শেখ হাসিনার সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে। কিছু মানুষ মনে করেন যে এই সময়ে দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ডিজিটালাইজেশন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, আবার অন্যরা মনে করেন যে দুর্নীতি, অসমতা এবং স্বৈরাচারী শাসনের কারণে দেশের সম্পদ লুটপাট হয়েছে।
লুটপাটের কারণে দেশ যেভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে তাতে এর পুনর্গঠনের প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করা যেতে পারে:
১. দুর্নীতি দমন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ:
দুর্নীতি রোধে শক্তিশালী ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।
সরকারি ও বেসরকারি খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
দুর্নীতির অভিযোগ দ্রুত ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা।
২. অর্থনৈতিক সংস্কার:
অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষা এবং বৈদেশিক ঋণের বোঝা কমানোর জন্য পরিকল্পিত নীতি গ্রহণ।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এমএসএমই) এবং কৃষিখাতে বিনিয়োগ বাড়ানো।
কর ব্যবস্থার সংস্কার করে ন্যায়সঙ্গত ও স্বচ্ছ কর আদায় নিশ্চিত করা।
৩. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন:
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো এবং এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।
মানসম্পন্ন শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।
৪. রাজনৈতিক সংস্কার:
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করা এবং বিরোধী দলগুলোর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া।
স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষা করা।
৫. সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতা প্রতিষ্ঠা:
দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদার করা।
নারী, শিশু ও সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা এবং তাদের উন্নয়নে বিশেষ নীতি গ্রহণ।
৬. পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন:
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ।
পরিবেশবান্ধব শিল্প ও কৃষি নীতি প্রণয়ন।
৭. যুবশক্তির ব্যবহার:
যুবসমাজকে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
উদ্ভাবনী চিন্তা ও প্রযুক্তিগত শিক্ষাকে উৎসাহিত করা।
৮. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা:
বৈদেশিক বিনিয়োগ ও সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদার করা।
বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের পণ্য ও সেবার প্রবেশাধিকার বাড়ানো।
৯. জাতীয় ঐক্য গঠন:
রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভেদ দূর করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা।
সকল স্তরের জনগণের অংশগ্রহণে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
১০. দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা:
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) অর্জনের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
দেশ পুনর্গঠনের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা, জনগণের অংশগ্রহণ এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অপরিহার্য। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজে পরিণত করতে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৩৫