তিথি রিকশায় যাচ্ছে।না সে আজকে একা নয়।তার পাশে আরো একজন আছে।খুব বিশেষ কেউ।তাই তার নাম বলা যাবে না।বিশেষ বিশেষ মানুষদের নাম বলা যায় না।শুধু নাম না।কিছুই বলা যায় না।তাদের সব কিছু রাখতে হয় গোপনে গোপনে।তাদেরকে ডাকতে হয় অন্য কোন নামে।যে নাম কেউ শোনে নি।কেউ বোঝে নি।তিথির 'উনি' কে তিথি ডাকে-গাধা বলে।চরিত্রের সাথে মিলে যায় তাই গাধা।চাশমিশ গাধা।চশমা ছাড়া কিছুই দেখে না।চশমা সহ ও যে খুব দেখে তাও না।তিথির কখনই মনে হয় নি গাধা টা কয়েক সেকেন্ডের বেশি তার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল।আচ্ছা গাধাটাকে যদি বলা হয় সে কোন রঙের শাড়ি পড়ে আছে সে বলতে পারবে?অবশ্যই পারবে না।অথচ তারা আধ ঘন্টার উপরে একসাথে ঘুরছে।ত্রিচক্রযান ভ্রমন।
তিথির খুব ইচ্ছা করছে যে গাধাটা তার হাতটা ধরুক।কখনো ধরে না।ধরবে বলেও মনে হয় না।আচ্ছা নিজে থেকে যদি গাধাটাকে হাত ধরতে বলে তাইলে কি ধরবে?অন্তত এক সেকেন্ড কিংবা দুই সেকেন্ডের জন্য?
- আমার হাতটা একটু ধরবে?
-কি?
-হাত ধরবা একটু?
-খামোখা হাত ধরবো কেনো?
-তুমি হাত ধরলে রিকসা থেকে পরে যাওয়ার ভয় থাকবে না
-রিকশা ভাল করে ধর তাইলে আর পরবে না।এই যে রিকসাওয়ালা ভাই!
রিকশাওয়ালা উত্তর দেয়-জ্বে
-রিকশা সাবধানে চালান।খাদে চাকা ফেলে দিয়েন না।
- আইচ্ছা
তিথি মুখ ঘুরিয়ে নেয়।তার প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে।অনেক চেষ্টা করেও চোখের পানি আটকে রাখার।পারে না।গাল বেয়ে পানি গরিয়ে পরে।
- এই যে রিকশাওয়ালা ভাই!
-জ্বে ভাইজান
- আপনার কাছে টিশ্যুই পেপার হবে?
- জ্বে না
-ও আচ্ছা।তাহলে আপনার গলার গামছাটা দিন
রিকশাওয়ালা বিরস মুখে গামছা টা এগিয়ে দেয়।গামছা রিকশাওয়ালাদের অনেক পছন্দের বস্তু।এটা হাতছাড়া হলে তাদের খারাপ লাগে।
গাধাটা করে কি!সে কি এই গামছা দিয়ে তার চোখের পানি মুছবে?রিকশাওয়ালার ঘাম মোছা গামছা দিয়ে?তিথি ঠিক করলো এই রকম কিছু হলে সে দুই দিন না খেয়ে থাকবে।আবার তিথির একটু ভাল লাগাও শুরু হয়।যাক অন্তত তার কান্না নিয়ে গাধাটা চিন্তা করছে।পানি মুছে দেয়ার জন্য ব্যাস্ত হচ্ছে।তিথির চোখে আবার পানি চলে আসে।তবে এই পানির রহস্য ভিন্ন।এই পানি সবার জন্য আসে না।সব সময় আসে না।বিশেষ কারো জন্য বিশেষ মূহুর্তে আসে।
তিথির সেই 'বিশেষ মানুষ'টি গামছা দিয়ে তার হাতের কোনায় লেগে থাকা কাকের পায়্খানা পরিষ্কার করলো।সে হয়্ত জানেই না রিকশাওয়ালা এই গামছা দিয়ে তার মুখ মোছে।সে হয়্ত এটাও জানে না তার পাশে একজন ক্রন্দনরত মেয়ে বসে আছে যে চাচ্ছে তার চোখের পানি মুছে দেয়া হোক।