পদার্থবিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন ১২ই ডিসেম্বর। কেননা এই দিনটিতেই ইতালীয় উদ্ভাবক গুগলিয়েলমো মার্কনি, আটলান্টিকের এপাড় থেকে ওপাড়ে সফলভাবে রেডিও সিগনাল প্রেরণ করতে সম্ভব হয়েছিলেন।
সমালোচকরা ধারণা করেছিলেন যে, পৃথিবীর বক্রতার কারনে ২০০ মাইলের বেশি দূরত্বে রেডিও সিগনাল সফলভাবে প্রেরণ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু ১৯০১ সালের ১২ই ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের কর্নওয়াল থেকে কানাডার নিউ ফাউন্ডল্যান্ডে, রেডিও তরঙ্গের সাহায্যে মোর্স কোডের s বর্ণটি পাঠান মার্কনি। এই দুই গন্তব্যের মধ্যে ছিলো আটলান্টিক মহাসাগরের ২০০০ মাইলের বিশালতা! এটি গুগলিয়েলমো মার্কনির জীবনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, কেননা এই ঘটনাটির মধ্য দিয়েই বৈশ্বিক আলোচনায় পরিণত হয় মার্কনি এবং তার রেডিও কোম্পানি।
মার্কনি একজন জিনিয়াস উদ্যোগতা এবং ইঞ্জিনিয়ার। তরুণ উদ্ভাবক হিসেবে ইতালীর সরকারকে রেডিও প্রযুক্তির গুরুত্ব বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে, মাকে নিয়ে ইংল্যান্ডে চলে আসেন মার্কনি। ব্রিটিশরা মার্কনিকে ইংল্যান্ডে সুস্বাগতম জানায়। বেকারী, পোস্ট অফিস থেকে শুরু করে ব্রিটেনের রানীর জন্য রেডিও প্রযুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। তবে সেসব ছিলো নেহাতই স্বল্প দূরত্বের মামলা।
''রেডিও তরঙ্গ সরলপথে চলাচল করে। পৃথিবীর বক্রতার কারণে অধিক দূরত্বে পাঠাতে চাওয়া রেডিও সিগনাল মহাকাশে চলে যাবে।'' বিজ্ঞানী মহলের এমন বয়ানে অবিশ্বাসী ছিলেন মার্কনি। তিনি ভেবেছিলেন রেডিও তরঙ্গ পৃথিবীর বক্রতাকে অনুসরণ করে গন্তবে পৌছাবে। মার্কনির এই ভাবনাটাও ভুল ছিলো। প্রকৃতপক্ষে সরলপথে চলমান রেডিও তরঙ্গ বায়ুমন্ডলের আয়নোস্ফেয়ার বা আয়নস্তরে প্রতিফলিত হয়ে অনেক দূরের যাত্রা সম্পন্ন করে। ১৯০৯ সালে নোবেল পুরষ্কার গ্রহনকালীন ভাষণে মার্কনি স্বীকার করেছিলেন যে, তার উদ্ভাবন ঠিক কিভাবে কাজ করে, এই জিনিসটি তিনি ভালো ভাবে বোঝেন না।
রেডিও তরঙ্গের এই দূরযাত্রা মানবসভ্যতার অনন্য এক আশীর্বাদ। টাইটানিক দূর্ঘটনার সময় সাত শতাধিক মানুষকে প্রাণে বাঁচানো সম্ভব হয়েছিলো, সঠিক সময়ে সাহায্য চেয়ে অন্য জাহাজকে রেডিও সিগনাল পাঠানোর মাধ্যমে। ১৯৩৭ সালে ৬৩ বছর বয়সে মার্কনি হার্ট এ্যাটাকে মারা যান। মার্কনির সম্মানে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় ২ মিনিট সম্প্রচার বন্ধ রেখে নিরবতা পালন করে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন তথা বিবিসি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:২১