ভোরের সূর্যটা তখনও ভালো করে ওঠে নি। এর মধ্যেই পাহাড়ঘেরা উপত্যকায় ভিড় করেছেন কয়েকশ’ নারী-পুরুষ। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাজে নেমে পড়লেন তারা। পাহাড়ের ঢাল থেকে মাটি কেটে চলছিলো আরেকপাশের নিচু এলাকা ভরাটের কাজ।
কী নারী কী পুরুষ! প্রত্যেকেই বিপুল উদ্যমে অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কেউ একটু ধীরে হাঁটছেন তো বাকিরা এমন উদ্দীপনাময় হুল্লোড় দিচ্ছেন যে, মুহুর্তে কেটে যাচ্ছে সমস্ত ক্লান্তি। মাটি কাটার কাজ যে এত আনন্দের হতে পারে তা এর আগে কেউ কখনো ভাবেন নি। আর যে মজুররা কাজে নেমেছেন তাদের কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কেউ ব্যাংকার, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ সরকারী চাকুরে আর বাকিরা শিক্ষার্থী - বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, মেডিকেল পড়ুয়া বা উচ্চতর গবেষণায় রত।
এই অপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে এবার কোয়ান্টামমে আয়োজিত অন্বেষায়নে- কোয়ান্টামের অগ্রসর সদস্যদের নিয়ে বিশেষ কার্যক্রমে। ৯ নভেম্বর হতে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ অন্বেষায়নে সারাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিলেন ৫ শতাধিক কোয়ান্টাম সদস্য।
এবারের অন্বেষায়নের মূল থিম ছিলো নিজের শক্তিকে আবিষ্কার করা, ইতিবাচকতায় উজ্জীবিত হওয়া। আর করসেবা এনে দেয় এ তাত্ত্বিক শিক্ষাকে একেবারে হাতেকলমে অনুধাবনের সুযোগ, যা ছিলো লামায় কোয়ান্টামের নির্মিতব্য প্রথম মসজিদের জমি তৈরির কাজ। একইসাথে সাধিত হয়েছে দুটো উদ্দেশ্য। একদিকে পাহাড়ি ঢলে ভেঙে পড়া রাস্তার ওপরের মাটি কেটে রাস্তা মেরামত, অন্যদিকে মাঠের খানা-খন্দ ভরে মাঠকে রাস্তার সমান্তরাল করা।
আর পাঁচদিনের এ করসেবার মধ্য দিয়ে প্রতিটি সদস্যের মধ্যে শারীরিক সামর্থ্য আর মানসিক শক্তির যে অসাধারণ স্ফূরণ ঘটেছে- তা ছিলো খুবই উল্লেখযোগ্য। প্রখর রোদে যেমন সবাই হাসিমুখে মাটি বহন করেছেন বিরতিহীন, তেমনি দীর্ঘ পদযাত্রায়ও ক্লান্তির দেখা মেলে নি। অংশগ্রহণকারীরা সবাই যেন নিজেদের আবিষ্কার করেছেন নতুনভাবে।
করসেবার কষ্টকর কায়িক পরিশ্রমে সমভাবে অংশ নিয়েছেন মেয়েরাও। কোয়ান্টাম বিশ্বাস করে মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা- এ সবই হলো একেকটি গুণের নাম- যা নারী-পুরুষ-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে প্রত্যেকের মাঝেই স্ফূরিত হতে পারে।
অন্বেষায়নের আরেক চমক ছিলো কোয়ান্টামমের গিরি ধাড়কানে এক চমৎকার হেক্সাগন আকৃতির আরোগ্যশালার উদ্বোধন। এখান থেকে সদস্যরা সংগ্রহ করেছেন বিশেষ প্রাণশক্তিসমৃদ্ধ পানি। এছাড়াও প্রতি সন্ধ্যায়ই এখানে গুরুজীর পরিচালনায় বিশেষ মেডিটেশনে শরীক হয়েছেন তারা। উজ্জীবিত হয়েছেন কোয়ানফি আর নিরাময়ের শক্তিতে।
উল্লেখ্য, যে পাহাড়ী দুগর্ম জনপদে দারিদ্র্য আর ক্ষুধায় আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা ছিলো মানুষের জীবন। তাদের এই অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনে আলোর পরশ বুলাতেই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন শুরু করে সৃষ্টির সেবা কার্যক্রম। বছরে একটি দিনও যাদের পাতে গোশত জুটতো না, তাদের জন্যেই ২০০২ সাল থেকে প্রতিবছর আয়োজন করা হয়েছে লামা কোরবানি। বর্তমানে এই দৃশ্যপট অনেকখানিই বদলে গেছে- গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক মুরগির ফার্ম এবং অভাবের স্থলে জায়গা করে নিচ্ছে স্বচ্ছলতা ও স্বাবলম্বন। পরম করুণাময়ের নিকট এরই শুকরিয়াস্বরূপ এবছর মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
এবারের অন্বেষায়ণে সঙ্ঘবদ্ধতা আর কষ্টসহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছেন প্রত্যেকে। আনন্দ আর উচ্ছ্বাস নিয়ে স্রষ্টার কাজে অংশ নেবার সাথে সাথে প্রো-কোয়ান্টিয়ারদের মাঝে জাগ্রত হয়েছে এক অবিনাশী প্রত্যয়ের- যা স্পৃহা যোগায় বৃত্ত ভাঙার, সৎসঙ্ঘে একাত্ম থাকার
http://quantummethod.org.bd
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:১৮