ছোট বেলায় ফোর বা ফাইভের বইয়ে এরোপ্লেইন ও রকেট আবিষ্কারের কাহিনীর সাথে চন্দ্রপৃষ্ঠে মানুষের পদচারণার বিস্ময়কর কাহিনী পড়েছিলাম। এরপর থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে আমেরিকার অবদান ও অগ্রগতির জন্য অনেক সমীহ করতাম দেশটিকে। চন্দ্রাভিযানে তাদের সাফল্যের সেই বিশ্বাস নিয়ে পেরিয়ে গেল জীবনের অনেকগুলো দিন: শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের মাঝপথে দাঁড়িয়ে এখন। তবে আজ একি শুনছি!
বছর দু'য়েক আগে ঘটনার বানোয়াট কাহিনী শুনেছিলাম। পত্র-পত্রিকা, ইন্টারনেটেও ইতিমধ্যে অনেকে লেখা-লেখি হয়েছে প্রচুর। বিতর্ককারীরা বলছেন, ১৯৬৯ সালে আমেরিকার চন্দ্র অভিযান আসলে একটি সাজানো গল্প-কাহিনী। রাশিয়ার সাথে মহাকাশ গবেষণায় টক্কর দেয়ার জন্য আমেরিকার এই আয়োজন। আজ ৪০ বছর পরে স্বয়ং নিল আর্মস্ট্রং যখন সে কথা স্বীকার করলেন, তখন বিরোধীদের জয় হল। আবারো কলঙ্খিত হলো সভ্য সমাজের দাবীদের আমেরিকার মুখ - তাদের জুচ্চোরীর আরেক অধ্যায় উম্মোচিত হল।
এনিয়ে মানবজমিনে লেখা ফিচারটি পাঠকদের নজরে না পড়ে থাকলে নীচে পড়ে নিন:
"চন্দ্র অভিযান মিথ্যে ও বানোয়াট। দীর্ঘদিন এমন বিতর্ক চলার পর এবার তাতে সায় দিয়েছেন চন্দ্র অভিযানের মূল নায়ক নিল আর্মস্ট্রং। ১৯৬৯ সালের ২০শে জুলাই তিনিই প্রথম চাঁদের মাটিতে পা রেখেছিলেন। তিনিই বললেন, তাকে এবং সহযোগী নভোচারীদের দিয়ে সম্ভবত নিউ মেক্সিকোর কোন ধ্বনিমঞ্চ (সাউন্ডস্টেজ)-এ চিত্রায়িত হয়ে থাকতে পারে চন্দ্র জয়ের ওই দৃশ্য। অনলাইন দ্য ওনিয়ন ডট কম (www.theonion.com) এ খবর দিয়ে আরও জানায়- সোমবার নিজ বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে আর্মস্ট্রং চন্দ্র অভিযান নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কে তার সায় দেন। এ সময় তিনি চন্দ্রপৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে দেয়া তার বিখ্যাত উক্তি- ‘ওয়ান স্মল স্টেপ ফর ম্যান, ওয়ান জায়ান্ট লিপ ফর ম্যানকাইন্ড’কে পাল্টে তিনি বলেন, এটা হওয়া উচিত ছিল- ওয়ান স্মল স্টেপ ফর ম্যান, ওয়ান জায়ান্ট লাই ফর ম্যানকাইন্ড। অর্থাৎ চন্দ্রপৃষ্ঠে মানুষের ছোট্ট পদচিহ্ন, মানবজাতির জন্য ভয়ঙ্কর মিথ্যা।
ওই সংবাদ সম্মেলনে নিল আর্মস্ট্রং জানান, চন্দ্র অভিযানের ভিডিও ইউটিউবে দেখেছেন এবং চন্দ্র অভিযান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টিকারী রাফ কোলম্যানের ওয়েবসাইট ওমিশন কন্ট্রোল ডট অর্গ-এর বেশ কিছু ব্লগ পড়েছেন তিনি। বলেছেন, এগুলো দেখে ও পড়ে আমার মনে হয় আমি মিথ্যের সঙ্গে বসবাস করছি। আমার কাছে এটা বেদনাদায়ক এ জন্য যে, ১৯৬৯ সালের ২০শে জুলাই আমি ও আমার সহযোগীরা আট দিনে ২ লাখ ৫০ হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে চাঁদের মাটি স্পর্শ করিনি। সেখানে যে পরীড়্গা-নিরীড়্গা হয়েছে তা-ও খাঁটি নয়। এর মাধ্যমে মানবজাতির সামনে কোন নতুন যুগ উন্মুক্ত হয়নি। বস্তুত চন্দ্র অভিযানের পুরো ঘটনা খুব সম্ভব নিউ মেক্সিকোর কোন এক জায়গায় এক সাউন্ড স্টেজে চিত্রায়িত হয়েছে। প্রায় ৪০ বছর আগে মহাকাশ গবেষণায় যখন রাশিয়া অনেকখানি এগিয়ে যায়, প্রথমে পশু ও পরে মানুষ মহাশূন্যে পাঠাতে সড়্গম হয় তখনই যুক্তরাষ্ট্র এ লড়াইয়ে জিততে উঠেপড়ে লাগে। এক পর্যায়ে তারা নিল আর্মস্ট্র, এডউইন অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্সকে পাঠায় চাঁদে। তাদের মধ্যে চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখেন নিল আর্মস্ট্রং, পরে এডউইন অলড্রিন। মাইকেল কলিন্স রয়ে যান তাদেরকে বহনকারী নভোতরীর নিয়ন্ত্রণে। এর মধ্য দিয়ে মহাশূন্য গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃস্থানীয় হয়ে ওঠে। কিন্তু আর্মস্ট্রং স্বীকার করেন- তিনি এবং এডউইন অলড্রিন চাঁদের বুকে যুক্তরাষ্ট্রের যে পতাকা উড্ডয়ন করেছিলেন তা কিছুটা নড়াচড়া করছিল এমনটা বলতে তিনি ভুল করেছেন। আর্মস্ট্রং বলেন- চাঁদ, যা বায়ুশূন্য সেখানে পতাকা নড়াচড়া সে তো একেবারে অসম্ভব। আসলে কোন এয়ারকন্ডিশনের বাতাসে নড়েছে পতাকা। আর আমাদেরকে যে হেলমেট পরানো হয়েছিল তাতে বাইরের কোন শব্দই শোনা যায় না। এরপরই আর্মস্ট্রং সুভ্যেনির হিসেবে রাখা চাঁদের মাটির কিছু নমুনা মুঠো করে ধরেন এবং তা ফেলে দেন ময়লার ঝুড়িতে। ওদিকে রাফ কোলম্যানের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ১৯৬৯ সালে মানুষকে চাঁদে পাঠানোর মতো বাস্তôব প্রযুক্তিগত ড়্গমতা ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের। বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ এবং পাইলটদের অধীনে ঐতিহাসিক ওই মিশনের জন্য নভোচারীদের হাজার হাজার ঘণ্টা প্রশিড়্গণ দেয়া সত্ত্বেও আর্মস্ট্রং স্বীকার করেছেন- চন্দ্র অভিযান নিয়ে বিতর্কিত তত্ত্বই সঠিক। এক ও অভিন্ন লড়্গ্য অর্জনের জন্য মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র কয়েক হাজার কর্মকর্তা ঘণ্টার পর ঘণ্টা একত্রে কাজ করছিলেন। কিন্তু তাদের কেউ কি জানতেন আসলে কি হচ্ছিল।
৩১ বছর বয়সী পার্টটাইম ভিত্তিতে কর্মরত সহকারী লাইব্রেরিয়ান রাফ কোলম্যান সম্পর্কে আর্মস্ট্রং বলেছেন- আমি যতটুকু জানি তার চেয়ে চন্দ্র অভিযানের ধোঁকা সম্পর্কে বেশি জানেন কোলম্যান। বছরের পর বছর তিনি এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছেন। ওমিশন কন্ট্রোল ডট অর্গ আরও জানিয়েছে, আর্মস্ট্রং চাঁদের যেখানে অবতরণ করেছিলেন তার পাশেই ইংরেজি ‘সি’ অক্ষর খোদিত একটি পাথর খণ্ড পড়ে ছিল। আর্মস্ট্রং এ বিষয়টি অভিযানের আগে- পরে উল্লেখ করেননি। আবেগপ্রবণ আর্মস্ট্রং এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ওই পাথরখণ্ডটি সম্ভবত নাসা থেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু পাথরখণ্ডটি আর্মস্ট্রং উল্টে দিতে ভুলে গিয়েছিলেন। কেন এমন ধোঁকাবাজি? এ রকম প্রশ্নের জবাবে আর্মস্ট্রং-এর উদ্ধৃতি দিয়ে কোলম্যান বলেছেন- তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়নকে মহাশূন্য অভিযানে পেছনে ফেলতে যুক্তরাষ্ট্র ওই ঘটনা সাজিয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে আর্মস্ট্রং চাঁদে তার প্রথম পা রাখার দৃশ্য প্রদর্শন করেন। কয়েকবার বিভিন্ন গতিতে ওই দৃশ্যের ফিল্ম প্রদর্শন করে তিনি বলেন- চাঁদের বুকে মানবজাতির পা রাখার ঘটনা চিত্রায়ন ছাড়া কিছু নয়। এতে প্রথমে তাকে পিছন দিকে ধীরগতিতে পিছাতে বলা হয়। পরে তা বিপরীত দিকে চালিয়ে দেয়া হয়- যা দেখে মানুষ মনে করে তিনি চাঁদের গায়ে হাঁটছেন। আর্মস্ট্রং বলেন- এ দৃশ্যের মধ্যেই সব। চোখ খোলা রাখলে তা ধরা পড়বে। প্রকৃতক্ষেই তা চাঁদের গায়ে ছোট পদচিহ্ন, কিন্তু বাস্তবে তা মানবজাতির জন্য ভয়ঙ্কর এক মিথ্যে।"
দ্রষ্টব্য: এদের জুচ্চোরীর আরেক নমূনা ৯/১১ দেখুন উইকিতে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ ভোর ৬:২৬