বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) ইন্তেকাল করেন।
সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, অনাচার, বৈষম্য, শোষণ ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে অগ্নিকণ্ঠে সোচ্চার কবি কাজী নজরুল ইসলামের আজ ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী.
নজরুল ‘কারার ঐ লৌহকপাট ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট’ বলে বাঙালি তথা ভারতবাসীকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে প্রথম স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধেও প্রেরণা দেন। যৌবনের প্রাণবন্যায় বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি, সাংবাদিকতাকে আপ্লুত ও গৌরবদীপ্ত করে তুলেছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এ কবি। বাংলাভাষাকে তিনি বেগবান ও পৌরুষদীপ্ত মহিমায় উন্নীত করেছিলেন।
বাংলাসাহিত্যে ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে পরিচিত হলেও নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি অসাধারণ এক প্রাণশক্তিতে, নতুন দ্যোতনায়, শৈল্পিক উত্কর্ষে বাংলাভাষা ও সাহিত্যকে অতুলনীয় ঐশ্বর্য ও সম্পদে সমৃদ্ধ করেছেন।
ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ অপশাসনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশের কারণে কারারুদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। গোলামির জিঞ্জির পরিয়েও তাকে আপস করাতে পারেনি প্রতিক্রিয়াশীল শাসকচক্র।
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক। অবিভক্ত ভারতবর্ষে তিনি কবিতার মধ্য দিয়ে অন্যায়, শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠার মন্ত্র ছড়িয়ে ছিয়েছিলেন। আজো যে কোন অন্যায়, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নজরুল আমাদের প্রেরণা হয়ে আবির্ভূত হন।
কাজী নজরুল ইসলাম প্রেমের কবি, বিরহ-বেদনা ও সাম্যের কবি। বাংলা সাহিত্য-সঙ্গীত তথা সংস্কৃতির প্রধান পুরুষ। তবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তার লেখনী ধূমকেতুর মত আঘাত হেনে জাগিয়ে দিয়েছিল ভারতবাসীকে। তিনি পরিণত হন বিদ্রোহের কবিতে। আজও তার নানা লেখার মাঝ থেকে বিদ্রোহের পংক্তিমালা বাঙ্গালির হূদয়ে অনাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দুন্দুভি বাজিয়ে চলে। তার কবিতা ‘চ্ল চল্ চল’ বাংলাদেশের রণসঙ্গীত।
রবীন্দ্রনাথের ব্যর্থ অনুকরণ ও অনুসরণের কৃত্রিমতা থেকে আধুনিক বাংলা কবিতাকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল সবচেয়ে ফলপ্রসূ। তাই তিনিই রবীন্দ্রোত্তর সাহিত্যে আধুনিকতার পথিকৃত্। নজরুল তার কবিতা, গান, উপন্যাসসহ অন্যান্য লেখনী ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে সামপ্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও সোচ্চার কণ্ঠ ছিলেন। সে কারণে ইংরেজ সরকার তার গ্রন্থ ও রচনা বাজেয়াপ্ত করেছে এবং কারাদণ্ড দিয়েছে। কারাগারে বসেও বিদ্রোহী কবি নজরুল টানা চল্লিশ দিন অনশন করে বিদেশি সরকারের জেল-জুলুমের প্রতিবাদ করেছিলেন।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ সালের ২৫ মে, বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ জন্মগ্রহণ করেন।
কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। আজ দিনভর তার মাজারে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামবে।
ভিডিও লিংক:
কবির নিজের আবৃত্তি
:htt
Kazi Nazrul Islam -in his Film ''Druva'' released 1st January,1934
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:২৯