আসসালমু আলাইকুম,
সকলের উপর আল্লাহর শান্তি রহমত বরকত বর্ষিত হোক। শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের নবী, বেদঅনুযায়ী শেষ ঋষি, কল্কি অবতার, নারাশাংসা (প্রশংসিত ব্যক্তি) বা ইসলাম অনুযায়ী নবী মোহাম্মদ সাঃ এর উপর।
শান্তি বর্ষিত হোক সেই ব্যক্তির উপর যে হেদায়েতের/সত্যের অনুসরণ করে কাফেরদের মধ্যথেকে, মুশরিকদের মধ্যথেকে, মুনাফিকদের মধ্যথেকে এবং নাস্তিকদের মধ্যথেকে।
--------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ বলেছেন,
সূরা আল ইমরান-৬৪> এসো সেই কথায় যা তোমাদের ও আমাদের মধ্যে এক
১। আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করি না।
অর্থ্যাৎ আল্লাহর আইনকানুন মানাও যেমন আল্লাহর ইবাদত তেমনি আল্লাহর কোরআনের আইনের উপস্থিতিতেও বা থাকা অবস্থায় মানুষের রচিত আইন মানা মানুষের ইবাদত। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
২। তার সাথে কোন কিছু শরীক করি না।
অর্থ্যাৎ তার আদেশ সবার উপরে। তার আদেশের বা কোন আইন কানুন বিধিবিধান এর সাথে মানবরচিত আইন কানুন বা বিধি বিধানকে শরীক করিনা। যেমন আল্লাহ বললেন সম্পদ ছেলেরা পাবে ২ ভাগ মেয়েরা পাবে ১ ভাগ। এখন কোন মহান ব্যক্তি, হোক সে কোন মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন কারী, যদি বলে সম্পদ পাবে ছেলে ১.৫ অংশ আর মেয়ে ১.৫ অংশ। তাহলে আমরা তখন শুধু আল্লারহ আইন বা বিধান ই মানবো। মানুষের টা মানবো না। আল্লাহর বিধানের উপস্থিতিতে নতুন বিধান রচনা করাই শিরক।
৩। আমাদের মধ্যে কাউকে আল্লাহ ছাড়া রব (আদেশদাতা বিধানদাতা ইলাহ হিসাবে) মানি না।
যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলে দাও, তোমরা স্বাক্ষী থাক আমরা আত্মসমর্পণকারী বা মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী আল্লাহর কাছে, আল্লাহর আইনকানুন, বিধি বিধান, আদেশ নিষেধ, উপদেশ ইত্যাদির কাছে হোক সেটা নিজের ইচ্ছার পক্ষে বা বিপক্ষে ।
===============================================
এই পৃথিবীতে কাকে আমরা সবচেয়ে বেশী ভালবাসবো?
অনেক মানুষ আছে যারা নবী মোহাম্মদ সাঃ কে আল্লাহর চেয়েও বেশী ভালবাসে (যেমন দেওয়ানবাগী)। অথচ ভালবাসা সবচেয়ে বেশী হওয়া উচিত আল্লাহর জন্য।
আল্লাহ কোরআনে বলেছেন,
সূরা বাকারাহ-১৬৫> কিছু লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে (যেমন-ঈসা আঃ, মাজার, কবর, ওলী আউলিয়া, রাম- শ্রীকৃষ্ণ এবং নবী মোহাম্মদ সাঃ ইত্যাদি) আল্লাহ্র সমকক্ষ (অংশীদার) সাব্যস্ত করে (ভালবাসার মাধ্যমে) এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহ্র প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তূ যারা আল্লাহ্র প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। আর কতইনা উত্তম হ'ত যদি এ ”জালেমরা” পার্থিব কোন কোন আযাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহ্রই জন্য এবং আল্লাহ্র আযাবই সবচেয়ে কঠিনতর।
----------------------------------------------------------------------------------------
আমরা মুসলিমরা রাসুল সাঃ কে জীবনের চেয়েও ভালবাসি কারণ আল্লাহ ভালবাসতে বলেছেন বলে। আমরা আমাদের বাবা মা কে ভালবাসে কারণ আল্লাহকে ভালবাসি বলে। আমরা আমাদের গুরুজনদের শ্রদ্ধা করি আল্লাহকে ভালবাসি বলে। আমরা আমাদের পরিবারের ভরণপোষণ দেই শুধু আল্লাহর জন্যই। তা না হলে পরিবারের পিছনে খরচ করার কোন প্রয়োজন ছিল না। আমাদের যাবতীয় ভালবাসা আল্লাহ কেন্দ্রীক হওয়া উচিত।
সূরা আত তাওবাহ-২২> বল, তোমাদের নিকট যদি
=> তোমাদের পিতা
=> তোমাদের সন্তান
=> তোমাদের ভাই
=> তোমাদের পত্নী
=> তোমাদের গোত্র
=> তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ
=> তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং
=> তোমাদের বাসস্থান-যাকে তোমরা পছন্দ কর-
এবং এগুলো যদি অধিক ভালবাসার হয়
=> আল্লাহ্
=> তাঁর রসূল ও
=> তাঁর জন্য জেহাদ করা থেকে,
তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর (ধ্বংসের) বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ্ ফাসেক (সত্যত্যাগী) সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।
অতএব, সবকিছুর থেকে আল্লাহর প্রতি বেশী ভালবাসা হতে হবে। তারপর আল্লাহর রাসুল এর প্রতি।
----------------------------------------------------------------------------------------
যারা আল্লাহকে ভালবাসে তারা এই ভালবাসার বিপরীতে যা পাবেঃ
=> মহান আল্লাহর জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারী আল্লাহর আরশরে ছায়াতলে অবস্থান করবে যেদিন তাঁর আরশের ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :-
سبعة يظلهم الله في ظله يوم لا ظل إلا ظله ....... ورجلان تحابا في الله ، اجتمعا عليه ، وتفرقا عليه. (رواه البخاري:৬২০)
“সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাঁর ছায়াতলে ছায়া দিবেন যে দিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না........এবং দুজন ব্যক্তিকে, যারা আল্লাহর জন্য তারা পরস্পর পরস্পররে প্রতি ভালোবাসা স্থাপন করেছে এবং তাঁর ভালোবাসায় তারা একত্রতি হয়েছে এবং তাঁর ভালোবাসায় তারা পৃথক হয়েছে। (বুখারী:৬২০)
----------------------------------------------------------------------------------------
إن الله يقول يوم القيامة: أين المتحابون بجلالي، اليوم أظلهم في ظلي يوم لا ظل إلا ظلي. ( رواه مسلم:৪৬৫৫)
আল্লাহ কিয়ামত দিবসে বলবেন, আমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারীরা কোথায় ? আজ - যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না- আমি তাদের ছায়া দেব। (সহীহ মুসলিম:৪৬৫৫)
----------------------------------------------------------------------------------------
لاتدخلون الجنة حتى تؤمنوا، ولاتؤمنوا حتى تحابوا.... ( رواه مسلم:৮১
“ঈমানদার না হওয়া র্পযন্ত তোমরা জান্নাতে প্রবশে করতে পারবে না এবং পরস্পর ভালোবাসা স্থাপন না করা র্পযন্ত তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না। (সহীহ মুসলিম:৮১)
----------------------------------------------------------------------------------------
الرجل على دين خليله، فلينظر أحدكم من يخالل... (رواه الترمذي:২৩০০)
মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতির উপর পরিচালিত হয়, সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকের উচিত, কে তোমাদের বন্ধু হবে এ ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করা। (তিরমিজি: ২৩০০)
----------------------------------------------------------------------------------------
একটি হাদিসে কুদসী-
وجبت محبتي للمحتابين فيّ ، والمتجالسين فيّ، والمتزاورين فيّ، والمتباذلين فيّ ( رواه أحمد:২১৭১৭)
=> আমার (আল্লাহ) জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারী, পরস্পর উঠা-বসা-কারী, পরস্পর সাক্ষাৎকারী, পরস্পর ব্যয়কারীদের জন্য আমার (আল্লাহ) ভালোবাসা অবধারিত। (মুসনাদে আহমদ:২১৭১৭)
----------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ তাআলা বলেন :—
الأخلاء يومئذ بعضهم لبعض عدو إلا المتقين.الزخرف:
“বন্ধুরা সেইদিন হয়ে পড়বে একে অপররে শক্র, মুত্তাকীরা ব্যতীত।
----------------------------------------------------------------------------------------
রাসূলুল্লাহ সা: বলেন :- لاتحقرن من المعروف شيئا، ولو أن تلقى أخاك بوجه طلق. رواه مسلم:৪৭৬০
কোন ভাল কাজকে কখনো তুচ্ছ জ্ঞান করনা, এমনকি তা যদি তোমার ভাইয়রে সাথে হাসোজ্জ্বল চেহারায় সাক্ষাত করাও হয়। (সহীহ মুসলিম:৪৭৬০)
----------------------------------------------------------------------------------------
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
تهادوا تحابوا ( موطأ مالك:১৪১৩)
তোমরা একে অপরকে উপহার প্রদান কর, তোমাদরে পরস্পর ভালোবাসা বৃদ্ধি পাব। (মুয়াত্তা মালিক : ১৪১৩)
----------------------------------------------------------------------------------------
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :- ما من عبد مسلم يدعو لأخيه بظهرالغيب، إلا قال الملك: ولك بمثل (رواه مسلم:৪৯১২)
কোন মুসলিম বান্দা যখন তার ভাইয়ের পিছনে তার জন্য দুআ করে তখন ফেরেশতা বলে উঠে তোমার জন্যও অনুরূপ।(সহীহ মুসলিম: ৪৯১২)
----------------------------------------------------------------------------------------
রাসূলুল্লাহ সা: বলেন :—
إذا أحب الرجل أخاه، فليخبره أنه يحبه. رواه أبوداود:৪৪৫৯
মানুষ যখন তার ভাইকে ভালোবাসে সে যেন তাকে অবহতি করে যে সে তাকে ভালোবাসে এবং তাকে বলবে-
إني أحبك في الله
নিশ্চয়ই আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। জওয়াবে সে বলবে
أحبك الذي أحببتني له
যে ব্যাপারে তুমি আমাকে ভালোবসেছে সেটা তোমার নকিট পছন্দ হয়েছে (আবুদাউদ:৪৪৫৯)
----------------------------------------------------------------------------------------
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলনে :- زر غباً تزدد حباً
“বিরতী দিয়ে দেখা সাক্ষাথ কর, ভালোবাসা বৃদ্ধি পাব।
----------------------------------------------------------------------------------------
ইসলাম হাউজ.কম থেকে সংকলিত এবং কিছুটা পরিবর্তিত ও সংযোজিত।
আল্লাহর আমাদের সত্য বুঝার তৌফিক দান করুন। আমীন।