somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরে আসা আবার ইকো পার্ক ট্রেইলে- ১ম পর্ব

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২০০৯ সালের নভেম্বরে প্রথমবার ইকো পার্ক ট্রেইলে গিয়েছিলাম, এক ট্রেইলে তিনটা ইকো পার্ক হয়ে তিনদিনে তিন জেলার মোট পাঁচটি উপজেলা ট্রেক করব বলে। কিন্তু সময়ের স্বল্পতার কারনে এত সুন্দর ট্রেইলটি সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি, মধুটিলা ইকো পার্ক পর্যন্ত ট্রেক করে ভবিষ্যতে আবার করার আশা নিয়ে ঢাকা ফিরে এসেছিলাম।




ঠিক প্রায় এক বৎসর পর সেই ট্রেকটি সম্পূর্ণ করার ইচ্ছা নিয়ে আবার রওনা হলাম রাত ১০ টায় রউমারীর বাসে করে বকশীগঞ্জের উদ্দেশ্যে। দুর্গাপূজার ছুটির সাথে শুক্র ও শনি দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে মোট তিনদিনের জন্য বেড়িয়ে পড়লাম আমি, সঙ্গী সাথে আরও দুইজন তনময় ও আরিফ। উদ্দেশ্য একটাই জামালপুরের বকশীগঞ্জ থেকে আরম্ভ করে লাউচাপরা ইকো পার্ক হয়ে শেরপুরের শ্রীবরদির কর্ণঝোড়া হয়ে ঝিনাইগাদির গাজনি অবকাশ কেন্দ্র (ইকো পার্ক) হয়ে নালিতাবাড়ির মধুটিলা ইকো পার্ক হয়ে, তেলিয়াখালি হয়ে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট পর্যন্ত ট্রেক করা।




ফেসবুকে পরিচয় হওয়া তনময় ও আরিফকে জানাতেই তাঁরা এই যাত্রায় সঙ্গী হতে রাজী হয়ে গেল। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪/৫ দিন আগেই মহাখালি বাস টার্মিনালে টিকেটের জন্য যেয়ে কিছুটা বোকা হয়ে গেলাম। বাসের টিকেট প্রায় সব বিক্রি হয়ে গেছে, সৌভাগ্যক্রমে বাসের একেবারে পিছনের সিটের তিনটা টিকেট পেলাম। এইবারও থাকবার জন্য একটি তাবু নিয়েছি সাথে, আর তিনজনের তিনটা স্লিপিং ব্যাগ। আর খাওয়ার জন্য একটা পাউরূটি, কয়েকটা ডিমসিদ্ধ, মেওনেস, টমেটোসস, কয়েক প্যাকেট রেডিমিক্স খিচুড়ি ও ইনস্ট্যান্ট নুডুলস।






বাসা থেকে বের হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ঝুম বৃষ্টি আরম্ভ হল। বাস ফেল না করার জন্য নিরুপায় হয়ে এই বৃষ্টির মধ্যেই বের হলাম। মাঝপথ থেকে তনময়কে নিয়ে অনেকটা কাকভেজা হয়ে পৌঁছলাম মহাখালি বাস টার্মিনালে। বাস ছাড়তে তখনও ১৫ মিনিট বাকি, আরিফও আমাদের অনেক আগেই এসে হাজির। ১০ টায় বাস ছাড়ার কথা থাকলেও বাস ছাড়ল প্রায় ২০/২৫ মিনিট পর। মহাখালি থেকে প্রচণ্ড জ্যাম ঠেলে ঠেলে কাকলি পৌছাতে আরও প্রায় ৪০/৪৫ মিনিট পার হয়ে গেল। তনময় ও আরিফ কিছুটা বিরক্ত হলেও আমি এই ভেবে আশ্বস্ত হচ্ছিলাম যে, তাড়াতাড়ি পৌঁছে মাঝরাতে কামালপুর নামার চেয়ে দেরীতে যেয়ে সকালের দিকে নামা ভাল। তাঁদেরকেও এই বলে আশ্বস্ত করলাম। স্পিরিঙ্গের মতো ঝাকুনি খেতে খেতে, বাসের পিছনের সিটে বসবার মজাটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিলো সাথে কিছু পিয়াজ, মরিচ ও মুড়ি থাকলে হয়ত ঝাল মুড়ির হওয়ার ষোল আনা পূর্ণ হত।




ঠিক ফজরের আজানের সময় বাস আমাদের কামালপুর বাজারে নামিয়ে দিল। ভোরের আলো তখনও ফোটে উঠেনি, আকাশ ও মেঘলা, দেখে মনে হচ্ছিল সকাল হতে আরও অনেক সময় লাগবে যদিও ঘড়িতে তখন প্রায় সাড়ে ৫ টা বাজে। যাইহোক আধঘণ্টা অপেক্ষা করে সিধান্ত নিলাম এই অন্ধকার ভোরের মধ্যেই রওনা হবো। পথিমধ্যে কোথাও নাস্তা সেরে নিব। কিছুটা এগিয়ে যেয়ে পৌঁছলাম কামালপুর মুক্তিযুদ্ধ সৃতিস্তম্বের কাছে, এখান থেকেই আমাদের যাত্রা শুরু। আমাদের উপস্থিতি দেখে পাশের বিজিবি ক্যাম্প থেকে কয়েকজন হাবিলদার এসে আমাদের পরিচয় জানতে চাইল। তাদেরকে আমাদের পরিচয় দিয়ে ও ইচ্ছার কথা জানিয়ে রওনা হলাম লাউচাপরার উদ্দেশ্যে।






কামালপুর বাজার পার হতেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আরম্ভ হোল। ভেবেছিলাম হয়ত কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি থেমে যাবে। কিন্তু আমাদের অনুমানকে ভুলে পরিনত করে বৃষ্টি আরও বেড়েই চলল। আমরাও না থেমে আরও এগুতে থাকলাম। প্রায় ১৫/২০ মিনিট ভালই বৃষ্টি হোল, এরই মধ্যে আমরা বালাঝুরি নামক এক গ্রামের বাজারে এসে পৌঁছলাম। স্থানীয় এক হোটেলে পরোটা, ডিম ভাজি, ও চা দিয়ে নাস্তা সেরে আবার রওনা হলাম লাউচাপরার উদ্দেশ্যে। প্রায় আধঘণ্টা হেঁটে ইকো পার্কের ঠিক আগের ঝিরির কাছে এসে পৌঁছলাম। বুজলাম যে আমরা ইকো পার্কের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। পায়ে হেঁটে ঝিরি পার হয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার রওনা হলাম ইকো পার্কের দিকে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা ইকো পার্কে এসে পৌঁছলাম, ঘড়িতে তখন প্রায় সাড়ে ৯ টা।






টিউবওয়েলের পানিতে ফ্রেশ হয়ে কিছুটা যাত্রা বিরতি করে ইকো পার্কের ওয়াচ টাওয়ারে উঠলাম। চতুর দিকে একটু চোখ বুলিয়ে ও কিছু ছবি তুলে ওয়াচ টাওয়ার থেকে নেমে রওনা দিলাম কর্ণঝরা হয়ে শয়তান বাজারের পথে। লাল মাটির সুন্দর এই পথ দিয়ে কিছুদূর এগুতেই একটি ভ্যান চোখে পরল, জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম যে তারা স্থানীয় কমলা বাগান থেকে কমলা নিয়ে বাজারে যাচ্ছে বিক্রির উদ্দেশ্যে। কিছুটা দরকষাকষি করে ১০০ টাকায় ২৫ টা কমলা কিনলাম। পাকা হলেও সবুজ রং এর এই কমলা দেখতে একদম কাঁচা মনে হয় এবং খেতেও টক। তবুও হেঁটে হেঁটে খেতে ভালই লাগছিল, এইভাবে প্রায় দেড় দুইটা কমলা খেতে খেতে শয়তান বাজারে এসে পৌঁছলাম। পৌঁছেই বহুল প্রতীক্ষিত সেই সিঙ্গারা ও রসগোল্লার দোকানটি খোঁজ করে খুব নিরাশ হলাম। যখন জানলাম যে দোকানটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। অবশেষে ঠিক করলাম যে পাউরূটি, ডিমসিদ্ধ, মেউনেস ও টমেটোসস দিয়ে সেন্ডউইছ বানিয়ে দুপুরের খাবার সেরে আবার রওনা দিব। পাশেই একটি চায়ের হোটেলে বসে যথারীতি পাউরূটি, ডিমসিদ্ধ, মেউনেস ও টমেটোসস দিয়ে সেন্ডউইছ বানিয়ে খেতে আরম্ভ করলাম। এরই মধ্যে মেঘাদলের বিজিবি ক্যাম্পের কয়েকজন এসে আমাদের সমন্ধে জানতে চাইল। তাদেরকে আমাদের পরিচয় জানালাম। চা খেয়ে আমাদের খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম।






গতবার নদী পার হওয়ার সময় দেখেছিলাম নদীর উপর ব্রিজের কাজ মাত্র আরম্ভ হয়েছিল। এইবার ব্রিজের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে দেখে ভালই লেগেছিল, কিন্তু নিরাশ হলাম যখন পার হতে যেয়ে দেখি এক পাশের সংযোগ সড়ক এখনও হয়নি। অতএব হাঁটু পানি ডিঙ্গিয়ে ব্রিজের নীচ দিয়েই পার হতে হল। তখন ঘড়িতে প্রায় ১২ টা, নদী পার হতে হতে জুম্মার আজান ভেসে আসছিল, নদীর অপর পাড়ের মেঘাদল মসজিদ থেকে। গতবারও এই নদী পাড় হওয়ার সময় আছরের আজান শুনেছিলাম প্রায় ৪ টার দিকে। এইবার আমরা ৪ ঘণ্টা এগিয়ে আছি, এইভাবে এগুতে থাকলে অবশ্যই আমরা গাজনি পৌছাতে পাড়ব হয়তবা রংটিয়া পৌঁছান সম্ভব হবে আশা করা যায়। নদী পাড় হয়ে আবার হাটা আরম্ভ করলাম। সূর্য যতই মাথার উপরে উঠতেছে রোদের তাপও ততোই বাড়তেছে, আমরাও ধীরে ধীরে কাহিল হয়ে পড়ছি, হাটার গতিও আস্তে আস্তে কমে আসছে। প্রায় ঘণ্টাখানেক এইভাবে হেঁটে আমরা মেঘাদলের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছলাম।






কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করলাম, আধঘণ্টা হাটার পর আমরা জোলগাও এসে পৌঁছলাম। ছোট একটি দোকানে চা খেতে খেতে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার রওনা হলাম। আঁকাবাঁকা এই পথটি গতবার গুটগুটে অন্ধকারের মধ্যে গা ছমছম পরিবেশে ও হাতির আক্রমনের আতঙ্কে রীতিমতো দৌড়ে পাড় হয়েছিলাম। দুইপাশের উঁচুনিচু টিলা ও বনের মাঝ দিয়ে এঁকেবেঁকে এত সুন্দর একটি পথ, তা দিনের আলোতে না দেখলে কখনই জানতাম না যে আমরা আগের বার কত বড় মিসটাই না করেছি। প্রায় ঘণ্টাখানেক এই সুন্দর পথটি ধরে হেঁটে চললাম, এক সময় আকাশের মেঘের মতই দুই পাশের টিলা ও বনাঞ্চলগুলো দৃষ্টি সীমার পিছনে হারিয়ে সামনে দিগন্ত সবুজ ধানের জমি হাজির হল। দূরে বালিঝুরি গ্রামটি দেখা দিল।







চলবে...
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×