লেখার পাঠক প্রিয়তা আশা করেন না।এমন লেখক আছেন কিনা জানা নাই।ব্লগে অনেকেই ভাল কবিতা লিখেন। পাঠক নেই !!সেটা যদি হয় কোন অপরিচিত ব্লগারের কবিতা !!!
পাঠক দেখতেও যায় না।আমিও যাই না।কবিতা পড়ার এত সময় কই।
সামু ব্লগে প্রতিদিন প্রচুর কবিতা পোষ্ট হয়।কবিতায় পাঠক না পেলেও অনেকেই কবিতা লিখে যাচ্ছেন।
তেমনি সামু ব্লগের একজন কবিতা লেখক ব্লগার তানজির খান
একদা কবিতা লেখকের সাথে আমার আলাপ হয়েছিল তার কবিতা নিয়ে ।
সেই আলাপের অংশ বিশেষ এখানেই দিয়ে দিলাম -
-আপনার কবিতা এবং ব্যাক্তি জীবন ??
অসম্ভব দোটানার মাঝে আছি। কখনো আগুন ডাকে, কখনো বা জল! মাঝেমাঝে মনে হয় এই যে বেঁচে আছি তা বোধহয় সত্য নয়। আবার মনে হয় এটাই চিরন্তন সত্য। দ্বিধা ও ধাঁধায় আছি বলতে পারেন।
আমার ব্যক্তিজীবন ভীষণ আবেগের। এই আবেগ আমার সব সাফল্যের পথ রোধ করেছে। তবে সবচেয়ে বেশী হয়তো কাজে লেগেছে কবিতার ক্ষেত্রে। কবিতায় যে আবেগ প্রকাশ পায় তা খুব সামন্যই প্রকাশ করতে পারি। একদিন সত্যিকারের কবি হলে হয়তো সব বুঝিয়ে বলতে পারব।
কবিতা লেখা শুরু ১৯৯৮ সালে, তখন আমি ক্লাশ সিক্সের ছাত্র। একদিন হুট করে কি যেন কি লিখে খাবার টেবিলে আব্বাকে শুনালাম। আব্বা বললো ভাল হয়েছে। তোমার লেখা?
-সামু ব্লগের সাথে আপনার পরিচয় কিভাবে?
ফেইসবুকে আইডি খুলি ২০০৮ এর শেষের দিকে, তারপর মাঝেমধ্যে কি সব লেখা চোখে পড়তো। তখনও ঠিক জানতাম না ব্লগে কি হয়। আমি কবিতা লিখতাম ফেইসবুকে। একদিন আমার কাজিন(জাবি'র শিক্ষক) জিজ্ঞেস করলেন তুমি সামু'তে লেখ নাকি? আমি বললাম সামু মানে? বললেন একটি ব্লগ।সেটিই সচেতনভাবে প্রথম সামু সম্পর্কে জানা। আর এইতো এখানে লিখা শুরু করলাম সেদিন, সামুকে জানার অনেক অনেক দিন পর। আসলে আমি ডায়রীতে আর ফেইসবুকে লিখেই অভ্যস্ত ছিলাম। তবে সামুর অনেক লেখা আমি পড়তাম আগে থেকেই। সেগুলোর বেশীরভাগ ছিল ফেইসবুকের সেলিব্রেটিদের শেয়ার করা ।
-সামু ব্লগের ব্লগারদের লেখালেখি নিয়ে আপনার মতামত কি ?
সামুব্লগের ব্লগারদের যেটা সবচেয়ে বেশী ভাল লাগে তা হলো বৈচিত্রময়তা। এখানে নানান বিষয়ে লেখা হয়। কেউ কেউ আছেন কিছু বিষয়ে রীতিমত গবেষক। কেউ আছেন খুব ভাল কবি,আবার কেউ আছেন খুব ভাল ছোটগল্প লেখেন। প্রথমে মনে হতো ব্লগারদের মাঝে মনে হয় বন্ধন নেই তেমন। তবে সময়ের সাথে সাথে সেই ধারনা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এই ধারনা ভুল প্রমানের জন্য সবচেয়ে বেশী দায়ী আপনি! সবার আন্তরিকতাই আমাকে মুগ্ধ করেছে এখানে।
- আগে কোথায় লিখতেন এবং সামুতে ব্লগিং করতে কেমন লাগে ?
আমার প্রথম ব্লগিং শুরু চতুর্মাত্রিক দিয়ে, তারপর বিডিনিউজ এ। তবে তেমন সিরিয়াস ছিলাম না। বিডিনিউযে আর এখানেই আমি নিয়মিত এখন।
সামুতে লিখতে দারুণ লাগে। এখানে কিছুকিছু ব্লগার আছেন যারা লেখার ভুল ধরিয়ে দেন যা লেখক হতে গেলে আবশ্যক। এই গুণ সব সময় মুগ্ধ করে আমাকে। এতে দারুন উন্নতির সুযোগ পাই লেখায়।
-কবিতার পাঠক নিয়ে কি মত কি ??
কবিতার পাঠক আসলে পুরো দেশেই কম। তবে এখানে যারা পাঠক তারা খুব কোয়ালিটি পাঠক। ভাল লাগে তাদের রেসপন্স। কেউ কেউ অবশ্য কিছু না পড়েই লিখে ফেলে মন্তব্য!
-আপনার কবিতা নির্বাচিত পাতায় যায় না কেন ? সামু ব্লগের মডারেশন কেমন ??
আসলে সামু ব্লগে অনেক বড় বড় কবি আছেন এখানে, তাদের কাছে আমি নস্যি তাই নির্বাচিত পাতায় যায় না! কবিতার অনেক উন্নতী করতে হবে।
সামুর মডারেশন কেমন এই প্রশ্ন কিছুটা জটিল মনে হয়। কখনো কখনো মনে হয় এই পোস্ট কিভাবে নির্বাচিত পাতায় আসে? আবার কারো পোস্ট আছে খুব ভাল ,তবে তা পড়ে থাকে আমাদের অগোচরে। এত বড় ব্লগ্,এটা আসলে কঠিন কাজ। তবে মনে খেদ নেই আমার। এখানে ঢুকলেই শান্তি পাই।
-আপনার পোষ্ট নির্বাচিত না যাওয়ার কারন কি কি মনে করেন ??
আসলে পাঠকের মন ভরার মত লেখা হয়তো আমার এখনো হচ্ছে না, তাই সমাদৃত হচ্ছে না। পাঠকের মন, প্রেমিকার মনের মতই বোঝা দায়। প্রশ্ন কখনো কখনো জাগে হয়তো! তবে লিখি নিজের প্রশান্তির জন্য, সেই জায়গা কোন অশান্তি নাই।
আমার নিজের সীমাবদ্ধাতা। তারপর আছে, সময় বুঝে পোস্ট না করা। কবিতা এমনিতে অনেকেই পড়তে চায় না। অনেক সময় পাঠকের সাড়া পেলেও মডুর সাড়া পাই না। হয়তো মডুর প্রত্যাশা অনেক বেশী।
ব্লগারদের মাঝে বন্ধন বাড়াতে আরো বেশী আন্তরিক হতে হবে।লিখতে হবে আরো ভাল কবিতা ।পাঠক সমাদৃত না হোক ।কবিতায় যেন নিজ আনন্দ সব সময় থাকে।
ব্লগার তানজির খানের কবিতা নিয়ে তার কথা গুলো আমাকে খুব টেনেছে।তাই অলসতাকে বিদায় জানিয়ে লিখতে বসা ।
অনেকেই ভাবতে পারেন আলাপের পোষ্ট দেয়ার মানে কি ??
মানে খুব সোজা !!!
???
ব্লগার তানজির খান এর কিছু কবিতা
বিরহে বসন্ত
বসন্ত নিয়ে খুব বেশী কিছু বলা হয়নি,
শুধু বলেছিলাম আজ বসন্ত,
বলা হয়নি আমার কেনা
হলুদ সস্তা শাড়িতে আর রঙিন ফুলের
খোপায় কতটা সুন্দর লাগতে পারতো!
মরুময় দৃষ্টিতে সবকিছু থমকে গিয়েছিলো।
এই রুগ্ন অর্থনীতিতে ক্ষুধা,তৃষ্ণায় প্রেম আসেনা
আসে স্থবিরতা আর নিস্তব্ধতা।
বলা হয়নি এই হাতের আঙুলের বাঁধনে
হৃদয় আটকালে
তা হতো পৃথিবীর সবচেয়ে শক্ত বাঁধন।
ক্ষমা নয় তোমাকে দিতে চেয়েছিলাম
এই পৃথিবীর সর্ব উৎকৃষ্ট ভালবাসা
অথচ ক্ষমাই চেয়েছিলে বসন্তের প্রথম প্রহরে।
তোমার হৃদয়ের পরিচিত, অপরিচিত সব
গলিতে ফাল্গুনের ফুল ফুটাতে চেয়েছিলাম,
তুমি চেয়েছিলে ক্ষমা;
মুখ ফুটে বলতে গিয়েও বলা হয়নি তোমার জন্য
হৃদয়ে ভালবাসার আটলান্টিক আছে জমা।
বসন্তের সব ফুল ছুঁয়ে শুদ্ধতা নিয়ে এসেছিলাম,
শপথ নিয়েছিলাম বকুলের,
শপথ নিয়েছিলাম গোলাপের,
শপথ নিয়েছিলাম আমার সব কবিতার
তুমি তার কিছুই দেখতে পাওনি, প্রিয়তমা।
প্রিয়তমা
প্রিয়তমা, নির্লজ্জ পুঁজিবাদী সমাজ আমাদের অবিরাম শিখিয়ে চলছে
''মানুষ অপেক্ষা টাকাওয়ালা পশু দামী, তুমি অপেক্ষা মোনালিসা''
''পারিবারিক আনন্দের চেয়েও শ্রেয় কর্পোরেট মিটিং, ভার্চুয়াল ডেটিং''।
প্রিয়তমা মাতৃভূমি আমার,
আমার কমলতম ভালবাসা তুমি, হৃদয়ের সবচেয়ে উজ্জ্বল গোলাপ।
প্রাণ প্রিয় আমার,
নাগরিক বাতাসে এখন ভেসে আসছে অর্থলিপ্সুর কটু গন্ধের আলাপ,
টি এস সি থেকে মুজিব নগর এখন শুনতে পাই করুণ বিলাপ।
নষ্ট হবো
আমি নষ্ট হবো
যেমনটা হতে চেয়েছিলাম অবচেতন মনে।
নষ্ট হতে চাই শহরে,গ্রামে
তোমার ঠোটে অথবা যত্রতত্র অযাচিত প্রেমে।
আমি অপেক্ষা করব
বসন্তের শেষে,শীতের শুরুতে আর গ্রীষ্মের দুপুরে।
আমি কলঙ্কিত হবো
তোমার চোখে আগুন ঢেলে,হৃদয়ে চুমু এঁকে।
আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবো
মাঝরাতে হাসনাহেনার গন্ধে তোমার জানালায়।
আমি বিষাদ হবো
বছরের দীর্ঘতম রাতে একা পাখির চোখের জলে।
আমি বিস্ফোরিত হবো
অচেনা বিপ্লবীর আগুন ঝরানো ক্ষোভে।
আমি অশ্লীলতায় ডুববো
তোমার বাসার গলিতে ভর দুপুরের বেহায়া প্রেমের উন্মুক্ত চুম্বনে।
আমি অবহেলায় বাঁচবো
ধূলি কণা হয়ে পড়ে থাকব তোমার মস্তিষ্কের অনুর্বর নিউরনে।
আমি বারবার নষ্ট হবো
কলঙ্কের কালিমায় মিশে যাবো পিচ ঢালা রাস্তায় তোমার হাতে হাত রেখে
নিপাত যা,দূর হ
মনে হচ্ছে চাঁদের কান ধরে নিচে নামিয়ে এনে
থাপড়াই।
যে জোছনায় আমার বসন্ত আসেনা ,সে চাঁদ
গোল্লায় যাক।
মরুক সে চাঁদ অমাবস্যায়।
শালা দূর হ আমার জানালা থেকে।
কার জানালায় মরবি গিয়ে মর,
আমার কাছে কেন মরতে আসিস?
নিপাত যা সরকারি দল আর সব বিরোধী
দলের সাথে।
অন্ধকার রাতে বাঁশঝাড়ে ফাসি নে,
শুয়োরের সাথে সহবাস কর,পোয়াতি হ
তাতে আমার কি?
মনে হচ্ছে ইয়ে করে দেই চাদের গায়ে,
মিরপুর স্টেডিয়ামের সবগুলো ফ্লাড লাইট এক সাথে জ্বালিয়ে দেই,
পাড়ার মোড়ের ল্যাম্পপোস্টে আরেকটা সোডিয়াম বাতি লাগাই।
আয় শালা আরেকবার, সাহস থাকলে।
এবার দেখে নেবো এক প্রিজমে কয়টা রশ্মি।
মৃত্তিকা
মাঝেমাঝে মাঝরাতে নিজের বুকে
নিজেরই ছুড়ি চালাতে ইচ্ছে করে।
মৃত্তিকা অন্য পুরুষের পিপাসা মেটাতে
জন্ম সড়ক হতে 'তোমার' ঝরে পড়া প্রতি কনা
কাম সুধার সাথে যেন আমারও মৃত্যু হয়।
গলায় রাক্ষুসে কামড় যখন বসিয়েছিলে,
কুসুম গরম হৃদয় যে ক্ষণে ঝাপটে ধরেছিলে,
আর একটু হলেই শ্বাস রুদ্ধ হয়ে
প্রাণ দিতাম তোমার আলতা রাঙা বুকে ।
আবরণ খুলে আহবান জানিয়েছিলে চুম্বন আকার,
বিশ্বাস করো সে সময় তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল
বিবেক আর আমার শরীরের মাঝে।
সেই প্রেম এখন অতীত,আমার আদি স্বত্বার।
মৃত্তিকা, তোমার আচলের জালে আটকে আছে
ভেজা কৃষ্ণচূড়া আর পূর্বপুরুষের দূরন্ত যৌবন।
গ্রহপুঞ্জে আর নাম না জানা নক্ষত্রে
ডায়নোসরের মত ফসিল আজ ,মহাকাব্যিক মিলন।
মৃত্তিকা,ভালবাসার মুক্ত আমার,
ওই গরম কোমরের ওমে
জীবনের বাকী সবকটা শীত কাটাতে চেয়েছিলাম
পরম আবেগে আর জোছনার প্লাবনে।
এখন আমি দিশেহারা পথিক
আমার উনুন জ্বলে না,মন পোড়ে আগুনে।
ভেবেছিলাম জীবনের প্রতিটা যুদ্ধে
রমণীর পুরুষ্টু বুকের খাঁজে
সকল সংশয় পরিণত করবো প্রত্যয়ে।
মৃত্তিকা, গগন বিদারী রাজপথের মিছিলে
শোষণের প্রতিবাদে বিদ্রোহী যতবার
দিয়েছে প্রাণ শোষকের বুলেটে,
যেনো ততোবার শুয়েছো অন্যের বিছানায়
আমার বুকে শেল বিধিয়ে।
পেয়েছো কি খবর সেই তরুণের?
যে তোমায় ভালবেসেছিল।
তার বুকে আজ জমাট ব্যাথা।
সে প্রেমিক আজ মধ্যরাতে
বেকারত্বের বেদনায় ছুড়ি নিয়েছে হাতে,
জানতে পেরেছো কি সেই নিখাদ প্রেমের কথা?
তুমি তার খবর পাওনি, মৃত্তিকা।
এখন তুমি অন্ধ,আবেগহীন
তোমার স্তনে শোষকের লালা
অথচ একদিন ওই বুকে তৃষ্ণার্ত জড়াতো শিউলি মালা।
গাঙের জলে ভেসে যায় মহাকালের সব অর্জন
তবুও নির্লিপ্ত মনে নীপিড়কের ঠোটে আঁকছো উত্তপ্ত চুম্বন;
মৃত্তিকা, আবারও তুমি আমার হও।
মাঝরাতে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়,
বেদনার বালুচরে ছলনাময়ীর মুখ ভেসে ওঠে,
সেই মুখে আমি খুব চেনা ছাপ পেয়েছি।
চেয়েছিলাম তুমি হবে স্বপ্ন প্রণেতা
সকল মুক্তি সংগ্রামে হবে ত্রাতা।
বসন্ত আসে ,প্রলয় যায়,গ্রহন লাগে
কোথাও জীবন খুজে পাইনা,মৃত্তিকা।
পানকৌড়ির সাথে ডুব দেই,
আবার ভেসে উঠি অথবা উঠিনা,
সে খবর তোমরা কেউ রাখো না।
আবার তুমি আমার হও,আমার হও মৃত্তিকা।
এখন শুধুই তুমি জড় বস্তু
তোমার বক্ষ আজ পুঁজিপতির একক অধিকার,
যত্রতত্র লুণ্ঠিত হচ্ছে প্রণয়ের স্বাধিকার।
আদিকাল থেকেই আমি প্রথা বিরোধী,
এই শরীরে বইছে খড় স্রোতা নদী,
বুক পকেটে আগুন রাখি।
সাম্রাজ্যবাদ গ্রাস করেছে তোমায়,
টি.এস.সি থেকে মুজিব নগর,
বিলবোর্ডে এখন তুমি, শুধুই ছবি।
কালো ধোয়ার মায়াহীন যান্ত্রিক নগরে,
সরল প্রেম ধর্ষিত হয় আকাশ ছোয়া ইমারতে।
মৃত্তিকা, ফিরে আসো আমার হৃদয়ে,
উত্তাল সমুদ্রে এখনও জেগে আছো ভালবাসার ব-দ্বীপ হয়ে।
যোজন যোজন দূরত্বেও হৃদ কম্পন শুনতে পাই।
বঞ্চিত হই প্রেমের দাবীতে,
মৃত্তিকা, আবারও তুমি আমার হও।
পোষ্টে সাথে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৪২