এইচ এস সি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া নিয়ে একটা সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন । প্লিজ আগে পড়ুন পরে বিবেচনা করবেন আশা করি ।
প্রথমত বিজ্ঞান বিভাগ এর যে কোন বিষয়ে নম্বর থাকে ৭৫ ।
এর মধ্যে ৪০ থাকে সৃজনশীল বাকি ৩৫ অবজেকটিভ । পরীক্ষার আগের রাতে যে প্রশ্নগুলো ফেসবুক এ পাওয়া যায় তাঁর মধ্যে ১৯ - ২০ টা সেট থাকে সৃজনশীল এর । যার মধ্যে ৩ টা কমন পরে ! ঘটনা হচ্ছে এইসব প্রশ্নের ১০১ টা সমাধান বের হয় যার কোনটা ঠিক কোনটা ভুল তা পরীক্ষার আগের রাতে বের করা প্রায় অসম্ভব ।
কিছু কিছু শিক্ষা নামক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান তাঁদের ছাত্রদের এটা সরবারহ করে নিজ দায়িত্তে । আর যারা পায় না ? আপনি শত বুদ্ধিমান হন , যত পড়েন , আমি নিজে পশুর মতো পড়েছি গত দুই বছর । প্রশ্ন হাতের কাছে পেলে তবুও আপনি একবার অবশ্যই দেখবেন । কারণ এইখানে একটা প্রশ্ন ৪ টা অধ্যায় মিলায়ে করানো হয় । কোন প্রশ্নের কোন আগা মাথা নেই । যাই হোক , পরীক্ষা খারাপ হলে সবার একসাথে খারাপ হবে । কিন্তু যে ছেলেটা গত দুই বছর গাঁজা খেয়ে কাটিয়েছে সেও যখন বের হয়ে বলে " নিশ্চিত ৫ " তখন আমরা যারা পশুর মতো পড়েছি তাঁদের কান্না পায় ! বিশেষ করে অবজেকটিভ শুধু মাত্র সেই শিক্ষা নামক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান গুলোতেই হয়তো পাওয়া যায় । আমি বা আমার আশে পাশে কেউ পেয়েছে বলে শুনি নি । শুধু সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান এর ছাত্র ছাড়া ।তাও শুনেছি তাঁদের পরীক্ষার দিন সকালে দেয়া হয় যেন না ছড়ায় তখন । কাজেই আমাদের কমপক্ষে ২৫ - ৩০ টা অবজেকটিভ দাগাতে হয় সঠিক টা । এখন এই "সঠিক" জিনিষ টা আসলে কি ?
"অনুধাবন " ।
অনুধাবন সম্পূর্ণ একটা আপেক্ষিক বিষয় ।এই অনুধাবন ব্যাপারটা এক এক জনের কাছে এক এক রকম হতে পারে । কিন্তু নাম্বার পেতে হলে " প্রশ্ন কর্তার অনুধাবন ও আপনার অনুধাবন মিলে যেতে হবে"। ,,,, এই জিনিষটি সবচে খারাপ বাংলা পরীক্ষায় । ৩ টি হতে পারে , ২ টিও , আবার একটিও । এখানে সরাসরি "পড়ে" এসেছেন , উত্তর দেবেন , এমন কিছু নেই । পুরো ব্যাপারটাই একটা হেয়ালির মতো । যেমন ঃ এবারের বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষার একটা প্রশ্ন ।
" নাতি ঃ আমার শরীর টা দুর্বল লাগে, জ্বর আহে , পেটে কিচ্ছু হজম হয় না । ডাক্তার কইল এইডস হইসে । দেশে পাঠাইয়া দিল।
দাদ ঃ হায় আল্লাহ , এই কথা কাউরে কইস না । হুনলে কেউ আর তোর ত্রিসীমানায় আইব না "
প্রশ্ন ঃ উদ্দিপকে নাতির দেহে " অপরানহের গল্পে " এইডস রোগের লক্ষণ কতটা প্রকাশিত হয় ? "
১ সামান্য
২ সম্পূর্ণ
৩ অতিরিক্ত
৪ অধিকাংশ
এখন কেউ আমাকে বুঝান , এই প্রশ্নটি কতটা যুক্তিযুক্ত ? প্রায় এমন হেয়ালি ভরা প্রস্নে আমরা ভালো ছাত্ররাও দিশেহারা ।
সবার কাছে এটা এখন পরিস্কার যে এই প্রশ্ন ফাঁস একটা রাজনৈতিক বিষয় । এইটা অনেক উচ্চ মহল থেকেই করা হয় । এই প্রশ্ন ফাঁসের কিছু সামাজিক চিত্র দেখাই ।
প্রথমত হয়তো আপনার পরিবার জানে হ্যাঁ আপনি প্রচণ্ড পড়েছেন । কিন্তু আপনার শিক্ষক , সমাজ কেউ কি আপনার এই অমানুষিক পরিস্রম কে মূল্যায়ন করবে ? আমাকে দেখলে সবাই এখন জিজ্ঞেস করে " কিরে , প্রশ্ন পাস ? " কথাটা যে কি পরিমাণ অপমান জনক তা নিজের ক্ষেত্রে না ঘটলে বুঝবেন না । আবার এমন কিছু গাঁজাখোর ছাত্র আছে যারা আবার ফেসবুক এ স্ট্যাটাস দেয় " প্রশ্ন ফাঁস হওয়া উচিত না " সবাই নিচে কমেন্ট ও করে , প্রশ্ন ফাঁস না হলে তুই পাস করবি ক্যামনে ? " জগতের উপর বিশ্বাস হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে ।
যাই হোক , এই কথাগুলো বলা টা আমার আসল উদ্দেশ্য না ।এই রাত জেগে যে কথাটা বলার জন্য এতগুলো কথা বলা সেটা হল , সাংবাদিক দের কাছে অনুরোধ এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না প্লিজ । কারণ এই দেশে প্রশ্ন ফাঁস কেউ ঠেকাতে পারবে না । শুধু শুধু আমরা যারা পুরো প্রস্নের ২০ মার্ক পাই পরীক্ষার আগে যাদের আরও ৬০ উঠাতে হয় তাঁদের ক্ষেত্রে খাতা দেখায় একটু ছাড় দিতে হয় বোর্ড থেকে । সেটা তাঁরা দেয় । কিন্তু যখন এটা নিয়ে খুব বেশি লাফালাফি হয় " রাজনীতির বাঁক নতুন দিকে মোড় নেয় । তখন রাজনীতি উদারতা, প্রশ্ন ফাঁস থেকে , জি পি এ ৫ কেড়ে নেয়ার দিকে চলে যায় । " দয়া করে আমাদের হতাশায় ঠেলে দেবেন না । আর সামাজিক ভাবে যতটা না রাজনীতিবিদেরা অপমানিত হয় , তাঁর চে বেশি হই আমরা ।
তাই প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ তুলুন । কিন্তু সেটা নিয়ে এতো মাতামাতি করবেন না পরীক্ষার পর, যেন রাজনীতি আমাদের জীবন টাকেই নষ্ট করে দেয় । পরীক্ষার আগে আপনারা প্রশ্ন পত্রিকায় ছাপিয়ে পরীক্ষা বন্ধ করেন কিন্তু গতবছরের মতো সরকারের মাথাটা ঘুরিয়ে আমাদের আবার কোন নোংরা রাজনীতির দিকে ঠেলে দেবেন না , এতোটুকুই অনুরোধ ।