতনের পরদিনই সূচকে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি দেখেছে ঢাকার পুঁজিবাজার, বেড়েছে প্রায় সব শেয়ারের দাম। তবে মার্জিন লোনের নতুন হার না মানায় বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে বিক্ষোভ হয়েছে।
গতকাল দিনের লেনদেন শুরুর প্রথম আধা ঘণ্টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সাধারণ সূচক ৮৭০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। বেলা ৩ টায় লেনদেন শেষে সূচক ৭৫১২ দশমিক ০৯ এ দাঁড়িয়েছে, যা দিনের শুরুর চেয়ে ১০১২ পয়েন্ট বা ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। এর আগে গত বছরের ১৬ নভেম্বর সাধারণ সূচক ৭৬৪ পয়েন্ট বেড়ে রেকর্ড গড়েছিলো। সারাদিনে ২৪৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২৪৩টির দামই বেড়েছে, কমেছে ৫টির। লেনদেনের পরিমাণ ছিলো ৯৭৭ কোটি টাকার বেশি।
দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি আটকে যায়। এ কারণে ১৯৫টি শেয়ারের চাহিদা থাকলেও বিক্রেতা ছিলো না।
দুপুরের দিকে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ ডিএসইর সামনে একটি লিফলেট বিলি করে। তারা বাজার স্থিতিশীল করতে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। বাজার ২৪ ঘণ্টায় ব্যাপক পতন উত্থানকে অস্বাভাবিক বর্ণনা করে এর তদন্তের দাবিও করেছে তারা।
তারা অভিযোগ করেছে, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো মার্জিন লোনের হারের বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা মানছে না। এ বিষয়ে মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ মুর্তজা আহমেদ বিডিনিউজকে জানান, “বেশিরভাগ ব্যাংক এখন তাদের এক্সপোজার লিমিটের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। ফলে এ মুহূর্তে মার্জিন লোনের ১:২ হার অনুসরণ করা তাদের পক্ষে সম্ভবপর নয়।” ব্যাংকগুলো ১:০.৭৫ হারে ঋণ দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।