ইতিহাস আমাদেরকে শেখায়, সত্য চিরন্তনঃ
===============================
~~ রোমান মহাবীর জুলিয়াস সিজারকে হত্যা করেছিল তার কাছের লোকেরাই। এই চক্রান্তের অন্যতম হোতা ছিলেন মার্কাস ব্রুটাস। ব্রুটাসকে জুলিয়াস সিজার নানা সময়ে ক্ষমা ও দয়া করেছেন, দিয়েছেন ক্ষমতাধর পদ। সিজারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত গড়ে ওঠার পর ব্রুটাস সম্পর্কে তাকে গুপ্তচররা অবহিত করলেও তিনি এতে আদৌ কর্ণপাত করেন নাই। কথিত আছে সিজার ওই গুপ্তচরকে নিজের দেহে হাত রেখে বলেছেন, ‘ব্রুটাস আমার দেহের এই চামড়ার জন্য অপেক্ষা করবে।’ এ কথার তাৎপর্য ছিল, সিজার মনে করেন সিজারের পর শাসন করার মতো ক্ষমতা একমাত্র ব্রুটাসের আছে। কিন্তু এই ক্ষমতা ব্রুটাস স্বীয় ক্ষমতাবলে অর্জন করবে- এজন্য তিনি কখনও নিচ বা অকৃতজ্ঞ হবেন না।
ব্রুটাস সম্পর্কে সিজারের এই ধারণা পরবর্তীতে মিথ্যে প্রমাণিত হয়। সিজারকে হত্যাকারীদের মধ্যে ছিলেন ব্রুটাস নিজে। বরং বলা যায় সিজার হত্যাকারীদের পালের গোদা ছিলেন এই ব্রুটাস। কথিত আছে ২৩ বার অস্ত্রের আঘাতে সিজারকে হত্যা করা হয়। সিনেট হাউজে সিজারকে হত্যার সময় হত্যাকারীদের মধ্যে ব্রুটাসকে দেখে সিজার আত্মস্বরে উচ্চারণ করেন, Et tu Brute অর্থাৎ ব্রুটাস তুমিও!
➡সৌদি আরবের বাদশা ফয়সাল যখন আলিঙ্গন করার উদ্দেশ্যে ভাতিজার প্রতি দু'হাত প্রসারিত করলেন, জবাবে তখন পকেট থেকে পিস্তল বের করে পরপর তিনটে গুলি করে বসলেন সেই ভাতিজা-ই!
:
➡ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসি দেয়ার পর তাঁর মরদেহ বাইরে এনে রাখা হলে একদল মানুষ মৃতদেহের ওপরে থুথু ছিটিয়েছিল। যারা প্রত্যেকেই ইরাকের নাগরিক। পক্ষান্তরে তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেই ১২ জন আমেরিকান সেনা সদস্যের প্রত্যেকেই কেঁদেছিলো!
:
➡ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পরিণতি হয়েছিল আরো করুণ। শত্রুর গুলিতে নয়, তাঁর মৃত্যু হয়েছিল নিজেরই দেহরক্ষীর কয়েক রাউন্ড গুলিতে !
:
➡বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মরহুম বাবার দেহ নামাতে যে মানুষটি কবরে নেমেছিলো; বঙ্গবন্ধুর মায়ের মৃত্যুতে যে মানুষটি শোক ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে মাটিতে গড়াগড়ি করেছিলো; শেখ কামালের বিয়েতে যে মানুষটি উকিল ছিলো; ৭৫ এর ১৪ আগস্ট দুপুরবেলা যে মানুষটি বাসা থেকে খাবার রান্না করে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে খাইয়েছিলো; তারপরের দিন ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে খুন করার (প্রত্যক্ষ/পরোক্ষ) সহযোগি হিসেবে সেই মানুষটাই (খন্দকার মোশতাক) অভিযুক্ত!
:
ইতিহাসের পাতায় পাতায় মোটা হরফে লেখা—বিশাল বিশাল সম্রাজ্যের পতন হয়েছে তাঁদের সব চাইতে কাছের মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা আর অসহযোগিতার কারণেই।
:
ইতিহাস আমাদের পদে পদে শেখায়—মানুষের সব চেয়ে বড় শত্রুকে কখনোই চেনা যায় না। কারণ সে থাকে কল্যাণকামিতার সফেদ চাদরে আবৃত। সব চেয়ে কাছের মানুষ হয়ে।
:
ব্যক্তিগত জীবনেও এর বাস্তব উদাহরণ স্পষ্ট, আপনি আপনার চারপার্শে খেয়াল করলে ভূরিভূরি উদাহরণ দেখতে পাবেন এমন অসংখ্য মানুষ !
:
আপনি সব চাইতে বেশি প্রতারিত হবেন আপনার কাছের মানুষের দ্বারা-ই। আপনাকে সব চাইতে বেশি কষ্ট দেয়া মানুষের তালিকা করলে সেখানে শত্রু আর কয়জন! বন্ধুদের নাম-ই বেশি দেখতে পাবেন। শত্রু কখনোই বিশ্বাসঘাতক হয় না। বিশ্বাসঘাতকতা করে কেবল কাছের মানুষ!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৩:৫০