প্রকৃতই অসহায় এবং প্রতিবন্ধী কোন ভিক্ষুক যখন ভিক্ষার থালা এগিয়ে দেয়। প্রথম দিন অনেকেরই মায়া লাগে। কেউ কেউ পকেটে হাত দিয়ে খুচরা পয়সা বের করে। দ্বিতীয় দিন, তৃতীয় দিনও একই জায়গায় একই ব্যক্তির সাথে দেখা হয়ে গেলে খুব কম মানুষই সাহায্যের হাত বাড়ায়। এরা অত্যন্ত বড় আত্মার মানুষই হবে। আর দিন দিন একই ব্যক্তি যখন মানুষের দুয়ারে হাত পাতে তখন এমন কেউ নেই যে বিরক্ত হয়না। এতে ওই অসহায়ের দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। এটাই যে মানুষের ফিতরাত। বরং কিছু মানুষ তো প্রথম দিনেই বিরক্ত হয়।
এ প্রসঙ্গেই কবি খুযাইমি আবৃত্তি করেছিলেন-
لا تَسْأَلَنَّ بَنِي آَدَمَ حَاجَةً
وَسَلِ الَّذِي أَبْوَابُهُ لا تُحْجَبُ
اللَّهُ يَغْضَبُ إِنْ تَرَكْتَ سُؤَالَهُ
وَبُنَيَّ آدَمَ حِينَ يُسْأَلُ يَغْضَبُ .
অনুবাদঃ
তুমি মানবের কাছে তোমার প্রয়োজন যাচিওনা
বরং তাকেই বলো যার দুয়ার কখনো বন্ধ হয় না।
তুমি মানুষের কাছে চাইলে তারা রাগন্বিত হয়
অথচ আল্লাহর কাছে না চাইলেই বরং তিনি রাগন্বিত হন।
গত কয়েকদিনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানুষের আচরণ আমার মনটাকে বিষিয়ে তুলেছে। গণহত্যা থেকে বাঁচতে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা এই লোকগুলোর প্রতি শুরু থেকেই এক শ্রেণীর মানুষের এলার্জি ছিলো চোখে পড়ার মতো। নাটকীয়ভাবে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত না পাল্টালে নাফ নদী সাঁতরে তীরে আসা রোহিঙ্গাদের লাঠির বাড়িতে সলিল সমাধি ঘটাত এই বীর পুরুষেরা। পত্রিকায় সেরকম ছবি দেখেছি বলেই কথাটা বললাম। তবুও সান্ত্বনা ছিলো দেশের আমজনতা মুসলিম ভ্রাতৃত্ব অথবা মানবতার খাতিরে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন ব্যানারে অসংখ্য মানুষ ত্রাণসামগ্রী নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হাজির হয়েছিলো। যদিও সেই সহানুভূতির সম্পর্ক থাকা অবস্থাতেই এক শ্রেণীর মানুষের উদ্যোগে "রোহিঙ্গা" শব্দটি গালিতে রূপান্তরিত হয়ে যত্রতত্র ব্যবহৃত হচ্ছিলো।
যাহোক দিন পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন আর রোহিঙ্গাদের প্রতি মায়ানমার বাহিনীর নির্যাতনের কথা ভেবে আমরা শিউরে উঠিনা। বরং শিউরে উঠি এই ভেবে যে ওরা অচিরেই বাংলাদেশ দখল করে নিতে যাচ্ছে। কিসের ইসলামপন্থী আর কিসের সেক্যুলার সবাই এখন নিশ্চিত হয়ে গেছি ওরা খারাপ। ওরা অকৃতজ্ঞ। কারো কারো মুখের ভাষাতো এতটাই উচ্চাঙ্গের যা লেখার ভাষায় প্রকাশ করা যাচ্ছেনা বলে দুঃখিত। ভাবখানা এমন যে আমাদেরটা খেয়ে আমাদেরটা পরে ......বাচ্চারা এখন আমাদেরকেই কামড়াতে আসছে। যদিও খোঁজ নিলে দেখা যাবে যারা এসব বলছি রোহিঙ্গাদের প্রতি তাদের অবদান পুরাতন দুয়েকটা গেঞ্জি প্যান্টের অধিক কিছু নয়।
সব রোহিঙ্গারাই ভালোনা। ওদের মধ্যেও ভালো খারাপ আছে যেমন বাঙ্গালীদের মধ্যেও আছে। তাছাড়া এদের নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিভিন্ন গ্রুপের নিজস্ব এজেন্ডা আছে। চলছে খ্রিস্টান বানানোর অপকৌশল। অনেক এনজিওর কার্যক্রম ষড়যন্ত্রমূলক। তারপরেও প্রশ্ন জাগে যারা কয়েক যুগের চেষ্টায় নিজভূমে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙতে পারলোনা তারা আরেকটি স্বাধীন দেশে আশ্রিত হয়ে সেই দেশ বা তার অংশবিশেষ দখল করে নিবে এটা কি বিশ্বাস করা সম্ভব?
আমরাতো ভুলেই গেছি কিছুদিন আগে বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের এক সভায় শ্যামলী পরিবহনের মালিকের উপস্থিতিতে এক বিজেপি নেতা প্রকাশ্যে বাংলাদেশকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আর পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে এজাতীয় কথাবার্তা এখন নিয়মিতই মিডিয়ায় আসছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যারা অনেক বেশি সোচ্চার হচ্ছেন। তাদের কি এগুলো আশঙ্কাজনক মনে হয়না?
শুরুর কথায় ফিরে আসি। রোহিঙ্গাদের প্রতি দয়া করতে করতে বাংলার ১৬ কোটি মানুষ ত্যক্ত-বিরক্ত। তাই তাদেরকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে পারলে দেশ উদ্ধার হয়। অন্যদিকে এই মজলুম লোকগুলোর জন্যও জমীন সংকুচিত। যেখান থেকে পালিয়ে এসেছে সেখানেও যেতে পারছেনা। কে দেবে নিরাপত্তা?
সুতরাং একমাত্র রহমান রহীম আল্লাহই তাদের অভিভাবক। তাদের উচিত নিজেদের ভুলত্রুটি সংশোধন করে আল্লাহর দরবার কান্নাকাটি করা। নিশচয়ই একদিন আল্লাহর সাহায্য আসবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:০৮