প্রথমত ঃ আপনি বুঝিয়েছেন যে, অধিকাংশ কাফির ও মুশরিকের কথা মানা যাবে না। আপনাকে ধন্যবাদ যে, আপনি নিজেই মেনে নিয়েছেন যে, গণতন্ত্র হারাম। কারণ, অধিকাংশ কাফির আর মুশরিকরাই গণতন্ত্রকে মানে।
দ্বিতীয়ত ঃ আপনি বুঝিয়েছেন যে, অধিকাংশ মু’মিনের কথা মান্য করার অর্থ হলো গণতন্ত্র। এখন আপনি বলুনতো কোন দেশে অধিকাংশ মুসলিমের ফায়সালা অনুযায়ী গণতন্ত্র চলছে? বরং “অধিকাংশের” থিওরীর ক্ষেত্রে মুসলিমগণ প্রাধান্য পায় না। তাই আপনি যে থিওরীর কথা বলছেন তার সাথে বর্তমান গণতন্ত্রের কোন মিল নেই।
তৃতীয়ত ঃ আপনি বুঝিয়েছেন যে, অধিকাংশ মু’মিনগণ যাই বলবেন তাই মানতে হবে। এই কথাটিও ঠিক নয়। কারণ, মহান আল্লাহ্ বলেন,
“তুমি যদি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথামত চল তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহ্’র পথ থেকে বিচ্যুত করে ফেলবে...” -সূরাহ্ আন’আম (৬), ১১৬।
এই আয়াতে আল্লাহ্ পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মানতে নিষেধ করেছেন। আর পৃথিবীতে অধিকাংশ লোক বলতে মু’মিনও হতে পারে আবার কাফিরও হতে পারে। আয়াতটি আমভাবে (সার্বজনিন) নাযিল হয়েছে। এই আয়াতটি সম্পূর্ণভাবে অধিকাংশের থিওরী যথা গণতন্ত্রকে নিষিদ্ধ করে। এ সম্পর্কিত একটি হাদিস লক্ষ্য করুন।
“আব্দুল্লাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। নাবী (দ.) উসামাহ্ ইবনু জায়েদ (রা.) কে (একটি অভিযানে ‘আমীর) নিযুক্ত করেন। এটা নিয়ে স্বাহাবীগণ সমালোচনা করেন। তখন নাবী (দ.) বললেন, আমি খবর পেয়েছি, তোমরা উসামাহ্’র আমীর নিযুক্তি নিয়ে সমালোচনা করছ, অথচ সে হচ্ছে আমার নিকট সবার চেয়ে প্রিয়।” -বুখার, অধ্যায় ঃ ৬৪, কিতাবুল মাগাযী, অনুচ্ছেদ ঃ ৮৮, নাবী (দ.) এর মৃত্যু রোগের অবস্থায় উসামাহ্ ইবনু যায়েদ (রা.) কে যুদ্ধাভিযানে প্রেরণ, হাদিস # ৪৪৬৮।
এই হাদিসটি দ্বারা বুঝা যায় যে, রসূলুল্লাহ্ (দ.) অধিকাংশের পরামর্শ না মেনে এটাই প্রমাণ করলেন যে, অধিকাংশ মু’মিনের কথা নাও নেয়া যেতে পারে।
চতুর্থত ঃ আপনি সূরাহ্ হুজুরাত (৪৯), ৭ নং আয়াতের মতামত দিয়েছেন যে, এখানে অধিকাংশ মানুষ কিংবা ঈমানদারদের কথা বলায় হয়নি। বরং অধিকাংশ বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। আপনার বক্তব্যটি সম্পূর্ণ ভূল। কারণ, এখানে “অধিকাংশ” বিষয়টি ঈমানদারদের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, কোন কাফিরের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়নি। তাই এখানে অধিকাংশ ঈমানদারদের বিষয়েই বলা হয়েছে। আমি পুরো আয়াতটি উল্লেখ করলাম। আয়াতটি লক্ষ করুন-
“...তিনি (রসূল) অধিকাংশ বিষয়ে তোমাদের (ঈমানদারদের) কথা মেনে নিতো তাহলে তোমরা (ঈমানদাররা) অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্থ হতে। কিন্তু আল্লাহ্ তোমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করে দিয়েছেন...” -সূরাহ্ হুজুরাত (৪৯), ৭।
এই আয়াতে “তোমরা” শব্দ দ্বারা ঈমানদারগণকে বুঝানো হয়েছে। কারণ, আয়াতের পরের অংশেই বলা হয়েছে “কিন্তু আল্লাহ্ তোমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করে দিয়েছেন” এই অংশ থেকে বুঝা যায় তোমরা শব্দটি দ্বারা ঈমানদারগণকেই বুঝানো হয়েছে কোন কাফিরকে নয়।
অতএব, বুঝা গেল যে, “অধিকাংশ মু’মিনের মতামত” মেনে নেয়ার থিওরী সঠিক নয় বরং হারাম।
আপনি বললেন ঃ কিছু লোক ‘অধিকাংশ লোক’ ও ‘অধিকাংশ ঈমানদার-লোক’ এর মাঝে তফাত বোঝে না। তারা ‘অধিকাংশ’ শব্দটি দেখা মাত্র আতংকিত হয়ে পড়ে। এরা ‘অধিকাংশÑআতংক’ রোগে আক্রান্ত কি না, তা ভেবে দেখার বিষয়।
উত্তর ঃ ভাই ‘অধিকাংশ” নিয়ে এত উদাসীনতাও নিজের পরিশুদ্ধতার জন্য ভাল নয়। সে যাই হোক, ‘অধিকাংশ লোক’ ও ‘অধিকাংশ ঈমানদার-লোক’ এর মাঝে আপনি যেহেতু কোন পার্থক্য খুঁজে পান না তাই আমি কিছু দলিল পেশ করছি-
১. আর যখন তাদের কাছে পৌঁছে কোন সংবাদ শান্তি-সংক্রান্ত কিংবা ভয়ের, তখন তারা সেগুলোকে রটিয়ে দেয়। আর যদি সেগুলো পৌঁছে দিত রসূল পর্যন্ত কিংবা তাদের শাসকদের পর্যন্ত, তখন অনুসন্ধান করে দেখা যেত সেসব বিষয়, যা তাতে রয়েছে অনুসন্ধান করার মত। বস্তুত আল্লাহ’র অনুগ্রহ ও করুণা যদি তোমাদের উপর বিদ্যমান না থাকত তবে তোমাদের অল্প কতিপয় লোক ব্যতীত সবাই শয়তানের অনুসরণ করতে শুরু করত ! -সূরাহ্ নিসা (৪), ৮৩।
এই আয়াতে ‘অধিকাংশ মু’মিন’ উদ্দেশ্য।
২. হুনাইনের যুদ্ধে অতর্কিত হামলার সময় ১২,০০০ (বার হাজার) মু’মিন মুজাহিদের মধ্যে মুহাজির এবং আনসারগণ ছাড়া ময়দান ছেড়ে অধিকাংশ মু’মিন মুজাহিদগণই রসূলুল্লাহ্ (দ.) কে ময়দান ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা বলেন,
“আল্লাহ্ তোমাদের সাহায্য করেছেন অনেক ক্ষেত্রে এবং হুনাইনের দিনে, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদের প্রফুল্ল করেছিল, কিন্তু তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি এবং পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া স্বত্ত্বেও সংকুচিত হয়েছিল। অতঃপর পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে।” -সূরাহ্ তাওবাহ্ (৯), ২৫।
এই আয়াতে ‘অধিকাংশ মু’মিন’ উদ্দেশ্য।
অতএব, আবারও বুঝা গেল যে, “অধিকাংশ মু’মিন” এর থিওরী মানা মানে “আতংক”-“প্রশান্তি” নয়।