পিংকি ৫ বছর বয়সের এক মেয়ে। ক্লাস ওয়ানে পড়ে। তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হত তুমি বড় হলে কী হবে সে উত্তর দিত "বিজ্ঞানী হব" বা "আকাশে ঘুরব, চাঁদে যাব" (নভোচারী হওয়ার ব্যাপারটা তখনও তার কাছে পরিষ্কার না)
ছোটবেলা থেকে ঘরে জয়নুল আবেদিনের ছবি টাঙ্গানো দেখত। ওর ইচ্ছা করত আঁকতে। আঁকা শুরু করল। ভাল লাগত মানুষ আঁকতে। শুধু মানুষের ছবি এঁকেই পাতার পর পাতা ভরিয়ে ফেলত। বাবা মা কিছু না বললেও কিছু আত্মীয়স্বজন "মানুষের ছবি আঁকতে হয় না, গুনাহ হবে" ইত্যাদি বলে ওকে মানা করত। ও শুনত না। এঁকেই যেত।
আরও কিছু কাজ ওর করতে ভাল লাগত। গান গাইতে আর নাচতে। তবে নাচতে বেশি ভালবাসত। যেকোনো গান শুনলেই তার সাথে নাচতে পারত। ঠিক করে রেখেছিল নতুনকুঁড়ি প্রতিযোগিতায় নাচ, গান আর ছবি আঁকা এই তিন বিভাগে অংশ নিবে। বেশ কয়েকবার অংশ নেবার চেষ্টা করলেও ওর মা পড়াশোনায় ক্ষতি হবে বলে তা করতে দিলেন না। বললেন "তোমাকে বরং গানের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিব, হারমোনিয়াম কিনে দিব, গান শিখতে পারবে।" কিন্তু নাচের স্কুলের কথা ভুলেও কোনদিন বলতেন না।
একদিন ও শুনে ফেলে তিনি তার একজন বান্ধবী কে বলছেন, "আমার মেয়ের গলায় সুর ভালই বসে, ওকে ভাবছি গান শেখাবো, ভাল একটা গানের স্কুলের খোঁজ পেলে বলেন তো আপা...নাচ?... নাচ কেন শেখাবো...নাহ!! নাচের কোন দরকার নেই, পরে ছেড়ে দিতে হবে, ঝামেলা!!" তখন ও বুঝতে পারে মা নাচের ব্যাপারটা মোটেই পছন্দ করেন না। অভিমান নাকি অপমান ঠিক জানেনা ঠিক কোনটা জন্ম হয় মনে। ভাবে দরকার নেই গান নাচ কোনটাই শেখার। কিছুই দরকার নেই। স্কুল, পড়াশোনা, বাসা, ছবি আঁকা এই নিয়েই চলতে থাকে ওর শৈশব।
অনেক দিন গড়িয়ে যায়। ছোটবেলার বিজ্ঞানী আর নভোচারী হবার স্বপ্ন তখনো মনের মাঝে চড়ুই পাখির মত উঁকি দিয়ে যায়। শুধু উঁকিই দেয়, বসেনা বেশিক্ষণ। কারন ততদিনে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবার সামাজিক মন্ত্রণা ওর ঘিলুতে অনেকখানি বসিয়ে দেয়া হয়েছে। ঐ মুহূর্তে কোনটা পড়বে তা নিয়ে দ্বিধায় থাকলেও ক্লাস নাইনে ওঠার সময় "বিজ্ঞান বিভাগ পেতেই হবে" এটুক পরিষ্কার জানত। ভাবত "বিজ্ঞান" বিভাগ যেহেতু নাম হয়ত ভবিষ্যতে কোনো একটা উপায় খোলা থাকবে বিজ্ঞানী হবার। ওর মতই ও বুঝত। অংকে ভাল ছিল কাজেই বিজ্ঞান বিভাগ পেতে সমস্যা হয়নি। এসএসসির রেজাল্টও ভাল করল। এইচ এস সিও ভাল করল।
অবশ্য এই দুই রেজাল্ট ভাল করার পেছনে পড়াশোনার চেয়ে বড় আরও একটা ব্যাপার কাজ করত। বিয়ের ভয়। প্রতিটা পরীক্ষার আগে ওর মা ওকে ভয় দেখাতো, "ভাল রেজাল্ট না করলে বিয়ে দিয়ে দিব!!" আর বিয়ের নাম শুনলেই ওর কাছে আতংক লাগত। কে চায় বাবা ঐ বয়সে বিয়ে করতে? নিজের ঘর, নিজের বাসা, নিজের বাবা মা কে ফেলে অজানা কারো সাথে থাকতে। কে চায়? ভাল লাগতে পারে কোন ছেলেকে, ভালবাসতেও পারে, বিয়েও করা যায়। কিন্তু বিয়ে করলেই তার জন্য নিজের ঘর বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে এটার কোন যৌক্তিকতা ও খুঁজে পেত না। কাজেই বিয়ে বিষয়টা চিরকালই ওর কাছে অদ্ভুত লাগত। এই বিয়ে থেকে বাঁচার জন্য তাই পড়ত।
এইচ এস সি পরীক্ষার পর বাবা মা ঘোষণা দিল তোমাকে ডাক্তারি পড়তে হবে। "তুমি পড়তে চাও কিনা", "পড়বে কিনা", "অন্য কিছু পড়ার ইচ্ছা আছে কিনা" কোন কথা নেই ডাক্তারিই পড়তে হবে, ব্যস। "ডাক্তারি না পড়লে বিয়ে দিয়ে দিব", "মেয়েদের অন্য কিছু পড়ে লাভ নেই, বিয়ের পর কিছু করতে পারবে না।" ঘোষণা দিয়ে দেয় ওর বাবা মা।
এর মধ্যে ওর ছোটবেলার সেই বিজ্ঞানী হবার স্বপ্ন চড়ুই পাখি থেকে কবুতরে পরিণত হয়েছে। এসেই উড়ে যায়না। বসে কিছুক্ষণ। ও সেই স্বপ্নকে দানা পানি খাওয়ায়, মাঝে মাঝে উড়ে যায়, আবার ফিরে আসে। পিংকি ভাবত বুয়েটে বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্সে অথবা ম্যাথে পড়লে একদিন না একদিন সেই স্বপ্ন সত্যি হবার কিছু পথ খোলা পাবে। ডাক্তারিতে আদৌ বিজ্ঞানী হবার কোন উপায় আছে কিনা ও তখনও জানেনা। ঠিক করল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে বুয়েটে অথবা ম্যাথ বা ফিজিক্স নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর কিছু না হোক অন্তত বুয়েটে আর্কিটেকচারে ও চান্স পাবেই যেহেতু আঁকতে পারে এতটা আত্মবিশ্বাস ওর ছিল।
এমনিতেই ছবি আঁকতে পারত তার উপর আর্কিটেকচারে থ্রিডি ছবি আঁকতে হতে পারে সেটা ভেবে এইচ এস সির পর বন্ধের সময় নিজে নিজেই ঘরে শুরু করল "মায়া" আর "থ্রিডি স্টুডিও ম্যাক্স" নামের সফটওয়্যার গুলো নিয়ে কাজ করা। গুগল থেকে টিউটোরিয়াল নামিয়ে চেষ্টা করতে থাকল একটু একটু করে। শিখেও ফেলল অনেকটা। ওর ছেলে বন্ধুরা তখন বুয়েটের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আর মজার সময় কাটাচ্ছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে। মেয়ে বন্ধুরা নতুন নতুন সাজগোজ, ঘোরাঘুরি নিয়ে ব্যস্ত, ভর্তি পরীক্ষার পড়াশোনা তো আছেই। ও বাসায় বসে যেটুক সময় পেত কোচিং করার পর পরে থাকত ফটোশপ আর মায়া নিয়ে। ফটোশপ শেখা এর মধ্যে শেষ। কয়েকটা ছবি একেও ফেলল। রেডিমেড ব্রাশ আর রং পাওয়া যায়, এত আরামে আঁকা যায় জানলে আরও আগে শিখত। যতক্ষন এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকত বিয়ের চিন্তা থেকে দূরে থাকত।
মায়াতে কিছু মডেল আর ফটোশপে কয়েকটি ছবি এঁকে একদিন পিংকি ওর টিচারকে অনুরোধ করল, "ভাইয়া আপনি একটু আমার আম্মুকে বলবেন আমি বুয়েটে পড়তে চাই। দেখেন আমি এগুলো বানিয়েছি মায়া তে। আমার ডাক্তারি পড়ার একটুও ইচ্ছা নেই। আম্মু খুব জোর করছে।" কিন্তু ডাক্তারি না পড়লে বিয়ে দিয়ে দিবে এই কথা বলার ওর সাহস হয়নি সেদিন, নিজের মাস্টার্স পাশ করা মায়ের ব্যাপারে এমন কথা কীভাবে বলবে বুঝত না ও। অপমান লাগত হয়ত। ওর টিচার বুঝলেন ব্যাপারটা। ওর মা কে অনেক বুঝিয়ে অনুরোধ করে বললেন, "আপনার মেয়ে অংকে আর ফিজিক্সে অনেক ভাল ওকে বুয়েটে পড়ান, ভাল করবে।" ওর মা সে কথা পাত্তাও দিলেন না। তার এক কথা, মেয়েদের জন্য ইঞ্জিনারিং পড়ার কোন অর্থ নেই। কোন ভবিষ্যৎ নেই। ডাক্তারিই পড়বে, নাহলে পরে দেখা যাবে। পরে যে কী দেখা যাবে তা ভেবে আতঙ্ক লাগে পিংকির। নির্ঘাত বিয়ে দিয়ে দিবে ওর। সব কিছু বাদ দিয়ে কেন যে বুয়েটে পরে মেয়েদের কোন ভবিষ্যৎ নেই এটা তার মা বার বার বলে তখনও পিংকি বুঝত না।
বাধ্য হয়ে পিংকি প্রস্তুতি নিতে শুরু করল ডাক্তারি পড়ার। মনে বধ্যমূল বিশ্বাস জন্মে গিয়েছিল ওর বাবা মা আসলেই ওকে বিয়ে দিয়ে দিবে যদি তাদের কথামত না চলে, ডাক্তারি না পড়ে। উপায় কি আর? কষ্ট পেল অনেক। ঠিক করল বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষাই আর দিবে না। যেটা পড়তেই দেয়া হবে না তার জন্য পরীক্ষা দিয়ে কি হবে? মনের কষ্ট মনে রেখেই ডাক্তারির জন্য পড়তে লাগল। কিন্তু জোর করে তো পড়া এগোয় না। তারপরেও কীভাবে কীভাবে যেন দুর্ভাগ্যক্রমে (!) মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় টিকেও গেল। ডাক্তারি পড়া শুরু হল। এসবে কিছুর মধ্যে পরে ওর ছবি আঁকা বন্ধ হয়ে গেল। ফটোশপে আঁকাআঁকি কদাচিৎ থাকলেও মায়া আর খুলে দেখেনি ও। কি লাভ। মন ভেঙ্গে গেলে মস্তিস্ক কল্পনার জগতে অন্ধ হয়ে যায়, আঁকবে কীভাবে।
ডাক্তারি পড়ায় শুরু থেকেই ওর মন বসত না। রেজাল্ট খারাপ হতে থাকল। আর সেকেন্ড প্রফ পরীক্ষার আগে (ফাইনাল ইয়ারে ওঠার পরীক্ষা) শুরু হল বিয়ে নিয়ে গুনগুন করা। এবার আর ভয় দেখানো না, রীতিমত প্রস্তাব, ঘটক, পাত্রপক্ষ নামক কুৎসিত ব্যাপার গুলো প্রতিদিনই আশেপাশে দেখতে ও শুনতে হত ওর। দুই একবার ওকে না বলে ওকে পাত্র পক্ষের সামনে নিয়েও যাওয়া হল। ও ভেবেছিল এমনি মায়ের সাথে ঘুরতে যাচ্ছে, মার্কেটে বা খাবার দোকানে। কিন্তু দেখা গেল সেখানে সারাজীবনেও দেখেনি এমন কিছু মানুষ একটা বয়স্ক ছেলেকে নিয়ে তার সাথে কেমন তেলতেলে ভাষায় কথা বলছে। পরে জানা গেল সেগুলো ছেলেপক্ষের লোক ছিল। খুবই বিরক্তিকর। কিন্তু কিছুই বলল না কাউকে। ধীরে ধীরে ওর মনে হতে লাগল সারাজীবন যে স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা করেছে তার কোন কিছুই আর সত্যি হবে না। মেডিক্যালেও পরীক্ষা খারাপ করছে। বাসা থেকেও বিয়ের ব্যাপারে প্রতিনিয়ত একটা অসহ্য দমবন্ধ করা চাপ।
মাকে বোঝানোর চেষ্টা করল ও বিয়ে করতে চায় না। বিয়ে ব্যাপারটাই ওর কাছে একটা অন্যায় বলে মনে হয়। আর এই অন্যায় শুধু মেয়েদের উপরই বর্তায়। বিয়ের কারনে একটা ছেলের জীবনেও পরিবর্তন আসে কিন্তু একটা মেয়ের জীবনে পরিবর্তন না তার পুরো জীবনটাই আমূলে উৎপাটন হয়। পূর্বের জীবনের কিছুই আর আগের মত থাকেনা। তার উপর দায়িত্ব কর্তব্য তো আছেই। সেগুলো অনেক পরের কথা। শুরুতেই যে বাবা মা কে ফেলে যাওয়া এটারই কোন মর্ম খুঁজে পায়না ও। কেন ওকেই এর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে? ওকেই ঘর ছাড়তে হবে? কেন ওর সব স্বপ্নকে বলি দিতে হবে? তাহলে কি দরকার ছিল সারাজীবন এত কষ্ট করে পড়াশোনা করার? ও মেয়ে তাই? এতদিন ধরে যে বিয়ের ভয়ে পড়াশোনা করেছে, পালিয়ে থেকেছে বিয়ে থেকে সেই বিয়ের গর্তেই কেন পড়তে হবে তাহলে? ভেবে পায় না ও।
ওকে বোঝানো হল, প্রেম করতে পারলে বিয়ে করতে পারবে না কেন! ও কোন ভাবেই কাউকে বোঝাতে পারে না প্রেম করা আর বিয়ে করা এক না। আকাশ আর পাতাল তফাৎ। একই প্রেম করার জন্য তো ঐ ছেলের তার বাবা মা কে, নিজের স্বাধীনতাকে, নিজের বাড়িঘরকে ছাড়তে হবে না। তার কেন ছাড়তে হবে? কি অপরাধ ওর? ঐ ছেলেকে ও ভালবাসে এটা অপরাধ? ও তো ওর বাবা মা কে জন্ম থেকে ভালবাসে। সেই ভালবাসার কি কোন মুল্য নেই? মুল্য থাকলে কীভাবে বাবা মায়েরা তাদের মেয়েদের সাথে এমন অন্যায় করতে পারে। পিংকি ভাবে আর শুধু ভাবে। ওর নিজের জীবন, নিজের স্বাধীনতা আরেকজনের জন্য বিসর্জন কেন দিতে হবে তা মাথায় ঢোকেনা ওর।
কোন ছেলেকে ভালবাসলেই তার জন্য নিজের বাবা মাকে বিয়ে করে ছেড়ে চলে যেতে হবে? কেন? ঐ ছেলের তো ছাড়তে হচ্ছে না। সে একা কেন? সে কি একটা ছেলে তার বাবা মা কে যা ভালবাসে তার থেকে কম ভালবাসে? তা তো না। তাহলে কেন? কেন প্রেম করার জন্য বা অন্য যে কোন কারনের জন্য একটা ছেলে থেকে তার জীবন এই বিয়ের পর সম্পূর্ণ উল্টো দিকে বইবে? কেন এই শাস্তি? কাউকে ভালবাসলেই তাকে বিয়ে করতে হবে? না। তাও করা গেল? কিন্তু বিয়ের ক্ষেত্রে এই পক্ষপাতিত্ব কেন? যদি বিয়ে করতেই হয় তবে নিজের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে কেন?
শিকড় যদি উপড়াতেই হয় তবে শুধু মেয়েদের শিকড় কেন? এই একই পন্থায় একটা ছেলের শিকড় উপড়ে দেখুক কেউ কেমন লাগে। ঘরজামাই ব্যাপারটাই নাকি চরম লজ্জার। কারন সে তার ঘর ছেড়ে তার বউ এর ঘরে থাকছে। এই একই কাজ একটা মেয়ের জন্য সবাই এত স্বাভাবিক ভাবে কেন ধরে নেয়? কোন অংশে সে একটা ছেলের থেকে কম? বিদ্যা বুদ্ধি চিন্তা পড়াশোনা ভালবাসায় দায়িত্বে কর্তব্যে কোথায় কম? তবে একা তাকেই কেন তার স্বকীয়তা বিসর্জন দেবার কথা ভাবতে হয়? এটা কি অন্যায় নয়? এটা কি মানবতার বিরুদ্ধাচারন নয়?
গাছের মত প্রতিটা মানুষেরও শিকড় থাকে। প্রতিটা ছেলে ও মেয়ের। একটা মানুষের শিকড় হল তার জন্ম থেকে দেখা চেনা জানা পরিবেশ, তার স্বাধীনতা, তার স্বপ্ন, তার বাঁচার অধিকার, জীবনে সুখী হবার অধিকার এই সব নিয়েই তার শিকড়। এবং যেকোনো মানুষের এই শিকড়ে আঘাত করলে তার অস্তিত্বের আংশিক বা সম্পূর্ণ বিলুপ্তি হতে পারে। বিয়ের মাধ্যমে একটা মেয়ের এই শিকড়ে সবচেয়ে বড় আঘাত হানা হয়। ব্যতিক্রম থাকতে পারে তবে তার সংখ্যা চিরকালই কম। একটা মানুষের শিকড় তার নিজের মাটি থেকে উপড়ে ফেলে আরেক জায়গায় বসালে তার যে আত্মার মৃত্যু না ঘটলেও বড় ধরনের ক্ষতিসাধন হয়। তার চেতনা বিলুপ্ত হয়ে কোন কালে তার কোন স্বপ্ন ছিল সেই অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়। এই আঘাত একটা ছেলে বা একটা মেয়ে যাকেই দেয়া হোক না কেন তার কষ্ট একই। এই কষ্ট গাছের শিকড় ছেড়ার মত মানুষের কষ্ট।
দুঃখের বিষয় মেয়েদেরই এই কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, আরও ভাল করে বললে তারা যায়। জেনেও বুঝেও কোন প্রতিবাদ করে না। বাধা দেয়না যখন কেউ চেষ্টা করে তাদের শিকড় কাটার। ভুলে যায় তার স্বপ্নের চড়ুই, কবুতরের কথা। তার শিকড় কেটে নতুন জমিতে বসানো হয়। নিজের পরিবেশ থেকে উপড়ে ফেলে সেই নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে খাওয়াতেই তার সমস্ত প্রচেষ্টার বিলুপ্তি ঘটে। মহীরুহ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রায় হারিয়ে যায়। আর চড়ুইর বাসা? কবুতরের বাসা? অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়ায় আবারও তাদের বাসা বাঁধা এক একই গাছের ডালে।
পিংকির স্বপ্নের সেই কবুতর হারিয়ে গেল। দানাপানি দূরে থাক এক চোখ দেখার জন্যও ওর মনে আর উঁকি দিল না। কি হবে আর এসে। যেই গাছের ডালে ঐ কবুতর বসত তার শিকড় কেটে ফেলা হচ্ছে। কিছুদিন পরেই উপড়ে ফেলবে।
পুনশ্চঃ কোন অশালীন অযৌক্তিক অভদ্র মন্তব্য বা মন্তব্যকারিকে গ্রাহ্য করা হবে না। এমন কিছু বলার থাকলে দূরে থাকুন। ধন্যবাদ।