লিখেছেন ড্রাগন ফ্লাই, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:২৪
গাদ্দাফীর কতজন নারী দেহরক্ষী ছিল, তার ছেলেরা মাসে কতটাকা খরচ করতো এসব নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়া অবিরাম প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গাদ্দাফী সম্পর্কে নীচের তথ্যগুলো কেউই বলছে না:
১. লিবিয়ার নাগরিকদের জন্য ঋণ নিতে কোন সুদ দিতে হতো না।
২. ছাত্রদেরকে তারা যে বিষয় পড়ছে সে বিষয়ের পেশাজীবিদের গড় বেতন বৃত্তি হিসাবে দেয়া হতো।
৩. চাকুরী না থাকলে রাষ্ট্র তাকে ভাতা দিতো।
৪. বিয়ে করলে সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বাসা দেয়া হতো।
৫. বিশ্বের যে কোন দেশে লিবিয়ার নাগরিকেরা পড়াশোনা করতে গেলে সরকার তাকে ২৫০০ ইউরো, বাসা ভাড়া এবং যাতায়াত ভাতা দিতো।
৬. গাড়ী বিক্রয় করা হতো ফ্যাক্টরীতে তৈরী করতে যে খরচ হতো, সেই দামে।
৬. লিবিয়ার কোন বৈদেশিক ঋণ ছিল না।
৭. সকল নাগরিকের জন্য ছিল বিনামূল্যে শিক্ষা ও চিকিৎসা।
৮. জনগণের ২৫% এর রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী।
৯. উত্তর আফ্রিকার মধ্যে লিবিয়ার স্বাক্ষরতার হার সর্বোচ্চ (৮২%)
১০. রাস্তায় কোন ভিক্ষুক ছিল না এবং কেউ গৃহহীন ছিল না।
১১. আধা কেজি পাউরুটির দাম ছিল মাত্র ১৫ সেন্ট।
- Loans to Libyan citizens are given with NO interest.
- Students would get paid the average salary for the profession they are studying for.
- If you are unable to get employment the state would Compensate you till you get employment.
- When you get married the couple gets an apartment or house for free from the Government.
- You could go to college anywhere in the world. The state pays 2,500
euros plus accommodation and car allowance.
- The cars are sold at factory cost.
- Libya does not owe money, (not a cent) to anyone. No creditors.
- Free education and health care for all citizens.
- 25% of the population with a university degree.
- Libya has the highest literacy rate of any country in North Africa
(82% of the population can read and write).
- No beggers on the streets and nobody is homeless (until the recent bombing).
- Bread costs only $0.15 per 1/2kg loaf.
মোজাম্মেল হোসেন (ত্বোহা) বলেছেন:
পশ্চিমা মিডিয়া যেরকম প্রচার করে গাদ্দাফী মোটাও সেরকম নিষ্ঠুর শাসক ছিলেন না। তিনি জনগণের জন্য অনেক কিছুই করেছেন। লিবিয়ার অধিকাংশ জনগণ সুখেই ছিল। কিন্তু তার শুধু দুটো দোষ ছিল। প্রথমত, তিনি তার খেয়াল খুশি মতো যা ইচ্ছে তাই করতেন, যার অনেকগুলো পাগলামির পর্যায়ে পড়ত। আর দ্বিতীয়ত, তিনি ভিন্নমত একেবারেই সহ্য করতেন না। কঠোর হস্তে তিনি তার বিরুদ্ধমতকে দমন করেছেন। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা যদি না থাকে, তাহলে সে যত সুখেই থাক, সেই সুখের যে কোন মূল্য নেই সেটাই শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হল।
আবার বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় গাদ্দাফীকে যেরকম হিরো বানিয়ে ফেলেছে, মুসলিম বিশ্বের মহান নেতা বানিয়ে ফেলেছে, সেরকম হিরোও গাদ্দাফী না। আমেরিকা ভিলেন, তাই বলে আমেরিকার বিপক্ষে যে থাকবে সেই হিরো, এমন কোন সূত্র নেই।
কোন রকম গুগল সার্চে না গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আপনার দেওয়া লিংকের প্রশ্নগুলোর জবাব দেই। উল্লেখ্য আমি ১৯৯০ সাল থেকে (আড়াই বছর বয়স) থেকে লিবিয়াতে আছি। গাদ্দাফীর জন্ম এবং মৃত্যুস্থান সিরতের সিরত ইউনিভার্সিটিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি।
● আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক বা অন্য কারো কাছে লিবিয়ার এক পয়সাও দেনা নেই।
জানি না। তবে এটা সত্য হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
● উত্তর আফ্রিকার সবচেয়ে স্বাক্ষর দেশ লিবিয়া।
এটাও সম্ভবত সত্য। তবে তারা শুধুই স্বাক্ষর। শিক্ষার মূল ব্যাপারটা তারা কখনোই অর্জন করতে পারে নি। এমনিতে লিবিয়ানদের ব্রেন মোটামুটি শার্প, তারা খুব দ্রুত শিখতে পারে, স্মরণশক্তি অসাধারণ, কিন্তু ইচ্ছে করেই তাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে রাখা হয়েছে। শিক্ষাবর্ষ ছয়মাসের, বাকি ছয়মাস ছুটি। তাদের নাইন-টেনের সিলেবাস আমাদের দেশের ফাইভ-সিক্সের সিলেবাসের সমতুল্য।
আশির দশকে প্রায় দশ বছর লিবিয়াতে ইংরেজি শিক্ষা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। পরে চালু করা হয় কিন্তু ক্লাস সেভেনে ওঠার পর এ, বি, সি, ডি শেখারো শুরু করা হতো। তাদের শিক্ষক নিয়োগেও চরম দুর্নীতি আর অবহেলা। শিক্ষকগুলো নিজেরাই তেমন কিছু জানে না।
উত্তর আফ্রিকার মধ্যে লিবিয়া সবচেয়ে ধনী দেশ। সেই তুলনায় তাদের যে শিক্ষা ব্যবস্থা হওয়া উচিত ছিল, তার তুলনায় কিছুই হয় নি। আমাদের দেশের এতো বিতর্কিত শিক্ষাব্যবস্থাও লিবিয়ার তুলনায় হাজারগুণ ভালো।
● লিবিয়ায় শিক্ষিত জনসংখ্যার ৮০% লোক পাশ্চাত্যের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত।
ফালতু কথা। খুব বেশি হলে বিশ পার্সেন্ট হবে। আগে আরো কম ছিল। কিন্তু ইরাক-যুদ্ধের পর গাদ্দাফী যখন তার নীতি পাল্টে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে, টনি-ব্লেয়ারের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে, তার পর থেকে প্রচুর ছাত্র ব্রিটেনে যাওয়ার সুযোগ পায়।
● একটি আধা কেজি রুটির দাম লিবিয়ায় পনেরো ইউএস সেন্ট (আমাদের দেশে ৪৫০ গ্রাম ওরিয়েন্ট পাউরুটির দাম পয়তাল্লিশ সেন্ট আর আমাদের মাথাপিছু আয় লিবীয়দের আয়ের ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ!)।
এটা সত্য। তবে এটাতে গাদ্দাফীকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়ার কিছু নেই। আটা এদের প্রধান খাদ্য, তাই এটাতে ভর্তুকি দিতেই হবে। এছাড়া লিবিয়াতে অনেক জিনিস আছে, যার দাম বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। যেমন এক কেজি খাসির মাংস যুদ্ধের আগে ছিল ১২-১৩ দিনার (৬০০-৭০০ টাকা)। অবশ্য লিবিয়াতে মাথাপিছু আয় অনেক বেশি। কিন্তু এর কারণ তো গাদ্দাফী না, দেশাটাই তেল সমৃদ্ধ, এবং এই তেলের গুণগত মানই বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় অনেক ভালো।
● লিবীয়দের জন্য ঋণের সুদের হার শূন্য শতাংশ অর্থাৎ কোনো সুদ নেই।
এটা মিথ্যা। লিবিয়াতে ব্যাংক সুদ দেয় না, কিন্তু সুদ ঠিকই নেয়। হার সম্ভবত কম, আমি ঠিক জানি না, কিন্তু সুদ দিতে হয়।
● লিবিয়া একটি ভিক্ষুকহীন দেশ।
এটাও মিথ্যা। আমাদের বিন হাম্মাল মসজিদেই নিয়মিত জুমার নামাজে দুই-একজন ভিক্ষুক দেখতে পেতাম। তাছাড়া রোজার মাসে এবং ঈদের নামাযেও ভিক্ষুক দেখা যায়। আমাদের ফেতরার টাকা তো ভিক্ষুকদেরকেই দেই। তবে স্বীকার করতেই হবে ভিক্ষুকের হার খুবই কম। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হল তিউনিসিয়ায় গোলমাল শুরু হওয়ার পর থেকে আমি একটা ভিক্ষুকও কোথাও দেখিনি। সম্ভবত সরকার বিপদ আসছে বুঝতে পেরে কোন ব্যবস্থা নিয়ে থাকবে।
● দেশটিতে ১০০% বেকারের বেকারভাতা নিশ্চিত।
এমনি বিভিন্ন রকম ভাতা আছে, যদিও সেটা খুবই অকিঞ্চিতকর, কিন্তু বেকারদের ভাতা আছে কি না, বলতে পারি না। তবে লিবিয়াতে বেকারত্বের হার বাংলাদেশের চেয়েও বেশি। প্রচুর মানুষ বেকার। তাদের কেউ ট্যাক্সি চালায়, কেউ দোকানদারি করে। গাদ্দাফীর বিরুদ্ধে লিবিয়ানদের ক্ষোভের এটাও একটা কারণ। কারণ তেলসমৃদ্ধ অন্যান্য আরবদেশ যেমন কুয়েত বা সৌদি আরবে সে দেশীরা রাজার হালে থাকে। অথচ লিবিয়ানদের ট্যাক্সি চালিয়ে আর বিভিন্ন ধান্দাবাজি করে টাকা রোজগার করতে হয়।
● বিয়ের পর নবদম্পতির জন্য বিনামূল্যে ফ্ল্যাট বা বাড়ি।
এই হাস্যকর তথ্য জীবনে এই প্রথম শুনলাম। তবে বিয়ের জন্য বা বাড়ি করার জন্য সরকার লোন দেয়। সেই লোন অবশ্য সুদ সহই পরিশোধ করতে হয়। তবে পরিশোধ করার ব্যবস্থা সহজ। প্রতিমাসে বেতন থেকে সামান্য পরিমাণ করে কেটে রাখা হয়। ত্রিশ-চল্লিশ বছরে সেটা শোধ হয়ে যায়।
● পৃথিবীর যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ। সেজন্য মাসে ২,৫০০ ইউএস ডলার বৃত্তির সাথে গাড়ি ও আবাসনভাতা।
এতো সহজ না। সবাই যদি এরকম সুযোগ পেত, তাহলে আর কোন কথাই ছিল না। কিছু ভালো ছাত্র এবং গাদ্দাফী ক্বাবিলার খারাপ ছাত্ররা এই সুযোগ পায়। খরচ সরকারই দেয়, তবে সেটা এতো বেশি কি না তা জানি না।
● ন্যাটোর বোমাবর্ষণের আগে পর্যন্ত শূন্য (০) শতাংশ গৃহহীন নাগরিক।
এটা সম্ভবত সত্যি। তবে সেই গৃহগুলো এমন কোন আহামরি গৃহ নয়। বেশির ভাগই ইতালিয়ান আমলে তৈরি প্রাচীন পাথর দিয়ে তৈরি বাড়ি। তবে সম্প্রতি প্রচুর নতুন কন্সট্রাকশনের কাজ চলছিল। অবশ্য সেগুলো বিতরণ করার সময় দুর্নীতিও হচ্ছিল প্রচুর। যাদের কয়েকটা বাড়ি ছিল তারাই আবার পাচ্ছিল, যাদের ছিল না তারা একটাও পাচ্ছিল না।
● উৎপাদন মূল্যে (Ex factory price) গাড়ি।
সরকারি ভাবে গাড়ি বেশ সস্তায় দেওয়া হতো, এটা জানি। তবে এখানেও সীমাহীন দুর্নীতি। আমাদের বাড়িওয়ালা কামাল কয়েকমাস পরপরই একটা করে গাড়ি জোগাড় করে এরপর বাইরে বাজারে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে। অনেকগুলো পরিবার আছে যাদের পরিবারে মানুষ আছে দশজন, গাড়ি আছে পনের-বিশটা। অথচ প্রচুর লিবিয়ানকে চিনি যারা তিন-চার কিলোমিটার হেঁটে হেঁটে খুবজা কিনতে যায়।
● ছাত্ররা যে বিষয়ে পড়াশোনা করে সে বিষয়ে পড়াশোনা করে চাকরিরতরা গড়ে যে বেতন পেত সে পরিমাণ টাকা তাদের দেওয়া।
জানি না। তবে এটাও মনে হয় ভুয়া।
● প্রতিটি লিবীয়র জন্যে বিনামূল্যে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা।
এটা সত্য।
যুদ্ধের পুরো সময়টাতে আমি সিরতেই ছিলাম। যুদ্ধকালীন আমার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা পড়তে পারেন এখান থেকে -
Click This Link
আপনাদের দুই জনকেই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেোয়ার জন্য। আমরা আশা করব এ বিষয়ে আপনারা আরো লিখবেন। হে আল্লাহ তুমি গাদ্দাফী কে ক্ষমা করে দাো।