সেদিন একজন বলছিলেন, বাংলাদেশের আম-জনতা সংখ্যালঘু ইস্যুতে এতটাই সংবেদনশীল যে তারা কামনা করেন, আল্লাহ মুসলিম মরে মরুক হিন্দুর গায়ে যেন টাচ না লাগে। আমাদের বদনাম হবে।
যে কারণে ক্ষমতার পালাবদলের কালে আমরা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে নির্ঘুম রাত কাটাতে শুরু করলাম। গণ অভ্যুত্থানে পরাজিতরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে তাদেরকে দাবার ঘুটি বানাবে এ হিসেব মাথায় রেখে ঘরে খেয়ে বনের মোষ তাড়ালাম। হাফেজ, আলেম, মাদরাসার ছাত্ররা মন্দিরে মন্দিরে পাহারা বসালো। জামায়াতের বয়োবৃদ্ধ আমীর পর্যন্ত ঢাকেশ্বরীতে তাদের আশ্বস্ত করতে গেলেন। কিন্তু এগুলো বানরের গলায় মুক্তার হার বলেই প্রতীয়মান হলো। আমাদেরকে মন্দির পাহারায় রেখে তারা রাজপথ দখল করে আওয়ামীলীগ পুনর্বাসনের পাক্কা আয়োজন করে ফেললেন।
এমনিতেই তারা মার দেয়ার সময় থাকেন আওয়ামীলীগ। আর প্রতিক্রিয়ায় মার খাওয়ার সময় হয়ে যান সংখ্যালঘু। আর এসবের প্রেসক্রিপশন আনেন ওপার থেকে। ভারতের ক্ষমতাবান নেতারা খুব উদ্বিগ্ন বাংলাদেশে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে। আর গোদি-মিডিয়াগুলো তো আরেক কাঠি সরেস। কিছু উপস্থাপক- অ্যাংকরদের আচরণে মনে হয় আগুন বাংলাদেশের হিন্দুদের বাড়িতে লাগুক না লাগুক তাদের পাছায় ঠিকই লেগেছে।
অতএব, সুশীলতা দেখিয়ে লাভ নেই। আমরাও একটু বাস্তবতা অবলম্বন করে দাবী তুলি। যেহেতু সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধুয়া ওপার থেকেই তোলা হচ্ছে। অতএব আমরা সংখ্যালঘু ইস্যুকে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে ভারতকেই আদর্শ মানতে চাই। ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের নমুনায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সব রকমের অধিকার চাই। ধানাইপানাই বুঝিনা।
আসুন দাবী করি-
১. ভারতে মুসলিম সংখ্যালঘুর সমানুপাতিক হারে বাংলাদেশে হিন্দুদের সরকারি চাকরি দিতে হবে। এর বেশি না। (ভারতে ১৪% মুসলিমের সরকারি চাকরিতে প্রতিনিধিত্ব ৫℅ এরও কম। পুলিশ বা সশস্ত্র বাহিনীতে আরও কম। অতএব বাংলাদেশে ৮% হিন্দু যেন ৩% এর বেশি কোনমতেই সরকারি চাকরিতে প্রতিনিধিত্ব না করেন তা নিশ্চিত করতে হবে।)
২. ভারতের সংসদে মুসলিম এমপির সমানুপাতে বাংলাদেশের সংসদে হিন্দু এমপি চাই। এর বেশি না। (৩০০ জনে ৮/৯ জন)। ভারতের বর্তমান মন্ত্রীসভায় একজন মুসলিমও নাই। অতএব আমাদের সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে কোন হিন্দু থাকতে পারবেনা।
৩. ভারতের অনেক রাজ্যে গরু জবাই নিষিদ্ধ। কোথাও মাইকে আজান নিষিদ্ধ। কোথাও রাস্তায় নামাজ পড়তে বাঁধা। এর অনুকরণে বাংলাদেশের হিন্দুদের ধর্ম পালনে বিধি নিষেধ চাই। দিতে হবে।
৪. ভারতে জোর করে ধর্মান্তরিত করার ঘটনা ঘটছে। জোরপূর্বক জয় শ্রী রাম বলতে বাধ্য করছে। প্রতিবাদকারীদের বাসা বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিচ্ছে। হিজাব পরতে বাঁধা দিচ্ছে। জেলে বন্দী করে এরপর নাটক সাজিয়ে গুলি করে মেরে ফেলছে। বাসার ফ্রিজে গরুর মাংস থাকার অভিযোগে পিটিয়ে মেরে ফেলছে। আমাদের দেশেও অবিলম্বে এর অনুকরণে কাজ শুরু করতে হবে।
৫. আমাদের এখানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের সামান্য অভিযোগ উঠলেই সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের অপেক্ষা না করেই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমা চাইতে শুরু করেন। কিন্তু ভারতে এর চেয়ে নির্মমভাবে মুসলিম নির্যাতনের ঘটনায়ও মোদি, যোগী বা অমিত শাহদের কখনো দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায়না। সুতরাং আমাদের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারাও কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে বা দেখতে যেতে পারবেনা। তাদেরকে কোন পাত্তাই দেয়া যাবেনা।
এবার একটু স্মৃতিচারণ করি।
২০১২ সালের কথা। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। হলে থাকি। এসময় Innocence of Muslims নামে একটি ইসলাম বিদ্বেষী চলচ্চিত্র প্রকাশিত হলো। যাতে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স) কে অনেক বাজেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিলো। স্বাভাবিক ভাবেই মুসলিমরা ক্ষিপ্ত হয়েছিলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের শিক্ষার্থীরা উদ্যোগী হয়ে কলাভবনের সামনে একটা প্রতিবাদের আয়োজনের চেষ্টা করলেন। তবে আয়োজন সম্পন্ন করার পূর্বেই তারা শিবির আখ্যায়িত হলেন। যাহোক একজন সিনিয়র শিক্ষকের সাহসী ভূমিকার কারণে শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদ সভাটি অনুষ্ঠিত হতে পারলো। কিন্তু বিশবিদ্যালয় প্রশাসন এবং সরকারের পদলেহী গুণ্ডালীগ এটাতে সহযোগিতা তো করেইনি। সন্দেহের নজরে আড়চোখে তাকিয়ে শিবিরের গন্ধ খুজেছিলো।
এর কিছুুদিন পরের কথা। সাতক্ষীরায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে হামলা হয়েছে এ অভিযোগে জগন্নাথ হলের একদল ছাত্র শাহবাগে জড়ো হয়ে রাস্তা আটকে প্রতিবাদ শুরু করলো। অল্প সময়ের ব্যবধানে ঢাবির ভিসি সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বিচার চাইলেন।
কি বুঝলেন। বাংলাদেশে আসলে যেটা চলছে সেটার নাম সংখ্যালঘু নির্যাতন না। সেটার নাম হিন্দু তোষণ। এবং এটা প্রকাশ্য।
সংরক্ষণ
শান্তিকামী নিরীহ হিন্দুদের সাথে আমাদের কোন শত্রুতা নেই। ফ্যাসীবাদের সহায়ক ও জুলুমবাজদের অবশ্যই বিচার হতে হবে সে হিন্দু মুসলিম যেই হোক।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৯