প্রথমেই বলে রাখি আমি নিয়মিত কোন ব্লগার নই। ফেসবুকেও নিয়মিত নই। মূলত ফেসবুকের সাথে আমি লুকোচুরি খেলি এবং যখনই অল্প কিছু সময় ব্লগে বা ফেসবুকে দেই। দেখি রিয়েল লাইফে আমার কোন না কোন সমস্যা বা ঘাটতি হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে দীর্ঘমেয়াদে ব্লগ বা ফেসবুক কোনোটাতেই সময়ক্ষেপন করার ইচ্ছা নেই। তারপরেও হাতে স্মর্টফোন থাকলে শত ব্যস্ততার মধ্যেও হাত নিশপিশ করে। চোখ বখাটে ছেলের মত এখানে ওখানে উঁকিঝুঁকি মারে। ফলে মাঝেমধ্যেই বন্ধু বান্ধবদের সাথে "আমি ফেসবুক ব্যবহার করি না" মর্মে গর্ব করা এবং অন্যদেরকেও "আমার মত হও, ফেসবুক ব্যবহার করিও" না মর্মে ওয়াজ করা এই অধম প্রয়শই ফেসবুকের চোরাবালিতে আটকে জীবনের বারোটা বাজিয়ে ফেলি। হালকা ও চটুল বিষয়ে মজে যেতে যেতে এক পর্যায়ে মস্তিষ্ক যেন ভারী এবং গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজের বোঝাই আর নিতে সক্ষম থাকেনা। পরিণতি বোঝার পরও এই মাইনকা চিপা থেকে সহসা বেরিয়ে আসা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনা।
উপরে বর্ণিত সৃজনশীল উদ্দীপকের সারমর্ম হচ্ছে, অনিয়মিত হলেও ব্লগ এবং ফেসবুক কোনটাতেই আমার পদচারণা থেমে নেই। ফলে "অনর্থক সময় নষ্ট করিও না", "মূর্খের সাথে তর্কে যেও না" এসব নীতিবাক্য নিজের জীবনেই আর পালন হয়না। বিষয় হচ্ছে ব্লগের মত প্রগতিশীল জায়গায় এমনিতেই ধর্ম গৌণ। অথচ বিভিন্ন পেশার নানান কিসিমের মানুষ এখানে ধর্মকে ব্যাখ্যা করে। কুরআন পড়তে পারেনা, ব্যক্তিজীবনে ধর্মচর্চা করেনা, অথচ কুরআন থেকে বহু বিবাহ নিষিদ্ধ প্রমাণ করতে পোস্ট দেয়! হাদীস অস্বীকার করে। এভাবে ইসলামের শাস্ত্রীয় বিষয়গুলোকে ছেলের হাতের মোয়া বানিয়ে ফেলে। কথায় নতুনত্ব থাকায় অথবা চাহিদামত হওয়ায় কিছু মানুষ আবার এদের সুরে সুর মিলায়। এসব দেখে আমার হয়েছে যত জ্বালা! মস্তিষ্ক উত্তেজিত হচ্ছে। জবাব দেয়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হচ্ছে। অথচ জবাব দিতে গেলে নিজেরই ক্ষতি। কারণ, আমার সময়ের মূল্য কি এতই কম যে নিত্যনতুন ভুল কথা, বাজে কথা বলা হবে এরপর আমি অনেক কষ্ট করে লিংক খুঁজে খুঁজে, রেফারেন্স তৈরি করে এরপরে সেটা রিফিউট করব?
ফলে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে শুরু করলাম যে বাংলা ব্লগকে এখন আর কেউ গোণায় ধরেনা। গুণীজনের মুখেই শুনতে পাই, একসময়ের যুবা তরুণ বৃদ্ধ সবার ক্রাশ এই বাংলা ব্লগ এখন আইসিইউতে আছে। অবশ্য বাংলা ব্লগের এই দুর্দশা নিয়ে হা হুতাশ করাটাও চর্বিত চর্বণ হতে হতে এখন তিতা হয়ে গেছে। ধারণা করি বর্তমানে সামু ব্লগে অ্যাক্টিভ ব্লগারের সংখ্যা প্রতি চব্বিশ ঘণ্টায় কোনক্রমেই ৫০ পার হয়না। একই ব্যক্তির একাধিক আইডির কারনে খোলা চোখে সংখ্যাটা আরেকটু বেশি মনে হতে পারে। তাই এই মুহূর্তে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ব্লগারদেরও একটা কমেন্ট পাওয়ার আশায় এতিমের মতো ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। তাই ব্লগিংটা আর জমছে না। সবাই শুধু অতীতের সোনালী ইতিহাস বলে হাহুতাশ করছে। মানুষ আপডেট কিছু পেলে সেকেলে জিনিসকে পরিত্যাগ করে। করাটাই স্বাভাবিক। এ অবস্থায় বাংলা ব্লগের আর কোনো ভবিষ্যত আছে কিনা এ প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখা যাচ্ছে ক্ষেত্রবিশেষ মানুষ ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণের পরে ঝুঁকি বিবেচনায় সেকেলে জিনিসে ফিরে যায়। ইদানিং অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্বের স্মার্টফোন ছেড়ে সাধারণ ফোনে ফিরে আসার কথা শোনা যাচ্ছে। বাংলা ব্লগের ক্ষেত্রেও কি তাহলে সেরকম কিছু ........?
আমি বরাবরই ভবিষ্যৎবাণী করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ এবং নির্ভরযোগ্য। ফলার ক্ষেত্রে না। তাই মনে হল ব্লগে ঢুকে একখানা ভবিষ্যৎবাণী রেখে যাই। বলাতো যায়না, ঝড়ে ব্ক যদি মরেই, তবে ব্লগ কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই আমাকে মরহুম চাঁদগাজীর মত "ব্লগ মাফিয়া" বা "ব্লগ দাদু"র মত কোন একটা উপাধি দিয়ে ইতিহাসের অংশ বানিয়ে দিবে। তা নাহলেও অন্তত সদ্যপ্রয়াত কাওসার আহমেদ চৌধুরীর মতো ব্লগে রাশিফল লেখার চাকরিটা আমি পেয়ে যেতে পারি! তবে মনে রাখতে হবে তখন ব্লগ কিন্তু আর চৈত্রের দুপুরের রোদের মতো খাঁখাঁ করবে না। বরং ব্লগে ঢাকা শহরের মত ট্রাফিক জ্যাম লেগে যাবে!
যা হোক বকওয়াস বাদ দিয়ে বাজে কথায় আসি। আমাদের জুকারবার্গ মামা মাত্র ১৯ বছর বয়সে ফেসবুক আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিলেন। ১৫ বছরের মাথায় বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের প্রথম কাতারে চলে আসলেন। এর আসল কারণ কিন্তু কেউ বলে না। আমি বলছি। বিশ্বাস করলে নিজ দায়িত্বে করবেন। তবে কথা কিন্তু বাস্তব! জুকারবার্গ মামা মূলত ইবলিশ শয়তানের আশীর্বাদে হেরোইনের চেয়েও ভয়ঙ্কর এক মাদকের সন্ধান পান। তবে সেটা হারবাল না, ভার্চুয়াল। অতঃপর ফেসবুকের মাধ্যমে ভার্চুয়াল এই মাদক সরবরাহের ব্যবসায় নেমে পড়েন। ফেসবুকের ব্যবহার ক্রমে জনপ্রিয়তা পায়। অন্যদিকে ব্যবহারকারীদের মস্তিষ্কে এটি ধীর প্রক্রিয়ায় কার্যক্রম শুরু করে। ফলে আরো বিনোদন, আরও চমকপ্রদ কনটেন্ট এবং আরও তুখোড় ভাবে তর্কাতর্কিতে শাইন করার আশায় নাওয়া-খাওয়া ঘুম ফেলে এমনকি পাশে শুয়ে থাকা সুন্দরী স্ত্রীকে অবমূল্যায়ন করে, কর্তব্য ফাঁকি দিয়ে একনাগাড়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে শুরু করে অসংখ্য মানুষ। ফলে কিছু মানুষ দশ দিন, বিশ দিন থেকে শুরু করে কয়েক মাসের জন্য পাগল থাকতে শুরু করে। অসংখ্য সংসারে সুখ-শান্তি, যৌনতা সবই উচ্ছনে যায়। ফলে ফেসবুক জাতীয় সাইট গুলোর বিরুদ্ধে এক ধরনের ক্যাম্পেইন শুরু হয়। দেখতে দেখতে জুকারবার্গ মামার ইনকামও নিচে নামতে শুরু করে। হঠাৎ করেই মামা বড়লোকদের টপ টেন তালিকা থেকে ছিটকে পড়ে যান।
যাহোক এবার বাজে কথা রেখে কাজের কথায় আসি। ফেইসবুক ব্যবহারে এক কালে দেশের সেলেব্রিটি মেয়েব্রিটি সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন। ফেইসবুকও নেশা ধরানোর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সবাইকে সুযোগ দিয়ে যাচ্ছিলো। অতঃপর দেখা গেল দিন যত যাচ্ছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ততই উগান্ডার সরকারের মত স্বৈরাচারী আচরণ শুরু করেছে। কি এক ছাইপাশ কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের ধুয়া তুলে যখন তখন যে কারো পোস্ট রিমুভ করে দিচ্ছে। পোষ্টের কমেন্ট হাইড করে দিচ্ছে। কয়েকঘণ্টা থেকে এক মাসের জন্য আইডি রেস্ট্রিকটেড করে দিচ্ছে। এবং অনেক সময়ই এর যৌক্তিক কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এত কিছুর মধ্যে গোদের উপর বিষফোড়ার মত ভাষা বণিক মন্ত্রী মহোদয় ফেসবুক প্রোফাইল নাম বাংলায় না রাখলে অবন্ধু করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। ফলে ডোপামিনখোর বাঙালির জন্য দিনে দিনে ফেসবুক এক আতঙ্কে পর্যবসিত হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাঙালি এক লড়াকু জাতির নাম। এসব কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের কলা দেখিয়ে বাঙালিকে আর দমিয়ে রাখা যাবে না। অচিরেই বাঙালি জুকারবার্গ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে দলে দলে আবার ব্লগে এসে আশ্রয় নিবে।
অতএব সামনে আসছে শুভ দিন। আশাবাদী অধমের সালাম নিন। সামু ব্লগে যোগ দিন। জয় বাংলা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:৫৩