অনেকদিন আগে যখন ঢাকায় থাকতাম, তখন ঢাবি-বুয়েট সহ ঢাকার রাজপথে কিছু দেয়াল লিখন দেখে মজা পেতাম। সেগুলোর একটি: "কষ্টে আছি - আইজদ্দীন"। শুনেছি আইজদ্দীন প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে এইরকম অদ্ভুত প্রচারনার মাধ্যমে প্রেমিকার মনে সহানুভূতি সৃষ্টির লক্ষ্যে একাজ করেছেন। প্রেমের প্রতি আমার অনাসক্তির কারণে এই দেয়াল লিখন দেখে হাসি পেতো।
আজ অনেকদিন পরে, পত্রিকার একটি খবর পড়ে আইজদ্দীনের মতোই খারাপ লাগছে। কষ্ট কষ্টই, তবে কারণ ভিন্ন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় একজন প্রমাণিত খুনিকে ক্ষমা করলেন নিজের ক্ষমতা বলে। ভিক্টিম ও অপরাধী যে দলেরই হউক, কোন সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া, রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমতা প্রয়োগ শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় এটা স্পষ্ট। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে নিজদলের লোকদের হাজার-হাজার মামলা থেকে বেকসুর খালাস দিতে যত উতসাহী, বিরোধীদলের লোকদের বিনা দোষে ও তুচ্ছকারণে জেলে পুরতে ও শাস্তি দিতে ততখানি উতসাহী।
সারাদেশে প্রেমের ফাঁদ পেতে বা ক্ষমতার বলে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটছে একের পর এক। এসবের সিংহভাগই সরকার দলীয় শিক্ষক (ভিকারুন্নিসার শিক্ষক পরিমল, মহাম্মদপুরের প্রধান শিক্ষক ভজন কুমার)। অনেক সময় মোবাইলে ধারণকৃত ছবি-ভিডিও দিয়ে ব্লাকমেইল ও ব্যবসা করা হচ্ছে। এটি এখন ভায়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিস্তারিত দেখুন।
এছাড়া ধর্মীয় ব্যাপারে সরকার দলীয় লোকদের বেপরোয়া কথাবার্তাও চলছে অহরহ। এর একটি গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ার শিক্ষক ক্লাসে মুহাম্মদ সা: কে ছাগল বলে অবহিত করেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, ভিক্টিম বা তাঁর পরিবারের কেউ ক্ষমা না করলে রাষ্ট্রপতি কিভাবে ক্ষমা করতে পারেন? ভিক্টিম বা তাঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিয়েই কেবল শাস্তি থেকে অপরাধী বাঁচতে পারেন। না হলে শেষ বিচারের দিনে রাষ্ট্রপতি ও এই অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় কি জবাব দেবেন? রাজনৈতিক বিবেচনায় ক্ষমা ও মামলা থেকে অব্যাহতি কি অপরাধীদের উতসাহী করবে না? দেশে আইনের শাসন কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে?
আজ এট কষ্ট হচ্ছে বুঝাতে পারছি না। ইচ্ছে করছে ঢাকার সকল রাজপথে লিখে দিই: "রাষ্ট্রপতির 'রাজনৈতিক ক্ষমা'র ক্ষমা নাই"।