বিভিন্ন সময়ে দেশের ৩৫টি স্থানকে বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত করে সেগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মোট কতগুলি স্থান বধ্যভূমি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সেই সংক্রান্ত কোনও তালিকা পাওয়া যায় না; তবে ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটিএদেশে প্রায় ৯৪২টি বধ্যভূমি শনাক্ত করেছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামে ১১৬টি স্থানকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমি হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও দেশের আনাচে কানাচে সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে আরও অগণিত বধ্যভূমি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের পাহাড়তলি বধ্যভূমি স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. গাজী সালেহ উদ্দিন জানান, স্বাধীনতার পর এ বধ্যভূমির শুধু একটি গর্ত থেকেই প্রায় ১ হাজার ১০০ মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়। সংগৃহীত কঙ্কাল এখনও সংরক্ষিত রয়েছে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের স্মৃতি অম্লান জাদুঘরে। একাত্তরের এপ্রিল থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এখানে ২০ হাজারের মতো বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে ঢাকায় হত্যা করে রায়েরবাজারে এনে ফেলে রাখা হতো। আর চট্টগ্রামে লোকজনদের ধরে এনে হত্যার কাজটি চলত পাহাড়তলিতে। যেখানে বধ করা হয় সেটাই বধ্যভূমি। সে হিসেবে পাহাড়তলি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি। রায়েরবাজার এবং জল্লাদখানা বধ্যভূমির মোট লাশের সংখ্যা কখনই নির্ণয় করা যাবে না। অর্থাৎ আমরা যদি না পাওয়া বধ্যভূমির কথা হিসেব করে সর্বসাকুল্যে মোট ১৫০০ বধ্যভূমির সংখ্যা ধরে নেই তবে প্রতি বধ্যভূমিতে ২০০০ করে লাশ থাকলেই মোট প্রাণ হারানো বাঙালীর সংখ্যা হয় ৩০ লক্ষ! কিন্তু এমন অনেক বধ্যভূমি আছে যেইখানে ২০ হাজারেরও অধিক মানুষের লাশ আছে আবার ১০০/২০০ লাশের বধ্যভূমিও আছে কিন্তু অন্যদিকে আমরা কখনই নদীমাতৃক বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া লাখ শহীদের কোন হিসেব পাব না। নবমত, ইউনাইটেড নেশনস-এর ডিক্লারেশন অফ ইউনিভারসাল হিউম্যান রাইটস ১৯৮১ সালে লিখেছে‘মানব সভ্যতার ইতিহাসে যতগুলি গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, তার মধ্যে অল্প সময়ের মধ্যে সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বাংলাদেশে, ১৯৭১ সালে। প্রত্যেক দিন গড়ে ৬০০০ থেকে ১২,০০০ হাজার মানুষ খুন হয়েছিল। গণহত্যার ইতিহাসে এটাই সর্ব্বোচ্চ প্রাত্যহিক গড়’; যদিও অপারেশন সার্চলাইটের প্রথম রাতের প্রাণহানির সংখ্যা ছিল কমপক্ষে ৩৫,০০০; বাংলাদেশে দখলদারি পাকিস্তানি সৈন্যরা প্রায় ২৬০ দিন (২৫ শে মার্চ, ১৯৭১ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত) এই নৃশংসতা চালিয়ে যায়। এবার ইউনাইটেড নেশনসের দেওয়া দিন প্রতি নিহতের সংখ্যাকে ২৬০ দিয়ে গুণ করলে যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে নিহত বাঙালিদের সর্ব নিম্ন সংখ্যা ১,৫৬০,০০০ (পনেরো লক্ষ ষাট হাজার ) এবং সর্বোচ্চ সংখ্যা ৩, ১২০,০০০ (একত্রিশ লক্ষ কুড়ি হাজার) যা গড় করলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ২,৩৪০,০০০ (তেইশ লক্ষ চল্লিশ হাজার)।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৪