ঘরের খেয়ে কলোনীর মেয়েদের উপকার করে বেড়ানো আমাদের আবুল ভাই।কলোনীর মেয়েদের দরকারী নোট ফটোকপি করা থেকে শুরু করে ঘর থেকে বের হলে রিক্সা না পাওয়া;রিক্সা থেকে নেমে ভাংতি না থাকা;সিএনজিওয়ালার বেশী ভাড়া দাবী করা;বাইরের কোন ছেলে মহল্লায় এসে কোন মেয়েকে ডিস্টার্ব করা যে সমস্যায় হউক না কেন সব সমস্যায় সুপারম্যানের মত হাজির হয়ে যান আবুল ভাই।
বিকেলে কলোনীর মাঠে দল বেঁধে গপ্পো করা আড্ডাবাজ সুমনা,অর্পিতা,শায়মা,আরজুদের ঝাল মুড়িওয়ালার সাথে পরিমাণে কম দেওয়া নিয়ে তুমুল ঝগড়ার মাঝে হাজির হয়ে নিজের মানিব্যাগ সাহারা মরুভূমির মত ফাঁকা করে দেয় আবুল ভাই।
নারীপ্রেমী হলেও আমাদের আবুল ভাইয়ের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র।দেশপ্রেমিক মন্ত্রী আবুলের দেশপ্রেমে সেতু কেলেংকারীর কলংক থাকতে পারে।কিন্তু,আমাদের আবুল ভাইয়ের নারীপ্রেমে কোন কলংক নেই।
কলোনীর বিছানায় হিসু করা কয়েকমাস বয়সী নীতু থেকে শুরু করে বিবাহের বয়স টলমল করতে থাকা হাসনা আফা সবাইকে আবুল ভাই বোনের দৃষ্টিতে দেখে।
আবুল ভাই হঠাৎ করে কলোনীর বিবাপযুক্ত তরুনী-যুবতীদের শত্রুতে পরিণত হলেও মা-বাবা,চাচা-চাচী বয়সীদের কাছে ব্যাপক তুমুল জনপ্রিয় হয়ে গেলেন।কারণ,আবুল ভাই ঘটকালি শুরু করেছেন।
পত্রিকায় মোবাইল প্রেমিক,ফেসবুক প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে প্রেমিকাদের বিয়ের দাবীতে অবস্থান,অনশন কেলেংকারীর খবরে চিন্তিত আবুল ভাই প্রতিজ্ঞা করেছেন,উনার এলাকার একটি মেয়েকেও পত্রিকার শিরোনাম হয়ে মা-বাবাকে কলংকিত করতে দেবেন না।কলোনীকে কেলেংকারী মুক্ত রাখার মিশনে উনি হয়ে গেলেন ‘ঘটক আবুল ভাই’।
উনাদের গাড়ি রাখার গ্যারেজকে দুই ভাগ করে পার্টিশন দিয়ে ‘আবুল’স ম্যারেজ মিডিয়া’ বানিয়েছেন।এক রুম অফিস।আরেকরুমে পাত্র-পাত্রীদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা।
প্রথম মাসেই বিপাশা,তিশা উপয্ক্তু পাত্রস্থ হবার পর থেকে কলোনীর বিবাহ উপযুক্ত ললনাদের অভিভাবকদের সন্তানের বায়োডাটা জমা দেওয়ার ভিড় লেগে গেল।
আবুল’স ম্যারেজ মিডিয়া মাধ্যমে বিয়ের সবকিছু ঠিক হয়ে যাবার পর এলাকার সোহানা,বুলবুলি রাতের আধাঁরে প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাবার পরও আবুল ভাই দমে যান নি।কারণ,প্রতিমাসেই কলোনীর কোন না কোন মেয়ে ১৮ বছরে পা দিচ্ছে।কয়েকজন পালিয়ে গেছে তো কি হয়েছে?কয়েকজনের জন্য চিন্তিত হবার কোন মানে হয়না!
কিন্তু মোবাইল প্রেম,ফেসবুক প্রেমে আক্রান্ত তরুনীরা বিবাহ প্রস্তাবে গার্জিয়ানদের কাছে প্রেম কাহিনী ফাঁস করে বিদ্রোহ করতে শুরু করে দিল।বাবা-মায়েরাও মেয়ে পালিয়ে যাবার কেলেংকারীর ভয়ে আবুল’স ম্যারেজ মিডিয়া থেকে বায়োডাটা প্রত্যাহার করে নিল।
পাত্রী সংকটে পড়া আবুল’স ম্যারেজ মিডিয়ার কর্নধার আবুল ভাই সকাল সকাল আমাদের বাসায় হাজির।
-আবিদা,আমার একটা উপকার করবা?
-দরকার হলে জান দিয়ে দেব।
-বিকেলে আমার এক বন্ধু ওর এক বন্ধুকে পাঠাবে পাত্রী দেখানোর জন্য।কিন্তু,হাতে একটা পাত্রীও নেই।যদি পাত্রী দেখাতে না পারি আমার ইজ্জতের চাকা পাংচার হয়ে যাবে বন্ধুদের কাছে।তুমি যদি পাত্রী সেজে পাত্রের সাথে দেখা করতা তাহলে আমার মান-সম্মান রক্ষা পেত।চিন্তা করবা না।পাত্রপক্ষকে পরে বলে দেব তোমার পাত্রকে পছন্দ হয়নি।
-আমার তো কোন সমস্যা নাই।কিন্তু,পিস্তল কামাল যদি শুনে আমাকে পাত্রী সাজিয়ে কোন ছেলেকে দেখিয়েছেন তাহলে আপনাকে সোজা গুলি করে দেবে।জানেনই তো আমাকে ও কেমন পছন্দ করে।
-হুঁ।কি করা যায় বলতো?
-আপনাকে পাত্রী সাজালে কেমন হয়?
-হায়!হায়!বল কি?কিভাবে সম্ভব?
-ঠিকই কইছি।আপনি তো মাশআল্লাহ মেয়েদের মত বেশ ফর্সা।এমন ভাবে মেয়ে সাজিয়ে দেব পাত্র কেন পাত্রের ১৪গুষ্টিও বুঝতে পারবে না।আপনার কন্ঠও অনেকটা মেয়েলি মেয়েলি।একটু টেনে টেনে নাকি সুরে কথা বলবেন।
-কিন্তু,পাত্র এসে যদি আমাকে খোঁেজ?
-বলব আমি আপনার সেক্রেটারী।জরুরী কাজে আপনি বাইরে গেছেন।এখন শোনেন দুপুরে ভাল করে মাথায় শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করে রেডী হয়ে অফিসে থাকবেন।আমি ঠিক সময়ে পৌছে যাব।
-তুমি আসলেই বুদ্ধিমতি।এখন আসি।
-ইয়ে,মানে ক্রিম,পাউডার,আইলাইনার,লিপষ্টিক,পরচুলা,টেনিস বল,নেইল পালিশের জন্য যদি কিছু টাকা দিয়ে যেতেন।বেশী না,হাজার তিনেক হলেই চলবে।আমি সাজুগুজু করিনা তাই ঘরে কিছু নাই।
আবুল ভাই খুশি হয়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে চলে গেলেন।
দুপুরে আবুল’স মিরিজ মিডিয়ায় বান্ধবী কলিকে নিয়ে গিয়ে আবুল ভাইকে ভাল করে সাজালাম।সাজুগুজু শেষে অনেক কসরত করে শাড়ি পড়ালাম।বাংলা সিনেমার শাকিব খানকে যেমন প্রায় মেয়েদের পাশে দাঁড়ালে চেনা যায়না তেমনি আমাদের দুই বান্ধবীর পাশে আবুল ভাইকে দাঁড় করিয়ে আয়নায় দেখলাম চেনা যায় কিনা।পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিলাম।
মিনিট দশেক পর পাত্র আসতেই হালকা সবুজ আলোর রোমান্টিক পরিবেশের রুমে পাঠিয়ে আমি আর কলি দরজার এপাশে কান পাতলাম।
মুখোমুখি চেয়ারে পাত্রী আবুল আর পাত্র!
-সত্যি তুমি অনেক সুইট।এমন আড়ষ্ট হয়ে আছ কেন?রিলাক্স হয়ে বস।
-না,মানে লজ্জা পাচ্ছি।
-লজ্জাবতী,তোমার কপালে চিনচিনে ঘাম মুক্তার মত জ্বলছে।হাত দিয়ে একটু ছুঁয়ে দেই?
-যাহ!দুষ্ট কোথাকার!
পাত্র উঠে আবুল ভাইয়ের পেছনে এসে কাঁধে হাত রেখে চাপ দিতেই ভয়ে আবুল ভাই উঠে দাঁড়াতে গিয়ে পায়ের নিচে শাড়ির আচঁল পড়তেই কাপড় খুলে গেল।
অবাক বিষ্ময়ে পাত্র ‘শালা বাটপার’ বলে জাপটে ধরতে চাইতেই আবুল ভাই দরজা খুলে বেরিয়ে ভৌ দৌড়!গায়ে পেটিকোট আর ব্লাউজ ছাড়া কিছুই নেই।
আবুল ভাইয়ের ভৌ-দৌড়ের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও হয়ে গেল।ব্লুটথে পুরো কলোনী থেকে ফেসবুকের ওয়ালে ওয়ালে পোস্ট হতে লাগল।
এলাকার মেয়েদের কলংকিত মুক্ত করতে গিয়ে নিজেই কলংকিত হয়ে গেল আবুল ভাই!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:২৬