তিথি পাকের বেঞ্চে বসে আছে অনেক্ষন ধরে।বারবার ঘড়ি দেখছে সে।প্রতিবার ঘড়ি দেখার পর মুখ দিয়ে বিরক্তির মত শব্দ করছে।হঠাৎ সে লক্ষ্য করলো রাশেদ সিগারেট টানতে টানতে হেটে আসছে।তিথি কিছুটা নড়েচড়ে বসলো।
রাশেদ এসে তিথির পাশে বসে পড়লো।
-কি ব্যাপার?তুমি এখানে কেনো?'খুব ই সাধারনভাবে রাশেদ প্রশ্ন করলো।
- সত্যিটা বলতে পারবো না।মিথ্যাটা শুনবেন?,তিথি উত্তর দেয়
- বল।মাঝে মধ্যে মিথ্যা শুনতে ভাল লাগে।
- থাক আপনার শুনতে হবে না।আমি চললাম।
তিথি উঠে দাড়ালো।সে দেখতে চায় সে চলে যেতে চাইলে রাশেদ তাকে ডাকে কি না।তার ধারনা রাশেদ তাকে ডাকবে।
তিথি ব্যাগ থেকে একটা সিগারেটের প্যাকেট বের করে রাশেদের দিকে এগিয়ে দেয়-নিন।এটা আপনার জন্য
- আমি সিগারেট খাই না তিথি
তিথি অবাক হয়ে বলে-সিগারেট টানতে টানতে বলতেছেন আপনি সিগারেট খান না?
-এটা সিগারেট না।গাজা।চরস গাজা
তিথি সিগারেটের প্যাকেটটা ব্যাগে রেখে দিল।তারপর সামনে দিকে পা বাড়াল।সে বুঝতে পারছে না আসলে কি করা উচিত বা কি বলা উচিত।
রাশেদ পিছনদিক থেকে উচু গলায় বললো-যদি পিছন দিক থেকে ডাক দেই শুনবেন?নাকি অমঙ্গল ভেবে সোজাই চলে যাবেন?
তিথি মাথা ঘুরিয়ে বললো ডেকেই দেখুন না কেন?এটা বলে তিথি নিজেই রাশেদের পাশে এসে বসলো।রাশেদ তাকে ডেকেছে এতেই তার মন খুশিতে ভরে গিয়েছে কিন্তু মুখে যাতে সেটা কোনভাবেই প্রকাশ না পায় তার জন্য প্রানপন চেষ্টা করে তিথি।যেন রাশেদকে জানতে দিলেই সব কিছু শেষ হয়ে যাবে।একদম শেষ হয়ে যাবে।
- একটা কথা জিজ্ঞাসা করলে সত্যি উত্তর দিবেন?-তিথি রাশেদকে জিজ্ঞাসা করে
-সম্ভাবনা কম।সত্য কথা বলা ছেড়ে দিয়েছি।সব ই যখন মিথ্যা তখন কথা সত্য রেখে লাভ কি?এটাও মিথ্যা হোক
- সব কিছুই আপনার কাছে মিথ্যা মনে হয়?
- একসময় মনে হত না।এখন হয়।
- আপনি কি কাউকে ভালবাসেন?
- ঘুঘু পাখিকে ভালবাসি।তার ডাক শুনতেই প্রতিদিন দুপুর বেলা এখানে আসি
- প্রতিদিন আসেন না।মাঝে মধ্যে আসেন।আপনি তের দিন পর আজকে আসলেন।
- ও আচ্ছা।
- আমি কিভাবে জানতে পারলাম জানতে চাইলেন না?
-না।আমার কৌতুহল কম।
- কারন আমি নিজেও প্রতিদিন এখানে আসি।
-তুমিও ঘুঘু পাখির ডাক শুনতে আসো?
- জ্বি না।আমি কি জন্য আসি এটা আপনাকে বলা যাবে না।
- বলা না গেলে থাক।সমস্যা নেই।
- আপনি কি আসলেই ঘুঘু পাখিকে ভালবাসেন?
- কেন সন্দেহ আছে?
- কিছুটা।মানুষ বাদে পাখি কেন?
- মানুষকে ভালবাসতে হয় না।মানুষের ভালবাসা পাওয়ার যোগ্যতা নেই।মানুষকে ভালবাসলে বিনিময়ে কষ্ট দেয়।পশু পাখিকে ভালবাসলে অন্তত তারা কষ্ট দেয় না।
-আপনি কাপুরুষ।তাই ভালবাসতে ভয় পান।আর এ জন্যই এইসব ফালতু যুক্তি দাড় করিয়েছেন।
-কাপুরুষ আর প্রেমিক পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।কাপুরুষ নিজের কাছে বারবার মরে আর প্রেমিক পুরুষ তার প্রেমিকার হাতে বারবার মরে।মনের মৃত্যু কি আসল মৃত্যু নয়?থাকো তিথি,এখন যাই।নিষ্ঠুর পৃথিবীটাকে একটু দেখে আসি
তিথি কে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই রাশেদ চলে গেল।রাশেদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তিথির শুধু একটি কথা বারবার মনে হচ্ছিল- মানুষ সব সময় ভুল মানুষকেই কেন ভালবাসে?
অরণ্য দ্রুত পায়ে পার্ক থেকে বের হয়ে গেল।সে রাস্তা ধরে হাটছে।তার মাথা প্রচন্ড ঘুরছে।তিথি কি তাহলে রাশেদকে ভালবাসে?রাশেদের জন্যই সে পার্কে আসতো?
মেঘ ডেকে উঠলো।অরণ্য আকাশের দিকে তাকালো।কালো মেঘে আকাশ ঢেকে গেছে।যে কোন মূহূর্তে বৃষ্টি নামবে।এক দু ফোটা করে বৃষ্টি অরণ্যের গায়ে পড়তে থাকলো।বৃষ্টিতে ভেজা ঠিক হবে না জেনেও অরণ্য রাস্তায় হাটতে থাকলো।সে যদি জ্বর গায়ে তিথির সামনে গিয়ে দাড়ায় তবে কি তিথি একবার ও তার কপাল ছুয়ে দেখবে না?দেখবে না কেন?অবশ্যই দেখবে।অরন্যের চোখ চকচক করতে থাকে।সে আকাশের দিকে আবার তাকায়।মনে মনে প্রার্থনা করে-আয় বৃষ্টি আয়।আমার আর একবার জ্বর হোক।আর একবার।
অরন্য হাত দিয়ে আবার ও চিঠিটা স্পর্শ করে যেটা হয়তো আর কখনো তিথিকে দিতে পারবে না।
অরন্য কাঙ্গালের মত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।একটুখানি বৃষ্টি হোক না।কি এমনটা ক্ষতি হবে মেঘের?একটুখানি বৃষ্টিতে অরন্যের একটুখানি জ্বর আসুক।তিথি তার কপাল একটুখানি ছুয়ে দেখুক।অরন্যক পৃথিবীতে সে একটুখানি ভালবাসা পাক।একটুখানি ভালবাসা পেলেই তো মানুষগুলো সুখে থাকে।মানুষগুলো বেচে থাকে।
ঝুম বৃষ্টি শুরু হল।তিথি আর রাশেদ পার্কের বেঞ্চে বসেই বৃষ্টিতে ভিজছে।
- বৃষ্টিতে ভিঝবে তিথি? রাশেদ তিথিকে বলে
- কেন আমরা বৃষ্টিতে ভিজছি না?তিথি অবাক হয়ে প্রশ্ন করে
-না।এটাকে বৃষ্টিতে ভেজা বলে না।বৃষ্টিতে ভেজার পদ্ধতি আলাদা
- কি পদ্ধতি?
- নগ্ন হতে হবে।সম্পূর্ন নগ্ন।প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে বৃষ্টি কে উপভোগ করতে হয়।পোশাখ বাহুল্য ছাড়া কিছু নয় তিথি।প্রকৃতি বাহুল্য পছন্দ করে না।
তিথি খুব ই অবাক হয়।একটা মানুষ একটা মেয়েকে এই ধরনের কথা কিভাবে বলতে পারে?
-আপনি কি জানেন আপনি একজন অসুস্থ মানুষ?
- হা-হা-হা।আমরা সবাই অসুস্থ তিথি।অসুস্থ না হলে আমরা বাচতে পারতাম না।আত্মহত্যা করে মরে যেতাম।
রীতু অনেকদিন বৃষ্টি দেখে না।আজকে সে জানালার ধারে বসে একমনে বৃষ্টি দেখছে।অন্যদিনের চেয়ে আজকে তার মন আর ও বেশি খারাপ।কারন রহমত চাচা অনেক খোজাখুজির পর ও অরন্যকে খুজে পায় নি।
রীতু জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়।সেই ছেলেটা চায়ের দোকানের সামনে দাড়িয়ে রীতুদের বাসার বারান্দার দিকে উকি দিচ্ছে।পায়ের উপর ভর দিয়ে খুব সাবধানে উকি দিচ্ছে।দেখতে খুব ভাল লাগছে।কে এই ছেলে?এই ছেলে কি রীতু কে ভালবাসে?ভালবাসার মানুষগুলো এত দূরে দূরে থাকে কেন?কাছে থাকলে কি হয়?ভালবাসলে কি হয়?