বিসমিল্লাহ ওয়াস সালাতু আলা রাসুলিল্লাহ।
আত্মপক্ষঃ
আমার এই লেখা ব্লগের এক দুর্বৃত্তের ইসলাম ও ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) সম্পর্কে ধারাবাহিক কটূক্তি ও মিথ্যাচারের জবাবে লিখিত। প্রতিনিয়তই এই চাড়ালের জঘন্য ভাষার আক্রমণ বিশ্বাসী হৃদয়গুলোকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। এক বুক ব্যথা নিয়েই আজ প্রতিবাদের কলম তুলে নিতে হচ্ছে। তবুও আমি জানি আমার এই শিরোনাম এবং শব্দ প্রয়োগ ব্লগের অনেক সুশীলের মধ্যে প্রচণ্ড রুচিবোধ জাগিয়ে তুলবে। যদিও এরাই এতদিন ঐ গালিবাজ লোকটির প্রপাগান্ডায় পিঠ চাপড়ে দিয়েছে অথবা "ভ্যাজাল বাধাইলেন" জাতীয় মিষ্টি ভাষায় তিরস্কারের অভিনয় করেছে।
এতদিনের নিকৃষ্ট গালাগালি ব্লগ মডারেটরের ঘুম ভাঙাতে পারেনি। কিন্তু আজ হঠাৎ করে তারও ঘুম ভেঙে যেতে পারে। তাই প্রথমেই আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনে কিছু ডকুমেন্ট উপস্থাপন করতে হলো।
স্ক্রিনশট যখন কথা বলেঃ
এখানে কাকে শুয়োর বলে গালমন্দ করা হলো? আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মাদ (সা)কে নয় কি? আমাদের দৃষ্টিতে যেহেতু তিনি এর উপযুক্ত নন। অতএব গালিবাজকেই গালিটা ফিরিয়ে দেয়া কি খুব অন্যায়?
চোখে ভুল দেখছি না তো? আল্লাহ, আপনার নিকট ক্ষমা চাই। অসভ্যের মুখে সভ্যতার বয়ান আসলে বড়ই বেমানান।
ছোটলোক কি আর বংশের পরিচয় গোপন রাখতে পারে? আচরণেই প্রকাশ পেয়ে যায়।
ইনি ব্লগে ব্যক্তি আক্রমণেও কম যান না। নিজের পোস্টে যা বলেন তাতো বলেনই। সনেট কবি ফরিদ আহমদ চৌধুরীর মত নিরীহ ব্লগারের পোস্টে যেয়ে কিভাবে ব্যক্তি আক্রমণ করছে দেখুন-
এ পর্যন্ত নমুনা হিসেবে যা পেশ করা হলো তা এই অতি উচ্চশিক্ষিত গালিবাজের সীমাহীন বিদ্বেষ আর আত্মম্ভরিতার প্রমাণ হিসেবে সামান্য। আর ব্লগ যেহেতু উন্মুক্ত। বিষয়টা কারো অজানা বলেও মনে করছিনা। তবু আমার সাফাই হিসেবে এ স্ক্রিনশটগুলো তুলে দিতে হলো। কারণ ব্লগের মডারেটর এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো যারা প্রতিবাদী কমেন্ট করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
গালিবাজ কিন্তু একজন বিশিষ্ট শুকরপ্রেমী!
আমার হাসি পায় এই গালিবাজ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মাদ (সা)কে শুয়োর বলে গালি দেয়। আবার নিকৃষ্ট এই জন্তুটাকে উৎকৃষ্ট প্রমাণের জন্যেও প্রচেষ্টা চালায়। এমনকি মুহাম্মাদ (সা) কেন এত উত্তম প্রাণীকে হারাম করলেন এ নিয়েও গালমন্দ করতে ছাড়েনা!
ওহে উচ্চ শিক্ষিত, বিবেক থাকলে বুঝতে শুকর নিকৃষ্ট বলেই এটা গালি হিসেবেও নিকৃষ্ট।
এবার আসি মূলকথায়ঃ
উক্ত লেখক নিজেকে জ্ঞানের সর্বোচ্চ চূড়ায় কল্পনা করেন। বিপরীতে আমাদেরকে অন্ধ বিশ্বাসী এবং মূর্খই ভাবেন। তার দাবী, তিনি কুরআন-হাদীসের সব পৃষ্ঠা উল্টিয়ে এরপর ইসলাম ত্যাগ করেছেন। এখন বাংলাদেশতো দূরের কথা সারা পৃথিবীর কোন মুসলিম তার লেখায় কোন ভুল বা মিথ্যা প্রমাণ করতে পারবেনা। তার মুখেই শুনুন-
"চ্যালেন্জ আমি আগেই দিয়া রাখছি। শুধু বাংলাদেশের মুফতী মৌলানা না, দুনিয়ার কোনো মুসলমান দলিল দিয়া প্রমান করতে পারে বা দেখাইতে পারে আমার পোস্টে ভুল আছে, আমি ইসলাম নিয়া লেখা বন্ধ কইরা দুই রাকাত নফল জায়গায় পড়ুম এবং তওবা করুম।
আমি যেই জিনিস নিয়া পড়ালেখা কইরা একবার বলি যে এইটা আমি শিওর, তখন সূর্য উল্টা দিকে উঠতে পারে, কিন্তু আমি ভুল প্রমানিত হমু না। এইটা একেবারে লিখে রাখেন।"
সুবহানাল্লাহ! কতটা আত্মবিশ্বাস। সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠতে পারে কিন্তু উনি ভুল প্রমাণিত হবেন না!
আমি মূর্খপ্রায় একজন মানুষ আল্লাহর সাহায্য চেয়ে এ বিষয়ে লিখতে বসলাম। তবে এক পোস্টে তো ওনার হাজারটা অভিযোগের জবাব দিতে পারবোনা। তাই সুনির্দিষ্টভাবে এই পোস্টে দু'টি বিষয়ের ময়নাতদন্ত করতে চাই। এবং সম্ভব হলে এ নিয়ে সিরিয়াল পোস্ট দিতে চাই। তার আগে মূল্যবান তিনটি কথা না বললেই নয়।
১। দাবী বা অভিযোগ আর প্রমাণ কখনোই এক জিনিস নয়ঃ
মানব সভ্যতার শুরু থেকে চলে আসা একটি সার্বজনীন মূলনীতি হচ্ছে, শুধু দাবী বা অভিযোগের মাধ্যমে কোন কিছু প্রমাণিত হয়না। যে দাবী করবে, তাকে এর স্বপক্ষে প্রমাণ হাজির করতে হবে। অন্যথায় তার দাবী প্রত্যাখ্যাত হবে। পৃথিবীর আদালতসমূহ এর আলোকেই পরিচালিত হয়। কাউকে চুরির মামলায় আসামি করা হলেই সে চোর হয়ে যায়না। হলওয়েলের অন্ধকূপ হত্যার কাহিনী আমরা কমবেশি সবাই জানি।
শুরু থেকেই ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুরা বিভিন্ন প্রচারণা চালাচ্ছে। সেই সাথে ওরিয়েন্টালিস্ট এবং নব্য ইসলামত্যাগীরাও যুক্ত হয়েছে। তারা অসংখ্য বই পুস্তক প্রকাশ করেছে। ইন্টারনেটে ইসলামের বিরুদ্ধে অসংখ্য লেখা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এখন কেউ যদি সেখান থেকে একটা অভিযোগ টুকে এনে সেটাকেই চিরসত্য বলে প্রচার করে সেটা কি ফেসবুক আর ইউটিউবের খবর বিশ্বাস করার মতই বোকামি নয়?
আর আলোচ্য লেখক যে মিথ্যা প্রচারণাকেও ইন্টারনেটে পাওয়ার ভিত্তিতে সত্য হিসেবে প্রচার করেন তার প্রমাণ দেখুন- ওনার পোস্ট বাল্যবিবাহ-৪: কিছু ভ্রান্ত ধারনা আর আসল তথ্য এর একটি স্ক্রিনশটে।
এই হলো ইউটিউবের আসল লিংক
Men Can Eat Their Wives' - Says a New Fatwa এটা দিয়ে উনি দেখালেন যে বর্বর সৌদীর গ্রান্ড মুফতি পুরুষের জন্য স্ত্রীর মাংস খাওয়া জায়েজ ফতোয়া দিয়েছেন। অথচ সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অপপ্রচার। রাজনৈতিক কারণে ইরান ও তার মিত্ররা নিয়মিতভাবে এ ধরণের সংবাদ প্রচার করে। ক'দিন আগে তো বর্তমান সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান মারা গেছে, গোপনে দাফনও করা হয়ে গেছে- এরকম সংবাদও ঐসব মিডিয়া প্রচার করেছে।
এবার দেখুন সৌদিভিত্তিক নিউজ মিডিয়া Al Arabiya কি বলছে এ ব্যাপারে-Saudi Grand Mufti DENIES fatwa allowing men to eat wives
না জানি কত জায়গায় এভাবে উড়ো তথ্যের ভিত্তিতে উনি ইসলামকে গালাগালি করেছেন। আর ভেবে নিয়েছেন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠতে পারে কিন্তু আমি ভুল প্রমাণিত হমুনা!
২। অন্তত ইসলাম আমাদেরকে ধারণা করতে নিষেধ করতে করেছেঃ
আলোচ্য লেখকের কাছে ইসলাম শুধুই খুনী, ডাকাত আর জঙ্গির ধর্ম। তবুও এই ইসলাম আমাদের মতো মূর্খদেরকে শিখিয়েছে যে, স্বাভাবিকভাবেই মানুষের প্রতি সুধারণা পোষণ করতে হবে। সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া নিছক ধারণার ভিত্তিতে কারো ব্যাপারে কোন মন্তব্য করা যাবেনা। এমনকি হাদীসে ধরণাকে সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা বলে অভিহিত করা হয়েছে। ইতিহাসের বর্ণনার মধ্যে প্রচুর ফাঁকা জায়গা থাকে। এ ফাঁকা জায়গাগুলো নিজের কুধারণার ভিত্তিতে পুরণ করে সেটাকে অমোঘ সত্য বলে প্রচার করে পূর্ববর্তীদের গালাগালি করার কুশিক্ষা অন্তত ইসলাম আমাদেরকে দেয়নি। জানিনা অতি উচ্চ শিক্ষিত এই ব্লগারের পিয়ার রিভিউ জার্নাল স্ট্যান্ডার্ডের বিদ্যা তাকে এই শিক্ষা দিয়েছে কিনা। রাতের অন্ধকারে কাউকে রাস্তায় দৌড়াতে দেখলেই কি তাকে চোর বলে অভিযুক্ত করা যাবে? সভ্য পৃথিবীর আইনই বা কি বলে এ ব্যাপারে?
৩। অন্তর যখন বিষাক্ত, চোখে যখন বিদ্বেষের কালো চশমা, সত্য আবিষ্কার তখন অসম্ভবঃ
কারো অন্তর যখন ঘৃণা আর বিদ্বেষে বিষাক্ত হয়ে যায় তখন তার নিকট সাদা বস্তুও কালো হয়ে যায়। এ অবস্থায় সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের হিতাহিত জ্ঞান থাকেনা। শত্রুতাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায়ই মানুষ শুরু করে মিথ্যাচার আর জালিয়াতি। দেখা যাবে কোন এক প্রাচীন ইসলামিক স্কলারের বইয়ের রেফারেন্স দিয়ে মুহাম্মাদ (সা) সম্পর্কে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। অথচ উক্ত লেখক তার বইতে মূলত আলোচ্য অভিযোগটি খণ্ডন করেছেন। উদাহরণ পরে আসবে। বলি হে মহাজ্ঞানী গালিবাজ, খণ্ডনকৃত অভিযোগের বই থেকে শুধু অভিযোগটি মহাসত্য বলে প্রচার করার মাধ্যমে সেকেন্ডারি সোর্স লুফে নেওয়া আর প্রাইমারি সোর্সকে এড়িয়ে যাওয়া কোন ধরণের নৈতিকতার পর্যায়ে পড়ে?
যাক কথা অনেক হলো। এবার আলোচ্য লেখকের অসংখ্য অভিযোগ থেকে বাছাই করে দু'টি অভিযোগের ময়নাতদন্ত করা যাক।
অভিযোগ-১
মহানবী (সা) জনৈক জাবের থেকে শুনে কুরআন নকল করেছেনঃ
আলোচ্য লেখক তার এই একেশ্বরবাদের নান্নামুন্না ঈশ্বর: আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা ফটিকচাঁন ঈশ্বর নিজের নামটাই ঠিক করতে পারে না! পোস্টে দাবী করেন যে, মুহাম্মাদ (সা) মক্কার জনৈক খ্রিস্টান দাস জাবেরের থেকে অনেক কিছু শুনে কুরআনের নামে চালিয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে নাকি এরিস্টটলের প্রাণিবিদ্যা বইয়ে উল্লেখ করা থিওরিও রয়েছে! তিনি রেফারেন্স হিসেবে প্রথমে তাফসীরে ইবনে কাসীর ও সীরাতে ইবনে হিশামের নাম উল্লেখ করলেও পরে তিনি বলেছেন ইবনে ইসহাকের সীরাত গ্রন্থে আছে। সে আলোকে উক্ত বই থেকে স্ক্রিনশটও দিয়েছেন।
অভিযোগের পর্যালোচনা ও জবাবঃ
লেখক যে বর্ণনাটি রেফারেন্স হিসেবে এনেছেন তা ইবনে ইসহাকের সীরাত ছাড়াও তাফসীরে ইবনে কাসীর, তাবারী এবং আরো অসংখ্য কিতাবেই পাওয়া যায়। কিন্তু ঐ যে আগেই বলেছিলাম, অন্তর বিষাক্ত হলে সব কিছুই কালো দৃশ্যমান হয়। আম দিয়ে গাব বোঝানো শুরু করে। সেই সাথে কুধারণা আর মিথ্যাচারের মিশেলে এক রূপকথা তৈরী করে।
কি আছে রেফেরেন্সের চিহ্নিত অংশে?
আমি ইবনে ইসহাকের বইয়ের উল্লেখিত পৃষ্ঠার চিহ্নিত অংশের সরল বঙ্গানুবাদ করলাম। সবাই পড়ে দেখুন।
আমার নিকট যে বর্ণনা পৌঁছেছে সে অনুসারে, রাসূল (সা) প্রায়শই মারওয়া পাহাড়ে অবস্থিত জাবের নামীয় এক খ্রিস্টান যুবকের ঘরে বসতেন। সে ছিলো বা'ল হাদরামির দাস। আর তখন তারা (মক্কার অবিশ্বাসীরা) বলতে লাগল, "মুহাম্মাদ যা বলে তার অধিকাংশই হাদরামির দাস খ্রিস্টান জাবের তাকে শিখিয়ে দেয়।" ওদের এসব কথাবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ নাযিল করেন, আমি ভালো করেই জানি যে ওরা বলে, "একজন মানুষ তাকে শিক্ষা দেয়"। অথচ ওরা যাকে উদ্দেশ্য করে (জাবের) তার ভাষা হচ্ছে অনারবি, আর এই কুরআন হচ্ছে সুস্পষ্ট আরবি ভাষার। (সূরা নাহল, আয়াত ১০৫)
এখানে কোথায় আছে জাবের থেকে টুকলিফাইয়ের কথা? এরিস্টটলের সিমেন থিউরি জাবের থেকে শেখার কথা কোথায়? বস্তুত এর নাম জালিয়াতি। ইবনে ইসহাকের ঘাড়ে মক্কার কাফিরদের মিথ্যা অভিযোগের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হলো। যে অভিযোগের না আছে কোন সাক্ষী, না আছে কোন প্রমাণ।
এই বর্ণনা কেন আসলো?
মক্কার কাফের সম্প্রদায় ইসলাম প্রচারে বাধা সৃষ্টি করেছে, অপবাদ দিয়েছে, নির্যাতন করেছে এগুলো ঐতিহাসিক সত্য। তারা মুহাম্মাদ (সা)কে পাগল, জাদুকর, কবি, গণক কত কিছুই না বলেছে। এই কুরআন যে আল্লাহর বাণী নয় এটা প্রমাণ করতে তারা নানা সময় নানা কথা বলেছে। যদিও মক্কা বিজয়ের পর এরা মোটামুটি সবাই ইসলাম গ্রহণ করে নিয়েছিল এবং কুরআনকেও আল্লাহর বাণী হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছিল। যাহোক এরাই মুহাম্মাদ (সা)কে প্রায়ই খ্রিস্টান জাবেরের কাছে যাওয়া আসা করতে দেখে ছড়িয়ে দিলো যে, মুহাম্মাদ এই জাবের থেকেই শিখে নিয়ে কুরআন রচনা করে। আল্লাহ তখন কাফিরদের মিথ্যাচারের জবাবে সূরা নাহলের ১০৫ নং আয়াত নাযিল করলেন। যেখানে বলা হলো জাবির একজন অনারবী, যে সামান্যই আরবি জানে। অন্যদিকে মুহাম্মাদ (সা)ও আরবি ব্যতীত অন্য ভাষা বোঝেন না। আর কুরআন হচ্ছে সবচেয়ে বিশুদ্ধ এবং সুস্পষ্ট আরবি ভাষায় রচিত। তাহলে কিভাবে একজন ভিন্নভাষী দাস তাঁকে কুরআনের মত বিশুদ্ধ আরবি গ্রন্থ রচনা করতে শিক্ষা দিবে?
মূলত যত কিতাবে এই ঘটনা বর্ণিত হয়েছে সব কিতাবেই কাফিরদের অভিযোগ খণ্ডনে কুরআনের নাযিলকৃত আয়াতের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে এই ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব এসব বর্ণনায় মূলত কাফিরদের মিথ্যা অভিযোগ খণ্ডন করা হয়েছে। এমনকি ইবনে কাসীর তার বর্ণনায় প্রথমেই এটাকে মিথ্যাচার বলে আখ্যায়িত করেছেন-
এটা Darussalam প্রকাশিত তাফসিরে ইবনে কাসিরের ইংরেজি অনুবাদ (১৬ঃ ১০৫)। এই লিংকে গিয়ে ৫২৭ নং পৃষ্ঠা দেখতে পারেন। Click This Link
তবে ওহে মহাজ্ঞানী! "ইবনে ইসহাক তাবেয়ী, তার জীবনী জানতে এই খানে ক্লিক করুন, অমুকের জীবনী জানতে ওইখানে ক্লিক করুন" ইত্যাদি অপ্রয়োজনীয় রেফারেন্স তো বহুত দিলেন। কিন্তু আপনার অভিযোগের স্বপক্ষে সরাসরি প্রাথমিক উৎসের তথ্য কই?
ইবনে ইসহাকের নিজের বিশ্বাস কি ছিলো?
ঘরের মালিকইতো ঘরের খবর সবচেয়ে বেশি অবগত থাকেন। আসুন দেখি এই ঘটনার বর্ণনাকারী ইবনে ইসহাক নিজে কি বিশ্বাস করতেন। তিনি কি কুরআনকে আল্লাহর বাণী মনে করতেন নাকি জাবের আর নওফেলের সহযোগিতায় রচিত মনে করতেন। তিনি যে একজন খাটি মুসলিম স্কলার ছিলেন এতে তো কোন সন্দেহ নেই। তথাপি রেফারেন্সটি পুনরায় যাচাই করা যাক। আমাদের পণ্ডিত লেখকের প্রদত্ত স্ক্রিনশটেই লাল কালিতে চিহ্নিত অংশটুকু দেখুন। Then Allah revealed অর্থাৎ অতঃপর আল্লাহ নাযিল করলেন ......। তারমানে ইবনে ইসহাক বিশ্বাস করেন যে কুরআন আল্লাহই নাযিল করেন। তাহলে আপনি কিভাবে ইবনে ইসহাকের বরাত দিয়ে জাবের কাহিনী প্রচার করেন? আর সিমেন কাহিনীই বা পেলেন কোথায়? কুধারণার যোগ্যতায়?
ইবনে ইসহাক তার সীরাতে ওহী কিভাবে আসতো, জিব্রাইল (আ) কি আকৃতিতে আসতেন, এমনকি রাসূল (সা) এর আকাশ ভ্রমণ বা মিরাজের ঘটনাও ভক্তি ও বিশ্বাসের সাথে বর্ণনা করেছেন। সেসব বিশ্বাস না করা গেলেও তিনি কাফেরদের একটা মিথ্যা অভিযোগ উদ্দ্বৃত করেছেন তার খণ্ডনে অবতীর্ণ আয়াতের শানে নুযুল বুঝাতে। অমনি এ যুগের ইসলাম বিদ্বেষী সেয়ানা স্কলারদের নিকট তা অকাট্য সত্যে পরিণত হলো।
আমি আশ্চর্য হই এই ধরণের জোচ্চুরীর রেফারেন্স ব্যবহার করে ইসলামের নবীকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। আবার চ্যালেঞ্জ করে বিশ্বের একজন মুসলিমও নাকি উনার কোন ভুল ধরতে পারবেনা। আসলে ভুল ধরবে কিভাবে? উনিতো ভুল করছেন না। স্রেফ মিথ্যাচার করছেন।
অভিযোগ-২
ওমর (রা) নবী কন্যা ফাতিমা (রা)কে নির্মমভাবে আঘাত করেন এমনকি শহীদ করেনঃ
আলোচ্য পণ্ডিত লেখক তার ইসলামিক নারী স্বাধীনতা: স্ত্রীর অসম্মতিতে যৌনমিলন ও প্রহার এবং তার শর্তযুক্ত মর্যাদা-৩ পোস্টে এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। তিনি রেফেরেন্স হিসেবে যে ওয়েবসাইটটি দিয়েছেন তা হচ্ছে Click This Link
তার অভিযোগের সার কথা হচ্ছে রাসূল (সা) এর ওফাতের পর আবু বকর (রা) জোর জবরদস্তি করে ক্ষমতা দখল করেন। মূলত গদীরে খুমে রাসুল (সা) তার জামাতা আলী (রা) কে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে গিয়েছিলেন। তাই আহলে বাইত ও কিছু মুমিনেরা আবু বকর (রা)র হাতে বায়াত না করে ফাতেমা (রা) এর ঘরে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এ অবস্থায় ওমর (রা) এর নেতৃত্বে একদল সাহাবী ফাতেমার গৃহে আক্রমণের উদ্দেশ্যে বের হন। প্রথমে ফাতেমা (রা) হুমকি ধমকি দেয়া হয়। অতঃপর ওমর (রা) গৃহের দরজায় আগুন ধরিয়ে দেন। এমনকি ওমর (রা) দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে হযরত ফাতিমার পেটে লাথি মারেন। তিনি তখন অন্তঃসত্বা ছিলেন। এতে তার গর্ভস্থিত সন্তান মারা যায় যার নাম ছিলো মুহসিন। এ আঘাতের ফলেই ফাতিমা (রা) মারা যান।
আমার প্রাথমিক মন্তব্যঃ
আল্লাহর রাসূল (সা)কে অসংখ্যবার শুয়োর বলে গালি দিলেও এইখানে এসে গালিবাজ হঠাৎ করেই আলী (রা) ও আহলে বাইতের প্রেমিক বনে গেছেন দেখা যাচ্ছে!
অভিযোগের পর্যালোচনাঃ
অভিযোগটি একান্তই শিয়া সম্প্রদায়ের নিজস্ব অভিযোগ যা তারা বিশ্বাস করে এবং প্রচার করে বেড়ায়। শিয়ারা ইসলামের মূলধারা থেকে বিচ্যুত একটি সম্প্রদায়। সাহাবা বিদ্বেষ তাদের মতবাদের মূলভিত্তি। কিন্তু আলোচ্য লেখক কেন এটাকেই সত্য ধরে নিয়ে তাদের প্রচারণায় যোগ দিলেন? অবশ্য তার সাথে শিয়াদের একটা বিষয়ের মিল রয়েছে। আর তা হচ্ছে বিষাক্ত অন্তর। এজন্যই ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ বলেছিলেন যে, ইহুদীদের যদি জিজ্ঞেস করা হয় তোমাদের ধর্মের শ্রেষ্ঠ মানুষ কারা? তারা বলবে, মুসা (আ) এর সাথীরা। খ্রিস্টানদের কে একই প্রশ্ন করলে তারা বলবে যীশুর হাওয়ারীগণ। অথচ শিয়াদের নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষগুলো হচ্ছে মুহাম্মাদ (সা) এর সাহাবীগণ।
যা হোক শিয়ারা এর স্বপক্ষে অনেক বই থেকে রেফারেন্স দিয়ে থাকে। যদিও সনদের বিচার বিশ্লেষণ ছাড়া কিতাবে উল্লেখ আছে এর ভিত্তিতে সত্য-মিথ্যা রায় দেওয়ার নীতি ইসলামে কোন কালেই ছিলোনা। আর মনগড়া হাদীস তৈরি, অভিযোগ খণ্ডনের বই থেকে অভিযোগ অংশ উদ্বৃত করে রেফারেন্স জালিয়াতি ইত্যাদি দক্ষতাও শিয়াদের বেশ পুরনো। আর শিয়াদের নিজস্ব মানদণ্ড আছে। শিয়ারা সুন্নী রচিয়তাদের কোন কিতাবই বিশ্বাস করেনা। একমাত্র নিজেদের পক্ষে কিছু পেলে ভিন্ন কথা।
তাহলে লেখক যে শিয়াদের অভিযোগকে সত্য ধরে নিয়ে গালাগালি শুরু করে দিলেন তিনি কি আর সব ক্ষেত্রেও শিয়াদের মানদণ্ড মেনে নিবেন? তাহলে কিন্তু বুখারি, মুসলিম, তিরমিযি, আবু দাউদ, নাসাঈ ইত্যাদির রেফারেন্স উদ্ধৃত করে ইসলামের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধারের সুযোগ থাকবেনা। নাকি ঘৃণা ছড়ানোর উদ্দেশ্যে যেখানে যাহা পাইবেন তাহাই কুড়াইয়া লইবেন। সত্য মিথ্যার ধার কে ধারে? আর তিন হাত মাটি খুড়ে মিথ্যাচার বের করার যোগ্যতাই বা কয়জন রাখে? ততদিনে বিশ্ব মুসলিমের প্রতি ওপেন চ্যালেঞ্জে আপনি স্বঘোষিত বিজয়ী!
অভিযোগের জবাবঃ
উপরোক্ত ঘটনা সম্পূর্ণই বানোয়াট এবং শিয়াদের আবিষ্কৃত মিথ্যাচার।
এখন এই মিথ্যাচার প্রমাণের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হচ্ছে রেফেরেন্সে প্রদত্ত প্রত্যেকটি বর্ণনাকে হাদীস শাস্ত্রের আলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করা। এটা যেমন সময় সাপেক্ষ তেমন সাধারণ ব্লগারদের বোঝার পক্ষেও কষ্টসাধ্য। আর এ বিষয়ে ইংরেজি ভাষায় অনলাইনে তেমন কিছু পাওয়া যাচ্ছেনা। যদি কেউ আরবি বুঝেন তিনি ক্লিক করে দেখতে পারেন- كذبة رافضية في شأن عمر بن الخطاب مع فاطمة رضي الله عنهما
অতএব এই মিথ্যাচার বুঝতে আমাদের এখন দ্বিতীয় পদ্ধতির আশ্রয় নিতে হবে। তা হচ্ছে পাল্টা প্রশ্ন পদ্ধতি।
কিছু প্রশ্নঃ
১। আলী (রা) তৎকালীন সময়ের একজন শ্রেষ্ঠ বীর ছিলেন এতে শিয়া সুন্নী কারোই দ্বিমত নেই। সেই সাথে ফাতিমা (রা)এর ঘরে আশ্রয় নেয়া যুবাইর (রা)ও একজন খ্যাতনামা বীর ছিলেন। বাইয়াত না করা আরো অনেকে নাকি সেখানে ছিলো। এতগুলো পুরুষ মানুষ শাড়ি-চুড়ি পরে নীরবে ঘরে বসে রইলেন। আর ওমরের সাথে বোঝাপড়া করতে পাঠালেন একজন পর্দানশীন গর্ভবতী নারীকে? ওমরের সাথে মাত্র দশজন লোক। তারা ঘরের দরজায় আগুন দিলেন। ওমর ভিতরে ঢুকে ফাতিমার পেটে লাথি মারলেন। পেটের বাচ্চার গর্ভপাত হয়ে গেল।
আল্লাহর সিংহ আলী (রা)র কি প্যারালাইসিস হয়েছিলো যে ঘরে বসে নিজের স্ত্রী-সন্তানের এ দুর্দশা চেয়ে চেয়ে দেখলেন? যুবাইর এবং অন্যান্য পুরুষেরাই বা কি করলো?
গোটা আরব জাতির ইতিহাসে এর পূর্বে বা পরে এমন কোন নজির পাওয়া যাবেনা যে স্বামীর উপস্থিতিতে বাইরের লোক এসে স্ত্রীকে লাথি মেরেছে শেষ পর্যন্ত মৃত্যু ঘটিয়েছে। আর স্বামী কিছুই করেনি।
২। অকালে গর্ভপাত হওয়া একটা বাচ্চার (যার জন্মই হয়নি) আবার নাম থাকে? সে ছেলে না মেয়ে এটাও জানা যায়? কি জানি হতেও পারে। কিন্তু শিয়ারা যে নাম দাবি করে সে নামে একটা বাচ্চাতো নবীজির (সা) জীবদ্দশায়ই ফাতিমার গর্ভে জন্মেছিল? এবং তিনি নিজেই নাম রেখেছিলেন। মুসনাদে আহমাদের ৭৬৯ নং হাদীস এটি।
৩। একাধিক হাদীস থেকে জানা যায় রাসূল (সা) মৃত্যুর পূর্বে বলে গেছেন যে তাঁর মৃত্যুর পরে সর্বপ্রথম তাঁর সাথে মিলিত হবেন (অর্থাৎ মৃত্যুবরণ করবেন) ফাতিমা (রা)। আলোচ্য ঘটনা সত্য হলে নবী (সা) এ কথা ভুল প্রমাণিত হয়ে যায়। কারণ ফাতিমার পূর্বেইতো তাঁর গর্ভের সন্তান রাসূল এর নাতি মারা গেলো?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত বুখারি শরীফ ৬ষ্ঠ খণ্ড।
৪। যেই ওমর ফাতিমাকে আঘাত করলেন এমনকি হত্যা করলেন। ক'দিন বাদে তাঁর কাছেই আলি তাঁর ও ফাতেমার মেয়ে উম্মে কুলসুমকে বিয়ে দিলেন? এ ঘটনা আবার শিয়ার অস্বীকারের চেষ্টা করে। দেখুন শিয়াদের বই থেকেই উমারের সাথে উম্মে কুলসুমের বিবাহের প্রমাণ। Click This Link
এরকম অসংখ্য প্রশ্ন রয়েছে আলোচ্য ঘটনা সত্য হলে যার কোন সদুত্তর খুঁজে পাওয়া যায়না।
শিয়া অনেক স্কলারও আলোচ্য অভিযোগকে মিথ্যাচার বলে আখ্যায়িত করেছেনঃ
সুন্নীরা চিরকালই ওমর (রা) এর বিরুদ্ধে প্রচারিত শিয়াদের অভিযোগকে অস্বীকার করে আসছে। এমনকি অনেক শিয়া স্কলারও এ কথা স্বীকার করে নিয়েছেন যে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। এমনই একজন শিয়া স্কলার হলেন আয়াতুল্লাহ ফাদলাল্লাহ। এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য ইউটিউবে পাওয়া যেত। এখন পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে একটি শিয়া ওয়েবসাইটের লিংক দিচ্ছি যেখানে গেলে এর সত্যতা পাবেন। Click This Link
কেউ আরো জানতে চাইলে The UnBroken Rib মুভিটিও দেখে নিতে পারেন। The UnBroken Rib: OFFICIAL Trailer HD
আলী (রা) এর নিজের মুখে আবু বকর ও ওমর (রা) এর প্রশংসাঃ
আদতে আলী (রা) এর সাথে আবু বকর ও ওমর (রা) কোন শত্রুতাই ছিলোনা। তারা পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসতেন এবং শ্রদ্ধা করতেন। শিয়াদের মত বিষাক্ত অন্তরের অধিকারীরাই তাদের বিরুদ্ধে এ জাতীয় জঘন্য মিথ্যা রটনা করেছে। আর তারাই এবং তাদের মত নীচু মানসিকতার লোকেরাই এগুলো প্রচার করে মনের খেদ মেটায়।
এখানে বুখারি শরীফ থেকে দু'টি হাদিস তুলে দিচ্ছি যার একটির বর্ণনাকারী স্বয়ং আলী (রা) এর ছেলে মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়্যাহ। অপরটির বর্ণনাকারী আলীর চাচাত ভাই আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা)
দুটি ছবিই ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত বুখারি শরিফের ৬ষ্ঠ খণ্ড থেকে নেয়া।
শেষ কথাঃ
লেখতে লেখতে পোস্ট অনেক বড়ই হয়ে গেলো। আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান দ্বারা আলোচ্য লেখকের দু'টি অভিযোগের জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছি। আশাকরি যারা উক্ত লেখকের লেখা পড়ে সামান্য সময়ের জন্য হলেও থমকে গিয়েছেন নিরপেক্ষভাবে পর্যালোচনা করার সুযোগ পাবেন। মূলত এতকথার প্রয়োজনও পড়েনা। মানুষ ভালো হলে তার অন্তরটাও ভালো হয়। আর অন্তর ভালো হলে সুধারণা করতে পারে। সর্বজন শ্রদ্ধ্বেয় মহামানবদের বিরুদ্ধে উমাচরণের মত মুখে যা আসে তাই বলেনা। গালাগালি, অপবাদ আর জোচ্চুরী তো অনেক পরের বিষয়।
আলোচ্য লেখকের প্রত্যেকটি কুৎসা এবং অভিযোগের জবাব দেয়া সম্ভব। কিন্তু যার ভাষার ছিরি এত সুন্দর। আর অভিযোগও যার অসীম, জবাব দিয়ে তার কুৎসার ভাঙ্গা রেকর্ড বাজানো কতটা থামানো যাবে তা বলা মুশকিল। আপাতত দেখি তার চ্যালেঞ্জের বিষয়ে তিনি নিজে এবং পাঠকেরা কি বলেন।
সবাইকে শুধু পোস্টে আলোচিত বিষয়ের ওপর মন্তব্য করার অনুরোধ রইল।
ওয়ালহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৬