সকাল বিকাল প্যাডেল ঘুরায় ঝরে কত ঘাম…সভ্যতাকে টেনে বেড়ায় পায়না তবু দাম! লাঞ্চনা গজ্ঞনা সয়ে ছুটে চলে যাত্রী লয়ে, উপোষ বধু গাঁও গ্রামে ঝরায় চোখের পানি..শোন এক রিকশা ওয়ালার করুণ কাহীনি….!
“বাবা ডাইনে যাও… সোজা…বাবা থামো”। এভাবেই রিকশার ক্রসবারে বসে সিটে বসা রিকশাচালক বাবাকে পথ দেখায় আফরোজা ফারিয়া। মেয়ের কথাশুনে রিকশা চালান দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাবা মনির হোসেন। প্যাডেলে পা চালিয়ে যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে এভাবেই বাবা। ছোট্ট ফারিয়ার সহায়তায় এভাবেই ফেনীর রাস্তায় চলছে অন্ধ মনির হোসেনের রিকশা। মনির হোসেন বলেন, ‘ফারিয়ার নির্দেশনাতেই আমি রাস্তায় রিকশা চালাই।
ভাড়া নেওয়া বা ভাংতি দেওয়ার কাজটিও করে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ফারিয়া। স্কুল ছুটি হলে তাকে নিয়ে রিকশা চালাতে বের হন বাবা। মেয়ের কথায় রিকশার প্যাডেল চাপেন, ডানে যান, বামে যান, ব্রেক কষেন। মাঝে মাঝে বাপ-বেটি টং দোকানে চা-টোস্ট খেয়ে একটু-আধটু জিরিয়ে নেন… আাবার…চলতে থাকে তাদের বাবা মেয়ের জীবন সংগ্রাম।
আর সম্প্রতি তাদের এই জীবন সংগ্রাম নিয়ে একটি খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হবার পর স্থানীয় প্রশাসন তার কষ্ট লাঘবে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ফেনি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিকেএম এনামুল করিম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মনিরকে খাস জমি এবং থাকার ঘর তৈরির জন্য টাকা দেয়া হবে। সেই সাথে তাকে যাতে আর রিকশা চালানোর মত এত পরিশ্রম করতে না হয় সেজন্য একটি চাকরিও দেয়া হবে।
ইতোমধ্যে ফেনি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিকেএম এনামুল করিম ওই রিকশাচালক মনিরের বাড়ি গিয়ে তাদের সাথে কথা বলেছেন। এবং তাদেরকে খাস জমি এবং থাকার ঘর তৈরির জন্য টাকা দেয়ার কথা জানান। এতে মনিরের পরিবার খুবই খুশি। উল্লেখ্য, মনির হোসেন দুই বছর বয়স থেকে অন্ধ হয়ে যান।বর্তমানে তিনি রিকশা চালিয়ে সংসার চালান।
স্কুল ছুটির পর ফারিয়া রিকশার ক্রসবারে বসে এবং বাবাকে নির্দেশনা দেয়। আর ওখানে বসেই সে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে।৫ বছর বয়স থেকেই ফারিয়া এ কাজ করে। মনির জানান, দিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আয় করি, তা দিয়েই আমাদের সংসার চলে। কেননা, মাগরিবের নামাজের পর আর রিকশা চালাতে পারি না। ছোট ফারিয়ার আগে মনিরকে এভাবেই সহায়তা করতো তার ছেলে শরীফ। শরীফ এখন বড় হয়ে গেছে, তার বয়স প্রায় ১৮ বছর।
তাই সে এখন সিএনসি অটোরিকশা চালক। কিছুদিন আগে মনির একটি টিভি প্রোগামে অংশ নিয়ে এক লাখ টাকা পেয়েছিলেন। সেই টাকা থেকেই কিছু টাকা ছেলের ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের জন্য দেন। বাকী টাকার কিছু অংশ নিজের চোখের চিকিৎসায় খরচ করেন।
তার এখনো বিশ্বাস তিনি হয়তো আবারো দেখতে পাবেন। যদিও এই মুহূর্তে চোখে দেখার চিন্তা মনিরের উচ্চভিলাস। মনির জানান, তার দ্বিতীয় সন্তান স্বর্ণা আক্তারের (১৬) বিয়ে হয়েছে। তাই রিকশা না চালানোর জন্য তার উপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। ২৮ বছর ধরে সন্তানের নির্দেশনায় রিকশা চালাচ্ছেন মনির হোসেন। দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে মনির বললেন ‘আমি তো রিকশা চালানোর চাইতে অন্য কোনো কাজ ভাল করতে পারবো না। তাই এভাবেই কেটে যাবে আমার জীবন।’ মনিরের এমন জীবনযুদ্ধ নিয়ে খবর প্রকাশের পর স্থানীয় প্রশাসন এগিয়ে এসেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৬