আমরা যারা ৪ ইমামের তাকলীদ করি সেই ইমামগণ তাকলীদ করতেন না কেন?
‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’
গত কয়েকদিন ধরে যে বিষয়টি পিস ইন ইসলামে পড়ছি সেটা হলো তাকলিদ।
আসলেই কী তাকলীদ করেতই হবে । আর আমরা যারা সাধারনরা আমাদের অবস্থানই বা কোথায় ?
আসুন দেখি তাকলিদ মানে কী এবং ইমামদের অবস্থান এ ব্যাপারে কী ?
তাকলীদের শব্দগত মানে হলো ‘জানোয়ারের গলায় রশি বাধার পর তাকে রশি ধরে টানা এবং রশির টানে টানে চলা ।’(আল মুনজিদ ৬৪৯পৃ,মিসবাহ ৭০২) ।
শরীয়াতের পরিভাষায় তাকলিদ হল-’বিনা দলীলে কারো কথার উপর চলা।’ (মুসাল্লামুস-সুবুত ৬২৪পৃ,নল কিশোরী)
‘দলীল ব্যতীত কারো কথা গ্রহন করাকে বলা হয় তাকলীদ।” (শরহে কাসী দায়ে আমালি -মুল্লা আলী ক্বারী হানাফী ৩৪পৃ ইউসুফী প্রেস,দিল্লী )
শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী বলেন, “একমাত্র রসুল (সঃ) ছাড়া আর কারো কথা বিনা দলীলে মানা যাবে না ; (কারন রসুল সঃ নিজেই দলীল) এ ব্যাপারে কোন মত বিরোধ মুসলমান এবং মুজতাহিদ আলেমের মধ্যে কোন কালেই ছিল না।” হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা ১ম ১৫২-১৫৩ পৃ, রশিদীয়াহ দিল্লী) ।
শাহ সাহেব আরো বলেন, “তাকলীদ করার মানে হলো সহাবা, তাবেয়িন,তাবে তাবেয়িন অথবা গোটা মুসলিম উম্মার বিরুদ্ধচারন করে অমুসলিমদের পথ অনুসরন করা।” হুজ্জাত ১৫৫।
এছাড়া তিনি আরো বলেন,” সহাবা ,তাবেয়ি,তাবে তাবেয়িন তাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকলেই একমত ছিলেন যে, কোন মানুষ কোন মানুষের তাকলীদ করতে পারে না। তাই তারা কঠোরভাবে তাকলীদ করতে নিষেধ করেছেন। ” হুজ্জাত ১৫৪পৃঃ ।
হাদীসের ইমামগণ এজন্য তাকলীদ করেন নাই যে, তারা গোটা উম্মতের বিরুদ্ধচারন করে অমুসলিমদের পথ ধরতে চান নাই ।” ঐ-১৫৫ পৃঃ ।
--------------------------------------------------------------------------
ইমাম আবু হানীফা (রঃ) বার বার বলেছেন, “আমি কোন দলীলে কথা বলেছি, সেই দলীল না জেনে আমার ফতোয়া মুতাবিক যদি কেউ ফতোয়া দেয় তাহলে তা হবে হারাম ।” (মিযান-শারানী ১ম ৫১পৃঃ ।)
তিনি আরো বলতেন , “হে আমার ছাত্র এবং ভক্তগণ ! তোমরা মানুষের ইজমা বা সম্মিলিত মতামত কখনো মানবেনা বরং তা থেকে সর্বোতভাবে দূরে থাকবে।” ( মিযান-শারানী ১ম ৫২ পৃঃ)। ”
তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে কারো কিয়াস মানবে না, তোমরা অবশ্যই হাদীস মেনে চলবে । যারা হাদীস বর্জন করে অন্য কিছু মানবে তারা ভ্রষ্ট হবে।” ঐ-৫১পৃঃ । ” তোমরা অবশ্যই মানুষের মতামত বর্জন করে চলবে এবং আহলে হাদীসদের পথের অনুসরন করে চলেব ।” ঐ-৫৩ পৃঃ।
--------------------------------------------------------------------------
ইমাম আহমদ (রঃ) বলেন,” তুমি আমার অন্ধ অনুসরন করো না এবং ইমাম মালিক, শাফেয়ী,আোযায়ী এবং ছাোরী প্রমুখের অন্ধ অনুসরন করোনা বরং তাঁরা যেখান থেকে গ্রহন করেছেন তুমিো সেখান হতে গ্রহন করো ।” ( ইমাম ইবনুল কাইয়ূম-ই’লামুল মু’আককিঈন-২/৩০২ পৃঃ) ।
--------------------------------------------------------------------------
ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলেন, আমি যেসব ফতোয়া দিয়েছি এর বিপরীত নাবী (সঃ) হতে সহীহ হাদীস প্রমানিত হলে নাবী (সঃ) এর হাদীসই গ্রহনযোগ্য এবং প্রাধান্য পাবে, অতএব আমার কোন অন্ধানুকরন করো না ।” ( ইবনু আবি হাতিম-আদাবুশশাফেয়ী-৯৩ পৃঃ) ।
--------------------------------------------------------------------------
ইমাম মালিক (রঃ) বলেন, আমি একজন মানুষ মাত্র । চিন্তা গবেষনায় ভুল ো হয় আবার সঠিক ো হয়। সুতরাং তোমার আমার অভিমত পরীক্ষা করে দেখ, আমার যে অভিমত কুরআন এবং সুন্নাহর অনুকূলে পাো তা গ্রহন করো ।আর যেঅভিমত কুরআন এবং সুন্নার অনুকূলে নেই তা প্রত্যাখান করো ।” ( ইবনু আব্দিল বার-আল জামি-২/৩২পৃঃ) ।
--------------------------------------------------------------------------
আমরা যারা মাযহাবের অনুসরন করি, তারা যদি আমরা স্ব-স্ব ইমামের কথাগুলোকে সঠিকভাবে মেনে চলতাম ,তাহলে আমাদের মধ্যে এত পার্থক্য থাকত না ।
আমি মনে করি প্রত্যেক মাযহাবের গোড়া অনুসারীরাই এর জন্য মূখ্যভাবে দায়ী । মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক পথ প্রদর্শন করুন । আমীন ।
মূল লেখা: http://www.peaceinislam.com/bagerhat/6202/