মেয়েটা ভাবে এই অসময় না বসলেই ভালো হত।
পাখীটার নাম অজানা, কেমন রঙিন পালকগুলো!
"ঐখানটায় বস্লি যে, ঐখানে তো অনেক ধুলো,
কাছে এসে বস্, এই এখানে, আয় দু'জনায় গল্প করি,
ছটফট করিস্ নাতো, এত কিসের তড়িঘড়ি!
ভাইবোন ক'জন তোরা, আমার মত একলা নাতো,
বারবি পুতুল হাতের মুঠোয় ঘুম আসেনা একটা রাতও?
তোর বাবা কি খুব বড়লোক, দেশের বাইরে ব্যবসা আছে,
আর মামণি কি করেন তিনি, আদর পাস্না মায়ের কাছে?
ও বুঝেছি, তোর মাও ব্যস্ত থাকে নানান কাজে,
তুই তাহলে কেমন করে সময় কাটাস্ বললি না যে -
কে খেতে দেয় খিদে পেলে স্কুল থেকে আসার পরে,
কাজের বুয়া আছে বুঝি অনেকজনা তোদের ঘরে?
এইভাবে যে বাইরে এলি, বকবে না কেউ বাড়ী গেলে?
মামণি তোর মারবে নাতো হাতের কাছে কিছু পেলে?
বন্ধুরা যে তোকে ডাকে, যাস্ না কেন ওদের সাথে,
খেললেও তো কিছু কাটে, এত সময় যখন হাতে?
ভাল্লাগেনা বললে হলো, একটা কোন ব্যাপার আছে!
কাউকে আমি বলবো না, বলতে পারিস্ আমার কাছে।
খুব বুঝেছি, হিংসে হয় দেখে ওদের বাবা মাকে,
মন খারাপ করিস্ না ভাই, এই রকম হয়েই থাকে।
আচ্ছা তুই পড়িস্ কোথায়, তুই কি রে খুব অংকে কাঁচা?
স্কুলটাকে তোর কখনও মনে হয়, 'বাঘের খাঁচা'!
বাঘের মত ভয় পাস্ কি, কে রে তোর ম্যাথের মিস্,
হোমওয়ার্ক তৈরী করে নিয়ম মত জমা দিস্?
আরবী শেখান যে টীচার শনি, সোম আর বুধবারে,
না পারলে আরবী পড়া, সে কি তোকে খুব মারে?
আমি জানি বিকেলবেলা নাচ শিখিস্ তুই নিয়ম করে,
নাচের দিদি রোজই আসে বিকাল হবার একটু পরে।
এত কিছু শিখে শিখে কি হবি তুই বড় হলে?
কিছুই যদি না হতে চাস্, না যেতে চাস্ কারুর দলে?
বলনা আমায় জানবেনা কেউ, তোর নিজের ইচ্ছেটা কি,
আমি জানি তুই শুধু চাস্ সব কিছুতে দিতে ফাঁকি।
চাস্ কি রে তুই মায়ের কোলে হুড়মুড়িয়ে ঘুমিয়ে যেতে,
সূর্য আঁকার সম্ভাবনায় বাবার কাছে আদর পেতে?
হই চই আর ছুটোছুটি, যা খুশী তাই ইচ্ছে হলে,
ভাসতে চাস্ ভেলা হয়ে ভাসিয়ে দেওয়া মেঘের কোলে?
আরও কত কি যে তোর মাথার ভেতর চাওয়ার আছে,
স্বপ্ন দেখার স্বপ্নগুলো জমাই আমি আমার কাছে।
আমি জানি - একি রে তুই চল্লি কোথায় অমন করে?
আর কিছুক্ষণ থাক্ নারে ভাই, যাস্ না হয় খানিক পরে -"
ডুকরে উঠে মেয়েটার বুক, চোখের কোণায় পানি জমে।
ওমা একি, মেয়েটা এখন কাঁদছে দেখি পুরোদমে! ...
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৪:০৬