মেহেদী পরাগ বলেছেন: প্রথমে আপনি কোরআনের একটি আয়াত উল্লেখ করেছেন।
সূরা নিসা-৪:১১৩> আল্লাহ আপনার প্রতি কিতাব ও হিকমাহ নাজিল করেছেন এবং আপনাকে এমন বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না। আপনার প্রতি আল্লাহর করুণা অসীম।
এখানে আপনি খেয়াল করতে বলেছেন যে আল্লাহ কিতাব ও হিকমাহ দুইটি আলাদা জিনিস নাজিল করেছেন। এবার আপনি আরেকটি আয়াতে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
সূরা আহযাব-৩৩:৩৪> আল্লাহর আয়াত ও হিকমাহ, যা তোমাদের গৃহে আবৃত্ত হয় তোমরা সেগুলো স্মরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ্ সূক্ষদর্শী, সর্ববিষয়ে খবর রাখেন।
এখানে আপনি খেয়াল করতে বলেছেন যে ''আল্লাহর আয়াত'' এবং ''হিকমাহ'' দুটিই পঠন যোগ্য অর্থাৎ পড়া বা আবৃত্তি করা যায়। এ থেকে আপনার অনুসিদ্ধান্ত এইযে উল্লিখিত পঠনযোগ্য বা লিখিত হিকমাহ'ই হচ্ছে হাদীস।
এবার আমি আপনাকে দেখিয়ে দিচ্ছি যে আপনার যুক্তি কতটা অথর্ব, অযৌক্তিক। উপরের আয়াতে কিন্তু ''কোরআন'' শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি বরং ''আল্লাহর আয়াত'' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এবার চলুন দেখা যাক ''আল্লাহর আয়াত'' দিয়ে আল্লাহ কি কি বুঝাতে পারেন।আয়াহ শব্দের আভিধানিক অর্থঃ নিদর্শন বা প্রমাণ।
সূরা আল জাসিয়া-৪৫:৩-৬> নিশ্চয় নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে মুমিনদের জন্যে আয়াতসমূহ (নিদর্শনাবলী) রয়েছে। আর তোমাদের সৃষ্টিতে এবং চারদিকে ছড়িয়ে রাখা জীব জন্তুর সৃজনের মধ্যেও আয়াতসমূহ (নিদর্শনাবলী) রয়েছে বিশ্বাসীদের জন্য। দিবারাত্রির পরিবর্তনে, আল্লাহ আকাশ থেকে যে রিযিক (বৃষ্টি) বর্ষণ করেন অতঃপর পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করেন, তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে বুদ্ধিমানদের জন্যে আয়াতসমূহ (নিদর্শনাবলী) রয়েছে। এগুলো আল্লাহর আয়াত, যা আমি আপনার কাছে আবৃত্তি করি যথাযথরূপে।
এখানে দুটি বিষয় লক্ষনীয়।
১) আয়াত মানেই যে কোরআনের লিখিত বাক্য তা নয় বরং আল্লাহর অনেক সৃষ্টি/নিদর্শনও আয়াত হতে পারে।
২) এই সৃষ্টি/নিদর্শন সমূহ পঠন যোগ্য অর্থাৎ পড়া বা আবৃত্তি করা যায়।
উপরের আলোচনা থেকে এটা সহজেই বুঝা যায় যে হিকমাহ পড়া যায় বলেই যে তা লিখিত কোন বই হতে হবে এমন কোন আবশ্যকতা নেই কেননা আল্লাহর নিদর্শনসমূহও পড়া যায় অথচ এগুলোর কোন লিখিত বই নেই। তাই হিকমাহ কে মনগড়া ভাবে হাদীস না বলে বরং হিকমাহ'র শাব্দিক অর্থ শিক্ষা,শক্তি বা কৌশল বলাই যৌক্তিক।
এছাড়া হিকমাহ কে কোরআন বলাও যৌক্তিক, কেননা উপরের ৩৩:৩৪ ( আল্লাহর আয়াত ও হিকমাহ, যা তোমাদের গৃহে আবৃত্ত হয় তোমরা সেগুলো স্মরণ করবে) অনুযায়ী ''আল্লাহর আয়াত'' হচ্ছে আল্লাহ সৃষ্ট নভো ও ভূমন্ডলের নিদর্শন, এবং ''হিকমাহ'' হচ্ছে স্বয়ং কোরআন। এক্ষণে আপনি যে তোতাপাখির মত বারবার নিচের কথাগুলো বলে যাচ্ছিলেন তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হল। আপনি বলেছিলেনঃ
সূরা আহযাব-৩৪> স্মরণ কর যা তোমাদের ঘরে পাঠ করা হয় কিতাব এবং কিতাব।(অর্থহীন)
সূরা আহযাব-৩৪> স্মরণ কর যা তোমাদের ঘরে পাঠ করা হয় হিকমাহ এবং হিকমাহ।(অর্থহীন)
সূরা আহযাব-৩৪> স্মরণ কর যা তোমাদের ঘরে পাঠ করা হয় কোরআন এবং কোরআন।(অর্থহীন)
উপরে আপনি ''আল্লাহর আয়াত'' শব্দের জায়গায় অত্যন্ত চাতুরতার সাথে বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে ধোঁকা দিতে চেয়েছেন। অথচ আল্লাহ নিজেই শিখিয়ে দিয়েছেন ''আল্লাহর আয়াত'' শব্দের অর্থ কি (সূরা আল জাসিয়া-৪৫:৩-৬)
সূরা আহযাব-৩৪> স্মরণ কর যা তোমাদের ঘরে পাঠ করা হয় আল্লাহর নিদর্শন (আয়াত) এবং হিকমাহ (কোরআন)।
উপরে আয়াতটি এখন পুরোপুরি অর্থপূর্ণ, যা আপনি এতক্ষণ হিকমাহ=কোরআন বসালে অর্থহীন বলে প্রমাণ করতে চাইছিলেন। এবার আপনাকেই ভুল প্রমাণ করলাম।
এবার আসুন আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনা করা যাক। আপনার দেখিয়ে দেয়া পথেই কোরআনের আরও কিছু আয়াত দেখিঃ
কিতাব এবং হিকমাহ আলাদা
সূরা নিসা-৪:১১৩> আল্লাহ আপনার প্রতি কিতাব ও হিকমাহ নাজিল করেছেন এবং আপনাকে এমন বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না।
হিকমাহ এবং আয়াত আলাদা
সূরা আহযাব-৩৩:৩৪> আল্লাহর আয়াত ও হিকমাহ, যা তোমাদের গৃহে আবৃত্ত হয় তোমরা সেগুলো স্মরণ করবে।
আয়াত এবং জিকির আলাদা
সূরা আল ইমরান-৩:৫৮> আমি তোমাদেরকে পড়ে শুনাই এ সমস্ত আয়াত এবং প্রজ্ঞাময় জিকির।
জিকির এবং কোরআন আলাদা
সূরা ইয়াসীন-৩৬:৬৯> আমি রসূলকে কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং তা তার জন্যে শোভনীয়ও নয়। এটা তো এক জিকির এবং প্রকাশ্য কোরআন।
তাহলে এখন প্রশ্ন আসে, এই শব্দগুলোর (কিতাব, কোরআন, হিকমাহ, আয়াত, জিকির) প্রকৃত অর্থ কি? একটু চেষ্টা করে শাব্দিক অর্থ থেকেই আমরা বুঝে নিতে পারি অনেক কিছু। যেমনঃ কিতাব শব্দের অর্থ বই। তার মানে আল্লাহর ওহী সমূহের লিখিত রূপকে কিতাব বলা যায়। কোরআন শব্দের অর্থ আবৃত্তি। তার মানে আমরা বা হাফেজরা মৌখিক ভাবে যে ওহী উচ্চারণ/তেলাওয়াত করি সেটাই কোরআন। হিকমাহ শব্দের অর্থ প্রজ্ঞা বা জ্ঞান। তার মানে কোরআনের যে বাক্যগুলোতে প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের কথা লিখা আছে সেগুলোই হিকমাহ। আয়াত শব্দের অর্থ নিদর্শন। তার মানে কোরআনের যে বাক্যগুলো আল্লাহর নিদর্শন প্রকাশ করে সেগুলোই হচ্ছে আয়াত। জিকির শব্দের অর্থ স্মরণ বা উপদেশ। তার মানে কোরআনের যে বাক্যগুলোতে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে বা উপদেশ দেয়া হয়েছে বা আল্লাহকে স্মরণ করতে বলা হয়েছে সেগুলোই হচ্ছে জিকির। এ সমস্ত কিছু মিলেই হচ্ছে আল্লাহর ওহী যা নবী (সঃ) এর উপর নাজিল হয়েছিল, আর আমরা যাকে কোরআন বলে জানি। এর সাথে হিকমাহ কে মনগড়াভাবে হাদীস বলার কোন যুক্তিই নেই।
এবার তাহলে বলুন, হিকমাহ যদি হাদীস হয় তাহলে জিকির কি? আপনি দাবী করেছেন জিকির = কোরআন + হিকমাহ (হাদীস)। কিন্তু জিকির এবং কোরআন তো আলাদা (৩৬:৬৯)। এছাড়া কোরআন এবং হাদীস হচ্ছে দুইটি কিতাব, কিন্তু জিকির হচ্ছে একটি কিতাব (৪১:৪১-৪২ এবং ৭:২)
সূরা হা-মীম-৪১:৪১> নিশ্চয় যারা জিকির আসার পর তা অস্বীকার করে, তাদের মধ্যে চিন্তা-ভাবনার অভাব রয়েছে। এটা (জিকির) অবশ্যই এক সম্মানিত কিতাব।
এবার কি তাহলে মিথ্যা দাবী ছাড়বেন যে জিকির = কোরআন ও হাদীস?
আপনি আরও দাবী করেছেন যে সূরা ইনশিরাহ-৪ নং আয়াত অনুযায়ী আল্লাহ রাসূলের কথাকেও জিকির বলেছেন। এটা সম্পূর্ণ ভাবে আপনার একটা মিথ্যাচার। আল্লাহর নামে মিথ্যা বলতে এতটুকু বুক কাঁপেনা আপনার?
সূরা ইনশিরা-৯৪:৪> আমি আপনার জিকির বা স্মরণকে (সম্মানকে) সমুচ্চ করেছি।
এই আয়াতে রাসূলের কথা (হাদীস) আসল কিভাবে? রাসূলের কথাকে কোথায় জিকির বলা হয়েছে? বরং রাসূলের জিকির/স্মরনকে উচ্চে উঠানোর কথা বলা হয়েছে। এক্ষুনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান, আল্লাহর আয়াত নিয়ে এই রকম ভয়ঙ্কর মিথ্যাচার চরম অপরাধ।