সকাল ১০টা। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে রাত থেকে। এখনও আমাদের হোস্টেলের কারও ঘুম ভাঙ্গেনি। ইদানিং ১১টায় কেন যেন সবার এক সাথে ঘুম ভাঙ্গে। এটাও বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলর মত একটা রহস্য। জানালার কাছে বসে আমার স্মৃতি গুলোর জাবর কাটছি। কয়েক দিন আগে দেখলাম পিঠে দগদগে ঘা নিয়ে একটা কুকুর রাস্টায় শুয়ে আছে। হয়তো কোন হোটেলের কর্মচারী নয়তো কোন সুনিপূনা লক্ষ্মী গৃহিনী গরম মাড় ঢেলে দিয়েছে।এরপর মুখে এক চিলতে প্রসন্ন হাসি নিয়ে দেখেছে প্রাণ বাঁচাতে যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা এক বোবা জীবকে। হায়রে আমরাই সৃষ্টির সেরা।
ঢাকার নাখালপাড়া এলাকায় এক রোদেলা সকালে একটি কুকুর ছানা সামনের দুপায়ের উপর ভর দিয়ে টেনে টেনে রাস্তা পারাপার হচ্ছিল, কারন তার পেছনের দুটি পা একেবারে থেতলে দেয়া। ঠিক এ সময় ভিকারুন নিসা নুন স্কুলের একটি ছাত্রী পরিবহনের মাইক্রোবাস সুন্দর ভাবে সকল কষ্টের উর্দ্ধে পাঠিয়ে দেয় ছানাটিকে। এ সময় ছানাটি মাত্র দুই বার কেঁপে উঠার সুযোগ পায়। যদি আর ৫ সেকেন্ড মাইক্রোবাসটি দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতো তাহলে ছানাটি বেঁচে যেত। কিন্তু কেন সে অপেক্ষা করবে? সেই মাইক্রোবাসে যে আছে দেশের মেধাবী ছাত্রীরা, তাঁদের সময়ের মূল্য অনেক, অন্তত একটা জীবের প্রাণের চেয়েও।
কয়েক বছর আগে ঢাকার এক বেকারীর মালিক সন্ত্রাসী কতৃক নিহত হোন। তাঁর একটি পোষা কুকুর ছিল। সেই কুকুর তার মালিকের মৃতুর পর একই স্থানে বসে কাঁদতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে না খেয়ে ৩দিন পর কুকুরটির মৃত্যু হয়।
তখন আমি বিরল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীতে পড়ি। একদিন আমাদের অংকের কমল স্যার ক্লাসে এসে সবাইকে জিজ্ঞেস করেন-‘সব ধর্মের মূলকথা একই, সেটা কি তোমরা বলতে পার?’ আমরা সবাই চুপ করে আছি। স্যার হতাস হয়ে দরজা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলেন। তারপর আস্তে আস্তে বললেন-‘জীবে প্রেম’। ‘এই প্রেম কি শুধু মানুষের জন্য নাকি অন্য জীবের প্রতিও?’-এই প্রশ্নটি এখন স্যারকে করতে বড় ইচ্ছে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৪০