ব্রিটিশ আমলে উপমহাদেশে আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের ফলে যে জাতিয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছিল, তার এই ধারাবাহিকতায় উপমাহাদেশে গড়ে আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনীতি, স্ব স্ব জাতির জাতিয়তাবাদ। বঙ্গ কখন এই স্রোতের বাহিরে ছিল না। এই সময় বঙ্গের অনেকই স্ব স্ব প্রতিভায় বিকশিত ছিলেন। তাদের এই মারাত্মক প্রতিভার বিকশিত হয়ে ছিল ভাষা আন্ধোলন, স্বাধীনতার যুদ্ধে তাদের লিখনিতে। যার অন্যতম প্রভাবক ছিল জাতিয়তাবধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলা স্যাহিত্যর একটি পরিপূর্ণ ভাণ্ডার।
ভাষা আন্দোলনের কে ভিত্তি করে বাংলা স্যাহিত্যর গুরুত্বপূর্ণ লেখক ও তাদের কর্ম সমূহ।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে সালাম, বারকত, রফিক, জাব্বার নিহত হওয়ার প্রতিবাদে কবি মাহবুব উল আলম তাৎক্ষণিক লিখেন তার অমর কবিতা “কাঁদিতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি”। এটি প্রথম কোন স্যাহিত্য কর্ম ভাষা আন্দোলনের পটভূমি নিয়ে লিখা। বাঙালি জাতিয়তাবাদের চেতনার মূর্ত প্রতীক অথবা বলা যায় তীব্র বহিঃপ্রকাশ।
“ কাঁদিতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি”
মাহবুব উল আলম
“এখানে যারা প্রান দিয়েছ
রমনার ঊর্দ্ধমূখী কৃষ্ণচূড়ার তলায়
সেখানে আমি দাঁড়িয়ে কাঁদতে আসিনি
আজ আমি শোক বিহ্বল নই
আজ আমি প্রতিজ্ঞায় অবিচল।”
শহিদের স্মরণে ২৪শে ফেব্রুয়ারী শহিদ মিনার মিনার নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২৬শে ফেব্রুয়ারী পুলিশ ও সেনাবাহিনী স্মৃতি স্তম্ভ ভেঙ্গে ফেলে। এর প্রতিবাদে আলাউদ্দিন আল আজাদের “স্মৃতিস্তম্ভ” যেন প্রতিবাদের সোচ্চার বানী।
“স্মৃতি মিনার ভেঙ্গেচে তোমরা ? ভয় কি বন্ধু , আমার এখনো চার কোটি
পরিবার খাঁড়া রয়েছি তো। যে ভিত কখনো কোন রাজন্য
পারেনি ভাঙতে।”
হাসান হাফিজুর রাহমান ২১শের ঘটনাকে অবলম্বন করে লিখেছেন তিনটি কবিতা “ফেব্রুয়ারি আমার ঢাকা”, “মিছিলের একমুখ”, “অমর একুশ”। ভাষা আন্দোলনের ১ম বর্ষ পূর্তিতে হাসান হাফিজুর রাহমান সম্পাদিত “ একুশে ফেব্রুয়ারী ” সংকলন গ্রন্থে স্থান পেয়েছে পাঁচটি গল্প।
এই সংকলন গ্রন্থ সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিল। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত গল্প সমূহ শওকত ওসমানের (মৌন), অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের (দৃষ্টি), সাইয়িদ আতিকুল্লা, সিরাজুল ইসলামের(পলিমাটি) এবং আতিয়ার রাহমানের (অগ্নিবাক)।
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ “মাগো ওরা বলে” আমার সবচেয়ে ভাল লাগার কবিতা।
মাগো ওরা বলে
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ
“ কুমড়ো ফুল
শুকিয়ে গেছে
ঝরে পড়েছে ডাঁটা
পুইলতাটা নেতানো?
খোকা এলি?
ঝাপসা চোখে মা তাকায়
উঠোনে উঠোনে
যেখানে খোকার শব
শকুনিরা ব্যবচ্ছেদ করে ”
২১শে ফেব্রুয়ারি নিয়ে কবিতা লিখেছেন শামসুর রাহমান (শহিদ মিনারে কবিতা পাঠ), মহাদেবে সাহার (একুশের গান), আবদুল লতিফ(একুশের গানের), আবদুল গাফফার চৌধুরী (আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো, সুরকারঃ আলতাফ মাহমুদ , ১২টি ভাষায় আনূদিত ) এবং ফজলে লোহানির (একুশের কবিতা), আল মাহমুদের(একুশের ছড়া)।
বাঙালি চেতনার জাগরন শুদু কবিতা সীমাবদ্ধ ছিল না তা ছড়িয়ে পড়ে ছিল গল্পেও। জহির রায়হানের “একুশের গল্প, ১৯৬৯” , সরদার জায়েন উদ্দিন “খ্ররসোত”, শহিদুল্লা কায়সারে “ এমনি করে গড়ে ওঠবে” , সৈয়দ সামসুল হকের “আরেক জন”
প্রথম উপন্যাস লিখেন জহির রায়হান আরেক ফাল্গুন(১৯৬৯), ১৯৫৫ সালে ভাষা আন্দোলন উদযাপন বাঁধা দেওয়াকে উপজীব্য করে লিখা। তারপরে লিখেছেন শওকত ওসমান “আর্তনাদ”, সেলিনা রাহমান লিখেছেন “যাপিত জিবনের কথা, নিরন্তর ঘণ্টা ধ্বনি” ।
নাটকের সর্ব প্রথম মুনীর চৌধুরী কথা স্মরন করতে হয় তার অমর কীতি “কবর” নাটকের জন্য। ১৯৫৩ জেলে বসে তিনি এই অমর কৃীতি লিখেন। এই নাটকের চরিএ গুলো হল সরকার পক্ষের নেতা, গার্ড, হাফিজ, আর নিজস্ব ভাষার পক্ষে মুর্দা ফকির, ছাত্র, কেরানি । আরেকটি নাটকের নাম হল মমতাজ উদ্দিনের “বিবাহ”।