আলেম-ওলামা ও তাবলীগের দ্বন্দ্ব কোথায়?
বর্তমানের তাবলীগের অনেক ভাই (বিশেষ করে সাদ-পন্থীরা) বলে থাকেন, “আলেম-ওলামারা তো তাবলীগ করে না, তারা তাবলীগের বাইরের লোক। তারা তাবলীগের কি বুঝবে?”
ব্যাপার হলো, যারা তাবলীগে সক্রিয় আছেন, তারা জানেন, উক্ত মন্তব্যগুলি ইতিপূর্বে তাবলীগের ইতিহাসে পাওয়া যায় নি। আসলে তাবলীগ একটা সর্বদলীয় গনমুখী দ্বীনের দাওয়াত। এ কাজে জ্ঞানি-মূর্খ সকলেই অংশ নেয়। জ্ঞানীর নিকট হতে মূর্খরা শিখে।
তাবলীগে কাজে কখোনই ভাগাভাগি ছিলা না অতীতে। এ কাজে সবাইকেই সাথি (Inclusive) ধরা হয়। কেউ তাবলীগ করুক বা না করুক। সবাই ভাই ভাই। এতটাই উদার ছিল এ কাজ।
দেওবন্দ ও তাবলীগঃ কথা হল, দেওবন্দী সিলসিলার ক্বাওমী মাদ্রাসার সাথে তাবলীগের সুসম্পর্ক গোড়া থেকে। দেওবন্দ হল দ্বীনী শিক্ষা ও বহু দ্বীনী আন্দোলনের সূতিকাগার। তেমনি তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস রঃ ও পরের দু জন আমীর মাওলানা ইউসুফ ও মাওলানা এনামুল হাসান রঃ ছিলেন দেওবন্দভিত্তিক ক্বাওমী মাদ্রাসার সন্তান। ক্বাওমী আলেম-ওলামারাই মূলত তাবলীগের দিক-নির্দেশনার শীর্ষে থাকতেন বরাবরই।
তাবলীগে আলেম-ওলামাদের স্থানঃ তাবলীগের উসুলের মধ্যে ওলামাদের বিশেষ মর্যাদা ও অবস্থান রয়েছে, তাদের সম্মানের কথা বলা আছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চলার কথা আছে। এজন্য, পূর্ব থেকেই তাবলীগী ভাইয়েরা ওলামাদের সম্মান করে চলত।
ওলামারা কি তাবলীগ করে না? উল্লেখ্য, তাবলীগ বলতে শুধু কাকরাইল বা নেযামুদ্দিনের তাবলীগ বুঝায় না। তাবলীগ বা দ্বীনের প্রচার অনেক ব্যাপক বিষয়। সকল আলেম-ওলামাই সাধ্যমত তাবলীগ করে থাকেন। কাজেই কোন আলেমই তাবলীগের বাইরে নয়।
অন্যদিকে, তাবলীগ একটা দ্বীনী মেহনত। যেহেতু বিষয়টা ইসলামের, কাজেই সকল আলেম-ওলামাদের এখানে ভূমিকা আছে। দ্বীনী বিষয়, ইসলামের তাবলীগ ওলামাদের দিক-নির্দেশনা ছাড়া চলে না। আর আলেম-ওলামাই তাবলীগের ব্যাপার ভাল বুঝেন।
তাবলীগে সময় না লাগালে কি তাবলীগ বুঝা যায় না?ঃ তাবলীগী ভাইয়েরা বলেন, আলেমরা তাবলীগে সময় দেয় না, তাই তারা তাবলীগ বুঝে না। আসলে এটা বাস্তবসম্মত কথা নয়। তাবলীগ কোরান-হাদীস মত সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, এটা বোঝার জন্য আলেম চাই। এলেম ছাড়া যতই ৩/২/১ চিল্লা দিক, এলেমহীন তাবলীগী ভাইয়েরা কি দ্বীনের মৌলিক ব্যাপার বুঝতে পারবে? কখোনই না।
সাদের বিরুদ্ধে ফতোয়াঃ বর্তমানে নেযামুদ্দিনের স্ব-ঘোষিত আমীর সাদের বিভিন্ন অপ-ব্যাখ্যার বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছে দেওবন্দ মাদ্রাসা সহ বাংলাদেশ, আফ্রিকা, ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রতিনিধিত্ত্বশীল মাদ্রাসা। এতেই খেপেছে সাদ-পন্থীরা। তারা আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছে।
বাংলাদেশের তাবলীগের শুরাঃ কাকরাইলের শুরার ৫ জন আলেম সদস্য (মাওলানা যোবায়ের, রবিউল হক্ব, মোহাম্মাদ হোসেন, ফারুক, ওমর ফারুক) স্ব-ঘোষিত আমীর সাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কারন, সাদ সঠিকভাবে তাবলীগ করছে না। এটা কি অন্যায় হয়েছে? ঐ ৫ জন আলেম সদস্য-ও কি তাবলীগ করেন না?
এছাড়াও বহু সাল-ওয়ালা আলেম আছেন, যারা টানা ৩৬৫দিন তাবলীগে সময় দিয়েছেন, তারাও সাদের বিরোধিতা করছেন- কারনঃ
১) সাদ সাব তাবলীগের পূরাতন ও সঠিক পদ্ধতির বিকৃতি করে স্বেচ্ছাচারিতা করে নিজস্ব ব্যবস্থা ঢুকিয়েছেন।
২) শুরা-কে প্রত্যাখান করে নিজেই আমীর দাবি করেছেন।
৩) কোরান-হাদীসের অপব্যাখ্যা করেছেন।
উক্ত সমস্যাগুলি সমাধান না হলে আলেম –ওলামা সমাজ, যারা কোরান-হাদীস বুঝেন, তারা অবশ্যই বিরোধিতা করবেন, এতে অবাক হবার কিছুই নাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৬