সম্প্রতি চিকুনগুনিয়ার উপদ্রবে নাগরিক সমাজ অতিষ্ঠ। এর মধ্যে ব্লগে শুরু হয়েছে আরেক উপদ্রব। ব্লগার নাঈমুর রহমান আকাশ তার আহমদী ওরফে কাদিয়ানী মতবাদ প্রচারে বেশ কিছু পোস্ট লিখেছেন। তার লেখা প্রথম পৃষ্ঠায় না যাওয়াতে অধিকাংশ ব্লগারের নিকট তা অজ্ঞাতই ছিল। এছাড়া তিনি অনেক পোস্টেই কমেন্ট করেন। সেসব কমেন্টেও কখনো কখনো তার মতবাদের বিজ্ঞাপন থাকে।
গত সোমবারে জ্বিন জাতি সম্পর্কিত একটি পোস্টের কমেন্টে তিনি আহমদিয়া- অআহমদিয়া বিশ্বাসে পার্থক্য দেখানোর চেষ্টা করলে কয়েকজন ব্লগারের বিরোধিতার সম্মুখীন হন। এদের মধ্যে সত্যের ছায়া, কাউয়ার জাত, নতুন নকিব এবং রাশেদুল ইসলাম লাবলু উল্লেখযোগ্য।
এরপর গতকাল সকাল থেকে হঠাৎ করে দেখা যায় ব্লগার নাঈমুর রহমান আকাশ বিভিন্ন পোস্টে ঘুরে ঘুরে তার ব্লগের লিংক দিচ্ছেন এবং মোশাররফ হোসেন সৈকত নামক এক ব্লগার সম্পর্কে অভিযোগ করছেন। লিংকে গিয়ে দেখা যায় উক্ত ব্লগার তার পোস্টের কমেন্টে অশ্লীল একটি বাক্য অসংখ্যবার রিপিট করে রেখেছেন।
এ ক্ষেত্রে আমি সকল ধর্মীয় মানসিকতার ব্লগারদের আহবান জানাব- এই কাজটি কখনো করবেন না। এই মন্দ কাজের কোন ইতিবাচক ফলাফল নেই। এটা প্রতিপক্ষের জন্য অস্ত্র হিসেবে কাজ করে। যেমন ব্লগার নাঈমুর রহমান আকাশ এই গালাগালিকে তার ব্লগ প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছেন। পুরো ব্লগে তার লেখার লিংক ছড়িয়েছেন। সবাইকে তার ব্লগ চিনিয়েছেন। পাশাপাশি এক মোশাররফ হোসেন সৈকতকে প্যারামিটার বানিয়ে গোটা মুসলিম জাতিকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রয়াস পেয়েছেন। গালিবাজরা কখনো সঠিক মুসলিম হতে পারে না, অতএব আহমদিয়ারাই সঠিক এ দাবী করার সুযোগ পেয়েছেন।
তিনিতো ঘোষণাই দিয়েছেন নতুন করে কেউ তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলেই তিনি এই গালাগালি দেখিয়ে তাকে পরাস্ত করে দিবেন।
অতএব এই ভ্রান্ত লোকের হাতে এ অস্ত্র তো মি. সৈকতই তুলে দিলেন।
যাহোক গতকাল থেকে দেখতে পাচ্ছি এই গালাগালির লিংকটা মি. নাঈমুর রহমান আকাশ তার নিকের সাথে স্থায়ী করে নিয়েছেন। যেখানেই যাচ্ছেন সাথে করে নিয়ে যাচ্ছেন। সবাইকে দেখাচ্ছেন। বিষয়টি সঠিক পথের অনুসারী মুসলিমদের জন্য বিব্রতকর। তাই আমি বিষয়টি নিয়ে সামান্য আলোকপাত করা জরুরি মনে করছি।
অভিযোগকারী নাঈমুর রহমান কি ধোয়া তুলসী পাতা?
যেভাবে নাঈমুর রহমান আকাশ ব্লগে অভিযোগ ছড়িয়েছেন তাতে যে কারও মনে হওয়া স্বাভাবিক যে উনি মনে হয় একজন ভদ্রভাষী নিরীহ ব্লগার। যিনি অন্যায় আক্রমণের শিকার হয়ে প্রতিকারের আশায় ব্লগে ব্লগে অভিযোগ জানিয়েছেন।
কিন্তু আমার অনুসন্ধানে যা পেলাম সেটাকে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসা বলা যায়! মি. নাঈমুর রহমান আকাশের এসব অভিযোগ তোলার অধিকার আদৌ আছে কিনা সে প্রশ্নও তৈরি হয়।
দেখা যায়, মোশাররফ হোসেন সৈকত গালি দেয়ার পূর্বে তিনিই প্রথম গালাগালির সূচনা করেন জ্বিন বিষয়ক পোস্টে-
এখানে বিরোধীদের হেফাজতি সাব্যস্ত করে কুকুরের সাথে তুলনা করেছেন তিনি। লুঙ্গি রেখে পালানো এবং অন্যান্য বিদ্রূপ তো আছেই!
পাঠক, সময় এবং তারিখসহ খেয়াল করুন। গালিটা আরবি ভাষায় দেয়া আছে। বাংলা অনুবাদ করলে দাড়ায়- "আমি মানুষের সাথে কথা বলতে পছন্দ করি। কোন শুয়োর, গাধা, কুত্তা কিংবা কাউয়ার জাতের সাথে নয়!"
আমার পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে এসব কমেন্ট মোশাররফ হোসেন সৈকত গালি দেয়ার পূর্বেই করা হয়েছে।
আরো একটি দেখুন-
তুই-তোকারি এবং গর্দভ শব্দের ব্যবহার লক্ষ্যণীয়।
আমার প্রশ্ন: যিনি এক সৈকতকে ব্যবহার করে গোটা সত্যপন্থীদের থামিয়ে দিতে চান। সারা ব্লগে এত অভিযোগ, এত হাউকাউ, তার নিজের নৈতিক অবস্থান কতটুকু শক্ত?
নাকি মনে করেছেন এগুলো কারো চোখে পড়বেনা? অথবা আরবিতে গালি দিলে অমৃত বাংলায় দেয়া খারাপ? অথবা উনি গালি দিলে লীলাখেলা আর অন্যেরা দিলে ক্যারেক্টার ঢিলা?
কোন সে মহান নবীর এই গালিবাজ উম্মাত?
এখানে এসে কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে পড়ল। মি. নাঈমুর রহমান আকাশের নবী, কলেরার রোগী মীর্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর জীবনী অনুসন্ধান করে জানতে পারলাম উনি ছিলেন গালাগালির রাজা। সে হিসেবে মি. আকাশ গালাগালিতে এখনো ছাত্র মাত্র!
তো পাঠকের খেদমতে মীর্জা দাজ্জাল মাওউদ ওরফে মসীহ মাওউদ কাদিয়ানীর গালাগালির কিছু নমুনা তার লিখিত বই থেকে উদ্বৃত করে হাদিয়া হিসেবে পেশ করছি।
১. আমার এসব কিতাবকে প্রতিটি মুসলমান মহব্বতের দৃস্টিতে দেখে, কিন্ত জারজ আর বেশ্যার সন্তান রা এটাকে মানে না। (মীর্যার লিখিত আয়নায়ে কামালতে ইসলাম ৫৭৪)
মীর্যার এই বক্তব্য বুঝা যাচ্ছে আমরা যারা তাকে নবী বলে মানিনা আমরা সকলে জারজ সন্তান।
২. আমার বিরোধীরা জংগলের শুকুর হয়ে গেছে আর তাদের স্ত্রীরা কুকুরীর চেয়ে নিকৃস্ট। (মীর্যার রচিত নাজমুল হুদা-১৫ পৃষ্টা)
৩. যারা আমাকে আমার বিজয়ের স্বীকৃতি দেবেনা, তাদের হারামজাদা হওয়ার ইচ্ছা আছে। (আনওয়ারুল ইসলাম ৩০ পৃষ্ঠা)
৪. পৃথিবীতে শুকর হতে অপবিত্র আর কিছু নেই, কিন্তু ঐ সকল আলেম যারা আমার বিরোধিতা করে তারা শুকর হতেও অপবিত্র। (গোলাম আহমদ কাদিয়ানী রচিত আঞ্জামে আথম, ২১ পৃষ্ঠা)
এই হল প্রতিশ্রুত ঈসা, মাহদী ও উম্মাতি নবির মুখের ভাষা! তাহলে সেই নবীর ওপর ঈমান আনয়নকারীগণের মুখের ভাষা কেমন হবে তা বুঝতে কি আর গবেষণা লাগে?
সর্বশেষ ব্লগার নাঈমুর রহমান আকাশের প্রতি অনুরোধ
আমাদের দুর্ভাগ্য যে বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ আপনাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করেছে আমরা পারিনি।
তাই ব্লগে অবাধে সরল মুসলিমদের বিভ্রান্ত করার সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আপনি যে গালির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মুখে ফেনা তুলছেন সে গালাগালির লাইনে আপনারাই বেশি কামেল। আপনাদের নবি যে পরিমাণ গালি দিতো সে তুলনায় মোশাররফ হোসেন সৈকত কিছুই না। সুতরাং ইমোশনাল ধান্দাবাজি বন্ধ করুন।
আর হ্যা। আপনাদের হাজারটা প্যাঁচানো দলীলের প্রয়োজন নেই। ঈসা (আ) মৃত এর পক্ষে কুরআনের ত্রিশ আয়াত দেখানোর প্রয়োজন নেই। মীর্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী যতগুলো দাবী করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে ছোট দাবী হচ্ছে ইমাম মাহদী হওয়ার দাবী।
আমি বড়গুলোর দিকে যাব না। এই ছোট দাবীর বিষয়েই আমি চ্যালেঞ্জ করলাম, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী মাহদী হওয়ার দাবীতে ডাহা মিথ্যাবাদী। একমাত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীস হবে দলীল। সাহস থাকলে আমার এই ব্লগে এসে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন।
তারপরে উভয়ের অবসর সাপেক্ষে সবার বোধগম্য ভাষায় বিতর্ক হবে ইনশাআল্লাহ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৯