মাইজভান্ডারে মাথায় মাজারের গিলাফ নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার দোরাইস্বামী
১.
একবার বোনের বাসায় বেড়াতে গিয়ে তার মোবাইলে দেখলাম ইউটিউবের একটা ভিডিও। যেখানে দেখানো হচ্ছে চাইনিজ প্রযুক্তির কল্যাণে বাজারে নাকি প্লাস্টিকের ডিম, প্লাস্টিকের পেঁয়াজ, প্লাস্টিকের চাউল, প্লাস্টিকের তরি-তরকারি এমনকি প্লাস্টিকের গরুর মাংসও বিক্রি হচ্ছে! দেখতে একই রকম। স্বাদও নাকি আসলের মতো। কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর! বোনের সাথে আলাপ করে বুঝলাম যে সে এসব বিশ্বাস করে বসে আছে। সান্ত্বনা এই যে, আমার বোন গ্রামে বড় হওয়া সহজ সরল মানুষ। দুনিয়ার হালচাল অল্পই বোঝে। কিন্তু বহুদিন পরে এসে বর্ণিল ঢাকা শহরেও যে অসংখ্য মানুষ এই গুজবে বিশ্বাস করে তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। মোবাইলে দেখা ভিডিও আবার মিথ্যা হতে পারে এত দূরের চিন্তা এসব মানুষ ইহজনমেও করেনি। এখন কথা হচ্ছে কার দায় পড়েছে অথবা কার এত অবসর আছে যে জনে জনে গিয়ে বুঝিয়ে, প্রমাণ দিয়ে এইসব ভুল ভাঙ্গাবে?
২.
"থিওরি অফ হিউম্যান স্টুপিডিটি" আমলে নিলে এটা মেনে নিতে হয় যে ব্লগে স্টুপিড এর সংখ্যা সমাজের অন্যান্য শ্রেণীতে বিদ্যমান স্টুপিড সংখ্যার সমানুপাতিক। এবং এদের নেতিবাচক ক্ষমতা ধারণার চেয়েও অনেক বেশি। তো এদেরকে যদি আপনি যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চান অথবা কথা বলার সুযোগ দেন তবেই মরেছেন! ইজ্জত যাবে, সময় যাবে, মানসিক চাপ বাড়বে। আপনার এসব ত্যাগের বিনিময়ে ওই মূর্খ ঠিকই নিজেকে বিজয়ী ভেবে আত্মতুষ্টিতে ভুগবে। পৃথিবীতে বিচিত্র কত কিছুই না ঘটে। কত মানুষই বোকামির পেছনে ছোটে। কিন্তু আমি যদি চিন্তা করি সব মানুষকে বোকামির হাত থেকে বাঁচাবো। সেটা হবে আমার বোকামি। এটা সম্ভব না। এজন্য সব সময় মূর্খকে এড়িয়ে যেতে হয়। মূর্খতার সয়লাব দেখে নীরবে কেটে পড়তে হয়। না হলে পরে পস্তাতে হয়।
৩.
জ্ঞানের অসংখ্য শাখা প্রশাখা রয়েছে। একজন মানুষের সারা জীবনের চেষ্টায় একটার বেশী দুইটা শাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের জ্ঞান অর্জন করা অসম্ভবপ্রায় একটা ব্যাপার। এ কারণে আনাড়ি লোকের জন্য বিশেষজ্ঞের কাছে ধর্ণা দেয়াটাই নিয়ম। বিদগ্ধজনের স্বীকৃতি ছাড়া নিজে নিজে গবেষক সাজা, পাণ্ডিত্য ফলানো এবং তর্কে জড়ানো অনধিকার চর্চার শামিল। এটা ভাষা, সাহিত্য, ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান ও চিকিৎসা সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যদিও আধুনিক সভ্য সমাজ ধর্মকে অন্যান্য শাস্ত্রের পাশে জায়গা দিতে বিশেষ অনিচ্ছুক। এ কারণে দেখা যায় চিকিৎসক হয়েও টিকা নিয়ে ভুল কথা বলে ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবিরকে ক্ষমা চাইতে হয়। অন্যদিকে এমপি মুরাদ হাসানের মত নিম্নরুচির লোক ধর্মবেত্তার ভান ধরে। আবার আলেম-ওলামাদেরকে বাহাসের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দর্প করে বেড়ায়।
৪.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে সাধারণত নেশাখোরদেরও পরিচিত একটা গ্রুপ থাকে। আমাদের হলে আমরা এদেরকে বাবা গ্রুপ বলে ডাকতাম। এরা সাধারণত দলে-পালে চলত। সময়ে সময়ে গাঁজায় টান দিতো। এবং গোল হয়ে বসে আলাপ-সালাপ করতো। একদিন এদের আলাপচারিতায় খেয়াল করলাম এরা ধর্ম নিয়ে মূল্যবান মতামত দিচ্ছে। আমাদের মত সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তার কারণ এখন এটাই। গাঁজাখোর, ছ্যাচড়া চোর থেকে শুরু করে র্যাব পাঠিয়ে নায়িকাকে তুলে এনে ধর্ষণ করতে চাওয়া হালের মুরাদ হাসান পর্যন্ত সবাই এখন ইসলাম বিশেষজ্ঞ। আলেম-ওলামারাই বরং ব্রাত্য।
৫.
যে কারনে এত লম্বা-চওড়া ভূমিকা দিতে হলো তা হচ্ছে সম্প্রতি একটি ব্লগীয় মূর্খতার আবির্ভাব। যে বিষয়টি নিয়ে একজন ব্লগার আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছেন তা নিতান্তই হাস্যকর। এমনকি পূর্ব থেকেই ইসলামে যাদের এলার্জি তারা ছাড়া ব্লগের পাঠকরাও এগুলো প্রত্যাখ্যান করছেন। এরপরও দমে না গিয়ে উক্ত ব্লগার নতুন নতুন ফাতরা আলাপ তুলে আনছেন। কেউ কেউ তাদের ঈমানী দায়িত্ব মনে করে জবাব দিচ্ছেন। তাদেরকে ধন্যবাদ। কিন্তু ফলাফল কি? আমি জানি ওই লোকের আইকিউ লেভেল এতটা উন্নত না যে সে টু দ্য পয়েন্ট যুক্তি এবং তথ্যভিত্তিক বিতর্ক করবে। তবে সে রাফেজী শিয়াদের সোর্স থেকে নিত্যনতুন বানোয়াট এবং মিথ্যাচার উদ্ধৃত করে করে যুগ পার করে দিতে পারবে। কেননা শিয়ারা একটি বিভ্রান্ত সম্প্রদায় হলেও তাদের হাজার বছরের লিগ্যাসি রয়েছে। এবং যুগে যুগে তারা নতুন নতুন মিথ্যা আপডেট করেছে। এ কারণে উক্ত ব্লগারের ধারাবাহিক মূর্খতা ও অপবাদের জবাব দেয়া আমার মত ক্ষুদ্র লোকের পক্ষেও আত্মসম্মানের হানিকর ও সময়ের অপচয় মনে করি।
৬.
এখানে জবাব হিসেবে নয়। সাধারণের জ্ঞাতার্থে মৌলিক কিছু কথা আলোকপাত করতে চাই। একজন ব্যক্তি কি বিশ্বাস করবেন না করবেন তা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু উক্ত ব্যক্তি যদি বিবেকবান এবং সুস্থ মস্তিস্কের হয়ে থাকেন তবে তার বিশ্বাস-অবিশ্বাসের একটি মানদন্ড অবশ্যই থাকবে। মনে রাখা প্রয়োজন পৃথিবীতে যে কোন শাস্ত্রের কিছু মূলনীতি থাকে। যেকোনো কিছু গ্রহণ অথবা বর্জনেরও সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকে। আমি যা সাব্যস্ত করতে চাই সেটার জন্য কি ধরনের প্রমাণ প্রয়োজন এই জ্ঞান যাদের থাকে না তাদের সাথে তর্কে যাওয়াই বৃথা। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের একটি ভিডিও লেকচার দেখছিলাম। তিনি আমার জীবনে দেখা একজন অন্যতম পন্ডিত মানুষ। তাই তাকে পছন্দ করতাম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তিনি হাদিসকে অস্বীকার করছেন। যে আলোচনা শুনছিলাম সেখানেও তিনি হাদিস শাস্ত্রকে অস্বীকার করলেন। হাদিস অনেক পরে সংকলিত এর পক্ষে প্রমাণ দিলেন যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাকি সাহাবীদেরকে হাদিস লিখতে নিষেধ করেছিলেন। কোরআনের সাথে হাদীস মিলে যাওয়ার আশঙ্কায়। এখন ভাবার বিষয় হচ্ছে তিনি যে বললেন, "রাসূল সাল্লাল্লাহু ইসলাম হাদিস লিখতে নিষেধ করেছেন" এটা কি? শাস্ত্রীয় বিবেচনায় এই কথাটাও একটা হাদিস। তাহলে এটা দিয়ে তার নিজের হাইপোথিসিস প্রমাণ করতে চাওয়ার কোন অধিকার কি থাকে?
৭.
ইসলামের মধ্যে অনেক ধারা-উপধারা তৈরি হয়েছে। এরমধ্যে আমরা দাবি করি আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত হচ্ছে মূলধারা এবং সত্যের ঝান্ডাবাহী। এই আহলুস্ সুন্নাত এর নিকট যাবতীয় দলিল-প্রমাণের প্রথম উৎস হচ্ছে কুরআন। কুরআনে যা আছে তার একটি বর্ণ নিয়েও কেউ সন্দেহ পোষণ করলে তার ঈমান থাকবে না। দ্বিতীয় উৎস হচ্ছে সহিহ হাদিস। এক্ষেত্রে প্রশ্ন আসে হাদীস কোনগুলো সহিহ? এখানে একটু গভীরে যেতে হবে। আমরা এখন চাইলে অ্যাপসের মাধ্যমে হাদিস পড়তে পারি। সেটা সহীহ নাকি দুর্বল তাও দেখতে পারি। কিন্তু এগুলো আমরা কিভাবে পেলাম এটা যদি যাচাই করি দেখতে পাবো ইসলামের যাবতীয় জ্ঞান সংরক্ষিত হয়েছে মূলত ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির বর্ণনার মাধ্যম। এখানে ব্যক্তির সত্যবাদিতা এবং বিশ্বস্ততার গুরুত্ব অপরিসীম। সুতরাং হাদিস সহি নাকি দুর্বল নাকি বানোয়াট এটা যাচাই করার জন্য পৃথক শাস্ত্র তৈরি হয়েছে। এই প্রয়োজনে কোন ব্যক্তির নাম যে কোন যুগে একটা মাত্র হাদিসের বর্ণনা পরম্পরায় এসেছে, তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে হাদিসের সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করতে যেয়ে হাজার হাজার মানুষের জীবনী সংরক্ষণ করা হয়েছে। বর্ণনাকারীর বিশ্বস্ততার পাশাপাশি অন্যান্য নির্ণায়ক বিষয়কেও আমলে নেয়া হয়েছে। তারপরে হাদিসের মান ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য এতটা বোঝা কঠিন হলে এভাবে সহজ করে বলা যায় যে বুখারী ও মুসলিম এ দুটি কিতাবের সব হাদিসই সঠিক। এরপরে আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমদ। এসব গ্রন্থেরও বেশির ভাগ হাদীস সঠিক। সুতরাং আমরা আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামাআত নিজেদের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে কোন বর্ণনাকে সঠিক বা ভুল সাব্যস্ত করি না। এ কারণে আমাদের হাদিসের কিতাব সমূহে অনেক শিয়া বর্ণনাকারীর হাদিসকেও মূলনীতির আলোকে সঠিক সাব্যস্ত করা হয়েছে।
এবার আসুন রাফেজি শিয়াদের প্রসঙ্গে। প্রথম কথা হচ্ছে নিজস্ব স্বার্থবাজী ছাড়া এদের কোন মূলনীতি নেই। এদের কথার কোন ঠিক নেই। এরা কোরআন যে পরিবর্তন হয়েছে এটা প্রমাণ করতে বই লিখেছে। কোরআনের মধ্যে হযরত আলীর নামে সূরা আবিষ্কার করেছে "সূরাতুল বেলায়েত"। আবার এদের তাকিয়া নীতির ছদ্মাবরণে খোমেনীরা এসে আপডেট ফতওয়ায় কোরআনকে অপরিবর্তনীয় বলে স্বীকার করেছে। যদিও এখনো পর্যন্ত অধিকাংশ শিয়া কোরআনে পরিবর্তন হয়েছে এটাই বিশ্বাস করে। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে এরা যদি কোরআনকে মানেও। সেক্ষেত্রেও নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে অপব্যাখ্যা সাপেক্ষে। পরে এ বিষয়ে প্রমাণ দেয়া হবে।
অতঃপর হাদীসের ক্ষেত্রে এটা তো বলাই বাহুল্য যে আহলে সুন্নাতের প্রামাণ্য হাদিসের কিতাবগুলো তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু আমাদের বুখারী, মুসলিমের বিপরীতে তাদের কিছু একটা থাকতে হবে তো! তাদের নিকট সবচেয়ে প্রামাণ্য গ্রন্থ হচ্ছে আল কাফি। এবং এই আল কাফি'র ব্যাপারে শিয়া স্কলারদের মতই হচ্ছে এরমধ্যে সঠিক বর্ণনার চেয়ে দুর্বল/বানোয়াট বর্ণনার সংখ্যাই বেশি। এ কারণে শিয়ারা তাদের হাদীস গ্রহণ ও বর্জনের মূলনীতিতে ঢুকিয়েছে "কমন সেন্স"। তারমানে নিজেদের মনগড়া যখন যেটা খুশি সেটাকে তারা সহিহ অথবা ভুল বলতে পারে। আবার তাদের কিতাবাদিতে বর্ণনার সংখ্যাও হাজারে হাজার। এজন্যই তারা বলতে পারে সুন্নিদের এক বর্ণনার বিপরীতে তারা চল্লিশটা বর্ণনা প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করবে! উপরোক্ত আলোচনার সারকথা হচ্ছে রাফেজী শিয়াদের আকিদা-বিশ্বাস ও এ সংক্রান্ত দাবিসমূহের প্রমাণের কোন বেসিক স্ট্যান্ড পয়েন্ট নেই। তাদের বেসিক স্ট্যান্ড পয়েন্টের নাম হচ্ছে বিদ্বেষ।
ভালোবাসার চেয়ে বিদ্বেষ বেশি জরুরি!
আমরা শেষ যুগের মানুষ। পূর্বসূরীদের কে আমরা আমাদের চেয়ে উত্তম মনে করি। নিজেদেরকে গুনাহগার মনে করি। দেখা যাচ্ছে আমাদের এই যুগেও আহলুস্ সুন্নাতের এমন একজন মানুষও পাওয়া যাবে না যে আহলে বাইতকে, হযরত আলী, হাসান, হোসাইন (রা)কে মন থেকে ভালোবাসে না। তারমানে আহলুস সুন্নাহ এর অবস্থান পুরোপুরি ইতিবাচক। তারা সব সাহাবীকে ভালোবাসেন আবার আহলে বাইতকেও ভালোবাসেন। কিন্তু শিয়াদের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য না। তাদের দাবি হচ্ছে আবু বকর, ওমর, ওসমান, আম্মাজান আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুম সহ সকল সাহাবীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ ব্যতিরেকে আহলে বাইতের ভালোবাসা কোন কাজে আসবেনা। আচ্ছা কেন তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতে হবে? "তারা আহলে বাইতকে আঘাত করেছে, ঠকিয়েছে, কষ্ট দিয়েছে"। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা এই যুগের দুর্বল ঈমানের গুনাহগার মানুষেরা যদি আহলে বাইতকে এতটা শ্রদ্ধা করতে পারি। ভালোবাসতে পারি। তাহলে আমাদের পূর্বসূরী সেই সাহাবীরা ঈমানের চূড়ায় থেকে আহলে বাইতকে আঘাত করেছেন, কষ্ট দিয়েছেন, ঠকিয়েছেন এটা কিভাবে বিশ্বাস করি? সুতরাং আমরা এসব ফালতু কথায় কখনোই বিশ্বাস করবোনা। এবার হে রাফেজী শিয়া গোষ্ঠী, আমাদের একটা বর্ণনার বিপরীতে তোমাদের চল্লিশটা বর্ণনা ধুয়ে তোমরা পানি খাও। তোমাদের ওইসব প্রমাণে আমরা ইয়ে করি।
আচ্ছা আহলে বাইত কারা?
এই শিয়া রাফেজি গোষ্ঠী আহলে বাইত আহলে বাইত করে মুখে ফেনা তোলে। আহলে বাইতকে নূহ আলাইহিস সালামের কিশতির সাথে তুলনা করে। আহলে বাইতের শোকে নিজেদের বুকে-পিঠে ছুরি মারে। এরপরে আম্মাজান আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে কাফের সাব্যস্ত করে। তাকে গালাগালি করে। অথচ এটা কোরআন থেকে প্রমাণিত যে, কোন ব্যক্তির আহলে বাইত বলতে প্রথমত তার স্ত্রীকেই বুঝায়। দেখুন সূরা হুদের ৭৩ নম্বর আয়াত। সেখানে যে ঘটনা বর্ণিত হয়েছে তা হচ্ছে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সন্তান ইসহাক আলাইহিস সালামের জন্মের সুসংবাদ নিয়ে ফেরেশতা আগমন করেছিলেন। সেই ফেরেশতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর স্ত্রী সারা আলাইহাস সালাম কে "আহলে বাইত" বলে সম্বোধন করেছিলেন। তারমানে ব্যক্তির স্ত্রী আহলে বাইত এটা কোরআন থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত। এবার ওই রাফেজি গোষ্ঠীকে জিজ্ঞেস করুন। ওরা বলবে: আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাইন এই চারজন ব্যতীত অন্য কেউ আহলে বাইত নয়। স্ত্রী তো বাদই, হযরত ফাতেমা ছাড়া আরও তিনজন কন্যা ছিলেন। যাদের দুজনই আবার উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর স্ত্রী তারাও বাদ। এবার যখন ওই রাফেজীগোষ্ঠী নবীদের সন্তানেরা সম্পদের ওয়ারিশ হয় এটা কোরআন থেকে প্রমাণ করতে চায় ওদের প্রমাণ ওদের মুখের উপর ছুড়ে মারুন।
হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর সময় এক মেয়ে, এক চাচা ও ১০ জন স্ত্রী রেখে গেছেন। সাধারণ বিধান অনুযায়ী তারা সবাই রাসূল সাল্লাল্লাহু ইসলামের সম্পদের ওয়ারিশ ছিলেন। কিন্তু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু জানিয়েছিলেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, "আমরা নবীরা সম্পদের ওয়ারিশ রেখে যাই না আমরা যা রেখে যাই তা সদাকা হিসেবে গণ্য"। সে হিসেবে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিত্যক্ত সম্পত্তি বাইতুল মালে নিয়ে নেন। এখন কথা হচ্ছে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু, যাকে সিদ্দিক উপাধি দিয়েছেন স্বয়ং রাসুলুল্লাহ। তার সত্যবাদিতার প্রতি ঠিক কি কারণে সন্দেহ পোষণ করা হচ্ছে? এই সিদ্ধান্তে তো তার কন্যা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ওয়ারিশ হিসেবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্পদে তারও পাওনা ছিল। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহার মেয়ে হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আরো আটজন উম্মুল মুমিনীন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সবাই তো মেনে নিয়েছিলেন।
আসলে রাফেজীগোষ্ঠী একটা নেতিবাচক গোষ্ঠী। এদের চিন্তা-চেতনায়, শয়নে-স্বপনে বিদ্বেষ বিহীন অন্য কিছু স্থান পায়না।
স্ত্রীকে লাথি মেরে হত্যাকারী ওমরের কাছেই মেয়ের বিয়ে দিলেন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু!
রাফেজীদের দাবি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হযরত ফাতেমা কে লাথি মেরেছেন। তার তার ঘর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছেন। গর্ভের সন্তানকে হত্যা করেছেন। এখনই রাফেজীরাই কিন্তু দাবী করে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ বীর। এবং ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন কাপুরুষ! যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যেতেন। ওই রাফেজী গোষ্ঠীকে জিজ্ঞেস করুন যে এমন মর্মান্তিক ঘটনার সময় আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু পাশে দাঁড়িয়ে কি করছিলেন। আরো জিজ্ঞেস করুন যে অল্প কিছুদিন পরেই সেই ওমরের কাছে কেন ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহার গর্ভজাত মেয়ে উম্মে কুলসুমকে বিয়ে দিয়েছিলেন?
তিনজন সাহাবী ছাড়া সবাই কাফের হয়ে গিয়েছিলেন?
ওহুদের যুদ্ধে হযরত তালহা বিন ওবায়দুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে ঢাল হয়ে দাড়িয়ে ছিলেন। তার শরীরে ৩৯ টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। একই যুদ্ধে হযরত যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহুর শরীরে গর্ত হয়ে গিয়েছিল। এ দুটি ঘটনা উদাহরণমাত্র। এরকম অসংখ্য ঘটনা ইতিহাসের পাতায় পাতায় ভরা। লক্ষ সাহাবীর ত্যগ, কুরবানী ও শাহাদাতের বিনিময়ে আল্লাহ ইসলামকে বিজয়ী করেছেন এবং আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছেন। মুহাজিররা মক্কায় বাড়িঘর, সহায়-সম্পত্তি ফেলে মদিনায় চলে গেছেন। আনসাররা নিজেদের সহায় সম্পত্তি ভাগ করে দিয়েছেন। তো কথা হচ্ছে যারা তাদের গোটা জীবনে ক্ষুধায়-পিপাসায়, অনাহারে-অর্ধাহারে, সুখে-দুখে রাসূলের আনুগত্য হতে একটু পিছপা হলেনন না। তারাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর সময় একজোট হয়ে কাফের হয়ে গেলেন! ছিলেন মূর্তিপূজারী। আল্লাহর ভালোবাসায় জাহেলী রীতিনীতি সব ছাড়লেন। ইসলামের চরিত্রে চরিত্রবান হলেন। অথচ এই মানুষেরা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে খলিফা না মেনে কাফের হয়ে গেলেন। আবার কাফের হলেন ঠিকই কিন্তু নামাজ ছাড়লেন না। যাকাত ছাড়লেন না। জিহাদে অংশগ্রহণ করে জীবন দিতে কুণ্ঠিত হলেন না! আচ্ছা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি সত্যি সত্যিই আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে খলিফা মনোনীত করে যান। তবে আবু বকর ও ওমর উনাদের কথা না হয় বাদ দিলাম। মনেকরি উনাদের খলিফা হওয়ার লোভ ছিলো। বাকি লক্ষাধিক সাহাবীর এমন কী স্বার্থ ছিলো যে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই আদেশের অবাধ্য হলেন!
ব্যর্থ কে আল্লাহ নাকি তাঁর রাসূল? (নাউজুবিল্লাহ)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনের সূরা সফ এর ৯ নং আয়াতে এবং সূরা তাওবার ৩৩ নং আয়াতে ইরশাদ করেন, "তিনিই সেই মহান সত্ত্বা যিনি রাসুল পাঠিয়েছেন হেদায়াত এবং সত্য দীন সহকারে তাঁকে অন্যসব দীনের উপর বিজয়ী করতে"। এখানে সাদা চোখে দেখলে আল্লাহ তাআলা তার বিজয়ের ওয়াদা পূর্ণ করেছেন। তবে এই বিজয় ছিল একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় তা সম্পন্ন হয়নি। কেননা তখনো মুসলিমরা পারস্যের অগ্নি উপাসকদের পরাজিত করতে পারেনি। বাইজানটাইনের খ্রিস্টানদের পরাভূত করে নি। ভারতের পৌত্তলিকদের পরাজিত করে নি। ইসলামের বিজয়ের ধারাবাহিকতা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুরু করে গেছেন। আর তাতে প্রাথমিক পূর্ণতা দিয়েছেন আবু বকর, ওমর ও ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন। কিন্তু শিয়াদের চোখে দেখলে ইসলাম পরাজিত হয়ে গেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায়ই। কেননা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে না মেনে সবাই কাফের হয়ে গেছে। নবী নিজে এতটাই অক্ষম হয়ে গেছেন যে তার স্ত্রীগণ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ৩ থেকে ৭ জন মানুষ ব্যতীত পৃথিবীর সবাই নবীর বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। অথচ কোরআনের আয়াত অনুযায়ী আল্লাহ বিজয়ের ওয়াদা করেছেন। তাহলে প্রশ্ন জাগে, কে ব্যর্থ হলেন? আল্লাহ নাকি তার নবী নাকি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু? নাউজুবিল্লাহ।
এখানে একটা তথ্য দিয়ে রাখি। নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করেছিল আবু লুলু নামের এক অগ্নি উপাসক। কিন্তু শিয়ারা তাকে খুব ভক্তি করে। তার নামের শেষে রাদিয়াল্লাহু আনহু লাগায়। শেষ পর্যন্ত এই হচ্ছে তাদের ইসলামের স্বরূপ।
এইখানে আমার দুইটা প্রশ্ন।
এক. এই শিয়া রাফেজিরা যদি কোন অমুসলিমকে ইসলামের দাওয়াত দেয়। সে ক্ষেত্রে ইসলামের ঘটনাবলী তারা কিভাবে বর্ণনা করে? আল্লাহ নবী পাঠিয়েছিলেন ইসলাম ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য কিন্তু তারপর.........................(হাইস্যকর)।
দুই. আল্লাহ তা'আলা কি পৃথিবীতে শেষ নবী পাঠিয়েছেন অন্ধকার দূর করে আলোকিত সমাজ কায়েমের জন্য নাকি শুধুই নবী বংশের রাজতন্ত্র কায়েমের জন্য? তাই যদি হতো তাহলে তো আল্লাহ তা'আলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন এক ছেলেকেই জীবিত রাখতেন।
কন্সপাইরেসি থিওরি সর্বস্ব একটি দল
ইসলাম একটি পুর্ণাঙ্গ দ্বীন। আর শিয়া রাফেজিগোষ্ঠি হচ্ছে ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসী একটি দল যাদের জীবনের বৃহত্তর ক্ষেত্রে ইসলামের ভূমিকা সামান্যই। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কে তিন ওয়াক্তে নিয়ে আসা, জুমা পরিত্যাগ করা, মুতা বিবাহ করা, কবরপূজা এবং আজগুবি সব জিনিসে বিশ্বাস করা এগুলো হচ্ছে সবচেয়ে ধার্মিক শিয়াদের বৈশিষ্ট্য। ফলে এমন শিয়া পুরোহিত রয়েছেন যারা সারা বছর নারী-মদ নিয়ে ব্যস্ত থেকে দশই মহররম রাস্তায় নামেন হযরত হোসাইন এর জন্য কান্নাকাটি করতে। এরপর আবার নারী-মদে ফিরে যান। সার্বিকভাবে এর ফলাফল দুঃখজনক। এ ধরণের ম্যাড়ম্যাড়ে নেতিবাচকতা যুবসমাজকে আকৃষ্ট করতে পারেনা। ফলে যে ধর্ম পালন করে মানুষ খোঁজে সান্ত্বনা। সেটা না পেয়ে এরা হয়ে যাচ্ছে নাস্তিক। হতাশায় কেউ কেউ হয়ে যাচ্ছে মাদকাসক্ত। যে কেউ ইন্টারনেটে একটু খোঁজ নিলেই দেখতে পাবেন ৯৭% শিয়া অধ্যুষিত ইরানে নাস্তিকতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমনকি একটি অনলাইন জরিপে দেখা গেছে ইরানের ৬০% মানুষ ইসলামে বিশ্বাসী না। যদিও তারা এটা বাইরে প্রকাশ করে না। Iran's secular shift: new survey reveals huge changes in religious beliefs অন্যদিকে গাঁজা, আফিম এবং মারিজুয়ানার ব্যবহার ইরানে আশঙ্কাজনক হারে বেশি। মুসলিম বিশ্বের কোন দেশে সম্ভবত এত বেশি ধর্মহীনতা এবং মাদকাসক্তির সয়লাব নেই।
বাংলাদেশের লালসালু মজিদেরা
আমাদের প্রতিবেশী ভারত এবং পাকিস্তানেও শিয়াদের উপস্থিতি তাৎপর্যপূর্ণ। সে হিসাবে বাংলাদেশের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ বলতে হয় যে এদেশে শিয়ারা খুব একটা হালে পানি পায়নি। তারপরেও ইদানিং দেখা যাচ্ছে বেশকিছু দরবার ভিত্তিক শিয়া মতবাদ এর প্রচারণা জোরেশোরে চালানো হচ্ছে। হতে পারে এর পেছনে ইরানের মিশনারি ইন্ধন রয়েছে। অথবা এগুলো এই ভণ্ডদের নিজস্ব উদ্যোগেও হতে পারে। তবে লক্ষণীয় যে এই মতবাদ ছড়ানোর পিছনে যারা রয়েছে এদের প্রায় সবারই পেশা এবং ব্যবসা পীরগিরি, বাউলগিরি এবং কবর পূজার সাথে সংশ্লিষ্ট। সুতরাং এরা হচ্ছে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ চিত্রিত লালসালু গোষ্ঠীর এক একজন মজিদ। এদের আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসার দৌড় শেষ পর্যন্ত গাঁজায় টান, বাউলা গান আর কবরপূজা পর্যন্ত। কেউ কেউ অবশ্য আহলে বাইতকে টানতে টানতে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। যেমন সুফি নামধারী সদর উদ্দিন চিশতীর চ্যালারা। আমাদের কথা হচ্ছে চালিয়ে যাও রাফেজীরা। তোমরাতো ইমাম মাহদীর গুহা থেকে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষা করছো। শেষ পর্যন্ত তার অনুসারী হতে না পারলেও দাজ্জালের অনুসারী তোমরা ঠিকই হতে পারবে। সেই দিন দেখার অপেক্ষায় বেস্ট অফ লাক!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৪৯