একটু এদিকে আসুন । একটি হঠাৎ থমকে যাওয়া সময়ের গল্প শুনি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
“সাইদ ভাই বিসিএস এর পড়া পড়তে পারি না,খালি ঘুম পায়” –অপু
ডাঃ মাহামুদুল হাসান (অপু)। মাঝে মাঝে ‘আপু’ বলে রাগানোর চেষ্টা করতাম,কিন্তু সদা হাস্যজ্বল অপু রাগ না করে বলত- “কি খবর সাইদ ভাই?” আজ সেই অপুর গল্প বলব। আজ থেকে প্রায় ছয় বছর আগে বাবা-মা’র চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে বরিশাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয় অসাধারন মেধাবী ছাত্র অপু। এর পর মেডিকেলের কঠিন সব কার্ড, টার্ম, প্রফ ভালোভাবে শেষে ইন্টার্ণ ডাক্টার। দিন রাত ইন্টার্ণ ডাক্টার হিসেবে হাসপাতালে এক বেড থেকে আরেক বেডে ছুটে চলা সদা প্রাণ চঞ্চল অপুর জীবনে হঠাৎ ছন্দ পতন। CKD(Chronic Kidney Disease)- শেষ ধাপে অপু। নাহ, এটা কোন গল্প বা বাংলা সিনেমা না, ভাগ্যের নির্মমতায় বন্দী সবার প্রিয়-বন্ধু অপুর।
যে হাসপাতাল,ওয়ার্ড,বেডে অপু এতদিন অসহায়,গরীব অসুস্থ মানুষ কে সুস্থ করতে, মনে আশার আলো জ্বালাতে এগিয়ে গেছে, রোগীর স্বজনরা ঘুমালেও নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে, মাংস পঁচা দুর্গন্ধে যখন রোগীর পাশে কেই দাঁড়াতে পারত না,অপু নির্বিকার ভাবে সে রোগীর দিনের পর দিন ড্রেসিং করেছে, সেই হাসপাতালের বেডে অপুকে কখনো দেখব স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। অপুর অসুস্থতার কথা শুনে রাতেই যখন অপুকে দেখতে গেলাম, এই প্রথম হাসি ছাড়া অপুর মলিন মুখ দেখলাম। বন্ধুটি ডাক্তার হওয়ায় জেনে গেছে রোগের ভয়াবহতা। ফিরে আসার সময় হঠাৎ করে আমার হাতটি ধরে মুখের দিকে চাইল, কিন্তু কিছু না বলে আবার ছেড়ে দিল। তার চোখে দেখলাম আমাদের ছেড়ে না যাওয়ার আকুতি, এই সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অক্লান্ত চেষ্টা, নিজের অসচ্ছল পরিবারে সচ্ছলতা আনতে না পারার কষ্ট।
আমি জানি আপনারা ভাবছেন ডাক্তার না একটা কসাই/ডাকাত/চামার মরছে এতে তো দেশের লাভ, সাধারন মানুষের লাভ। একটি বার ভাবুন আমরাও মানুষ, আমরাও আপনাদের মত কোন পরিবার থেকে উঠে এসেছি। এই চামার দের কাছেই আপনারা সুস্থ, সুন্দর জীবনের জন্য আসেন।
আর কোনদিন হাসপাতালে অসুস্থ হওয়ার দিনেও দায়িত্ত পালন করা অপুকে দেখব কি'না জানি না। জানিনা দেখব কি'না খোলা বই হাতে অপুকে সন্ধ্যার পর হোস্টেলের বারান্দায় হেঁটে হেঁটে পড়তে। তবে আমরা প্রতি মুহূর্তে শঙ্কায় আর হতাশায় কেঁপে উঠছি। আমাদের এই বন্ধুটা খুব ঘুরতে ভালবাসত। কীর্ত্তনখোলা নদীর পাড়,দপদপিয়া সেতু, ভরা জোছনায় ছাদে বসে থাকা। কুয়াকাটায় আমরা ৩৮তম ব্যাচ যেবার ঘুরতে গেলাম, সবাইকে অবাক করে দিয়ে দুপুর বেলা লুঙ্গি পরে বিচে নেমে পরল আমাদের এই পাগলাটে বন্ধুটা। আজ সীমাহীন শুন্যতা নিয়ে হাসপাতালের চার দেয়ালে বন্দী অপুর সন্ধ্যা নামে। আবদ্ধ কেবিনে নেই অনন্ত আকাশ, কিংবা ঝুম বৃষ্টি দেখার কোন সুযোগ। আর আমরা অসহায় হয়ে শুধুই তাকিয়ে দেখছি ওর চলে যাওয়ার দৃশ্য। অনন্ত অসীমের পথে।
বন্ধু, তুই হয়তো জানিস, তোকে বাঁচাতে মাত্র কয়েক লক্ষ টাকা লাগে। দেখলি কি সহজে মাত্র শব্দটা ব্যবহার করলাম। তোর জীবনের থেকে এই টাকাটা কি খুব বেশি? যে মা ত্রিশ লক্ষ ছেলেকে স্বাধীনতার জন্য বিসর্জন দিতে পারলো সে আজ টাকার জন্য একটি জীবন বাঁচাতে পারছেনা। কত অক্ষমতা আমাদের। অপু, আমরা আকাশ নই, মানুষ। আমাদের সীমাবদ্ধতা অনেক তাই আমরা হাত পাতি। আমরা হাত পেতে সাহায্য চাই, বুক পেতে ভালোবাসা নেই। আমরা আমাদের সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে তোকে ফিরিয়ে আনবো মৃত্যুর মুখ থেকে। আমরা প্রমান করবো ভালোবাসার কাছে টাকার মূল্য নিতান্তই সামান্য। তুই আবার আকাশ দেখবি। এই মুক্ত পৃথিবীর পথে তুই আবার ছুটে চলবি নিজস্ব গতিতে হাসপাতালের এক বেড থেকে আরেক বেডে জীবনের আলো নিয়ে। তুই ভালো হবি, হতেই হবে. . .
অপু দুরারোগ্য CKD (Chronic Kidney Disease) তে আক্রান্ত। সে এখন Kidney Foundation Hospital, Mirpur-2, 4th floor, Ward No-502, Bed-01 এ চিকিৎসাধীন আছে। তার অতি সত্ত্বর Kidney Transplantation করা প্রয়োজন। Kidney Transplantation এবং এর post Operative Care একটি অত্যন্ত ব্যয় বহুল চিকিৎসা। এ পর্যন্ত পাওয়া অর্থ মোটেও যথেষ্ট নয়। চলমান চিকিৎসায় প্রয়োজন আরও অর্থের। ব্যক্তিগত ও দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি একজন মেধাবী ডাক্টার কে বাঁচাতে। একদিন না হয় মুঠোফোনে নাইবা কথা বললাম, নাইবা খেলাম দামী কোন রেস্টুরেন্টে, কিংবা দামী সিগারেট। তবুও যদি অপু ফিরে আসে। অনেকেই হয়তো বলবেন এভাবে আর কতই বা সাহায্য করা যায়! কিন্তু এই পোষ্টারে অপুর নামের জায়গায় নিজের নামটি কল্পনা করতেও গা কাটা দিয়ে ওঠে। আসুন হাত বাড়াই আরো একবার। জয় হোক মানবতার। বিন্দু বিন্দু করেই তো সিন্ধু হয়। আমরা আশায় বুক বাঁধি। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের ভেতরকার মানুষগুলো এখনও মরে যায়নি। এই লেখা যারা পড়বেন, আশা করছি তারা সবাই অপুর সাহায্যে একটু করে হলেও এগিয়ে আসবেন। যদি সবাই একটু এগিয়ে আসি তাহলে অপু হয়ত বেঁচে যাবে। আমরা কি পারিনা মার কাছে তার আদরের ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে?
ডাঃ অপুকে সাহায্য করার ঠিকানাঃ
অপুর বোনের নামে খোলা একাউন্ট –
*DUTCH BANGLA BANK LIMITED
SANJIDA AFRIN NIPA
A.C No-127.105.25559
*বিকাশ (bKash) একাউন্ট:
01726128580
যোগাযোগঃ
অপুর মায়ের মোবাইল নাম্বার-
01746450042
ডাঃ তাওহীদ (বন্ধু)-
01919251175
ডাঃ সুজন (বন্ধু)-
01912549678
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !
"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমিত্ব বিসর্জন
আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।
"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন