বাসা থেকে বের হ ওয়ার সময় রহমত চাচার সাথে দেখা।তার হাতে সূরার বই
-নেন।বইটা রাখেন।আয়াতুল কুরসি মুখস্ত নাই শুনে বড় কষ্ট পাইছি ভাইজান।আয়াতুল কুরসি মুখস্ত করবেন।মুসলমান হয়ে জন্ম নিছেন এখন উপায় কি?
অরন্য বইটা হাতে নিল।
-হায়! হায়! করছেন কি! বই দেন।বই দেন
রহমত অরন্যের হাত থেকে বইটা নিয়ে নেয়
-আপনের তো অযু করা নাই।যান বাথরুমে যান।অযু কইরা আসেন।অযু ছাড়া সূরার বই ধরলে আল্লাহ পাক নারাজ হন
- চাচা বইটা রাখেন।বইটা আমি নিতে পারবো না।আমি আর আপনাদের বাসায় আসবো না
-ক্যান ভাইজান?আসবেন না ক্যান?
-রিতু মানা করে দিয়েছে
-এইটা কোন ঘটনা না ভাইজান।মেয়ে মানুষ অনেক কিছুই কয়।তাদের মুখে এক কথা মনে ভিন্ন কথা।আর বই ফেরত দিতে এমন কোন কথা নাই
অরন্য দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।বই না নেওয়া পর্যন্ত তার মুক্তি নেই এটা সে বুঝছে।অরন্য অযু করে আসলো।
-নেন ভাইজান।১০৪ নাম্বার পৃষ্ঠায় আছে।বাংলা অর্থসহ দেওয়া
-আচ্ছা।
অরন্য বইটা হাতে নেয়।
-ভাইজান চলেন চা খাই।আর কোনদিন সুযোগ মিলবে কি না আল্লাহ জানে।সব কিছুই তার হাতে।আমাদের হাতে কিছু নাই।আমরা আসছি শুন্য হাতে চইলাও যাব শুন্য হাতে
রহমত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।তাকে খুব উদাস মনে হয়
-চাচা আমার কাছে চা খাওয়ার মত টাকা নেই
-সমস্যা নাই।রিজিকের মালিক আল্লাহ পাক।টাকা আমি দেব
অরন্য আর রহমত চায়ের দোকানে বসে আছে।অরন্যের মনটা খুব খারাপ।টিউশনিটা চলে গেল।একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম।এখন আবার টিউশনি খুজতে হবে।সহজে পাবে বলেও মনে হয় না।ওই দিকে মেসে দুই মাসের ভাড়া বাকি।মেস মালিক জানিয়ে দিয়েছে টাকা তাড়াতাড়ি দিতে না প্রলে সিট ছেড়ে দিতে হবে।অযথা একটা সিট নষ্ট করার কোন কারন নেই।
-রহিম মিয়া,ইসপেশাল পাত্তি দিয়া চা দাও।আজকে সাথে অতিথি আছে।আমাগো বাড়ীর মাস্টার।অতিথির কাছে যেন ছোট না হই।এলাকার মান ইজ্জতের ব্যাপার
রহমত বললো
-বুঝলেন মাস্টার সাব।মন খুব ই খারাপ
-কেন?
-চাচাজান অযথা থ্প্পড় দেন।কুত্তাকে কুত্তা বলা নাকি আমার দোষ।ওনার ভাষ্য মতে কুত্তারে নাকি আমার শিম্পাজ্ঞি বইলা ডাকা লাগবে
-কুত্তাকে শিপাঞ্জি বলে ডাকবেন কেন?
-সেটাই তো আমার কথা।কুত্তাকে কোন দুখে শিম্পাজ্ঞি বইলা ডাকবো?আমার কি মাথা খারাপ?তাই সিদ্ধান্ত নিছি এই বাড়িত আর থাকবো না।
-তাইলে কোথায় যাবেন?
-গার্মেন্টে চইলা যামু
- ও আচ্ছা।আমি এখন উঠি
-আর এক কাপ চা খাইয়া যান।যদিও চা আগের মত স্বাদ হয় নাই
-চা খুব ভাল হয়েছে।এমন চা আমি কখনো খাই নি।
-তাইলে আর এক কাপ চা কাহিবে না ক্যান?
অরন্য উত্তর না দিয়েই চলে যায়।তার মাথায় এখন অনেক ধরনের চিন্তা।যাওয়ার সময় সূরার বইটা সে ফেলে গেল
-বুঝলা রহিম মিয়া!কেয়ামত আসন্ন।ইস্রাফিল শিঙ্গা হাতে রেডি হয়ে আছেন।যে কোন মূহূর্তে ফু দিয়ে দিবেন
রহিম মিয়া রহমতের দিকে কৌতুহলি চোখে তাকিয়ে থাকে।রহমতের কথা তার খুব ভাল লাগে।তিনি তার জীবনে এত জ্ঞানি লোক দেখেন নাই।জগতের সকল বিষয়ে তার অগাধ জ্ঞ্যান
- আয়াতুল কুরসি জানে না।এতবড় হয়েছে তবুও আয়াতুল কুরসি জানবে না ক্যান?নাউজুবিল্লাহ! মাস্টারের কথা বলতেছি।কেয়ামতের লক্ষন রহিম মিয়া।রেডি হইয়া যাও।যে কোন মূহূর্তে ফু দিয়া দিবেন
রহিম মিয়ার চোখে মুখে আতঙ্ক।কেয়ামতের কারনে না।তার ভয় হচ্ছে এই কারনে যে রহমত না বার তাকে আয়াতুল কুরসি বলতে বলে।আয়াতুল কুরসি সে নিজেও জানে না।মানুষের এটাই সমস্যা।আমরা স্রষ্টাকে ভয় পাই না।আমরা ভয় পাই স্রষ্টার সৃষ্টি মানুষকে।মানুষের কথাকে
- গার্মেন্টে চইলা গেলে তোমার দোকানে মাঝে মধ্যে আসবো।চা পান খেয়ে যাব
-কাম সত্যি সত্যি ছাইড়া দিবেন রহমত ভাই?
-অবশ্যই।মুসলমানের এক জবান।শহীদ হয়ে যাব তবুও জবানের নড়চড় হবে না।দরকার পড়লে তিনবেলা গু খেয়ে থাকবো।কাচা গু।তাও এই বাড়িতে আর কাম করমু না।কুত্তারে নাকি কুত্তা কউন যাইবো না।গরিলা ক ওন লাগবো।থাক তুই তোর গরিলারে নিয়া।গরিলার সাথে আমি থাকবার পারবো না
-মাস্টাররে তো মনে কয় শিম্পাজ্ঞি কইলেন রহমত ভাই
-জন্তু এক ই।নাম ভিন্ন
-জন্তুডা কি ভাইজান?
-বড়ই বিচিত্র জন্তু।টেলিভিশনে মাঝে মইধ্যে দেখায়।বান্দর টাইপ চরিত্র
-আচ্ছা আচ্ছা।
রহিম মিয়া এই বিচিত্র জন্তু সম্পর্কে জানতে পেরে খুব ই আনন্দিত
-থাকো রহিম মিয়া।শুনেছি গার্মেন্টে বেতন ভাল।বেতনের টাকা জমায় একটা হুন্ডা খরিদ করবো।তোমার এখানে আসলে তোমারেও চড়াবো
-আপনে ভাইজান ফেরেশতা।আপনার মত ভাল মানুষ আমি জিবনে দেখি নাই।
রহিম মিয়ার চোখে পানি এসে গেছে।সে পানি মোছে।সে এই কথা বহু জনকে বহুবার বলেছে।এবং প্রতিবার ই তার চোখে পানি এসেছে।আশ্চর্য্যের ব্যাপার!
-অযথা কাদবা না।পুরুষ মানুষের কান্না বড় অসহ্যকর।চোখ মোছ রহিম মিয়া।চোখ মোছ।হাসো।হাসি ছাড়া দুনিয়ায় কিছু নাই।হা হা হা