পিংকি তার খালার বাসায় বেড়াতে এসেছে। ক্লাস থ্রিতে পড়ে। খালার ঘরে মা খালারা সবাই গল্প করছে। ওকে বলছে এটা বড়দের আসর তুমি তোমার তুষার ভাইয়ার ঘরে যাও। এই বাসায় ওর দুই খালাতো ভাই বোন থাকে। তুষার আর তূর্ণা। তুষার বড়, ক্লাস সেভেনে পড়ে, তূর্ণা ফাইভে। দুই ভাইবোনই বাসায় নেই। কোচিংএ গিয়েছে। অগত্যা পিংকি তুষার ভাইয়ার ঘরে বসে থাকে। পুতুল বের করে খেলে।
এক ঘণ্টা পর তুষার বাসায় আসে। তূর্ণা ফেরেনি তখনও। ঘরে ঢুকে দেখে পিংকি ওর বিছানায় বসে খেলছে। এগিয়ে যায়। ওর পাশে বসে। অল্প কিছু কথা বলার পর আদর করার ছলে পিংকিকে খোঁচানো শুরু করে। প্রথমে পেটে একটু গুঁতা দেয়। পিংকি কিছু মনে করে না। একটু পরে সেই গুঁতো যখন একটু নরম হয়ে ওর বুকে কয়েকবার স্পর্শ করে যায় ওর মনে হয় কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে। কেমন যেন অজানা এক ভয় হয় ওর। এর মধ্যে তুষার বিছানা থেকে উঠে ঘরের দরজা বন্ধ করে আবার বিছানায় এসে বসে। পিংকি চট করে বলে, "ভাইয়া আমি একটু আম্মুর সাথে কথা বলে আসি। আম্মু ডাকছে।" তুষার বলে, "কই ডাকছে? কিছু শুনলাম না তো।" কিন্তু পিংকি "না ডাকছে, ডাকছে" বলতে বলতে প্রায় দৌড়েই দরজা খুলে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
দৌড়ে আম্মুর কাছে যায় কিন্তু কিছু বলে না। আম্মু বলে,"আবার এসেছ কেন। তোমার ভাইয়া তো বাসায় এসেছে। যাও গল্প কর, ওর সাথে খেলো। পিংকি ওখান থেকে চলে গিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে। কিছু না বুঝলেও এটুক বুঝে যায় আর কখনও ও তুষার ভাইয়ার সাথে একা বসতে পারবে না।
২৫ বছর পরের ঘটনা
তুষারদের বাসায় জন্মদিনের দাওয়াত। ওর মেয়ে তপতীর জন্মদিন আজকে। ৩ শেষ করে ৪ এ পড়বে। পিংকি সারাদিন কাজ করে দাওয়াতে যেতে যেতে রাত হয়ে যায়। অন্য গেস্টরা ততক্ষণে খেয়ে দেয়ে চলে যাচ্ছে। তপতীকে জন্মদিনের পোশাক পড়া অবস্থায় পুরো একটা গোল পুতুলের মত লাগছে। তুষারের স্ত্রী রুমার সাথে ওর মেয়ে দুষ্টোমি করছে, পিংকি খাবার খাচ্ছে ওদের সামনে। মা মেয়ে পিংকির সাথে বসে কথা বলে টুকটুক করে। পিংকি শোনে আর হাসে।
- 'তপতী কে স্কুলে দিচ্ছ তো ভাবি এ বছর?' পিংকি জিজ্ঞেস করে।
- 'হ্যাঁ দিয়ে দিব ভাবছি। তুষারের সাথে কথাও বলেছি।' রুমা বলে।
- 'হ্যাঁ সেটাই ভাল হয়। কি বলে ভাইয়া?'
- 'তোমার ভাই তো মনে হয় তো মেয়েকে স্কুলে পাঠাচ্ছে না, শশুরবাড়ি পাঠাচ্ছে। মেয়ে অন্তঃ প্রাণ। আজব আজব সব চিন্তা ভাবনা। এতক্ষন মেয়ে বাসার বাইরে আমাদের ছাড়া থাকবে, কার কাছে থাকবে!! স্কুলের বন্ধুরা যদি ওকে যন্ত্রনা করে, আরও কত কি!! আজব একটা মানুষ!' হাসতে হাসতে বলে রুমা।
পিংকি খাবার খেতে থাকে চুপ করে। রুমা বলে যায়।
'তোমার ভাই এর আহ্লাদী দেখে দেখে আমি বিরক্ত। আরে বাবা মেয়ে কে স্কুলে দিবে না? এত ঢং করলে চলে বল? ঐদিন বলছিল মেয়ের বয়স ছয় শেষ হলেই সে নাকি মেয়েকে মার্শাল আর্টের ক্লাসে ভর্তি করবে!! চিন্তা কর!!'
পিংকির খাবার কোথায় যেন আটকে যায়। নিচে নামে না।
- 'আমি বলেছি এইটুক মেয়েকে এখনই মারামারি শেখানোর কথা ভাবছ?? তারপর স্কুলে গিয়ে সবার উপর প্র্যাকটিস শুরু করলে!! পড়াশোনা করা লাগবে না আর। আরও ভাল হয় রেসলিং এর ট্রেনিং দাও। ভবিষ্যতে আমাদের মেয়ে মারামারি করে ট্রফি আনবে। আর দেশের নামকরা মহিলা গুন্ডা হবে। হাহাহাহা। এইটুক মেয়েকে এখনই কারাটে শেখাবেন উনি। সখ কত!! আমি আরও ভাবছি গান বা নাচের স্কুলে ভর্তি করাব আর তোমার ভাই আছে তার চিন্তায়।'
খাবার নিয়ে বসে থাকার আর অর্থ দেখে না পিংকি। উঠে হাত ধুতে বেসিনের দিকে যায়। বলে, 'ভালই তো হবে ভাবি, শিখুক না, মার্শাল আর্টও তো একটা আর্ট।' হালকা স্বরে বলে ও।
রুমা আহ্লাদী করে বলতেই থাকে, 'উফফ তুমিও শুরু করলা। যেমন ভাই তেমন বোন। আমার তো আপত্তি নেই। শুধু চাইছিলাম আরও কয়েকবছর যাক। পড়াশোনা একটু করুক। গান নাচ কোনো একটা শিখুক। একটু বড় হলে তখন না হয় দেয়া যাবে। দিনকাল তো আসলেও খারাপ। সব মেয়েরই জানা উচিৎ নিজেকে কীভাবে রক্ষা করতে হয়। এটাও একটা উপায়। জানা থাকলে ক্ষতি কি। কিন্ত না। তোমার ভাইয়ের কথা যত শীঘ্রই সম্ভব ওনার মেয়েকে কারাটেতে ভর্তি করাতে হবে। যেন এখনই ওর মেয়ের পিছনে একশোটা ছেলে পরে আছে। হিহিহি!!'
হাত ধোয়া শেষ করে পিংকি রুমার দিকে ফিরে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, 'ভাবি শোন, একশোটা ছেলে পিছনে পরলে কোন ক্ষতি হয় না। ক্ষতি হবার হলে একজন দিয়েই হয়, সেটা নির্ভর করে ক্ষতি কে করছে, কীভাবে করছে আর কখন করছে তার উপর। এটা মেয়ে হবার কারনে তুমি আমি যেমন জানি। নাচ গান শেখাও আর যাই শেখাও ভাইয়া যা বলছে সেটাও করো। ভাইয়া তোমার আর আমার থেকে আরও ভাল জানে, কারন সে পুরুষ।'
মুচকি হাসি পিংকির মুখে। রুমা তাকিয়ে থাকে।
পরিবর্তন সবারই হয়। হতেই হয়। অন্যের তাগিদে না হলেও নিজের তাগিদে। নিজের রক্তের প্রয়োজনে।
(ঘটনা ও প্রতিটা চরিত্র বাস্তব, শুধু নাম পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে।)