বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠানমালা সম্পর্কে বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকায় এন্তার লেখালেখি চোখে পড়ে। যদিও এর বেশির ভাগই বিটিভির প্রতি আক্রমণাত্মক। অবিশ্যি, স্বাধীন বাংলাদেশে বিটিভি নামক সরকারি প্রচার মাধ্যমটিকে বলতে গেলে সব সরকারই ঠুটো জগন্নাথ বানিয়ে রাখার মধ্যে স্ফূর্তি লাভ করেছে। তাই দেশের সামগ্রিক দুর্নীতি এবং দুর্বৃত্তায়নের প্রেক্ষাপটে বিটিভির কাছ থেকে সদাচারণ বা সুবোধ বালকের মতো আচরণ প্রত্যাশা করা যায় না নিশ্চয়ই। বিশেষত যখন সব সরকারই এটিকে কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন করাতে বা কর্তার ঢাকের কাঠি বানাতে বদ্ধপরিকর থেকেছে তখন এর অনুষ্ঠান বিষয়ক বা অন্যান্য বিষয়ক কর্মকর্তাদের পক্ষে স্বাধীনভাবে কাজ করা সম্ভবই বা হবে কি করে।
আর যে দু’একজন কখনও সখনও একটু স্বাধীনভাবে কাজ করতে চেয়েছেন তাদের পরিণতি কি হয়েছে সে কথা বোধকরি নতুন করে বলার দরকার নেই। এ ক্ষেত্রে প্রয়াত আব্দুল্লাহ আল মামুনের কথাই সবচেয়ে জ্বলন্ত উদাহরণ নয় কি? মুস্তাফা মনোয়ার, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আতিকুল হক চৌধুরী, মুস্তাফিজুর রহমান, মোস্তফা কামাল সৈয়দ, নওয়াজেশ আলী খান, হায়দার রিজভী প্রমুখ বিশিষ্ট টিভি অনুষ্ঠান নির্মাতাতো একসময় বিটিভিতেই ছিলেন। তখন অনুষ্ঠানের মান নিয়ে খুব কমই অভিযোগ উঠতে দেখা গেছে। এদের পরবর্তী প্রজন্ম নাসিরুদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, আল মনসুর, ম হামিদ এরাও অনুষ্ঠান নির্মাণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পারদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ সরকারি চাকরির বিধান মেনে বয়সের কারণে অবসর নিয়েছেন, কেউ রাজরোষে বা সরকারের সংকীর্ণ দলবাজির খপ্পরে পড়ে নিমকো ইত্যাদিতে বাধ্যতামূলকভাবে স্থানান্তরিত হয়ে সৃজনশীল কর্মকাণ্ড করা থেকে বাদ পড়েছেন।
কেউ আবার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বিটিভির অভ্যন্তরে সৃষ্ট দলাদলি বা অহেতুক হস্তক্ষেপের ফলে বোঝাপড়া করতে না পেরে স্বেচ্ছায় বিটিভির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন। এমনিভাবে বিটিভির সৃজনী গুণসম্পন্ন মানুষগুলো প্রধানত বিভিন্ন সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের পূর্ণ কর্তৃত্বাধীনে রাখার হীন মানসিকতার কারণে বিটিভিতে আর থাকতে পারেননি। যদিও এই বয়োবৃদ্ধদের অনেকেই এখনও কিন্তু কোন না কোন প্রাইভেট চ্যানেলে স্বচ্ছন্দে কাজ করে যাচ্ছেন। অর্থাৎ সৃজনী প্রতিভাধর ব্যক্তিদের জন্য সব সময়ই গরজ বড় বালাই, বয়স কোন বালাই নয়।