somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহবাগ আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও স্বাধীন মিডিয়া

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাহবাগ আন্দোলন:
আজ দেখলাম শাহবাগে আওয়ামী-বাম সমর্থকরা আবারো একত্রিত হয়েছে আর সরকারকে ২৪ ঘন্টা সময় বেঁধে দিয়েছে আমারদেশ পত্রিকা ও এর সম্পাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নিতে।

শুরুতে আমার মতো অনেকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবীতে শাহবাগ আন্দোলনের সমর্থক হলেও আস্তে আস্তে এর পেছনে সরকারের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে দেখে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। রাজিব হত্যার পরে আন্দোলনের পেছনে ব্লগারদের ইসলাম বিরোধী অপপ্রচার ও প্রপাগান্ডা দেশবাসীর সকলের কাছে ইন্টারনেটের বদৌলতে পৌঁছে গেছে। এও জানা গেল, এই আন্দোলনের মূল নেতা ডা: ইমরান রংপুর মেডিকেলের ছাত্রলীগের সেক্রেটারী ছিলেন। আর প্রথম পর্যায়ের পুরো ১৭ দিনে যাঁরা শাহবাগ আন্দোলনে একাত্নতা প্রকাশ করতে গিয়েছেন তাঁদের অনেকেই সরকার, আওয়ামী-বাম রাজনীতির নেতৃত্ব ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। এমনকি কোমলমতি স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় জাগরণ মঞ্চে নিয়ে 'ভয়ংকর কথা' শেখানো হচ্ছে বলে মিডিয়ায় প্রকাশ পায়। যেখানে বিরোধী দলকে সরকার একটি সভা-সমাবেশ করতে দেয়না সেখানে পুরো ১৭ দিনের একটানা আন্দোলনে শাহবাগের মতো রাজধানীর একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অবরুদ্ধ হয়ে রইল। এতে আর বুঝতে বাকি রইলনা, শাহবাগ আন্দোলন নিজের শত শত ব্যর্থতা ঢাকতে সরকারের একটি কৌশল।

এই সময় দেশে সরকারের দূর্নীতি, ঘুষ, পদ্মা ও হলমার্ক কেলেন্কারী, মন্ত্রীর এপিএস কর্তৃক সরাসরি ঘুষের টাকা লেনদেন, বিদ্যুৎ সমস্যা, চাঞ্চল্যকর হত্যার (যেমন, সাগর-রুনি) বিচার, বিদ্যুৎ সমস্যা (ও অজনপ্রিয় কুইক রেন্টাল), মন্ত্রী ও সরকারী নেতাদের ব্যাংকের টাকা আত্নসাৎ সহ শত শত সমস্যা থাকা সত্বেও শাহবাগ আন্দোলননের দাবী খুবই সীমিত এজেন্ডায় পরিপূর্ণ।


তাই শাহবাগ আন্দোলনের নেতৃত্বের কাছে প্রশ্ন করি, উপরের এতসব সমস্যা থেকেও আমারদেশ ও মাহমুদুর রহমান বড় সমস্যা? এজন্য এখন আর শাহবাগ আন্দোলনে সমর্থন দিতে মনে সায় দেয়না।



যুদ্ধাপরাধের বিচার?
বাংলাদেশের শতকরা ৯৯% মানুষ প্রকৃত ও সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে যারা আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত তাদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র জামাত-বিএনপির চিহ্নিত কয়েকজনকে বিচারে অনেকে শুরু থেকে মনে করছে এই বিচারে সরকার আদৌ আন্তিরক কিনা। এদিকে খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নামোল্লেখ করে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, সরকার এই বড় রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলা করলে তিনি নিজে সাক্ষ্য দিবেন। কিন্তু এহেন এত বড় অভিযোগের পরে মামলাতো দূরের কথা সরকার ও মন্ত্রী মহোদয় নিজে কাদের সিদ্দিকীর কথা আমলেই নেননি। শাহবাগের আন্দোলন সঙ্গত কারণে এখানেও নীরব।

এছাড়া বর্তমান আওয়ামী দল/সরকারে মোট ২৩ জন রাজাকারের নাম (একাধিক মন্ত্রী ও এমপিও আছেন এই লিস্টে) ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবার কাছে প্রকাশ পেলেও সরকার ও শাহবাগ আন্দোলন এখনও নীরব। যে কাদের মোল্লার বিচারের পরে ফাঁসির দাবীতে শাহবাগ আন্দোলের সূচনা, সে কা. মোল্লার বিচারে সরকারপক্ষ প্রত্যক্ষ সাক্ষ্যের মাধ্যমে একটি অভিযোগও প্রমাণ করতে পারেনি (ইত্তেফাক)। তাই যথাযথ বিচারে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে সরকার সমর্থক অনেকেই এই বিচার মেনে নেয়নি।



স্বাধীন মিডিয়া!
বরাবরের মতোই আওয়ামীলীগ সরকার বিরোধী দলের কন্ঠ রোধে যা ইচ্ছা তাই করেছে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে বঙ্গবন্ধূ (সরকারী দল ও পত্রিকা ছাড়া অন্য) সকল দল ও পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে বাকশাল কায়েম করেছিলেন। বর্তমান আওয়ামী সরকারের শুরু থেকে সবচেয়ে বেশি কোপানলে পড়েছে - আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমান।

প্রথমত, দেশের শক্তিশালী কোন বিরোধী মিডিয়া নেই। শক্তিশালী মিডিয়া সরকারের ভুল গুলো ধরিয়ে দিয়ে দেশ ও সরকারকে সঠিক পথে এগিয়ে চলতে সাহায্য করে। গত বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী জনমত সৃষ্টিকরেছিল সরকার বিরোধী মিডিয়া আজ যার বেশিরভাগ সরকার পক্ষ। বিএনপির ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার কারণেই দেশ সম্ভাব্য খারাপ পরিণতি থেকে রক্ষা পেয়েছিল।

বিএনপির আমলে যেসব টিভি চালু হয়েছিল তাদের মধ্যে যেগুলো বিএনপি পন্হি ছিল (আরটিভি, এনটিভি) সেগুলো সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে পাল্টি খেয়েছে। সরকারের যৌক্তিক সমালোচনা এগুলো এখন আর করেনা। দিনকাল নামক বিএনপির পত্রিকা এখন প্রকাশ হয় কিনা সন্দেহ। জামাতি মিডিয়ার গ্রহণযোগ্যতা কম। ফলে একমাত্র বিরোধী মিডিয়া বলতে আমারদেশ। তাই এই পত্রিকা বন্ধ হলে গণতন্ত্র বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে।

প্রত্যেক পত্রিকা ও সম্পাদকের একটি রাজনৈোতিক আদর্শ ও চিন্তা ভাবনা থাকে। আমারদেশ ও মাহমুদুর রহমানও ব্যতিক্রম নন। তাদের নীতি আদর্শ সরকারবিরোধী হলে সরকারের উচিত হবে সে নীতি-আদর্শ বন্ধে আদা-জল খেয়ে নামা - এমন কাজ গণতন্ত্র নয়। সে নীতি-আদর্শ দেশের সংবিধান পরিপন্হী না হলে সরকারের বন্ধ করার কাজগুলোর নৈতিক ও আইনগত ভিত্তি দূর্বল হয়ে যায়। দেশের জনগণও তা পছন্দ করে না।

তাই আজকে যারা আমারদেশ ও মাহমুদুর রহমানকে থামাতে আন্দোলন করছেন, তাঁদের বলব আপনারা লেখনির মাধ্যমে আমারদেশ ও মাহমুদুর রহমানের লেখার জবাব দিন। দেশের মানুষ দেখবে কারা সত্য। নতুবা বিরোধী মিডিয়া দমন এদেশে গণতন্ত্রের সুষ্ঠ বিকাশের অন্তরায় প্রমাণিত হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:২৬
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×